Ajker Patrika

মেয়র জায়েদার শপথের পরদিনই গাজীপুর সিটি নির্বাচন বাতিল চেয়ে মামলা

গাজীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২৩, ২২: ১৯
মেয়র জায়েদার শপথের পরদিনই গাজীপুর সিটি নির্বাচন বাতিল চেয়ে মামলা

মেয়র জায়েদা খাতুন শপথ নেওয়ার পরদিনই গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন বাতিল চেয়ে মামলা করেছেন পরাজিত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। আজ মঙ্গলবার গাজীপুর সিনিয়র সহকারী জজ ১ নম্বর আদালত ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে এ মামলা করেন তিনি। পরে বিচারক আগামী ২ আগস্ট পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। 

গতকাল সোমবার মেয়র জায়েদা খাতুনকে শপথবাক্য পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

মামলার বাদী গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে গণফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মাছ প্রতীকে অংশ নিয়ে পরাজিত হন এবং তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। আইন অনুযায়ী সরকারি ট্রেজারিতে দশ হাজার টাকা জমা দিয়ে তিনি মামলাটি করেছেন। 

বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. নুর নবী সরদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, নির্বাচনী বিরোধ নিষ্পত্তিতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের গঠিত নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়েরের শেষ দিনে মঙ্গলবার (৪ জুলাই, ২০২৩) মামলাটি দায়ের করা হলো। নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল মামলা নম্বর ০৫ / ২৩। ট্রাইব্যুনাল মামলাটি গ্রহণ করে বিবাদীদের প্রতি সমনের আদেশ দিয়েছেন। আগামী ২ আগস্ট পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের আইন অনুযায়ী ১৮০ দিনের মধ্যে এ মামলা নিষ্পত্তি করার বিধান রয়েছে। 

মামলায় গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন-২০২৩-এ জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা, বাতিল এবং ২৫ মে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত প্রার্থীর নির্বাচন বাতিলের আবেদন করা হয়েছে। 

মামলায় গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুনকে ১ নম্বর বিবাদী এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. ফরিদুল ইসলামকে মোকাবিলা বিবাদী করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে মামলার বাদী আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে গত ১১ মে নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছিলাম, যা গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। আমি তখন ন্যায় বিচার পাইনি। আশা করি, ট্রাইব্যুনালে ন্যায় বিচার পাব।’ 

মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, ১ নম্বর বিবাদী জায়েদা খাতুন তাঁর নির্বাচনী হলফনামায় ‘পিতার নাম’ উল্লেখ করেছেন ‘শামসুল ইসলাম’। কিন্তু তাঁর ২০২২-২০২৩ কর বর্ষের আয়কর রিটার্নে ‘পিতার নাম’ উল্লেখ করেছেন ‘মরহুম মো. শামসুল হুদা’। এতে ১ নম্বর বিবাদী জায়েদা খাতুন তাঁর নির্বাচনী হলফনামায় অসত্য তথ্য প্রদান করেছেন। 

‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০’ এর ধারা ১৪ এর উপ ধারা (৩) অনুযায়ী ১ নম্বর বিবাদী জায়েদা খাতুনের মনোনয়ন বাতিল করার দায়িত্ব ও সুযোগ থাকলেও ৫ নম্বর মোকাবিলা বিবাদী গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন-২০২৩ এর রিটার্নিং অফিসার মো. ফরিদুল ইসলাম প্রতারণামূলকভাবে জায়েদা খাতুনের মনোনয়ন বাতিল করেননি। 

১ নম্বর বিবাদী জায়েদা খাতুন তাঁর নির্বাচনী হলফনামায় ১ নম্বর শর্ত পূরণ করেননি। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০ (সংশোধনী)-তে হলফনামায় (প্রার্থীর সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রের সত্যায়িত কপি সংযুক্ত করতে হবে) বলা থাকলেও জায়েদা খাতুন তাঁর নির্বাচনী হলফনামার সঙ্গে শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটের সত্যায়িত কপি সংযুক্ত না করে প্রতারণামূলকভাবে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনী হলফনামার এই শর্ত পূরণ করতে না পারায় জায়েদা খাতুনের মনোনয়ন অবৈধ ছিল। 

জায়েদা খাতুন তার নির্বাচনী হলফনামায় ৪ নম্বর অংশও পূরণ করেননি। নির্বাচনী হলফনামার ৪ নম্বর অংশে ব্যবসা/পেশার বিবরণীতে জায়েদা খাতুন তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা ও ব্যবসার ধরন/বিবরণী উল্লেখ না করে হলফনামায় তথ্য গোপন করেছেন। 

১ নম্বর বিবাদী জায়েদা খাতুন ২০২২-২০২৩ করবর্ষে (মহিলাদের আয়সীমা) ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা আয় দেখিয়ে শূন্য আয়কর দিয়েছেন। শূন্য আয়কর দেখানোর কারণে জায়েদা খাতুন আয়কর রিটার্নের রসিদের কপি পাননি। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০ (সংশোধনী)–তে ১২ ডিজিটের টিআইএন সনদের কপি এবং সম্পদ বিবরণী সংবলিত সর্বশেষ দাখিলকৃত আয়কর রিটার্নের রসিদের কপি দাখিল করতে হবে বলা থাকলেও ১ নম্বর বিবাদী জায়েদা খাতুন তাঁর নির্বাচনী হলফনামার সঙ্গে আয়কর রিটার্নের রসিদের কপি সংযুক্ত করেননি। নির্বাচনী হলফনামার এই শর্তও পূরণ করতে না পারায় জায়েদা খাতুনের মনোনয়ন অবৈধ ছিল। 

জায়েদা খাতুন তাঁর ২০২২-২০২৩ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন অনুযায়ী হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত জায়েদা খাতুনের নির্বাচনী হলফনামার সঙ্গে দাখিল করা ২০২২-২০২৩ কর বর্ষের আয়কর রিটার্নে দেখা যায়, তিনি ব্যবসার পুঁজি (মূলধনের জের) হিসেবে দেখিয়েছেন ৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এই টাকা জায়েদা খাতুন কোথায় রেখেছেন বা কোথায় বিনিয়োগ করেছেন বা এই টাকায় কোথায় কী ব্যবসা চলে তা জায়েদা খাতুন তাঁর নির্বাচনী হলফনামায় উল্লেখ করেননি। 

এ ছাড়া অনারেবল টেক্সটাইল কম্পোজিট লিমিটেডে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ২৫০০টি শেয়ারের বিপরীতে কত টাকা মুনাফা পেয়েছেন তাও জায়েদা খাতুন তাঁর আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করেননি। 

মামলার আবেদনে আরও বলা হয়েছে, আয়কর পরিপত্র ২০২২-২০২৩ অনুযায়ী কোনো করদাতার যদি নিট সম্পদের পরিমাণ তিন কোটি টাকার বেশি হয়, তাহলে সারচার্জ প্রযোজ্য হবে। কিন্তু জায়েদা খাতুন ২০২২-২০২৩ কর বর্ষে কোনো প্রকার কর প্রদান করেননি এবং নিট সম্পদের ওপর কোনো সারচার্জ প্রদান করেননি। 

আরও উল্লেখ করা হয়েছে, জায়েদা খাতুন নির্বাচনী হলফনামায় অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন নগদ ৩৫ লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা ৫০ হাজার টাকা, অনারেবল টেক্সটাইল কম্পোজিট লিমিটেডের ২৫০০টি শেয়ার মূল্য ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৩০ তোলা স্বর্ণ দেখিয়েছেন যার বর্তমান বাজার মূল্য (৭ মে,২০২৩ তারিখের বাজার দর ৯৮,৪৪৪ /- টাকা ভরি হিসেবে) ২৯ লাখ ৫৩ হাজার ৩২০ টাকা, ইলেকট্রনিক সামগ্রী দেখিয়েছেন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং আসবাবপত্র দেখিয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ হিসাবে হলফনামায় জায়েদা খাতুন মোট সম্পদ দেখিয়েছেন ৭০ লাখ ২৩ হাজার ৩২০ টাকার। সুতরাং জায়েদা খাতুন ২০২২-২০২৩ কর বর্ষে আয়কর রিটার্নে নিট সম্পদ দেখিয়েছেন ৪ কোটি ৭১ লাখ ২০ হাজার টাকার। ফলে হলফনামায় দেখানো সম্পদের মধ্যে ৪ কোটি ৯৬ হাজার ৬৮০ টাকার গড়মিল পাওয়া গেছে। 

মামলার আবেদনে আরও বলা হয়েছে, “স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০” এর ধারা ১৪ এর উপ ধারা (৩) অনুযায়ী ১ নম্বর বিবাদী জায়েদা খাতুনের মনোনয়ন বাতিল করার দায়িত্ব ও সুযোগ থাকলেও ৫ নম্বর মোকাবিলা বিবাদী গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন-২০২৩ এর রিটার্নিং অফিসার মো. ফরিদুল ইসলাম প্রতারণামূলকভাবে জায়েদা খাতুনের মনোনয়ন বাতিল করেননি। 

মামলায় গত ২৭ এপ্রিল স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের দাখিলকৃত এবং গত ৩০ এপ্রিল যাচাই-বাছাইয়ে অবৈধ ও প্রতারণামূলকভাবে মনোনীত স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা, মনোনয়নপত্র বাতিল এবং গত ২৫ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত প্রার্থীর নির্বাচন বাতিল মর্মে রায় ও ডিক্রি দিতে আবেদন জানানো হয়। 

এ বিষয়ে জানার জন্য নবনির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুনের মোবাইল নম্বরে ফোন করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে জায়েদা খাতুনের ছেলে ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

মানিকগঞ্জে রাতের আঁধারে স্থানান্তর করা বিদ্যালয় ভবন পরিদর্শনে কর্মকর্তারা

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত