Ajker Patrika

সুন্দরগঞ্জে অ্যানথ্রাক্স: উপসর্গ গোপনে বাড়ছে ঝুঁকি

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি 
অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত ছাগলের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত ছাগলের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ছে অ্যানথ্রাক্স (তড়কা রোগ)। গবাদিপশুর এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। এ উপসর্গ নিয়ে মারাও গেছেন মোছা. রোজিনা বেগম নামের এক নারী। কিন্তু সে তুলনায় নেই সচেতনতা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা। ফলে চরম উৎকণ্ঠা আর উদ্বিগ্নে দিন কাটছে সুন্দরগঞ্জবাসীর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অ্যানথ্রাক্স মোকাবিলায় ভ্যাকসিন দেওয়ার কার্যক্রম চলছে কিছু কিছু এলাকায়। সচেতনতা বাড়াতেও চলছে প্রচার-প্রচারণা। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এদিকে ৮০ পয়সার ভ্যাকসিন এখন ২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ তথ্যমতে, উপজেলায় এ পর্যন্ত ১৩টি গরু অ্যানথ্রাক্সে মারা গেছে। তবে গবাদিপশুর মালিকদের দাবি, মৃত গরুর সংখ্যা শতাধিক। এ রোগের উপসর্গ নিয়ে এক নারী মারা গেছেন। সরকারের হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ জন হলেও ৫০ ছাড়িয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।

এদিকে অভিযোগ রয়েছে, আক্রান্ত ব্যক্তিরা অ্যানথ্রাক্সের বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকদের কাছে। আবার কোনো কোনো চিকিৎসক এ উপসর্গের রোগীদের চিকিৎসা দিতে গড়িমসি করছেন বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ অবস্থায় চরম আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায় দিন পার করছে এলাকাবাসী।

উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের (ফলগাছা) ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মো. ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘এ রোগ প্রতিরোধ করতে পারে কেবল সচেতনতা। কিন্তু সে ধরনের কোনো কার্যকর ভূমিকা এখনো দেখছি না। সচেতনতায় এ পর্যন্ত কোনো মিটিং, আলোচনা বা মাইকিংও শুনিনি। পশু হাসপাতালের কোনো লোককেও আমার ওয়ার্ডে দেখিনি। বা কেউ বললও না যে আমি পশু হাসপাতাল থেকে আসতেছি। আপনি সহযোগিতা করেন।’

বেলকা ইউনিয়নের জহুরুলের মোড়ের পল্লিচিকিৎসক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘এ পর্যন্ত অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে আসা চারজন অসুস্থ ব্যক্তিকে পরামর্শ দিয়েছি। তাঁদের কেউ সহজে স্বীকার করেননি। তথ্য পেতে রাগারাগিও করেছি অনেকের সঙ্গে। লজ্জা এবং ভয় দুটোই দেখেছি তাঁদের চোখেমুখে।’

অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া রোজিনা বেগমের ছেলে মো. রইসুল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘অসুস্থ মাকে ৪ অক্টোবর সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। আমার মাকে কোনো ডাক্তার বা নার্স ছোঁয়নি। ডাক্তার এসে দূর থেকে ছবি তুলেছেন। ছেলেপেলেদের দিয়ে প্রেশার মাপিয়েছেন। কিন্তু মাকে নাড়ানাড়ি আমরাই করেছি। পরে ফোড়া স্যালাইন ও অক্সিজেন দিয়ে রংপুর নিতে বলেন। একজন রোগীর সঙ্গে ডাক্তারের যে আচরণ হওয়া দরকার, সেটি আমরা পাইনি। সম্ভবত তাঁরা এ রোগকে ভয় অথবা ঘৃণা করেছেন।’

বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে এক নারী মারা যাওয়ার পর থেকে গবাদিপশুর ভ্যাকসিন দিচ্ছে জোরেসোরে। তবে জনবল কম হওয়ায় এগোতে পারছেন না। জনবল আরও বাড়ানো দরকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘কারও শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দিলেও তাঁরা লজ্জা বা ভয়ে গোপন রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এ ধরনের উপসর্গ যে ভয়ের কিছু না, সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে আরও প্রচারণা চালানো দরকার।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দিবাকর বসাক মো. রইসুল মিয়ার অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘বরং ওই সময়ে মেডিকেল আবাসিক অফিসার ও ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার দুজনে তাঁর মাকে দেখেছেন। যদি না-ই দেখতেন, তাহলে চিকিৎসা দিলেন কীভাবে। বরং তাঁর মা মারা যাওয়ার সংবাদ পাওয়ার পর একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। তাঁরাই পাত্তা দেননি আমাদের।’

এ বিষয়ে কথা হয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার দের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত ২৪ হাজার গবাদিপশুকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। মজুত আছে ভ্যাকসিন। আরও ১ লাখ চেয়ে আবেদন করেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১৫ সেনা কর্মকর্তাকে রাখা হতে পারে সাবজেলে

‘কলিজা ছেঁড়ার’ হুমকি সারজিসের: ৮ মিনিট বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের কারণ জানাল নেসকো

শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা, স্বজনদের সঙ্গে মরদেহ খোঁজেন অভিযুক্ত তরুণ

অবৈধ ভাটা বন্ধ না হলে উপদেষ্টা রিজওয়ানাকে চেয়ারে রাখব না— হুঁশিয়ারি এনসিপি নেতার

ক্ষোভ ঝাড়তে গিয়ে উপমা ব্যবহার করেছি, সেটা উচিত হয়নি—‘কলিজা ছেঁড়া’ মন্তব্যের ব্যাখ্যায় সারজিস

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত