Ajker Patrika

নবান্নে জমে উঠেছে কালাইয়ের মাছের মেলা

জয়পুরহাট প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ০৭
কালাই উপজেলার পাঁচশিরা বাজারে এক দিনের মাছের মেলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কালাই উপজেলার পাঁচশিরা বাজারে এক দিনের মাছের মেলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

সকাল সাড়ে ৬টা। কুয়াশা তখনো পুরো কাটেনি। হালকা শীত আর কুয়াশার ভেতর লাল সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ছে নতুন ধানের মাঠে। জয়পুরহাট-বগুড়া আঞ্চলিক মহাসড়কে নৈশকোচ ও মালবাহী ট্রাক চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। পিচঢালা পথ ধরে একটু এগোতেই শোনা গেল মানুষের শোরগোল। সেখানে নবান্ন উপলক্ষে বসেছে মাছের মেলা।

নবান্ন উপলক্ষে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পাঁচশিরা বাজারে এক দিনের মাছের মেলা বসেছে। মেলার অদূরে মহাসড়কের দুই পাশে সারি সারি ভটভটি ও বিভিন্ন পরিবহনে পলিথিনে জিইয়ে রাখা হয়েছে মাছ। বাজারে ঢুকতেই চোখে পড়ে রঙিন কাগজ আর বেলুনে সাজানো প্রায় ৩০টি স্টল। এসব স্টলে সারি সারি সাজানো রুই, কাতলা, সিলভার কার্প, ব্রিগেড, গ্রাস কার্প, মিনার কার্প, পাঙ্গাশসহ নানা জাতের ছোট-বড় মাছ। বড় সাইজের মাছ সামনের সারিতে রাখা। বড় বড় মাছ উঁচিয়ে হাঁকডাক দিয়ে বিক্রেতারা ডাকছেন ক্রেতাদের। ক্রেতাদের কেউ জামাতাকে খাওয়ানোর জন্য বড় মাছ খুঁজছেন, কেউবা নতুন চালের পিঠা-পায়েসের আয়োজনে আসা অতিথিদের খাওয়ানোর জন্য মাঝারি আকারের মাছ বেছে নিচ্ছেন।

কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহান বলেন, ‘কালাইয়ে নবান্ন উপলক্ষে প্রতিবছর মাছের মেলা বসে পাঁচশিরা বাজারে। এই মেলায় রকমারি প্রজাতির বড় বড় মাছের আমদানি হয়। এটি এলাকার জনগণের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। মেলাটি রীতিমতো এলাকার ঐতিহ্য বহন করছে। এই মেলার মাধ্যমে পারিবারিক আত্মীয়তার নিবিড় সম্পর্কের মেলবন্ধন তৈরি হচ্ছে, ঘটছে সম্পর্কের সমৃদ্ধি। বড় বড় মাছের আমদানি প্রমাণ করে আমরা মাছ চাষে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি অর্জন করেছি। মৎস্য সম্পদ সম্প্রসারণের অগ্রগতি লক্ষণীয়, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখছে। মেলাটি ২৫ বছর পার করছে। আমরা চাই, এটি ভবিষ্যতে শতবর্ষ উদ্‌যাপন করুক।’

মেলার আয়োজক ও ইজারাদার কমিটির পক্ষে আব্দুল আলীম সরকার বলেন, ২০০০ সাল থেকে এই মেলা শুরু। প্রতিবছর জমজমাট হয়। শ্বশুর-জামাই, আত্মীয়স্বজনসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় এটি। মা-বাবা সন্তানদের বড় মাছ দেখাতে নিয়ে আসেন। এবার দেড় থেকে দুই কোটি টাকার মাছ বেচাকেনা হতে পারে।

পাঁচশিরা বাজারের মাছ বিক্রেতা রেজোয়ান হোসেন প্রামাণিক বলেন, ‘এবার প্রায় সাত শ মণ মাছ আমদানি করা হয়েছে। বগুড়া, নওগাঁ, নাটোর, গাইবান্ধা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে মাছ এনেছি। ২০ থেকে ২২ কেজি ওজনের ব্লাডকার্প, সিলভারকার্প, ব্রিগেড, কাতলা—সবই আছে। মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। আমরা আজ ১৬ কেজি ওজনের একটি ব্রিগেড মাছ এক হাজার টাকা কেজি দরে ১৬ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। মেলায় ব্যাপক সাড়া পেয়েছি ক্রেতামহল থেকে। আশানুরূপ লাভ হয়েছে। আমরাও খুশি এমন একটি আয়োজনে শরিক হতে পেরে।’

সমশিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এনামুল হক বলেন, এই মেলা শুধু কেনাবেচা নয়। এটি পারিবারিক সম্পর্ক মজবুত করার এক সাংস্কৃতিক আয়োজন। জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থেকে দুই সন্তানকে নিয়ে মাছ কিনতে এসেছেন নূরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মাছ তো কিনবই, তবে বাচ্চাদের বড় মাছ দেখাতে এনেছি। যেন ভবিষ্যতে এই মেলার গল্প বলতে পারে।’

উল্লেখ্য, ভোর থেকে শুরু হওয়া এ মাছের মেলাটি সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...