Ajker Patrika

বাইরে রোগীর দীর্ঘ সারি, ভেতরে চিকিৎসকের চেয়ার খালি

আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৩, ২০: ২৪
বাইরে রোগীর দীর্ঘ সারি, ভেতরে চিকিৎসকের চেয়ার খালি

যশোরের মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসে ৪০০ থেকে ৫০০ রোগী। কিন্তু চিকিৎসকের অভাবে রোগীরা প্রয়োজনীয় সেবা পায় না। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ বলছে চিকিৎসক সংকটের কথা। তবে অভিযোগ রয়েছে, নানা কারণে ছুটি নিয়ে চিকিৎসকেরা বাইরে থাকেন, হাসপাতালে ঠিকমতো বসেন না। যে কারণে রোগীরা সেবাবঞ্চিত হয়।

আজ রোববার সরেজমিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মনিরামপুর হাসপাতাল ঘুরে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। কয়েকজন চিকিৎসককে হাসপাতালে অনুপস্থিত পাওয়া গেছে। এ সময় চিকিৎসকদের কক্ষের সামনে ২০-৩০ জন রোগী টিকিট নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। টিকিট নেওয়ার অপেক্ষায় কাউন্টারের সামনে ছিল রোগীদের দীর্ঘ সারি।

এ সময় দেখা গেছে, ১১৬ নম্বর কক্ষে চিকিৎসকের একটি চেয়ার খালি পড়ে আছে। পাশের চেয়ারে বসে রোগী দেখছেন ডা. তরিকুল ইসলাম। ১১৭ নম্বর কক্ষে দুটি চেয়ারের একটিতে ডা. জিসান আহমেদকে পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১১৯ নম্বর কক্ষে ফরিদুল ইসলাম, ১১৮ নম্বর কক্ষে দন্তচিকিৎসক//// বিউটি রানী, ১২৫ নম্বর কক্ষে তামান্না খাতুন ও শিশুবিশেষজ্ঞ জেসমিন সুমাইয়া, ১২৬ নম্বর কক্ষে তাহমিনা ইসলাম এবং ২১১ নম্বর কক্ষে ডা. অনূপ বসুকে রোগী দেখতে দেখা গেছে। 

২১২ নম্বর কক্ষ খোলা থাকলেও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক আমিনুল বারীকে ভেতরে পাওয়া যায়নি। আর সার্জারি বিশেষজ্ঞ আসাদুজ্জামানের ২১৩ নম্বর কক্ষ তালাবদ্ধ পাওয়া গেছে। পরে খবর নিয়ে জানা গেল ডা. আমিনুল বারী ছুটিতে আছেন। 

খালি পড়ে আছে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের চেম্বার। ছবি: আজকের পত্রিকাসার্জারি বিশেষজ্ঞ আসাদুজ্জামান বৈকালিক চেম্বারে বসবেন। তিনি বৈকালিক চেম্বারের দিন অফিস সময়ে হাসপাতালে বসেন না। আর অসুস্থতার কারণে ছুটিতে আছেন ডা. রঘুরাম চন্দ্র। বিকেল ও রাত্রিকালীন ডিউটি করেন চিকিৎসক হুমায়ুন কবির। সাবিহা মোত্তাকি ও নাহিদ হাসান হাসপাতালের বাইরে আছেন। 

হাসপাতালের বহির্বিভাগে ১১৯ নম্বর কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল করিম বলেন, ‘শারীরিক সমস্যা নিয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হাসপাতালে এসেছি। ডাক্তার কিছু পরীক্ষা দিয়েছেন। পরীক্ষার কাগজপত্র নিয়ে ঘণ্টাখানেক ধরে দাঁড়িয়ে আছি। এখনো সিরিয়াল পাইনি।’ 

১১৭ নম্বর কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা হেলাঞ্চি গ্রামের বৃদ্ধা হাজিরা বেগম বলেন, ‘মাথা ও চোখের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আইছি। এক-দেড় ঘণ্টা পার হয়ে গেছে। ডাক্তার দেখাতি পারিনি।’ 

মনিরামপুর হাসপাতালের বহির্বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, হঠাৎ জ্বর, সর্দি ও কাশি বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে রবি ও বুধবার রোগীর সংখ্যা ৫০০ থেকে ৫৫০ জনে পৌঁছায়। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে ৪০০ জন বোগী টিকিট সংগ্রহ করেছেন। আরও অন্তত ২০০ রোগী টিকিটের অপেক্ষায় কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। 

১১৭ নম্বর কক্ষে এক চিকিৎসকের চেয়ার খালি পড়ে আছে। ছবি: আজকের পত্রিকাএ বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তন্ময় বিশ্বাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, হাসপাতালটি ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। সে তুলনায় চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। হাসপাতালে কনসালট্যান্টের ৫টি পদ ও ১০টি মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য। 

তন্ময় বিশ্বাস আরও বলেন, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ জাহাঙ্গীর হোসেন দুই বছর আগে এখানে যোগ দিয়েছেন। তখন থেকে তিনি প্রেষণে যশোর সদরে রোগী দেখেন। মনিরামপুরে কোনো দিন ডিউটি করেননি। এ ছাড়া এখানকার নিয়োগে তিন চিকিৎসক স্থানীয় আদেশে যশোর সদরে ডিউটি করছেন। ২০২১ সাল থেকে ডা. সুমন নাগ বিনা ছুটিতে বিদেশে অবস্থান করছেন। তাঁর বিষয়টি দপ্তরকে লিখিতভাবে একাধিকবার জানানো হলেও কাজ হয়নি। 

ডা. তন্ময় বলেন, চিকিৎসক সংকটের কারণে ভালোভাবে রোগীর সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ সংকট কাটাতে শূন্য ও প্রেষণে থাকা চিকিৎসকদের পদে নতুন লোক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাকিস্তানের সামরিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার সামনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ভারত: ব্রিটিশ বিশ্লেষক

কী লিখেছিলেন মাহফুজ আলম, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ডিলিট করলেন কেন

প্রশাসনিক আদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ ভুল, আ.লীগের কার্যক্রম বন্ধ সঠিক: বিএনপি

প্রথম ভাষণে গাজা প্রসঙ্গে যা বললেন পোপ লিও চতুর্দশ

এবার ‘পাকিস্তানপন্থার’ বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত