Ajker Patrika

প্রচণ্ড গরমে ট্রেন থেকে নেমে যাচ্ছেন অনেকে, ছাদেও দ্বিগুণ যাত্রী

রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর) 
আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২২, ১১: ৩৬
প্রচণ্ড গরমে ট্রেন থেকে নেমে যাচ্ছেন অনেকে, ছাদেও দ্বিগুণ যাত্রী

সকাল পৌনে ৭টা। জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনের দায়িত্বরত স্টেশনমাস্টার ঘোষণা দিলেন জামালপুর কমিউটার নামের একটি ট্রেন আসছে। মুহূর্তের মধ্যে স্টেশনে অপেক্ষারত যাত্রীরা নড়েচড়ে উঠলেন। ৭টা ৩ মিনিটে জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন পৌঁছার আগেই অপেক্ষমাণ ঘরমুখী যাত্রীদের চোখেমুখে দেখা গেল চিন্তার ছাপ। কারণ ট্রেনে যাত্রীদের ঠাসাঠাসি ভিড়। তিল ঠাঁই আর নাহিরে অবস্থা। 

ট্রেন থামার সঙ্গে সঙ্গে ওঠানামার হুড়োহুড়ি শুরু হলো। ওঠা তো দূরের কথা, নেমে একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচবেন, সেই সুযোগটুকুও নেই। তবু ঝুঁকি নিয়ে কেউ কেউ উঠলেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ গন্তব্যে পৌঁছার আগেই নেমে পড়লেন। কারণ ট্রেনের ভেতরে প্রচণ্ড গরমে এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, অসুস্থ, বয়স্ক ও শিশুদের জন্য খুবই ঝুঁকি। 

ট্রেন থেকে নেমেই প্ল্যাটফর্মে বসে পড়েন আজিজুল নামের এক যাত্রী। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি নামতাম গফরগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে। কিন্তু কোনোভাবেই ভেতরে টিকতে পারছিলাম না। ভেতরে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। তাই বাধ্য হয়ে নেমে গেছি।’ এখন বিকল্প কোনোভাবে বাড়িতে যাওয়ার কথা ভাবছেন তিনি। 

এ রকম আজিজুলের মতো জাহাঙ্গীর দম্পতি এসেছেন ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে বসে। তাঁরা বলেন, ‘এটা বসার জায়গা নয়। কীভাবে যে এসেছি একমাত্র আল্লাহ জানেন। এত গরম এখানে। কিছুতেই বসে থাকা সম্ভব নয়। তাই নেমে পড়েছি।’ 

জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনে উঠতে না পেরে বালিপাড়ার মহসিন বলেন, ‘ট্রেনে কী করে উঠব? ওঠার মতো কোনো পরিবেশ নেই। ডুবে যাওয়া জাহাজে কি কেউ উঠবে?’ 

এদিকে দাঁড়িয়ে যাওয়া অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে দুর্বিষহ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে আসনে বসা যাত্রীদের। অনেকের কাছে টিকিট থাকলেও নিজের আসন পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাতে পারেননি। টিকিট থাকার পরও ট্রেনে উঠতেই পারেননি, এমন ঘটনাও ঘটেছে। 

ঝুঁকি নিয়ে ছাদে ওঠার ক্ষেত্রে রেলওয়ে পুলিশের দায়িত্বরত কর্মকর্তা হাসান ইমাম বলেন, ‘ছাদের বেশির ভাগ যাত্রী কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে উঠে এসেছে। তবু পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের সতর্ক করা হচ্ছে। কতজনকে নামাব বলেন। ট্রেনের ভেতরের চেয়ে ছাদে বেশি যাত্রী।’ 

জামালপুর কমিউটার ট্রেনের চালক রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে ট্রেনের গতি অনেক কম। ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি যাত্রী উঠেছে ট্রেনে। এমনকি ইঞ্জিনের সামনেও মৌমাছির মতো মানুষ। তবু সবার নিরাপত্তার কথা ভেবে সাবধানে চলাতে হচ্ছে আমাকে।’ 

জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘ঢাকা থেকে বেশির ভাগ ট্রেন সঠিক সময়ে জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসছে না। কিছু সময় দেরিতে এসে পৌঁছায়। ঢাকা থেকে প্রতিটি ট্রেন অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে আসছে। এ জন্য জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনের অপেক্ষমাণ যাত্রীরা ট্রেনে উঠতে পারছে না। তিনি আরও জানান, শুধু জামালপুর কমিউটার ট্রেন নয়, সব ট্রেনে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত