Ajker Patrika

বর্ষীয়ান রেইনট্রিগাছটি কাটতে চায় প্রশাসন, বাধ সেধেছেন এলাকাবাসী

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
মধুপুর বাজারে রেইনট্রিগাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা
মধুপুর বাজারে রেইনট্রিগাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুপুর বাজারে সবুজ পাতা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি রেইনট্রিগাছ। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, গাছটির বয়স ১৫০ বছর হবে। প্রাচীন গাছটি এখন কাটতে চাইছে প্রশাসন। তবে তাতে বাধ সেধেছেন এলাকাবাসী। তাঁদের দাবি, বছরের পর বছর ধরে পরম মমতায় ছায়া দিয়ে তাঁদের আগলে রেখেছে গাছটি। এ গাছ তাঁদের কোনো ক্ষতি করেনি। ইতিমধ্যে গাছটি না কাটার জন্য স্থানীয় ৬১ জন বাসিন্দা স্ট্যাম্পে সই করে প্রশাসনের কাছে অঙ্গীকারনামা জমা দিয়েছেন। আজ বুধবার দুপুরে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসনে আরার কার্যালয়ে অঙ্গীকারনামায় সই করা ব্যক্তিদের ডেকে হ্যাঁ-না ভোট করা হয়। ভোটেও গাছ না কাটার পক্ষ জয়ী হয়। তা সত্ত্বেও গাছটি কাটতে অনড় প্রশাসন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সদর উপজেলার পোড়াহাটি ইউনিয়নের মধুপুর বাজারটির আনুমানিক বয়স দেড় শ বছর। বাজারটি গড়ে ওঠার সময় থেকেই এই গাছ বেড়ে উঠেছে বলে মনে করেন তাঁরা।

মধুপুর বাজারের ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতির সভাপতি একলাচুর রহমান (৭২) জানান, তাঁদের ধারণা, বাজারটি গড়ে ওঠার সময় দক্ষিণ পাশে এই রেইনট্রিগাছের চারা রোপণ করা হয়েছিল, যা কালক্রমে অনেক বড় হয়েছে। বর্তমানে বাজারটিতে আড়াই শর বেশি দোকানপাট রয়েছে। বাজারের একপাশের শতাধিক দোকানপাট এ গাছের ছায়া ভোগ করছে। গাছটি বাজারের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে। তা ছাড়া এখন পর্যন্ত গাছের ডাল পড়ে তাঁদের বা কোনো ব্যবসায়ীর ক্ষতি হয়নি।

একলাচুর রহমান আরও জানান, জুলাই মাসের শেষদিকে প্রবল বৃষ্টিতে মাছ বাজারের পাশে একটি ছোট বটগাছ চাঁদনির ওপর হেলে পড়ে। তখন ব্যবসায়ীরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনকে গাছটি কাটতে অনুরোধ করেন। এরপর উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ইউএনও হোসনে আরা সরেজমিনে গাছটি দেখতে আসেন। পরে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হেলে পড়া বটগাছটির সঙ্গে তরতাজা সবুজ রেইনট্রিগাছটিও নিলাম আহ্বান করা হয়। ১০ সেপ্টেম্বর এই নিলাম হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন আবেদন ও অঙ্গীকারনামার কারণে তা সাময়িক স্থগিত করা হলেও পরে আবার নিলাম ডাকা হয়। নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হন স্থানীয় যুবদল নেতা মনিরুল ইসলাম।

বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম জানান, তাঁরা হঠাৎ করে জানতে পারেন, বাজারের হেলে পড়া বটগাছের সঙ্গে বড় রেইনট্রিগাছটিরও নিলাম ডাকা হয়েছে। এ খবর পেয়ে তাঁরা প্রথমে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে যান। তিনি সঠিক উত্তর দিতে না পারলে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওর দপ্তরে যান। সেখানে গিয়ে তাঁদের অভিযোগ জানান এবং গাছটি না কাটার দাবি জানান। এ সময় ইউএনও একটি অঙ্গীকারনামা দিতে বলেন। এতে গাছের ডাল পড়ে অথবা গাছ উপড়ে কোনো জানমালের ক্ষতি হলে বা আর্থিক ক্ষতি হলে তাঁদের দায়ী থাকতে হবে বলে বলা হয়। গাছ রক্ষায় এলাকার ৬১ জন মানুষ নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকার দিয়েছেন। তাঁরা গাছটি বাঁচাতে মানববন্ধনসহ যেকোনো কঠোর কর্মসূচি নেবেন বলে জানান রাকিবুল।

ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ঝড়বাদলে গাছটি ভেঙে পড়লে মানুষের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন। এ জন্য গাছটি অপসারণের বিষয়ে ইউএনওর সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেছিলেন। তবে এখন তিনিও চান, বর্ষীয়ান এ গাছ বেঁচে থাকুক।

ইউএনও হোসনে আরা বলেন, ‘গাছ নিলামের অনুমতি দিয়েছেন ডিসি স্যার। ডিসি স্যার অঙ্গীকারনামা আমলে নেননি। তা ছাড়া সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিলাম কমিটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি। আমি শুধু নির্দেশ পালন করছি।’

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘প্রথমে স্থানীয় বাসিন্দারা গাছটি ঝুঁকিপূর্ণ বলেছিলেন। গাছ কাটার সম্পূর্ণ প্রসেসিং হয়ে যায় যখন, তখন তাঁরা আবার বলেন, গাছটি ঝুঁকিপূর্ণ নয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলেছি, ওই এলাকার মানুষদের সঙ্গে বসে কথা বলতে। তাঁরা যদি ঝুঁকিপূর্ণ না মনে করেন এবং জনস্বার্থে যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত