Ajker Patrika

বসতভিটা বিক্রি করে বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে সৌদি যাত্রা, ফিরলেন লাশ হয়ে

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
নিহত রানা মিয়া। ছবি: সংগৃহীত
নিহত রানা মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

সংসারের সচ্ছলতার আশায় দালালের প্রলোভনে সৌদি আরব পাড়ি দিয়েছিলেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের রানা মিয়া (৩৫)। দেড় বছরের মাথায় সেই বুকভরা স্বপ্ন ভেঙে তিনি ফিরলেন লাশ হয়ে। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পরিবার ও এলাকায়।

রানা মিয়া গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাবাড়ী ইউনিয়নের পলুপাড়া গ্রামের মৃত জামেদ আলীর ছেলে। সংসারের উন্নতির আশায় তিনি প্রায় ছয় শতক বসতভিটা ৩ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। পাশাপাশি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের গোবিন্দগঞ্জ শাখা থেকে নেন আড়াই লাখ টাকা ঋণ। এরপর স্থানীয় দালাল, শিবপুর ইউনিয়নের সেলিম মিয়ার মাধ্যমে দেড় বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমান।

বিদেশে গিয়ে রানা মিয়া বুঝতে পারেন, তাঁকে ভালো কোনো কোম্পানিতে চাকরি দেওয়া হয়নি। বরং টুরিস্ট ভিসার কাগজে পাঠানো হয়েছে। এই ভিসায় কাজের সুযোগ সীমিত থাকায় তিনি বাধ্য হয়ে দালাল চক্রের অধীনে কঠোর পরিশ্রমের কাজ করতে থাকেন। কিন্তু কষ্টের বিনিময়ে উপার্জিত টাকাও হাতিয়ে নেয় ওই দালাল চক্র।

অসহায় হয়ে তিনি একাধিকবার স্থানীয় দালাল সেলিমের কাছে সাহায্য চান। কিন্তু কোনো সাড়া পাননি। পরে বাড়ি থেকে আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে আরও ৬০ হাজার টাকা ধার করে এক ব্যক্তির অধীনে মোটরসাইকেলে ফুড ডেলিভারির কাজ শুরু করেন। এভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছিলেন তিনি।

গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে ফুড ডেলিভারির সময় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান রানা মিয়া। তাঁর মৃত্যুর খবরে গ্রাম শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মরদেহ পৌঁছায়। পরে রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ গ্রামের বাড়ি পলুপাড়ায় নেওয়া হলে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

রানা মিয়া স্ত্রী আরেফা বেগম, ১১ বছর বয়সী তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছেলে আরাফাত ও পাঁচ বছরের শিশু রাফিকে রেখে গেছেন। স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন স্ত্রী। সন্তানদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বড় ভাইয়ের বাড়িতে মানবেতর জীবন যাপন করছিলেন তিনি।

শোকে কাতর আরেফা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ভেবেছিলাম কষ্ট হলেও স্বামী টাকা উপার্জন করে ফিরবে। হয়তো আবার বসতভিটা কিনে সংসারে সুখ ফিরবে। কিন্তু দালালের খপ্পরে পড়ে সব শেষ হয়ে গেল। এখন আমি শুধু প্রতারক দালালের বিচার চাই। পাশাপাশি সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা কামনা করছি।’

স্থানীয়দের দাবি, প্রতারক দালালদের কারণে প্রতিবছর অনেক পরিবার পথে বসছে। এ ঘটনায় প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত