Ajker Patrika

নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের তালিকায় মনিরামপুরের নামসর্বস্ব দুই সংস্থা

নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের তালিকায় মনিরামপুরের নামসর্বস্ব দুই সংস্থা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য দেশীয় ৬৮ সংস্থার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তালিকায় যশোরের মনিরামপুরের ডেভেলপমেন্ট পার্টনার (ডিপি) ও সার্ভিসেস ফর ইকুয়িটি অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের (সিড) নাম রয়েছে। তালিকায় এদের স্থান যথাক্রমে ৪০ ও ৬০ নম্বরে। এর মধ্যে ডিপি কার্যালয় মনিরামপুর বাজারের পোস্টঅফিস পাড়ায় আর সিডের কার্যালয় উপজেলার দিঘীরপাড় বাজারে।

নির্বাচন কমিশনের তালিকা পেয়ে গতকাল বুধবার সরেজমিন এলাকা দুটি ঘুরে দেখা গেছে, দিঘীরপাড় বাজারে এক মাথায় পাকা রাস্তার পাশে দুটি বাঁশ পুঁতে সিডের একটি সাইনবোর্ড টানানো আছে। যা জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। পাশে টিনের পরিত্যক্ত ঘরটি ঝোপঝাড়ে ঘেরা। নির্বাচন কমিশনের তালিকায় নাজনীন ইসলাম নামের সিডের যে সভাপতির নাম দেওয়া আছে, তাঁকে স্থানীয়রা কেউ চেনেন না, এলাকায় কখনো কেউ দেখেনি।

আর পোস্টঅফিস পাড়ার ডিপির কার্যালয়ের বাইরে একটি সাইনবোর্ড ঝোলানো আছে। তালিকায় নাম আসার পর দপ্তরের ভেতরে ধোয়ামোছা চলছে। জানা গেল, মাসের পর মাস বন্ধ থাকায় ভেতরে ময়লা জমেছে, বাসা বেঁধেছে পোকামাকড়। যা এখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে।

দিঘীরপাড় এলাকার বাসিন্দা সাখাওয়াত আলী ও জামাল হোসেন বলেন, ২৫-৩০ বছর আগে গ্রামে একটি সমিতি ছিল। সেই সমিতি দুই ভাগ হয়ে যাওয়ায় আকবার হোসেন নামের এক ব্যক্তি সিড এনজিওটি খোলেন। শুরুতে বেশ জমজমাট চলছিল। ১৫-১৬ বছর আগে আকবরের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী রেবেকা সুলতানা এর দায়িত্ব নেন। এর পরপরই লোকজন অফিস ছেড়ে চলে যেতে শুরু করে। কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। আকবারের স্ত্রী ও ছেলে এখন ঢাকায় থাকেন। ১০-১২ বছর ধরে অফিস পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। জমি দখলে রাখার জন্য নামে মাত্র একটা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, নাজনীন ইসলাম নামে কাউকে তাঁরা চেনেন না। আকবর মারা যাওয়ার পর তাঁর স্ত্রী রেবেকা সুলতানার নামে এনজিও করে নেওয়া হয়েছে বলে তাঁরা শুনেছেন। এখন কাগজে কলমে যে সাতজন কমিটিতে আছেন, তাঁরা রেবেকা সুলতানার আত্মীয়স্বজন।মনিরামপুরে সিডের পরিত্যক্ত কার্যালয়ের সাইনবোর্ড।

এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা হয় রেবেকা সুলতানার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সিডের বর্তমান সভাপতি নাজনীন ইসলামের ঢাকায় এনজিও আছে। তিনি ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা। আমি তাঁর এখানে কাজ করি। বর্তমানে এনজিওর তেমন কোনো কাজ নেই। এ জন্য নাজনীন ইসলামকে সভাপতি করেছি।’

রেবেকা সুলতানা আরও বলেন, ‘আমি সিডের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বে আছি। নির্বাচন কমিশন থেকে আগে কখনো পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পাইনি। এবারই প্রথম এই দায়িত্ব পেলাম। অনেক সংস্থা থেকে আমাকে ফোন করে তথ্য চেয়েছে। সেই সংস্থাগুলো আমার পক্ষে রিপোর্ট দিয়েছে।’

এদিকে মনিরামপুর বাজারের পোস্টঅফিস পাড়ায় ডেভেলপমেন্ট পার্টনার (ডিপি) দপ্তরে গিয়ে কানিজ শবনম শাপলা নামের একজনকে পাওয়া গেছে। তিনি ডিপির নির্বাহী পরিচালক। তাঁর নির্দেশে অফিস ধোয়ামোছার কাজ করছেন এক শ্রমিক।

স্থানীয়রা বলছেন, কয়েক বছরে কোনো সময় অফিস খুলতে দেখা যায়নি। আগে এ অফিসে একজন সরকারি লোক ভাড়া থাকতেন। তাঁকে ছাড়া অফিসে কাউকে আসতে দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপির নির্বাহী পরিচালক কানিজ শবনম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের নওগাঁয় ভিজিডির কাজ চলমান রয়েছে। সেখানে ছয়জন লোক কাজ করছে। মনিরামপুরে কার্যক্রম না থাকায় নিয়মিত অফিস খোলা হয় না। মাঝেমধ্যে আমি আসি।’

কানিজ শবনম আরও বলেন, ‘২৭ জন সাধারণ সদস্য ও ৯ সদস্যের নির্বাহী কমিটি রয়েছে ডিপির। সংস্থার বর্তমান সভাপতি মোকাম্মেল হোসেনের বাড়ি উপজেলার কাশিমনগর ইউনিয়নে। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। ২০১৮ সালে আমরা যশোর ও সাতক্ষীরা এলাকায় পর্যবেক্ষকের কাজ করেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত