Ajker Patrika

প্রেমিকার বিয়ে ঠেকাতে হত্যা, ফেঁসে গেলেন নিরীহ জাহিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রেমিকার বিয়ে ঠেকাতে হত্যা, ফেঁসে গেলেন নিরীহ জাহিদ

ঢাকার ধামরাই এলাকার শাহাদত নামে এক যুবকের সঙ্গে পারিবারিকভাবে একই এলাকার এক তরুণীর বিয়ে ঠিক হয়। সেই তরুণীর সঙ্গে একই গ্রামের জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহিদের (২২) প্রেম ছিল। নিজের প্রেমিকার অন্য জায়গায় বিবাহ জাহিদুল ইসলাম মেনে নিতে না পেরে সহযোগীদের নিয়ে শাহাদাতকে হত্যা করেন। গাছে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এই ঘটনায় পরিবারের মামলায় জাহিদুল ইসলামকে আসামি না করে নিহতের বন্ধু ও প্রতিবেশী যুবক জাহিদ ও তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। 

আর ওই মামলায় মূল ঘাতক জাহিদুল ইসলামের বদলে জেল খাটছেন শাহাদাতের প্রতিবেশী জাহিদ। 

গতকাল মঙ্গলবার রাতে র‍্যাব-৪ ঢাকার ধামরাই থানা ও আশুলিয়া থানার আমরাইল এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যায় জড়িত ৫ জনের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মো. জাহিদুল ইসলাম ওরেফ জাহিদ (২২), আবু তাহের (২৪) ও ভ্যানচালক সবুজ হোসেন (২৮)। 

আজ বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। 

খন্দকার আল মঈন বলেন, ২০২১ সালের ১ আগস্টে ধামরাইয়ের আমরাইল গ্রামের শাহাদাত নামের এক যুবক কালিয়াকৈরে তাঁর কর্মস্থলে যাওয়ার পরে গত ৪ আগস্ট থেকে বাড়ির সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ ছিল না। তখন তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় গত ৮ আগস্ট কালিয়াকৈর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে তাঁর পরিবার। 

মঈন আরও জানান, ওই বছরের ১২ আগস্ট ধামরাইয়ের আমরাইল গ্রামের একটি বাগান থেকে নিখোঁজ শাহাদাতের অর্ধগলিত ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ধামরাই থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়। এ ছাড়া গত ১২ আগস্ট ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, ঘটনাটি আত্মহত্যা নয়, হত্যা। পরে নিহত শাহাদাতের মা ২৩ সেপ্টেম্বর বাদী হয়ে ধামরাই থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ধামরাই থানা-পুলিশ গত ৩০ সেপ্টেম্বর নিহত শাহাদাতের বন্ধু জাহিদকে গ্রেপ্তার করে। জাহিদ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি না দেওয়ায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে তাঁকে জেলে পাঠানো হয়। 

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাবের মুখপাত্র বলেন, ভুক্তভোগী শাহাদাত ধামরাইয়ের যাদবপুর ইউনিয়নের আমরাইল গ্রামের কোহিনুর ইসলামের ছেলে। তিনি কালিয়াকৈর উপজেলার বারইপাড়ায় একটি কারখানার কর্মচারী ছিলেন। গত ১৪ আগস্ট আসামি জাহিদের প্রেমিকার সঙ্গে শাহাদাতের বিবাহের দিন ঠিক করা ছিল। নিজের প্রেমিকার অন্য জায়গায় বিবাহ মেনে নিতে না পারার জের ধরে জাহিদ তাঁর সহযোগীদের সঙ্গে পরিকল্পনা করে শাহাদাতকে হত্যা করেন। 

র‍্যাবের মুখপাত্র আরও বলেন, ভিকটিম ও আসামিরা সবাই ধামরাইয়ের মাদবপুর ইউনিয়নের আমরাইল গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। তাঁরা পূর্বপরিচিত ছিলেন। তাঁরা একত্র হয়ে ভাড়া বাসা ও নিজ এলাকায় জুয়ার আসর বসাতেন। গত ৩ আগস্ট শাহাদাতকে চন্দ্রা থেকে গাজীপুর জেলার কাশিমপুরের কাছে মাটির মসজিদ এলাকায় ডেকে নিয়ে আসা হয়। একপর্যায়ে আসামিরা তাঁকে ফুসলিয়ে জুয়া খেলতে ধামরাইয়ের আমরাইল এলাকায় নিয়ে যান। সেখানে ভুক্তভোগীকে ফুসলিয়ে দুই দিন রাখা হয়। পরে ৬ আগস্ট সন্ধ্যার সময় সবাই একত্রে ভুক্তভোগীকে নিয়ে ধামরাইয়ের আমরাইল এলাকায় ভাড়া বাসায় আসেন। সেখান থেকে আশুলিয়ার একটি ফাঁকা নির্জন এলাকায় নিয়ে শাহাদাতের হাত-পা বেঁধে ফেলেন। প্রথমে জাহিদ ভুক্তভোগীকে চড়-থাপ্পড় মারেন এবং বিশেষ অঙ্গে ৪-৫টি লাথি মারেন। 

এ সময় তাঁদের সঙ্গে থাকা লাঠি দিয়ে ভিকটিমের মাথায় আঘাত করে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করেন। 

কমান্ডার মঈন বলেন, আসামিরা শাহাদাতের লাশ ভ্যানচালক সবুজের ভ্যানে করে ধামরাই থানার আমরাইল পুকুরিয়া সাকিনের মনুমিয়ার বাগানের কাছে নিয়ে যান। সেখানে গাছের একটি ডালে কাঁচা পাট দিয়ে ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রাখেন, যাতে এটি একটি স্বাভাবিক আত্মহত্যা বোঝা যায়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত