Ajker Patrika

জাকসুর সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের ইশতেহারে অগ্রাধিকার পাচ্ছে ‘ফাইভ ইয়েস’ ও ‘ফাইভ নো’

জাবি প্রতিনিধি 
জাবির বটতলা এলাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা করে ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল। ছবি: আজকের পত্রিকা
জাবির বটতলা এলাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা করে ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ‘স্বচ্ছতা ও দক্ষতায়, ন্যায্যতায় নিশ্চয়তায়’ স্লোগানকে সামনে রেখে ৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল।

আজ রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) বেলা আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এই ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। ইশতেহার পাঠ করেন প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আরিফ উল্লাহ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী মো. মাজহারুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) প্রার্থী ফেরদৌস আল হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) প্রার্থী আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলাসহ অন্য প্রার্থীরা।

ইশতেহারে প্যানেলটি ‘ফাইভ ইয়েস’ ও ‘ফাইভ নো’-কে অগ্রাধিকার দিয়েছে। ‘ফাইভ ইয়েস’-এর মধ্যে ডাইনিংয়ে ভর্তুকি আদায়, অভ্যন্তরীণ পরিবহন সমস্যা সমাধান, অটোমেশন, পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল, প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা—এ বিষয়গুলো রয়েছে। সেশনজট ও ক্লাস নিয়ে অবহেলা, নারীর প্রতি অসহিষ্ণুতা, মাদক ও চাঁদাবাজি, ‘লাঞ্চের পরে আসেন’ কালচার দূর করা, র‍্যাগিং ও সাইবার বুলিং ‘ফাইভ নো’-এর অন্তর্ভুক্ত।

সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের ইশতেহারের ৯ দফা হলো

১. জুলাই গণ-অভ্যুত্থান

এ দফায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করে ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাস গঠনের প্রচেষ্টা এবং নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের বিচার নিশ্চিতে সরব ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্যানেলটি। এ ছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানসহ অন্যান্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস রচনার উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও রয়েছে।

২. একাডেমিক

সেশনজট নিরসনে একাডেমিক ক্যালেন্ডার বাস্তবায়ন ও মানোন্নয়ন পরীক্ষার সুযোগ সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। একাডেমিক বিষয়ে শিক্ষকদের বিভিন্ন অবহেলা, যেমন: পর্যাপ্ত ক্লাস না নেওয়া, সময়মতো ক্লাসে উপস্থিত না থাকা, কোর্স ঠিকমতো শেষ না করাসহ নানাবিধ অনিয়ম দূর করার জন্য প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগ এবং দলীয় বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ বন্ধে সোচ্চার ভূমিকা ও কোর্স শেষে শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালুর ঘোষণা দেয় তারা। যেসব বিভাগে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম ও শিক্ষক নেই, সেসব বিভাগের সমস্যা দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলে তারা।

৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি

এই ইশতেহারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় পূর্ণাঙ্গ ইকোলজিক্যাল মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অভয়ারণ্য ঘোষণা ও সংরক্ষণ এবং ক্যাম্পাসে বৃক্ষরোপণ, কনজারভেশন ক্যাম্পেইন, ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ও রিসাইক্লিং সিস্টেম জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট।

এ ছাড়া লেক সংস্কার করে অতিথি পাখির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি, অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো প্রশস্তকরণ, ফুটপাত নির্মাণ, সাইকেল লেন ও পরিবেশবান্ধব রাইড-শেয়ার প্রোগ্রাম চালু এবং পরিবেশসংক্রান্ত সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ মেলার আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে প্যানেলটি।

৪. আবাসিক হল

র‍্যাগিং, গেস্টরুম কালচার ও সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে প্যানেলটি। ডাইনিংয়ে অন্তত ৫০% ভর্তুকি আদায় করে সুলভমূল্যে মানসম্মত খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং প্রতি তলায় বিশুদ্ধ পানির ফিল্টার স্থাপনের প্রতিশ্রুতি রয়েছে এই দফায়। ছাত্রী হলে স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন নিশ্চিতকরণ ও নবনির্মিত ছাত্রী হলে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের উদ্যোগ ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে সাউন্ডপ্রুফ গ্লাস স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা।

৫. নিরাপদ খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা

ক্যাফেটেরিয়াতে তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা ও বিকেলের নাশতা চালুর সঙ্গে ডিজিটাল কুপন সিস্টেম সংযোজনের কথা বলেছে প্যানেলটি। ক্যাফেটেরিয়া, বটতলা ও অন্যান্য স্থানের খাবারের মান এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিতে নিয়মিত মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্যানেলটি।

স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল আদায়ের জন্য লড়াই ও ২৪/৭ অ্যাম্বুলেন্সসেবা চালু, স্বাস্থ্যবিমা চালু করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া, ক্যাম্পাসের ভেতরে আধুনিক ডিসপেনসারি স্থাপনের উদ্যোগ এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিতে কাউন্সেলিং সেবার মানোন্নয়নের ঘোষণা দিয়েছে তারা।

৬ ক্রীড়া ও সংস্কৃতি

এই দফায় খেলার মাঠ, জিমনেসিয়াম ও ইনডোর গেমস সুবিধার উন্নয়ন প্রতিটি বিভাগ ও হলে পর্যাপ্ত খেলার সামগ্রী নিশ্চিতকরণ এবং নিয়মিত আন্তবিভাগ ও আন্তহল ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দেয় প্যানেলটি।

এ ছাড়া নারী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা খেলার মাঠ উন্নয়ন, আত্মরক্ষার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সেলফ ডিফেন্স প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং বিশেষভাবে সক্ষম শিক্ষার্থীদের জন্য প্যারা স্পোর্টসের আয়োজনের ঘোষণা দেয় তারা।

সাংস্কৃতিক অঙ্গনে মুক্তমঞ্চ, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) ও অডিটরিয়ামের সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ আদায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ও সুবিধা সংযোজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্যানেলটি।

৭. লৈঙ্গিক সমতা ও নারী নিরাপত্তা

যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ‘যৌন নিপীড়ন অভিযোগ সেল’ শক্তিশালীকরণ এবং সাইবার বুলিং, রেসিজমসহ অনলাইন ও অফলাইনে নারীর প্রতি সব প্রকার বিদ্বেষপূর্ণ আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট। এর সঙ্গে ‘মা’ শিক্ষার্থীদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার ও ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার চালু, প্রতিটি একাডেমিক ভবনে নারী কমনরুম স্থাপন এবং কেন্দ্রীয় মসজিদসহ প্রতিটি ভবনে নারীদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা রাখার ঘোষণা দিয়েছে প্যানেলটি।

৮. প্রশাসনিক আধুনিকায়ন ও পরিবহনসেবা

ক্যাম্পাসের সব দাপ্তরিক কার্যক্রমকে অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসা ও শিক্ষার্থীদের জন্য স্মার্ট আইডি কার্ড চালুর ঘোষণা দিয়েছে তারা। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অভ্যন্তরীণ পরিবহন সমস্যার সমাধান ও ফুটপাত নির্মাণ এবং পরিবহনের লাইভ ট্র্যাকিং অ্যাপ চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্যানেলটি।

৯. বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ও সব নৃগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা

বিশেষভাবে সক্ষম শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ অবকাঠামো: র‍্যাম্প, লিফট, ব্রেইল বই, অডিও বুক, ই-লার্নিং টুলস সুবিধা সংযোজন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে দৃষ্টিজয়ী শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রুতিলেখক ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করতে চায় প্যানেলটি। এ ছাড়া বিশেষভাবে সক্ষম শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করে—এমন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা।

ইশতেহারের বিষয়ে সহসভাপতি প্রার্থী আরিফ উল্লাহ বলেন, ‘আমরা আশা করছি যে শিক্ষার্থীরা আমাদের ইশতেহার সাদরে গ্রহণ করবে এবং আমাদের ভোট দিয়ে আমাদের যে যৌক্তিক আন্দোলন আছে, তার সঙ্গে সোচ্চার হবে। এখানে যতগুলো দফা আমরা দিয়েছি, সবগুলোই যাচাই-বাছাই করে দেওয়া। এগুলো আগামী এক বছরে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। মেডিকেলের সংস্কার এক বছরে সম্ভব না। চাইলে সম্ভব হবে। তবে যদি এটা না হয়, আমরা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে দিয়ে যাব, যাতে পরে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়। প্রশাসন যদি সুষ্ঠুভাবে আমাদের সহযোগিতা করে, তাহলে সবগুলোই বাস্তবায়ন সম্ভব। আমরা কাজ করব শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর হিসেবে। তাদের সমস্যা আমরা প্রশাসনকে জানাব এবং তারা এই সমস্যা নিরসন করবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত