Ajker Patrika

ভূমিকম্পের ঝুঁকি: অপরিকল্পিত নগরায়ণে মৃত্যুফাঁদ রাজধানী

  • ঢাকার ৯৪% ভবনই অবৈধ ও অনুমোদনহীন। বড় মাত্রার ভূমিকম্পে ৩৫ লাখ ভবনই ধসে পড়বে
  • নগরায়ণে পরিকল্পনা, বিল্ডিং কোড, উন্মুক্ত জায়গা সংরক্ষণের নিয়ম অনুসরণ হয়নি
  • গতকালের ভূমিকম্পকে মহাবিপর্যয়ের পূর্বাভাস বলছেন বিশেষজ্ঞরা
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪০
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভূমিকম্পে বিশ্বের যেসব নগরী অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, তার একটি হলো ঢাকা। কিন্তু ঝুঁকি নিরসনে কোনো উদ্যোগ নেই। বিশেষজ্ঞরা অনেক বছর ধরেই বলে আসছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণে দিনে দিনে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হচ্ছে এই নগরী। শক্তিশালী ভূমিকম্পে যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে ঢাকার অসংখ্য ভবন। গতকাল শুক্রবারের ভূমিকম্পকে মহাবিপর্যয়ের একটি সতর্কবার্তা হিসেবেই দেখছেন তাঁরা।

ভূতত্ত্ববিদেরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের অবস্থান ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মা—এই তিন টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে। বাংলাদেশের ভেতরে ও বাইরে টেকটোনিকে বড় ফল্ট আছে। গুলশান লেক থেকে শুরু করে ঢাকা শহরের অনেক এলাকাই ফল্ট লাইনের ওপর অবস্থিত। ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়ার ওপর নির্ভর করে যেকোনো সময় ৭ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প ঢাকাতে আঘাত হানতে পারে। কিন্তু সেই সম্ভাব্য বিপর্যয় ঠেকাতে রাজধানীতে নেই কার্যকর প্রস্তুতি।

রাজধানীতে গত চার দশকে জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। বেপরোয়া হারে বেড়েছে উঁচু ভবন। কিন্তু নগরায়ণ হয়েছে নিছক বাজার চাহিদার ভিত্তিতে; যেখানে পরিকল্পনা, বিল্ডিং কোড, সড়কের প্রশস্ততা বা উন্মুক্ত জায়গা সংরক্ষণ—কোনোটিই যথাযথ অনুসরণ করা হয়নি। বিস্তৃত ফুটপাত, উদ্ধার পথে গলি খোলা রাখা, ভবনগুলোর মধ্যে পর্যাপ্ত দূরত্ব রাখা—এসব নিয়ম কাগজে আছে, বাস্তবে নেই।

রাজউকের নির্দেশনা অনুযায়ী, বহুতল ভবন নির্মাণে ‘সয়েল টেস্ট’ থেকে শুরু করে ‘স্ট্রাকচারাল ডিজাইন’ সবই অনুমোদনসাপেক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অসংখ্য ভবন কোনো প্রকৌশলী ছাড়াই নির্মিত হয়েছে। অনেক ভবনের নকশা অনুমোদিত নয়, অনেক ভবনে অনুমোদিত নকশার বাইরে অতিরিক্ত তলা যোগ করা হয়েছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সমীক্ষা বলছে, ঢাকার ৯৪ শতাংশ ভবনই অবৈধ ও অনুমোদনহীন। বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, ‘এমন নির্মাণ ঢাকাকে একটি মৃত্যুনগরীতে পরিণত করেছে।’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, ঢাকা শহরে প্রায় ২১ লাখ বাসা রয়েছে। তার মধ্যে ১৫ লাখ একতলা-দোতলা বাসা। চার থেকে ছয়তলা ভবন প্রায় ৬ লাখ। ১০ তলা ও ২০ তলা ভবনও রয়েছে অনেক। একটি বড় ভবন ধসে পড়লে কতটা ক্ষতি হতে পারে, তা বোঝাতে গিয়ে ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের অভিজ্ঞতা মনে করিয়ে সরকারকে এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।

গতকালের ভূমিকম্পের বিষয়টি তুলে ধরে অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, ‘রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকা শহরের যত স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, ভূমিকম্প ৭ মাত্রার হলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেড়ে যাবে। ঢাকার ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে এমন ভূমিকম্প হলে ২-৩ লাখ মানুষ হতাহত হবে, ঢাকা শহরের ৩৫ শতাংশ ভেঙে পড়ার শঙ্কা আছে, অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশ ভেঙে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে ঢাকায় ঝুঁকির মাত্রা সবসময় বেশি উল্লেখ করে ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘যে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি অনুভূত হয়েছে, এটি দেশের পটভূমিতে সাম্প্রতিক সময়ে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের উত্তরে আছে ইন্ডিয়ান প্লেট এবং ইউরেশিয়ান প্লেটের সংযোগস্থল; পূর্বে বার্মিজ প্লেট ও ইন্ডিয়ান প্লেটের সংযোগস্থল। প্লেটগুলো গতিশীল থাকায় বাংলাদেশ ভূখণ্ড ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। শক্তি লকড অবস্থায় ছিল, আটকে ছিল। এটা আনলকিং শুরু হয়েছে। এখন পরবর্তীকালে গ্যাপ দিয়ে আবার ভূমিকম্প হতে পারে।’ ঢাকার এত কাছে গত কয়েক দশকে বড় ভূমিকম্প হয়নি বলেও জানান তিনি।

নগর পরিকল্পনাবিদেরা জানান, ঢাকা শহরে হাজার হাজার বহুতল ভবন, কিন্তু কার্যকর ফায়ার সেফটি সিস্টেম রয়েছে মাত্র অল্প কিছু ভবনে। ফায়ার সার্ভিসের তালিকা অনুযায়ী, অধিকাংশ বাণিজ্যিক ভবনেই সিঁড়ি সংকীর্ণ, জরুরি বহির্গমনপথ নেই, ফায়ার হাইড্রেন্ট অকেজো বা নেই। ভূমিকম্পে ভবনের ভেতর আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধার করতে ফায়ার সার্ভিসকে যে আধুনিক সরঞ্জাম দরকার, তার পরিমাণ নগণ্য।

ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে উদ্ধারকাজ পরিচালনার জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ বা যন্ত্র দুটিই নেই। ভবনের ভেতরে ঢুকতে হবে, কিন্তু বেশির ভাগ ভবনে নিয়মমাফিক সিঁড়ি নেই। তখন হতাহতের সংখ্যা বহুগুণ বাড়বে।’

নির্মাণশ্রমিক থেকে শুরু করে ঠিকাদার, সব স্তরে নিরাপত্তাবিধির প্রতি অবহেলা প্রকট। প্রকৌশলী ছাড়া বহু ভবন নির্মাণ করা হয়, যেগুলো ভূমিকম্পের চাপ সহ্য করার মতো নয়। বিজ্ঞানভিত্তিক নকশার বদলে দ্রুত কাজ শেষ করতে সস্তা উপকরণ ব্যবহারের প্রবণতা নির্মাণশিল্পে বড় সংকট তৈরি করেছে। রাজউক ও সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর তদারকি দুর্বল অথবা অনিয়মে জর্জরিত। তাই নিয়মভঙ্গকারী ভবনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গতকালের ভূমিকম্প যদিও সামান্য, তবুও এটি নগরবাসীকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, ঢাকা কতটা ভঙ্গুর। ভবন কাঠামোতে যে ফাটলগুলো দেখা গেল, সেগুলো বড় ভূমিকম্পে পুরো ভবন ধসে পড়তে পারে।

ঢাকা শহর দ্রুত উন্নয়নশীল। কিন্তু উন্নয়ন যদি নিরাপত্তাহীনতার ওপর দাঁড়ায়, তবে তা বিপর্যয়ের রেসিপি ছাড়া কিছুই নয়। আজকের ভূমিকম্প ছোট হলেও সতর্কবার্তা বড়। নগরায়ণকে পরিকল্পিত করতে, ভবন নির্মাণে আইন প্রয়োগ করতে এবং উদ্ধার সক্ষমতা বাড়াতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে অদূর ভবিষ্যতে একটি বড় ভূমিকম্পে ঢাকা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে, যা ঠেকানোর আর কোনো সুযোগ থাকবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নরসিংদীতে তিন চোখ ও দুই মুখের বাছুরের জন্ম, এলাকায় চাঞ্চল্য

নরসিংদী প্রতিনিধি
পুবেরগাঁও গ্রামের একটি খামারে বাছুরটির জন্ম। ছবি: আজকের পত্রিকা
পুবেরগাঁও গ্রামের একটি খামারে বাছুরটির জন্ম। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীতে অদ্ভুত আকৃতির বাছুরের জন্ম হয়েছে। বাছুরটির রয়েছে দুটি মুখ, দুটি জিহ্বা, দুটি কান ও তিনটি চোখ। এর মধ্যে একটি চোখ বাছুরের কপালের মাঝখানে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

২৩ ডিসেম্বর রাতে শিবপুর উপজেলার চক্রধা ইউনিয়নের পুবেরগাঁও গ্রামে স্থানীয় ইউপি সদস্য কাশেম খানের খামারে বাছুরটির জন্ম।

খামারমালিক কাশেম খান বলেন, বাছুরটি জন্মের পর থেকেই অসুস্থ। স্বাভাবিকভাবে দুধ পান করতে না পারায় ফিডারের মাধ্যমে দুধ খাওয়াতে হচ্ছে।

তিনি জানান, তাঁর খামারের একটি গাভি বাছুরটির জন্ম দিয়েছে। তিনি বলেন, এর আগেও গাভিটির বাছুর হয়েছে। কিন্তু এবারের মতো এমন অদ্ভুদ বাছুর আগে কখনো হয়নি।

ঘটনাটি জানাজানির পর থেকেই বাছুরটিকে একনজর দেখতে আশপাশের কৌতূহলী মানুষ খামারে আসছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল জলিল বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে গরু-ছাগল দেখছি। কিন্তু তিন চোখ আর দুই মুখের বাছুর এই প্রথম দেখলাম। খবর পেয়ে দূর থেকে এসেছি।’

আরেক স্থানীয় নারী জরিনা বেগম বলেন, ‘বাছুরটা দেখতে অদ্ভুত লাগলেও মায়া হচ্ছে। বাছুরটির স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। অনেকেই দ্রুত প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসকের পরামর্শ ও চিকিৎসা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিচ্ছেন।’

এর আগে এ ধরনের বাছুর জন্মের বিষয়ে প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সাধারণত জেনেটিকস ডিফেক্টের কারণে গাভির এমন ত্রুটিপূর্ণ বাচ্চার জন্ম হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজীপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে নানি-নাতনিসহ নিহত ৩

গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

গাজীপুরের কালীগঞ্জে রেললাইন দিয়ে হাঁটার সময় ট্রেনে কাটা পড়ে নানি-নাতনিসহ তিন নারী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে টঙ্গী-ভৈরব রেলপথের আড়িখোলা রেলস্টেশনসংলগ্ন টেকপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত নারীরা হলেন কালীগঞ্জ পৌরসভার দেওয়ালেরটেক গ্রামের মোবারক হোসেনের স্ত্রী সাদিয়া বেগম (২৪), একই এলাকার বাবু মিয়ার মেয়ে অনাদি আক্তার (১৩) এবং নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার মরজাল এলাকার বাসিন্দা কমলা বেগম (৫৫)। নিহত কমলা বেগম ও অনাদি আক্তার সম্পর্কে নানি-নাতনি এবং সাদিয়া বেগম তাঁদের প্রতিবেশী ছিলেন।

স্থানীয়রা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আড়িখোলা রেলব্রিজ এলাকায় রেললাইনের ওপর দিয়ে তিনজন হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা নোয়াখালীগামী ‘উপকূল এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি চলে আসে। এ সময় তাঁরা রেলব্রিজের ওপর থাকায় সেখান থেকে দ্রুত সরে যাওয়ার সুযোগ পাননি। পরে ট্রেনটি তাঁদের ওপর দিয়ে চলে যায়। এতে ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই কমলা বেগম ও সাদিয়া বেগমের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় অনাদি আক্তারকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জিয়াউর রহমান জানান, অনাদি আক্তারকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওবায়দুল হক জানান, এটি রেলওয়ের আওতাধীন দুর্ঘটনা হওয়ায় রেলওয়ে পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।

রেলওয়ে নরসিংদী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) দিলীপ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল সম্পন্ন করেছি। নিহত নারীদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বিনা ময়নাতদন্তে লাশগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আরাকান আর্মিদের জন্য নেওয়া হচ্ছিল ১৫০০ মশারি, আটক ৫

থানচি (বান্দরবান) প্রতিনিধি  
মশারিসহ জব্দ করা মালপত্র। ছবি: আজকের পত্রিকা
মশারিসহ জব্দ করা মালপত্র। ছবি: আজকের পত্রিকা

বান্দরবানের থানচি উপজেলায় দুটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা তল্লাশি করে ১ হাজার ৫০০টি মশারি, ১২০টি নৌকার ইঞ্জিনের পাখা উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে তিন্দুমুখ বিজিবি চেকপোস্ট পার হওয়ার সময় নৌকাগুলো তল্লাশি করে এসব জিনিস জব্দ করে বিজিবি। এসব মশারি ও ইঞ্জিনের পাখা বান্দরবানের থানচির বড় মদক সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির জন্য নেওয়া হচ্ছিল বলে জানিয়েছে বিজিবি। এ ঘটনায় নৌকা দুটি থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার তাঁদের থানচি থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

এ ঘটনায় আটক ব্যক্তিরা হলেন থোয়াই হ্লা চিং মারমা, উমং সাইং মারমা, হ্লাচিংথোয়াই মারমা, উক্যছাইন মারমা ও মো. ইউনুস।

এসব তথ্য নিশ্চিত করে বিজিবি বলিপাড়া ৩৮ ব্যাটালিয়ানের সহকারী পরিচালক মো. জাকির হোসেনের জানান, নিজস্ব গোয়েন্দা সূত্রে তাঁরা জেনেছেন, দীর্ঘদিন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ওষুধ, কাপড়, জুতা, মোজা, মশারি, নৌকা ইঞ্জিনের পাখা ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশ মিয়ানমারের আরাকান আর্মির কাছে সরবরাহ করছে একটি সিন্ডিকেট চক্র। পাচারকারীদের ধরতে সীমান্তের বিজিবি চৌকিগুলোতে বিজিবি সদস্যরা সতর্ক রয়েছেন।

জাকির হোসেন বলেন, গতকাল বুধবার তিন্দুমুখ বিজিবি চেকপোস্ট অতিক্রম করার সময় মালবাহী তিনটি ইঞ্জিন নৌকা দেখে বিজিবির সদস্যদের সন্দেহ হয়। এ সময় নৌকা থামাতে বললে একটি নৌকা দ্রুত চলে যায়। বাকি দুটি নৌকা তল্লাশি করে ১ হাজার ৫০০টি মশারি, ১২০টি ইঞ্জিন বোটসহ অন্যান্য পণ্য পাওয়া যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নলছিটি লঞ্চঘাট ওসমান হাদির নামে নামকরণ

ঝালকাঠি প্রতিনিধি  
নলছিটি লঞ্চঘাট ।  ছবি: আজকের পত্রিকা
নলছিটি লঞ্চঘাট । ছবি: আজকের পত্রিকা

নলছিটি উপজেলার লঞ্চঘাট এখন থেকে শহীদ শরিফ ওসমান হাদির নামে পরিচিত হবে। জন্মস্থান ও শৈশবের স্মৃতিতে গাথা এই লঞ্চঘাট তাঁর নামের সঙ্গে চিরস্থায়ীভাবে যুক্ত হলো।

বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় (২৫ ডিসেম্বর) জানান, শহীদ ওসমান হাদির জন্মস্থান নলছিটি। শৈশব, বেড়ে ওঠা এবং জীবনসংগ্রামের সঙ্গে লঞ্চঘাট এলাকার নিবিড় সম্পর্ক থাকার কারণে এটি তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে। বর্তমানে টার্মিনালের সংস্কার ও রঙের কাজ চলমান রয়েছে।

আগামী শনিবার নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন ঘাটটি পরিদর্শন করবেন বলেও জানান তিনি।

নলছিটি লঞ্চঘাট শহীদ ওসমান হাদির জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঘাট থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে তার পৈতৃক বাড়ি। নদীর ধারে দাঁড়িয়ে মানুষের আসা-যাওয়া দেখা এবং লঞ্চের ভিড়ে সময় কাটানো—এই ঘাট ছিল তার বেড়ে ওঠার নীরব সাক্ষী।

ঘাট এলাকার ব্যবসায়ী রব হাওলাদার বলেন, ‘আমরা চাইছিলাম হাদির স্মরণে এমন কিছু হোক, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম মনে রাখবে। তার শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত লঞ্চঘাটের নাম তার নামে হওয়া নিঃসন্দেহে স্মরণীয় সিদ্ধান্ত।’

ব্যবসায়ী শাহাদত আলম ফকির যোগ করেন, ‘এই ঘাটে আমরা হাদিকে ছোটবেলা থেকে দেখেছি। সে এখানকারই ছেলে ছিল। আজ তার নামে ঘাটের নামকরণ হওয়ায় আমরা গর্বিত।’

ওসমান হাদির প্রতিবেশী বেলায়েত হোসেন নান্নু বলেন, ‘হাদি এই এলাকার সন্তান। এই ঘাট, এই নদী, এই মানুষ—সবকিছুতেই তার স্মৃতি ছড়িয়ে আছে। লঞ্চঘাটের নাম তার নামে হওয়া মানে, সে এখানেই চিরদিন বেঁচে থাকবে।’

উল্লেখ্য, ১২ ডিসেম্বর হত্যার উদ্দেশ্যে ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। তাঁকে প্রথমে ঢাকায় ভর্তি করা হয় এবং পরে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর মারা যান ওসমান হাদি। পরবর্তীকালে তাঁর মরদেহ দেশে আনা হয় এবং সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে (জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে) সমাহিত করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত