Ajker Patrika

ফরিদপুরে চাঁদাবাজির অভিযোগে ওসিসহ ২ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২২, ২২: ৫৫
ফরিদপুরে চাঁদাবাজির অভিযোগে ওসিসহ ২ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

ফরিদপুরে মারপিট, চাঁদাবাজি ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ওসিসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। আজ রোববার জেলার ছয় নম্বর আমলি আদালতে এ মামলাটি দায়ের করেন ফরিদপুরের সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের ঠেনঠেনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. মুরাদ মোল্লা (৪৬)। 

মুরাদ মোল্লা গট্টি ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এবং মো. তকি মোল্লার ছেলে। 

অভিযুক্তরা হলেন—সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশিকুজ্জামান ও ওই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. হান্নান। 

মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী ইব্রাহিম হোসেন মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করার জন্য ফরিদপুর পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) দায়িত্ব দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেন। এ ছাড়া অভিযোগটি বিভাগীয় তদন্তের জন্য ডিআইজি (ঢাকা রেঞ্জ) এবং ফরিদপুরের পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দেওয়ার আবেদন জানান। আদালত এ মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১৮ এপ্রিল ধার্য করেছেন। 

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মুরাদ মোল্লা গট্টি ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের তিনবারের নির্বাচিত ইউপি সদস্য। ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের আগে সালথা থানার ওসি তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অঙ্কের টাকা দাবি করেন। তাঁর দাবি করা টাকা না দিলে তাঁকে নির্বাচন করতে দেবে না বলে ভয়ভীতি দেখায়। এতে মুরাদ বাধ্য হয়ে ওসিকে ৭৫ হাজার টাকা দেন। পরবর্তীতে ওসি তাঁর কাছে বিভিন্ন সময় আরও এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। মুরাদ চাঁদার টাকা না দেওয়ায় ক্ষোভে ওসি তাঁকে ৩টি মিথ্যা মামলায় আসামি করেন। 

অভিযোগে বলা হয়, গত ১৪ মার্চ রাত আনুমানিক ১টার দিকে পূর্ব আক্রোশের জেরে ওসি তাঁর ভাই জিহাদকে পুলিশ দিয়ে কোনো মামলা বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই সালথা থানায় নিয়ে যায়। মুরাদ পরদিন সকাল ৮টার দিকে সালথা থানায় গিয়ে থানার হাজতখানায় মোট ৮ জন লোককে দেখতে যান। সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে ওসি তাঁর বাস ভবন থেকে অফিসে আসার পথে মুরাদের সঙ্গে দেখা হয়। তখন মুরাদ ওসিকে তাঁর ভাইকে ধরে আনার কারণ জানতে চাইলে ওসি অপরাধের কথা না বলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য মুরাদের কাছে ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। ওসি তখন মুরাদকে বলেন, টাকা না দিলে তাঁর মতো তাঁর ভাইকেও ৩টা মামলা দিয়ে কোর্টে চালান করে দেবেন। ওই সময় মুরাদ চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাঁকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখান ওসি। এরপর তিনি থানা থেকে চলে আসেন। 

অভিযোগে আরও বলা হয়, মুরাদ ওসির দাবি করা চাঁদার টাকা না দিলে তাঁর আদেশে এসআই হান্নান তাঁর ভাই জিহাদকে থানা হাজতখানা থেকে বের করে ভিন্ন রুমে নিয়ে রুমের জানালার সঙ্গে হাতে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে শক্ত লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে জখম করেন। ওই দিন সন্ধ্যায় তাঁর ভাই জিহাদকে মিথ্যা মামলায় আসামি করে আদালতে প্রেরণ করা হয়। ওই মামলায় গত বুধবার তাঁর ভাই জামিনে বের হন। গুরুতর আঘাত পাওয়ায় তাঁকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

এদিকে আদালতে মামলার পরপরই আজ রোববার বিকেলে সালথা থানায় সংবাদ সম্মেলন করেন ওসি মো. আশিকুজ্জামান। 

সংবাদ সম্মেলনে ওসি লিখিত বক্তব্যে জানান, গত ১৩ মার্চ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গট্টি ইউনিয়নের বাসুয়ারকান্দি গ্রামে বলা মিয়া ও ইকব শেখের মধ্যে গ্রাম্য দলাদলি নিয়ে মারামারি হয়। ওই মারামারি ঘটনায় বেশ কয়েকজন মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়। এই ঘটনার জেরে গট্টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মধ্যে বিরোধ ছড়িয়ে পড়ায় বড় ধরনের সংঘাত সৃষ্টি, খুন ও জখম হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। গত ১৩ মার্চ দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে গোপন সংবাদ পাওয়া যায় যে, অলিন ফকির ও শাজাহান মাতুব্বরের নেতৃত্বে একটি দল ও নুরু মাতুব্বরের নেতৃত্বে অপর একটি দল লোকজন নিয়ে মারামারির উদ্দেশে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রসহ বালিয়াগট্টি সার্কিনের মুসল্লী বাড়ির সামনে অবস্থান করছেন। 

এই সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাত্রিকালীন ডিউটিতে নিয়োজিত অফিসার এসআই মো. শরীয়ত উল্লাহকে ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। তিনি দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ সমবেত হতে থাকা উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ হওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু উচ্ছৃঙ্খল জনতা ছত্রভঙ্গ না হয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। ওই সময় ওসি পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সবাইকে ছত্রভঙ্গ হওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু উপস্থিত দুই পক্ষের লোকজনই পুলিশি নির্দেশ অমান্য করে পুলিশের ওপর বেপরোয়াভাবে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। একপর্যায়ে লাঠিপেটা করে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করা হয়। এরপর ঘটনাস্থল থেকে এ ঘটনায় জড়িত মো. আক্কাস শেখ, মজনু ফকির, জিহাদ মোল্লা, সজিব মিয়াদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং ঘটনাস্থল থেকে আসামিদের ব্যবহৃত ফেলে রাখা ৫টি বেতের ঢাল, ১০ টি ইটের টুকরা, ৩ টি বাঁশের লাঠি জব্দ করা হয়। 

ওসি জানান, আসামিদের দেওয়া তথ্যমতে, উভয় পক্ষের বাড়িঘর তল্লাশি করে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৩০টি ঢাল ও ২৫টি কাতরা উদ্ধার করা হয়। 

এ ঘটনায় এসআই শরীয়ত উল্লাহ বাদী হয়ে সালথা থানার মামলা দায়ের করেন।। মামলার পর আইন অনুযায়ী গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের আদালতে প্রেরণ করা হয়। 

ওসি দাবি করে বলেন, ওই দিন পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার এবং দেশীয় অস্ত্রগুলো উদ্ধার না করলে গট্টি ইউপি এলাকায় খুন জখমসহ ব্যাপক দাঙ্গা হাঙ্গামার সম্ভাবনা ছিল। 

লিখিত অভিযোগে ওসি আশিকুজ্জামান দাবি করে বলেন, মো. মুরাদ মোল্লা গট্টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ তাঁর ভাই জিহাদকে থানা হাজত থেকে তদবির করেও ছাড়িয়ে নিতে না পেরে মুরাদ মোল্লার দীর্ঘদিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ভাঙা পা জনসম্মুখে দেখিয়ে মানুষের মনে সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করেন। এ ছাড়া আসামি জিহাদ মোল্লাকে মারপিট করে টাকা দাবি করার মনগড়া, বানোয়াট এবং মিথ্যা ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করেন। 

এ ব্যাপারে ফরিদপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ আমরা এখনো পাইনি। আদালতের নির্দেশ পেলে এ ব্যাপারে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’ 

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় জেলা পুলিশ এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। দোষী প্রমাণিত হলে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধ করলে কাউকে কোন ছাড় দেওয়া হবে না।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পিস্তল দিয়ে বাবলার পিঠে এলোপাতাড়ি গুলি করে মুহূর্তেই সটকে পড়ে মুখোশধারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম নগরের চালিতাতলী এলাকার মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়ে নেতা-কর্মীদের নিয়ে একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ঢুকেছিলেন চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ। হাত থেকে লিফলেট দিয়ে দোকানদারের সঙ্গে কুশল বিনিময়ে ব্যস্ত ছিলেন এরশাদ উল্লাহ। সাথে ছিলেন ১৫–২০ জনের মতো নেতা–কর্মী।

বিএনপি প্রার্থীর খুব কাছাকাছি ছিলেন এক ডজনের বেশি মামলার আসামি সরওয়ার বাবলা (৪৩)। তাঁর গায়ে ছিল সাদা প্যান্ট ও গেঞ্জি। গেঞ্জির পেছনে বড় অক্ষরের ইংরেজি লেখা। বাবলার পিঠের কাছাকাছি একজন সেলফিতে ব্যস্ত, আচমকা পেছন থেকে একটি হাত উঠে, বাড়ন্ত ওই হাতে ছিল স্বয়ংক্রিয় পিস্তল। কেউ কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই ঠাস ঠাস আওয়াজ। মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন বাবলা। মুহূর্তের মধ্যে সটকে পড়ে হামলাকারীরা। সবার মুখে মাস্ক ছিল। সংখ্যায় তাঁরা ৮ জনের মতো ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী মো. শাহাবুদ্দিন ও মো. ইসমাইল জানান, গণসংযোগকালে প্রায় ৭/৮ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ খুব কাছ থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে।

ঘটনাস্থল থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় বাবলাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা পিতা আবদুল কাদের ও ভাই মো. আজিজ আহাজারি করে বলেন, এভাবে গুলি করে বাবলাকে মারার ঘটনা নজিরবিহীন। কার কাছে বিচার চাইব।

ঘটনা সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শী মো. শাহাবুদ্দিন জানান, গণসংযোগের প্রচারনা দলের সাথে মিশে গিয়েছিল সন্ত্রাসীরা। কেউ কোন কিছু আঁচ করতে পারেনি এই কারণে।

এই ঘটনায় পাশে থাকা বিএনপি প্রার্থী এরশাদের সঙ্গে শান্ত নামে আরেকজন গুলিবিদ্ধ হন। সবাইকে কাছাকাছি এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। দায়িত্বরত চিকিৎসকরা বাবলাকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর দুজন আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন এভারকেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এভারকেয়ার হাসপাতালের এজিএম রাম প্রসাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিনজনের মধ্যে সরোয়ার বাবলা মারা গেছেন। বাকি দুইজনের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত।

এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে বায়েজিদ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তবে কাউকে ঘটনাস্থল থেকে কিংবা অন্য কোনো স্থান থেকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন জানান, গোলাগুলির ঘটনায় একজন মারা গেছেন। আহত দুইজনের অবস্থা শঙ্কামুক্ত। ঘটনার বিষয়ে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। যেকোন মূল্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা হবে বলেও জানান তিনি।

চট্টগ্রামে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে নির্বাচনী গণসংযোগে অংশ নেয় সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা। বুধবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নগরের বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এর আগে মাগরিবের নামাজের পরপরই শুরু হওয়া নির্বাচনী গণসংযোগে এলোপাতাড়ি গুলির ঘটনা ঘটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বগুড়ায় যুবক খুন, স্ত্রী ও তাঁর মামাতো ভাই গ্রেপ্তার

বগুড়া প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বগুড়ায় জহুরুল ইসলাম (৩৮) নামের এক যুবককে খুনের অভিযোগে তাঁর স্ত্রীসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বগুড়া সদরের হাজরাদীঘি গ্রামের বাসিন্দা জহুরুল ইসলামের রক্তাক্ত লাশ গতকাল মঙ্গলবার সকালে ওই গ্রামের একটি ধানখেত থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) ভোরে নিহত যুবকের স্ত্রী শামিমা বেগম (২৮) ও বিপুল হোসেন (৩৫) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিপুল শামিমার মামাতো ভাই।

বগুড়া সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ জানায়, গতকাল সকালে হাজরাদীঘি গ্রামের একটি ধানখেতে জহুরুল ইসলামের রক্তাক্ত মরদেহ দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেন। নিহত যুবকের মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের একাধিক চিহ্ন ছিল। লাশ উদ্ধারের পর নিহত যুবকের স্ত্রী পুলিশকে জানান, গত সোমবার রাত ১১টার দিকে মোবাইল ফোনে কে বা কারা জহুরুলকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর রাতে জহুরুল আর ফিরে আসেননি। কিন্তু পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তিগত তদন্ত করে নিহত যুবকের স্ত্রী শামিমা ও তাঁর মামাতো ভাই পার্শ্ববর্তী অন্তাহার গ্রামের হামিদুর রহমানের ছেলে বিপুল হোসেনকে সন্দেহ করে। পরে আজ ভোরে নিহত জহুরুলের বাড়ি থেকে তাঁর স্ত্রী শামিমা ও বিপুলকে আটক করে।

থানায় দুজনকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করলে বের হয় চাঞ্চল্যকর তথ্য। নিহত যুবকের স্ত্রী শামিমা পুলিশকে জানান, তাঁরা স্বামী-স্ত্রী একে অপরের মামাতো-ফুফাতো ভাই-বোন। আর জহুরুল ও বিপুল একে অপরের খালাতো ভাই। জহুরুল ইসলামের বাড়ি কাহালু উপজেলায় হলেও বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর ছোটবেলা থেকেই তিনি মামার বাড়ি হাজরাদীঘি গ্রামে বসবাস করতেন। তিনি পেশায় বেকারি পণ্যসামগ্রী পরিবহনের ভ্যানচালক আর বিপুল পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক। জহুরুলের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় ১৫ বছর আগে। তাঁদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। জহুরুলের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার আগে থেকেই বিপুলের সঙ্গে শামিমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ের পরেও তাঁরা প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বিপুল মাঝেমধ্যে শামিমার বাড়িতে আসতেন। শামিমার বাবা বিপুল ও জহুরুলের মামা হওয়ার কারণে গ্রামের লোকজন বিষয়টি সন্দেহের চোখে দেখতেন না। কিন্তু বিপুলের যাতায়াত পছন্দ করতেন না জহুরুল। এ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে জহুরুলের দাম্পত্যকলহ লেগেই থাকত। শামিমার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বিপুল তাঁকে একটি ছোট মোবাইল ফোন কিনে দেন। সেই ফোনটি শামিমা লুকিয়ে রাখতেন। এভাবে দীর্ঘদিন সম্পর্ক চলার একপর্যায় স্বামীকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য বিপুলের সঙ্গে পরামর্শ করেন শামিমা। দুজনের পরিকল্পনা অনুযায়ী গত সোমবার রাতে শামিমা দুধের সঙ্গে কৌশলে তাঁর স্বামীকে ১৫টি ঘুমের বড়ি সেবন করান। কিছুক্ষণ পর অচেতন হয়ে পড়লে রাত ১১টার দিকে বিপুল শামিমার বাড়ি আসেন। এরপর বিপুল কাঁধে করে জহুরুলকে বাড়ি থেকে বের করে গ্রামের একটি মাঠে পরিত্যক্ত বাড়ির কাছে নিয়ে যান। এ সময় সঙ্গে শামিমাও সেখানে যান। এরপর জহুরুলের মাথা পরিত্যক্ত বাড়ির দেয়ালের সঙ্গে কয়েকবার আঘাত করেন। একপর্যায়ে একটি পুরোনো স্যানিটারি প্যানের পরিত্যক্ত ভাঙা অংশ দিয়ে জহুরুলের মাথায় একাধিক আঘাত করে পাশের ধানখেতে ফেলে রেখে দুজন চলে যান।

পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজার রহমান জানান, নিহত জহুরুলের মা-বাবার সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ না থাকায় এ ঘটনায় গ্রেপ্তার শামিমার বাবা শাহিনুর রহমান বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। সেই মামলায় দুজনকে আদালতে হাজির করা হয়েছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নেছারাবাদে স্কুলছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ, থানায় মামলা

নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

পিরোজপুরের নেছারাবাদে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে (৯) দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে নেছারাবাদ থানায় মামলা দায়ের করেন।

এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন নয়ন (২০), অপূর্ব (২০) ও দুর্জয় হালদার (২০)।

বুধবার (৫ নভেম্বর) ভুক্তভোগীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য পিরোজপুর সিভিল সার্জন অফিসে পাঠানো হয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার দিকে ভুক্তভোগী ছাত্রী প্রতিবেশী দুর্জয় হালদারের ঘরে মোবাইল চার্জার আনতে গেলে মুখে গামছা বেঁধে নয়ন, অপূর্ব ও দুর্জয় জোরপূর্বক তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ ছাড়া আসামিরা বিভিন্ন সময়ে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।

নেছারাবাদ থানার ওসি মো. বনি আমিন বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য সিভিল সার্জন অফিসে পাঠানো হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টেকনাফে কোকো ক্রীড়া সংসদের আহ্বায়কের লাশ উদ্ধারের পর সম্পাদক পলাতক

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি 
নিহত মো. ইউনুস। ছবি: সংগৃহীত
নিহত মো. ইউনুস। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় আরাফাত রহমান কোকো ক্রীড়া সংসদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ ইউনুস সিকদারের (৫০) লাশ উদ্ধারের পর থেকে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. আলম সবুর মিয়া পলাতক রয়েছেন।

উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী এলাকার একটি সেতুর নিচ থেকে বুধবার সকাল ৮টার দিকে ইউনুস সিকদারের লাশ উদ্ধার করা হয়। ইউনুস উপজেলার সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন।

পরিবারের অভিযোগ, ইউনুস গতকাল মঙ্গলবার রাতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. আলম সবুর মিয়ার বাড়িতে আমন্ত্রণে গিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর থেকে সবুর মিয়া পলাতক।

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূর জানান, সেতুর নিচ থেকে ভাসমান অবস্থায় একজন পুরুষের মরদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা ওপরে তুলে শনাক্ত করেন। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গ পাঠিয়েছে।

ওসি জানান, ধারণা করা হচ্ছে, লেনদেনসংক্রান্ত পাওনা টাকা আদায়ের জন্য এই হত্যাকাণ্ড। এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

টেকনাফ পৌর বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস সালাম বলেন, ইউনুসকে কমিটির কথা বলে সবুর মিয়া আমন্ত্রণ জানান। মঙ্গলবার রাতে যাওয়ার পর পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মরদেহ সেতুর নিচে ফেলে দেওয়া হয়। ঘটনার পর সবুর মিয়া পলাতক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রঙ্গিখালী এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, ইউনুস প্রায়ই সবুর মিয়ার বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। সবুর মিয়া, আবছার উদ্দিন, আনোয়ার হোসাইন ওরফে লেটাইয়্যা, মিজানুর রহমান ওরফে বাড়ু মিজানসহ কয়েকজন মিলে এলাকার দোকানে আড্ডাও দিতেন। কয়েক দিন ধরে ইয়াবাসংক্রান্ত পাওয়া টাকার বিরোধের জেরেই তাঁদের মধ্যে প্রকাশ্যে কথা-কাটাকাটির ঘটনা শোনা গেছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে সবুর মিয়ার বাড়িতে ইউনুসকে আটকে ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়। এতে মারা যাওয়ার পর লাশ সেতুর নিচে রেখে বাড়িতে তালা দিয়ে সবুরসহ অভিযুক্তরা পালিয়ে যান।

নিহতের স্ত্রী কোহিনুর আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামীকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। কোনো প্রকার টাকার লেনদেন নেই। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই।’

ওসি জানান, পাওয়া টাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে কী লেনদেনের টাকা, জানা যায়নি। যাঁদের নাম বলা হচ্ছে, তাঁদের ধরতে চেষ্টা চলছে। নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত