Ajker Patrika

অবৈধ পথে ইতালিযাত্রা: দালাল ধরে ৩৫ যুবক নিখোঁজ

  • হবিগঞ্জের ৩৫ যুবক অবৈধ পথে ইতালির উদ্দেশে বাড়ি ছাড়েন তিন-চার মাস আগে
  • লিবিয়ায় অবস্থানরত হাসান আশরাফ নামের এক ব্যক্তি প্রথমে তাঁদের ত্রিপোলিতে নিয়ে যান
  • দুই সপ্তাহ আগে এসব যুবক ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করে নিখোঁজ রয়েছেন
সহিবুর রহমান, হবিগঞ্জ 
আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৭: ৪১
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের পশ্চিমভাগ গ্রামের নিখোঁজ সাব্বিরের ছবি হাতে তাঁর মা, ভাইবোনসহ স্বজনদের আহাজারি (বাঁয়ে) এবং একই গ্রামের বড়হাঁটি এলাকার হবিবুর তালুকদারের ছবি হাতে তাঁর মা, ছোট ভাইবোনসহ স্বজনেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের পশ্চিমভাগ গ্রামের নিখোঁজ সাব্বিরের ছবি হাতে তাঁর মা, ভাইবোনসহ স্বজনদের আহাজারি (বাঁয়ে) এবং একই গ্রামের বড়হাঁটি এলাকার হবিবুর তালুকদারের ছবি হাতে তাঁর মা, ছোট ভাইবোনসহ স্বজনেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

জমি বিক্রি ও ধারদেনা করে হবিগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার ৩৫ যুবক অবৈধভাবে ইতালির উদ্দেশে বাড়ি ছেড়েছেন তিন-চার মাস আগে। মানব পাচার চক্র তাঁদের ইউরোপের দেশটিতে পাঠানোর জন্য প্রথমে লিবিয়ার উপকূলীয় শহর ত্রিপোলিতে নিয়ে যায়। দুই সপ্তাহ আগে সেখান থেকে এসব যুবক নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করে নিখোঁজ রয়েছেন।

নিখোঁজ যুবকদের একাধিক পরিবারের অভিযোগ, মানব পাচার চক্র ওই যুবকদের ১ অক্টোবর ত্রিপোলি থেকে ইতালির উদ্দেশে নৌকায় করে পাঠানোর পর আর খোঁজ মিলছে না। স্বজনেরা তাঁদের সঙ্গে কোনোভাবে যোগাযোগও করতে পারছেন না। তাঁরা কোথায় আছেন, ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা নিয়ে তাঁদের পরিবারের স্বজনেরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

এদিকে ত্রিপোলির উপকূলীয় অঞ্চল থেকে গত দুই সপ্তাহে ৬১ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর লাশ উদ্ধারের খবরে হবিগঞ্জের ওই ৩৫ যুবকের পরিবারে আহাজারি চলছে।

নিখোঁজ যুবকদের মধ্যে ১৬ জনের নাম-পরিচয় জানা গেছে। তাঁরা হলেন জেলার বানিয়াচং উপজেলার যাত্রাপাশা তলাবপাড়া মহল্লার আলফাজ মিয়া রনি, মোজাক্কির আহমেদ, সিয়াম জমাদার ও মিজান আহমেদ; শ্রীমঙ্গলকান্দি গ্রামের সাইফুল ইসলাম বাবু ও জুবাঈদ মিয়া। আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশার ইমন ও পারভেজ, পশ্চিমভাগের রফিকুল ইসলাম পবলু, হাবিবুর রহমান, সাব্বির, মাহি ওরফে রাহুল, উজ্জ্বল ও পিন্টু এবং নোয়াগড় গ্রামের মো. মোক্তাকির ও রবিউল। নিখোঁজ অন্য যুবকদের বাড়ি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদনগর, বানিয়াচংয়ের উত্তর সাঙ্গরসহ বিভিন্ন এলাকায়। এর মধ্যে পশ্চিমভাগ গ্রামের ৬ জন রয়েছেন।

জানা গেছে, নিখোঁজ প্রত্যেক যুবককে ১৭-১৮ লাখ টাকার বিনিময়ে অবৈধ পথে নৌকাযোগে ইতালিতে পাঠান হাসান আশরাফ ওরফে সামায়ূন মোল্লা। তাঁর বাড়ি আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমভাগ গ্রামে। তিনি লিবিয়ায় বসবাস করছেন। হাসান দীর্ঘদিন ধরে নিজ এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে যুবকদের অবৈধ পথে ইতালিতে পাঠিয়ে আসছেন। এ জন্য তিনি প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৭-১৮ লাখ টাকা নিয়েছেন।

বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তরুণদের ইতালি পাঠাতে আগ্রহী করে তুলতে হাসান এলাকায় মানব পাচার চক্র গড়ে তুলেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পশ্চিমভাগ গ্রামের মিজানুর রহমান চৌধুরী, রোমান মিয়া, মোস্তাকিম তালুকদার ও শাহ মোকাররম। তাঁরা ইতালিতে যেতে আগ্রহী তরুণদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে হাসানের কাছে দিতেন।

আজমিরীগঞ্জের নোয়াগড় গ্রামের নিখোঁজ রবিউলের বাবা বাবলু মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলেকে হাসান প্রথমে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে লিবিয়ায় নিয়ে যান। পরে আরও ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে ছেলেকে ইতালিতে পাঠাবেন বলে চুক্তি করেন। সে অনুযায়ী আমি সব টাকা তাঁর লোকজনের কাছে দিয়েছি। ১ অক্টোবর আমাদের জানানো হয়েছিল, আমার ছেলেকে নৌকাযোগে ইতালিতে পাঠিয়েছেন। কিন্তু এর পর থেকে আমার ছেলের কোনো খোঁজ নেই। চিন্তা হচ্ছে, ছেলেটা কোন পরিস্থিতিতে আছে।’

একই গ্রামের নিখোঁজ মোক্তাকির মিয়ার ভাই মহসিন আহমেদ বলেন, ‘আমার ভাই চার মাস আগে হাসানের মাধ্যমে লিবিয়া যান। সেখান থেকে ১ অক্টোবর নৌকায় করে ইতালির উদ্দেশে রওনা দেন। কিন্তু ১৫ দিন ধরে তাঁর আর খোঁজ মিলছে না। হাসান জানিয়েছেন, আমার ভাই বেঁচে আছেন। কিন্তু আমরা ভাইয়ের কোনো যোগাযোগ করতে পারছি না।’

পশ্চিমভাগ গ্রামের নিখোঁজ সাব্বিরের বাবা আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, ‘প্রায় তিন মাস আগে হাসান আশরাফের মাধ্যমে আমার ছেলেকে লিবিয়ায় পাঠিয়েছি। পরে তাঁর কথা অনুযায়ী সাব্বিরকে ইতালি পাঠানোর জন্য অনেক কষ্ট করে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এবং বাড়ির জায়গা-জমি ও গরু-ছাগল বিক্রি করে হাসানকে মোট ১৮ লাখ টাকা দিয়েছি। কিন্তু এখন ছেলের কোনো খোঁজ পাচ্ছি না।’

নিখোঁজ আলফাজ মিয়া রনির বড় ভাই মনির মিয়া বলেন, ‘ইতালির উদ্দেশে ১ অক্টোবর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে লিবিয়ার ত্রিপোলি থেকে চারটি নৌকা ছেড়ে যায়। এর মধ্যে একটি নৌকায় ছিলেন ৭০ জন। এর মধ্যে হবিগঞ্জের ৩৫ যুবক ছিলেন। সেই নৌকাটিই নিখোঁজ রয়েছে।’

অভিযোগের বিষয়ে হাসান আশরাফের সঙ্গে মেসেঞ্জারে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি গুজবে কান না দিতে অনুরোধ করে বলেন, ‘এটা সত্য যে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তবে তাঁরা কেউ মারা যাননি। তাঁরা হয়তো কোনো দেশের জাহাজে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে আটক আছেন। আমি তাঁদের অবস্থান জানার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আশা করি, শিগগির তাঁদের অবস্থান জানা যাবে।’

আজমিরীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিবিড় রঞ্জন তালুকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অবৈধভাবে ইতালিতে যাওয়ার পথে কয়েকজন তরুণ নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। যদিও এখন পর্যন্ত নিখোঁজ সদস্যদের পরিবার থেকে কোনো ধরনের লিখিত অভিযোগ পাইনি। পরিবারের লোকজন যদি আমাদের কাছে আসেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের সহযোগিতা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

উত্তরায় জুলাই রেভেলসের দুই সদস্যকে কুপিয়ে জখম

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে: তিন দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...