Ajker Patrika

বইমেলা এগোনোয় চিন্তায় প্রকাশকেরা

শরীফ নাসরুল্লাহ, ঢাকা
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

নির্বাচন ও রমজানের বিবেচনায় আগামী বছরের একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারি থেকে এগিয়ে এ বছরের ডিসেম্বরে আনা হয়েছে। রাজনৈতিক-সামাজিক অস্থিরতার জেরে গত বইমেলায় অনেক প্রকাশক লোকসান গুনেছেন। ফেব্রুয়ারির মেলা ঘিরেই এ দেশের বইয়ের মূল ব্যবসা। ফের লোকসানের শঙ্কায় তাই প্রকাশকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ বাড়ছে।

মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি ঘোষণা দিয়েছে, আগামী ১৭ ডিসেম্বর থেকে ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে এবারের অমর একুশে বইমেলা। এ ঘোষণার পর প্রকাশকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ বাস্তবতা মেনে নেওয়ার কথা বলছেন। কেউ কেউ বলেছেন, ফেব্রুয়ারি মাসে ভাষাশহীদদের স্মরণ করার ঐতিহ্যের বিবেচনায় জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মিলিয়েও মেলা করা যেত।

ডিসেম্বরে মেলা হওয়ায় প্রকাশকদের হাতে কার্যত আছে অক্টোবর ও নভেম্বর—এ দুই মাস। অপ্রত্যাশিতভাবে এ সিদ্ধান্ত আসায় প্রকাশকেরা মেলার জন্য প্রস্তুতি নিতে চাপে পড়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার দেশের প্রকাশনা ব্যবসার মূল কেন্দ্র পুরান ঢাকার বাংলাবাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেল, প্রকাশকদের মধ্যে বইমেলা নিয়ে খুব একটা আগ্রহ কিংবা ব্যস্ততা নেই। অনেকেই মনে করছেন, এবারের মেলায় লোকসান হতে পারে। মেলায় প্রকাশকদের অংশগ্রহণ কমতে পারেও বলে ধারণা কারও কারও।

উত্তরণ প্রকাশনীর কর্ণধার ও প্রধান নির্বাহী আহমেদ মাসুদুল হক বলেন, ‘বাংলা একাডেমির সিদ্ধান্তে আমরা খুশি হতে পারিনি। এর নানা কারণ আছে। চলতি বছরই ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা হলো, আবার ডিসেম্বরেই হচ্ছে! তাহলে একই বছরে দুটি বইমেলা হচ্ছে। আমরা চেয়েছিলাম, নির্বাচনের পর করা হোক। একাডেমি বলেছে, এপ্রিলে খুব গরম থাকবে। তাতে যুক্তি আছে। পরে বেশির ভাগ প্রকাশকেরই আবেদন ছিল, ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির কিছু অংশ যেন অন্তত থাকে। কিন্তু বাংলা একাডেমি নিরাপত্তার কথা বলে তাও নাকচ করে দিয়েছে।

আমাদের কোনো কথাই বাংলা একাডেমি রাখেনি।’

বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত বইমেলার তারিখ নির্ধারণ-সংক্রান্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন অনন্যা প্রকাশনীর কর্ণধার মো. মনিরুল হক। তিনি মনে করেন, চলতি বছর, আগামী বছর এবং তার পরের বছরও মেলা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ এ সময়ে মেলা রমজানে পড়বে। রমজানে মেলা সেভাবে জমে না। মনিরুল হক বলেন, ‘আমরা ধরেই নিয়েছি এবার লস হবে। গতবারও হয়েছে। যে কারণে এবার খুব একটা নতুন বই প্রকাশ করছি না।’

শুধু প্রস্তুতির সময়ের প্রশ্নই নয়, ডিসেম্বরে মেলায় পাঠক-ক্রেতা কতটা আসবে, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন প্রকাশকেরা। সময় এগিয়ে আনায় পাঠক আসায় প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন পুথিনিলয়ের কর্ণধার শ্যামল পাল। তিনি বলেন, প্রকাশক ও পাঠক উভয়ই ফেব্রুয়ারি মাসে মেলা করার ব্যাপারে অভ্যস্ত। সেক্ষেত্রে এগিয়ে আনলে প্রভাব পড়বে। তবে নির্বাচন ও রোজার জন্য মেলা আগাতেই হতো। এটা যদি ৫ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি করা হতো তাহলে ভালো হতো।

বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ও সূচীপত্রের কর্ণধার সাঈদ বারী বলেন, ‘মেলাকে দেড় মাস এগিয়ে আনার ঘোষণা আমাদের সবার মধ্যেই উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এটি একটি অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। কারণ লেখকেরা বছরের শেষ প্রান্তে তাঁদের পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করেন। এখনো অনেকে লিখছেন, সম্পাদনা করছেন। হঠাৎ সময় এগিয়ে দিলে অনেক বই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে, কিংবা তাড়াহুড়ো করে মানহীনভাবে প্রকাশিত হবে।’

সূচয়নী পাবলিশার্সের কর্ণধার ফজলুল হক বলেন, ‘বাংলা একাডেমি সৃজনশীল প্রকাশকদের সঙ্গে বসেনি। সমিতির (বাপুস) যাঁরা আছেন তাঁরা সৃজনশীল অনেক কিছু বোঝেন না। ফেব্রুয়ারিতে না হলে এ মেলা কোনোদিনই সফল হবে না।’

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, এককভাবে প্রকাশকের সঙ্গে একাডেমি বসতে পারে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত সমিতির (বাপুস) সঙ্গে একাডেমি বসেছে। এ সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয়ের। যে সভাটি হয়েছে তার সভাপতি ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব। সভায় বাপুসের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। প্রকাশকেরা অভিযোগগুলো বাপুসকে কেন বলছেন না?

বাংলাদেশ পুস্তক, প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির (বাপুস) সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, ‘আমরা তিনটি প্রস্তাব রেখেছিলাম। সেখানে মিটিংয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে এ সময়টিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। তবে প্রকাশকেরা যদি অন্য কিছু চান তাহলে আলাপ-আলোচনা করা যেতে পারে। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো প্রকাশক অভিযোগ করেননি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত