Ajker Patrika

খুলনায় এসআই-কাণ্ড: ৭ ঘণ্টা অবরোধ শেষে সরে গেল বিক্ষোভকারীরা

খুলনা প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ জুন ২০২৫, ২২: ৫৩
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে সড়ক অবরোধ করে রেখেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে সড়ক অবরোধ করে রেখেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা

পুলিশের পলাতক উপপরিদর্শক (এসআই) সুকান্ত দাশকে ছেড়ে দেওয়ার প্রতিবাদে এবং পুলিশ কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দারের পদত্যাগের দাবিতে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সদর দপ্তরে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশ কমিশনারসহ অন্য কর্মকর্তারা কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। কেএমপি সদর দপ্তরের সামনের সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে বিক্ষোভও করেন আন্দোলনকারীরা।

নগরীর খানজাহান আলী সড়কে কেএমপি সদর দপ্তরের সামনে আজ বুধবার বেলা সোয়া ২টা থেকে এ বিক্ষোভ শুরু হয়। আন্দোলনকারীরা পুলিশ কমিশনারের পাশাপাশি উপপুলিশ কমিশনার (সিটিএসবি) এম এম শাকিলুজ্জামানেরও পদত্যাগ দাবি করেছেন। তাঁরা উপপুলিশ কমিশনার এম এম শাকিলুজ্জামানকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়েছেন।

তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাত পৌনে ৯টার দিকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তরের সামনে থেকে সরে গেছেন বিক্ষোভকারীরা। প্রায় সাত ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ শেষে যাওয়ার সময় তারা ঘেষণা দেন, তাদের দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবার কেএমপি সদর দপ্তরের সামনে অবস্থান নেবেন।

রাত পৌনে ১০টায় প্রধান ফটকের তালা ভেঙে কেএমপির সদর দপ্তর থেকে বের হয়েছেন পুলিশ কমিশনারসহ অন্য কর্মকর্তারা। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, এর আগে পুলিশ সদস্যরা রাতের জন্য রান্নাও করেছিলেন। কর্মকর্তারা রাতে সেখানে থাকার প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন।

প্রসঙ্গত, খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানার এসআই সুকান্ত দাশ গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে চাকরিতে যোগদান না করে পলাতক ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর ইস্টার্ন গেট এলাকায় তাঁকে মারধর করে পুলিশে দেয় ছাত্র-জনতা। রাতে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে সড়ক অবরোধ করে রেখেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে সড়ক অবরোধ করে রেখেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। বুধবার সকাল থেকে খুলনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বেলা সোয়া ২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের নেতৃত্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রূপসার কেএমপি ভবন ঘেরাও করেন। এ সময় বিক্ষুব্ধরা সদর দপ্তরের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। এ ছাড়া বাঁশ ও কাঠ দিয়ে খানজাহান আলী রোডে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। টায়ারেও আগুন দেওয়া হয় এ সময়।

তালা ঝুলছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তরে। ছবি: আজকের পত্রিকা
তালা ঝুলছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তরে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য ও খুলনা মহানগরে আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ মুখপাত্র রুমি রহমান বলেন, ‘এসআই সুকান্তকে ছেড়ে দেওয়ার প্রতিবাদে আমরা বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমরা পুলিশ কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণের দাবিতে অবস্থান করছি। তিনি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চলবে।’

বিক্ষোভকারী আরেক শিক্ষার্থী তসলিম হোসেন বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা ছিল ছাত্রদের ওপর হামলাকারী ও একাধিক মামলার আসামি এসআই সুকান্তকে বিচারের আওতায় আনা হবে। কিন্তু তা না করে তাঁকে ছেড়ে দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। পুলিশ কমিশনারের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান চলবে।’

জানতে চাইলে মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ খালেদী বলেন, ‘পুলিশ কমিশনার স্যার অফিস করছেন। পরিস্থিতি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি।’

কেএমপির আরেক উপপুলিশ কমিশনার সাকিবুজ্জামান বলেন, ‘আমরা আইনগতভাবে বিষয়টি দেখছি।’

এদিকে জানতে চাইলে কেএমপির পুলিশ কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, এসআই সুকান্তসহ সারা দেশে অনেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত চলছে। তদন্তে অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই তাঁদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তা ছাড়া এসআই সুকান্ত তো নজরদারির বাইরে নেই। তিনি বলেন, সারা দেশে পুলিশ এমনিতেই আতঙ্কে রয়েছে। এভাবে চললে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়বে। পদত্যাগের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার পদত্যাগের কারণে যদি সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, তাহলে আমি পদত্যাগ করতে রাজি আছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত