Ajker Patrika

বাসহীন যাত্রী ছাউনিতে দোকান

অর্চি হক, ঢাকা
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১০: ১০
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন চানখাঁরপুল এলাকায় যাত্রীছাউনি দখল করে বিভিন্ন পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে যাত্রীছাউনিটি কাজে আসছে না। ছবিটি গতকাল দুপুরে তোলা। 	আজকের পত্রিকা
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন চানখাঁরপুল এলাকায় যাত্রীছাউনি দখল করে বিভিন্ন পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে যাত্রীছাউনিটি কাজে আসছে না। ছবিটি গতকাল দুপুরে তোলা। আজকের পত্রিকা

ভেঙে যাওয়া স্টিলের আসনের কাঠামোর ওপরে বসানো কাঠের বেঞ্চি। তার গা-ঘেঁষে চায়ের দোকান। জায়গাটি যাত্রীছাউনি হলেও সেখানে থামে না বাস। চায়ের দোকানদার জানালেন, কঙ্কালসার যাত্রীছাউনিটিতে এখনো যে মানুষ বসতে পারে, সেটা তাঁরই অবদান। আসনের স্টিল/লোহাগুলো খুলে নিয়ে গেছে ভবঘুরেরা, তার ওপরে কাঠের বেঞ্চিটা তিনিই বসিয়েছেন। যাঁরা চা খেতে আসেন, তাঁরা ওখানে বসেন। ওই জায়গাটুকু না থাকলে তাঁর বেচাবিক্রিও কমে যাবে। রাজধানীর আজিমপুরে ইডেন মহিলা কলেজের সামনের রাস্তার যাত্রীছাউনির চিত্র এটি।

গত মঙ্গলবার বিকেলে ছাউনিতে বসে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন সাবরিনা আকতার নামের এক নারী। দীর্ঘসময় অপেক্ষার পর তিনি বুঝতে পারলেন, এখানে কোনো বাস থামে না। জানতে চাইলে সাবরিনা কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলতে থাকেন, ‘বাসই যদি না থামে, তাইলে এইটা বানাইছে ক্যান?’

আরও কয়েকটি স্থান সরেজমিনে দেখা গেল, শুধু এই ছাউনিই নয়, রাজধানীর বেশির ভাগ যাত্রীছাউনি ও বাস বে’র (গণপরিবহনের যাত্রী ওঠা-নামার জন্য নির্ধারিত স্থান) একই অবস্থা। কয়েক কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হলেও রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির অভাবে এগুলো যাত্রীদের কাজে লাগছে না। কোনো ছাউনি থাকে হকার আর ভবঘুরেদের দখলে, কোনোটা পড়ে আছে অকেজো হয়ে। বেশির ভাগ ছাউনির সামনে থামে না বাস। ফলে দূরে এলোমেলোভাবে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে উঠতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। মাঝেমধ্যে চলন্ত বাসে উঠতে গিয়ে আহত হন কেউ কেউ।

২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও নগর-পরিকল্পনাবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী রাজধানীর দুই সিটির অধীনে ১৩০টি বাস স্টপেজ ও যাত্রীছাউনি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাসরুট রেশনালাইজেশন কমিটির চাহিদামতো বিভিন্ন পথে চলা বাসের রুট অনুযায়ী যাত্রীছাউনি নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়।

তবে দুই সিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জায়গা না পাওয়াসহ নানা কারণে পরিকল্পনা অনুযায়ী যাত্রীছাউনি ও বাস বে নির্মাণ সম্ভব হয়নি। দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ২০১৬ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত অন্তত ৬৯টি নতুন যাত্রীছাউনি নির্মিত হয়। এ ছাড়া সংস্কার করা হয় পুরোনো কয়েকটি ছাউনি।

নগর-পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, দুই সিটিতেই গত কয়েক বছরে বেশ কিছু যাত্রীছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু পরিকল্পনাতে যেই স্থানে ছাউনিগুলো করার কথা বলা হয়েছিল, অনেক ক্ষেত্রে সেই জায়গায় ছাউনি নির্মাণ সম্ভব হয়নি। আগে বা পরে নির্মাণ করা হয়েছে। মূল পয়েন্টে নির্মাণ না করার কারণে সেখানে বাস থামে না।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, কিছু ছাউনি নির্মাণ করতে গিয়ে দেখা গেছে, সেটার নিচ দিয়ে ড্রেনেজ লাইন বা ইউটিলিটিজ লাইন চলে গেছে। ফলে সেখানে ছাউনি নির্মাণ করা যায়নি। আগে বা পরে নির্মাণ করতে হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে আবার জায়গা পাওয়া যায়নি। তাই পরিকল্পনা অনুযায়ী যাত্রীছাউনি নির্মাণ সম্ভব হয়নি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় মোট কয়টি যাত্রীছাউনি আছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ২০১৬ সাল থেকে ডিএসসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের আওতায় ৪০টি ছাউনি ও বাস বে তৈরি করা হয়েছে। আর চারটি পুরোনো যাত্রীছাউনি মেরামত করা হয়েছে। নতুন যাত্রীছাউনি নির্মাণে একেকটিতে গড়ে সাত থেকে সাড়ে সাত লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। কিছু ক্ষেত্রে ছাউনির মূল কাঠামো ছাড়াও পুলিশ বক্স, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ফুটপাত সংস্কার, বাস বে নির্মাণ করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে খরচ আরও বেশি পড়েছে। নতুন নির্মিত ২০টি ছাউনি বিজ্ঞাপনের জন্য ভাড়া দিয়েছে ডিএসসিসি। ২০ যাত্রীছাউনি থেকে বছরে মেলে ৩১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) রয়েছে অন্তত ২৯টি ছাউনি। এর মধ্যে বিমানবন্দর সড়ক অংশের বনানী ও কাকলি প্রান্তে এবং কালশী মোড়ের ছাউনিগুলোতে রয়েছে বাস বে। এসব বাস বে ও যাত্রীছাউনি নির্মাণে ব্যয় গড়ে ১২ লাখ টাকা করে প্রায় ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা। আরও ২৪টি ছাউনির পরিকল্পনা রয়েছে ডিএনসিসির।

এ ছাড়াও সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ২০১৮ সালে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ বিমানবন্দর সড়কের দুই পাশে দৃষ্টিনন্দন ১২টি যাত্রীছাউনি নির্মাণ করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর গুলিস্তান, মালিবাগ, মগবাজার, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, ঢাকা সেনানিবাস রেলওয়ে স্টেশন, এমইএস, বনানী, কাকলি, গুলশান, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি-২৭, সোবহানবাগ, কলাবাগান, ল্যাবএইড হাসপাতাল, শ্যামলী, মিরপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁওসহ বিভিন্ন পয়েন্টে থাকা যাত্রীছাউনির কোনোটিতে বেসরকারি উদ্যোগে চলা কোনো গণপরিবহন তথা বাস থামে না। তবে বাসরুট রেশনালাইজেশন কমিটির উদ্যোগে চলা ‘নগর পরিবহনে’র বাস কিছু যাত্রীছাউনিতে থামতে দেখা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত