Ajker Patrika

ইউপি নির্বাচন দেখিয়েছে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রের লাশ পড়ে আছে: মাহবুব তালুকদার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭: ২৫
ইউপি নির্বাচন দেখিয়েছে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রের লাশ পড়ে আছে: মাহবুব তালুকদার

নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনকালে নানারকম মন্তব্যের কারণে ‘বিএনপির মুখপাত্র’ হওয়ার অভিযোগ উঠেছিল জ্যেষ্ঠ কমিশনার মাহবুব তালুকদারের বিরুদ্ধে। আজ সোমবার ছিল কমিশনের মেয়াদের শেষ দিন। এদিন আলাদা সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। 

বিএনপির মুখপাত্রের অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আমি বিএনপির সুর বুঝি না। বুঝি নীরব জনগোষ্ঠীর ভাষা। যাদের কথা সারফেসে আসে না। রাজনৈতিক দল বলে না। সেসব অশ্রুত ভাষা বোঝার চেষ্টা করেছি। আমি মনে করি, আমি তাঁদের মুখপাত্র। তাঁদের কাছ থেকে জেনে বোঝার চেষ্টা করেছি।’ 

মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আমি যে বিএনপির মুখপাত্র, এটা আমি প্রথম জেনেছি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের প্রেস ব্রিফিং থেকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমি যখনই কোনো দৃঢ়ভাবে বক্তব্য পেশ করি, তখনই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ লোক সমালোচনা করে বলে, তিনি তো বিএনপির সুরে কথা বলেন। বিএনপির যে কী সুর সেটা আমি বুঝি না। যারা এ ধরনের কথা বলেন তাঁরা হয়তোবা জানেন, আমি তো জানি না।’ 

পাঁচ বছর আগে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি নিয়োগ পান। সে সময় সার্চ কমিটির প্রস্তাবিতদের থেকে রাষ্ট্রপতি পাঁচজনকে নিয়োগ দেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনের পর তা জানানো হয়। 

নিজেদের মেয়াদে নানা সমালোচনার মধ্যে কমিশনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ পায় নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে। 

দায়িত্ব পালনকালে কমিশনের সভায় নিগৃহীত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আমি পাঁচজনের একজন। গণতন্ত্রের কথা বলতে গিয়ে, গণতন্ত্রের জন্য সংখ্যালঘু হিসেবে আমি হেরে গেলাম। এমনও ঘটনা রয়েছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনের কমিশনে কথা বলতে গিয়ে আমাকে বক্তব্য রাখতে দেওয়া হয়নি। কেন? আমাকে বলা হলো সংবিধানবিরোধী। সংবিধান রক্ষার জন্য যা কিছু করার করতে হবে।’ 

শেষ ব্রিফিংয়ে সিইসির সঙ্গে অনুপস্থিত থাকার কোনো কারণ নেই মন্তব্য করে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘এটাই যে, আমি মুক্তভাবে কথাগুলো বলতে পারলাম। আমার এ কথাগুলো ওখানে মানানসই বলে আমি মনে করি না।’

লিখিত বক্তব্যে যা বললেন মাহবুব তালুকদার
 ‘এটাই আমার সর্বশেষ প্রেস ব্রিফিং। একজন সাংবাদিক মানবাধিকার সম্পর্কে অভিমত জানতে চেয়েছেন। বাংলাদেশের মানবাধিকার সম্পর্কে কথা বলা অমূলক। মানবাধিকার নেই, মানবিক মর্যাদা নেই, গণতন্ত্র না থাকলে এসব থাকে না। বিশ্বে সম্মানজনক রাষ্ট্র হিসেবে আসীন হতে হলে গণতন্ত্রের শর্তসমূহ অবশ্যই পূরণ করতে হবে। ভোটাধিকার ও মানবাধিকার একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা থেকে এর উৎপত্তি। বর্তমান অবস্থায় উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আইনপ্রণেতারা আইন প্রণয়নের চেয়ে উন্নয়নেই বেশি আগ্রহী। কিন্তু উন্নয়ন কখনো গণতন্ত্রের বিকল্প ব্যবস্থা নয়। 

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে ওই নির্বাচনে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রের লাশ পড়ে আছে। এই লাশ সৎকারের দায়িত্ব কে নেবে? কথাটা রূপকার্থে বলা হলেও এটাই সত্য। নির্বাচনের নামে সারা দেশে এমন অরাজকতা কখনো কাঙ্ক্ষিত ছিল না। তৃণমূল পর্যায়ে এই নির্বাচন দ্বন্দ্ব-সংঘাতের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে দিয়েছে। অন্যদিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পদে আসীন হওয়া নির্বাচন বলা যায় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। 

‘বিদায়কালে আত্মবিশ্লেষণের তাগিদে বলি, নির্বাচন কমিশনের বড় দুর্বলতা নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অনিয়ম, পক্ষপাতিত্ব, জালিয়াতি ইত্যাদি সম্পর্কে ভুক্তভোগীরা যে সকল অভিযোগ করেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দৃষ্টান্ত বিরল। লিখিতভাবে যেসব অভিযোগ পাঠানো হয়, তারও যথাযথ নিষ্পত্তি হয় না। অধিকাংশ অভিযোগই আমলে না নিয়ে নথিভুক্ত করা হয় বা অনেক ক্ষেত্রে নথিতেও তার ঠাঁই হয় না। আমাদের কার্যকালের শেষ পর্যায়ে এসে বিগত কয়েক মাসে অবশ্য এর কিছু ব্যতিক্রম লক্ষ করা যাচ্ছে।’ 

মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে গত পাঁচ বছরে যা কিছু বলেছি, তাতে কোনো ফলোদয় হয়েছে বলে মনে হয় না। আগেও বলেছি, নির্বাচন কমিশন গঠন আইন বাধ্যতামূলক। তবে আইনটি সব রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে, সংকটের সমাধান হবে না। এখন পর্যন্ত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণের কোনো পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে না। এতে সংকট আরও ঘনীভূত হবে। আশাবাদী মানুষ হিসেবে আমি সকল সংকটের সমাধান দেখতে চাই।’ 

মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘নির্বাচনে জনমানসের প্রতিফলন একান্ত অপরিহার্য। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সর্বত্র জনমানসের প্রতিফলন একান্ত অনুপস্থিত। এতে বিশেষভাবে টাকার খেলাই প্রতিভাত হয়। রাজনীতি ধীরে ধীরে ব্যবসায়ীদের করতলগত হয়ে যাচ্ছে। আমার প্রশ্ন, আইনপ্রণেতারা ভবিষ্যতে আইন-ব্যবসায়ী হয়ে যাবেন না তো? অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বাধাবিঘ্নগুলো দূর করতে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার প্রয়োজন। এ জন্য সংবিধান ও বিধিবিধানের পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে। বসন্তের প্রথম দিনে ও ভালোবাসা দিবসে আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফোন-ইন্টারনেট ভাতা পাচ্ছেন মাঠ প্রশাসনের সব কর্মচারী

ভাড়া বাড়িতে চলা ১৬ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ

পিপির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ৪৯ জন সহকারী পিপির

জোবাইদার নিরাপত্তার নামে প্রতিবেশীদের বিরক্ত না করার নির্দেশ তারেক রহমানের

শান্ত যে কারণে টি-টোয়েন্টি দলে, মিরাজ কেন নেই

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত