Ajker Patrika

গ্রেপ্তারের পরদিন জেলহাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, নির্যাতনের অভিযোগ পরিবারের

যশোর ও কেশবপুর প্রতিনিধি 
ওয়ালিউর রহমান উজ্জ্বল। ছবি: সংগৃহীত
ওয়ালিউর রহমান উজ্জ্বল। ছবি: সংগৃহীত

যশোরের কেশবপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার বহিষ্কৃত যুবদল নেতা ওয়ালিউর রহমান উজ্জ্বলের (৩৯) মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আবিদ আহম্মেদ এই মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিকে মৃতের পরিবারের অভিযোগ, যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তারের সময় অমানুষিক নির্যাতন ও চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে উজ্জ্বলের মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার আলতাপোলে যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্র, গুলি, মাদকসহ উজ্জ্বলসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলার পরে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। উজ্জ্বল পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তিনি কেশবপুর উপজেলার আলতাপোলের নাজির বিশ্বাসের ছেলে।

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আবিদ আহম্মেদ জানান, গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার পর উজ্জ্বলকে কারাগারে হস্তান্তর করা হয়। সে সময় তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাঁর নথিতে উল্লেখ ছিল, তিনি গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। কারাগারে গ্রহণকালে যেসব প্রশ্ন করা হয়, তিনি তাঁর উত্তর স্বাভাবিকভাবেই দিয়েছিলেন। তবে তিনি ‘ইন্টারনাল হ্যামারেজের’ শিকার ছিলেন। এ সময় তাঁকে কারা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রায় ১৫ মিনিট পর তাঁকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসক জানান, তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশে চাপা আঘাত ছিল এবং অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়েছে।

উজ্জ্বল বিশ্বাসের ভাই কেশবপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আফজাল হোসেন বাবু জানান, রাতে তাঁরা জানতে পারেন, তাঁর ভাই উজ্জ্বল বিশ্বাস জেলহাজতে মারা গেছেন। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ কেশবপুরে আনা হবে। আফজাল হোসেন বাবু বলেন, ‘বৃহস্পতিবার গভীর রাতে যৌথ বাহিনী উজ্জ্বলের বাড়িতে অভিযান চালায়। অভিযানে তল্লাশির নামে ভাঙচুর করেছে তারা। এ সময় উজ্জ্বলের বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছু পায়নি। থানায় এসে তাঁর নামে অস্ত্র, মাদক দেখিয়ে মামলা দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অভিযানের সময়ে বাড়িতে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ওই সময় উজ্জ্বলের হাত-মুখ বেঁধে রাত ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অমানুষিক নির্যাতন করেছে তারা। নির্যাতনের পর শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত সে চিকিৎসা পায়নি। অভিযানে অমানুষিক নির্যাতন ও চিকিৎসার অভাবে উজ্জ্বলের মৃত্যু হয়েছে।’

উজ্জ্বলের লাশ যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। সকাল থেকে বিএনপি ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতারা এবং নিহতের স্বজনেরা হাসপাতালে ভিড় করেন। এই মৃত্যুর বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কসহ চিকিৎসকেরা কোনো মন্তব্য করেননি। তবে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবুল বাশার বলেন, ‘অভিযানের পর আসামিদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর পুলিশ বাদী হয়ে চার আসামির নামে মামলা করে। পরিবার থেকে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে; সেটা সঠিক নয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...