Ajker Patrika

মেঘনায় তীব্র স্রোত, ফেরি যাতায়াতে দ্বিগুণ সময়

প্রতিনিধি, শরীয়তপুর
মেঘনায় তীব্র স্রোত, ফেরি যাতায়াতে দ্বিগুণ সময়

মেঘনায় পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোতের কারণে শরীয়তপুর-চাঁদপুর নৌরুটে ফেরি পারাপারে সময় লাগছে দ্বিগুণেরও বেশি। স্রোতের বিপরীতে মেঘনা পাড়ি দিতে অতিরিক্ত ৫ কিলোমিটার নদীপথ ঘুরছে প্রতিটি ফেরির। ফলে প্রতিদিন ফেরি পারাপারের শিডিউল পরিবর্তন করে ফেরিতে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে দৈনিক ফেরি পারাপারের সংখ্যা নেমে এসেছে অর্ধেকে। তার ওপর জোয়ারের পানিতে পন্টুনের র্যাম্পে পানি ওঠায় দৈনিক ২ দফায় অন্তত ৬ ঘণ্টা বন্ধ হয়ে যায় ১ নম্বর ঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার। ফলে ধীর গতিতে যানবাহন পারাপার করায় শরীয়তপুরের নরসিংহপুর ঘাটে আটকা পড়েছে ৩ শতাধিক যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন। 

বিআইডব্লিটিসি সূত্র জানায়, শরীয়তপুর-চাঁদপুর নৌপথে যানবাহন পারাপারের জন্য ৭টি ফেরি রয়েছে। স্বাভাবিক জোয়ারে প্রতিটি ফেরি প্রতিদিন গড়ে ৭ হতে ৮টি করে ট্রিপ দিতে পারলেও তীব্র স্রোতের কারণে বর্তমানে ট্রিপ সংখ্যা নেমে এসেছে ৪ থেকে ৫ টিতে। কিছুদিন আগেও প্রতিদিন গড়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ যানবাহন পারাপার করা যেত। এখন পারাপার করা হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টি। নদীতে স্রোতের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিটি ফেরি অতিরিক্ত ৫ কিলোমিটার ঘুরে চাঁদপুরের বহরিয়ার টেক হয়ে মেঘনা পাড়ি দিচ্ছে। তার ওপর জোয়ারের সময় পন্টুনের র্যাম্প তলিয়ে যাওয়ায় ৬ ঘণ্টা করে ১ নম্বর ঘাটে যানবাহন পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। নদী পারাপারে সময় বেশি লাগায় ও ১ নম্বর ঘাট দিয়ে জোয়ারের সময় পারাপার বন্ধ থাকায় যানবাহন পারাপারে কিছুটা ধীর গতির সৃষ্টি হয়েছে। 

চট্টগ্রাম বিভাগের সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাতায়াত সহজ করতে ২০০০ সালে চালু হয় শরীয়তপুর-চাঁদপুর নৌরুটে ফেরি পারাপার। এই রুটে চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, খুলনা, বরিশাল, মোংলা, বেনাপোলসহ ২১টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলায় পন্যসামগ্রী আনা-নেওয়া করতে চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌপথ ব্যবহার করেন। 

সম্প্রতি পদ্মা সেতুর পিলারে একাধিকবার ফেরির ধাক্কার ঘটনায় বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ ঘোষণা করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। ওই নৌপথে চলাচলকারী পণ্যবাহী যানবাহনগুলোকে বিকল্প নৌপথ ব্যবহার করে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌপথের নরসিংহপুর ফেরিঘাটে গাড়ির চাপ বাড়তে থাকে। আর ফেরি চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় ও পারাপারে দ্বিগুণ সময় লাগার কারণে নরসিংহপুর ঘাটে যানবাহনের জট সৃষ্টি হয়েছে। ফেরিঘাট হতে খায়েরপট্টি পাম্প পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পণ্য ও যাত্রীবাহী গাড়ির জট সৃষ্টি হয়েছে। 

যশোর থেকে জরুরি রপ্তানির পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম যাচ্ছেন আলমগীর মৃধা। মঙ্গলবার রাতে নরসিংহপুর ঘাটে এসে এখনো সিরিয়াল পাননি। আলমগীর বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে মালামাল নিয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছতে না পারলে মালিকের ক্ষতি হয়ে যাবে। দুই দিন যাবৎ ঘাটে আটকা আছি। কখন ফেরিতে উঠতে পারব এখনো তা নিশ্চিত নয়। 

ফেরিঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় থাকা পেঁয়াজ ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিন আকন জানান, বুধবার রাতে ঘাটে এসেছি। এখনো পর্যন্ত ফেরিতে উঠতে পারিনি। ঘাটে তীব্র যানজট ঠেলে ফেরির কাছাকাছি এসেছি। আজকের মধ্যে পার হতে না পারলে পেঁয়াজে পচন ধরার সম্ভাবনা রয়েছে। 

নরসিংহপুর ফেরিঘাটের ইজারাদার জিতু মিয়া ব্যাপারী বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতের জন্য পদ্মা ও মেঘনা নদীর ফেরিঘাটগুলো গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্ষা আসলেই ফেরি চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। মানুষের দুর্ভোগ কমাতে ঘাটগুলোতে এখন ফেরির সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। ঘাটের সংযোগ সড়ক ও পন্টুনের র্যাম্প উঁচু করতে হবে। বিআইডব্লিটিসিকে ফেরি বাড়ানোসহ সমস্যার সমাধান করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। 

নরসিংহপুর ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক আব্দুল মোমেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, স্রোতের কারণে ফেরিগুলোকে ৫ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ ঘুরে চলতে হচ্ছে। এ কারণে আগের চেয়ে দ্বিগুণ সময় লাগছে। ঝুঁকি এড়াতে ফেরিতে যানবাহনের সংখ্যা কমিয়ে পারাপার করা হচ্ছে। আগের চেয়ে অর্ধেক পরিমাণ যানবাহন পারাপার করা যাচ্ছে। তা ছাড়া বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরিতে পণ্যবাহী গাড়ি পারাপারে কিছু বিধিনিষেধ থাকায় নরসিংহপুর ঘাটে গাড়ির চাপ বেড়েছে। স্রোত কমে গেলে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আটকা পড়া যানবাহনের মধ্যে যাত্রীবাহী যানবাহন এবং পচনশীল পণ্যবাহী যানবাহন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০-১২তম গ্রেডে নিয়োগ: প্রতি পদের বিপরীতে দুজন থাকবেন অপেক্ষমাণ

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

ইতিহাস গড়ে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে আইএসআইপ্রধান

সাবেক ‘র’-এর প্রধানের নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত