মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর পরও বেসরকারি ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ত পূরণ করতে পারেনি। আইনে ৫০ আসনের বিপরীতে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল এবং শয্যার বিপরীতে ৭০ শতাংশ রোগী ভর্তি থাকার শর্ত থাকলেও এই মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল ২০০ শয্যার এবং রোগী ভর্তির হার ১ শতাংশের কম। এই হাসপাতালও হয়েছে ২০২২ সালে। তবে নিবন্ধন পেয়েছে গত বছরের ডিসেম্বরে। চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসপাতালে শয্যা ও শর্ত অনুযায়ী রোগী ভর্তি না থাকলে শিক্ষার্থীরা যথাযথ শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। এ কারণে দেশের বেশির ভাগ বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মানসম্মত চিকিৎসক তৈরিতে অবদান রাখতে পারছে না।
অবশ্য ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, গত ১৫ ডিসেম্বর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়েছে। শয্যা ৩০০টি। কাজ শেষ না হওয়ায় পুরোদমে রোগী ভর্তি শুরু হয়নি। এর আগে শিক্ষার্থীদের গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর জানায়, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজকে ২০১৯ সালের মে মাসে ৫০ আসনে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে রাজধানীর বাড্ডায় মাদানী অ্যাভিনিউর নিজস্ব ক্যাম্পাসে কলেজটির কার্যক্রম চলছে।
সরকার প্রায় আড়াই বছর আগে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন, ২০২২ কার্যকর করে। আইনটি কার্যকরের আগে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা, ২০১১ (সংশোধিত)’ অনুযায়ী পরিচালনার বাধ্যবাধকতা ছিল। অভিযোগ রয়েছে, নীতিমালা মেনে চলায়ও ঘাটতি ছিল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজের।
সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে কলেজটি পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সাত সদস্যের পরিদর্শন কমিটি। কমিটির প্রতিবেদনে পরিদর্শনকালে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘাটতি শনাক্ত হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আইনে ৫০ আসনের মেডিকেল কলেজের জন্য ২৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকার কথা থাকলেও পরিদর্শনে পাওয়া গেছে ২০০ শয্যা। রোগী ভর্তির হার (বেড অকুপেন্সি রেট) ১ শতাংশের কম। অর্থাৎ শয্যার ঘাটতি ৫০টি ও রোগীর ঘাটতি ৬৯ শতাংশ। বহির্বিভাগে রোগী পাওয়া গেছে একজন। ক্লিনিক্যাল স্কিল ল্যাবের ঘাটতি রয়েছে। এতে কলেজের তৃতীয় থেকে পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল প্রশিক্ষণ ব্যাহত হচ্ছে।
আইন অনুযায়ী, বেসরকারি মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর ন্যূনতম দুই বছর আগে প্রস্তাবিত ক্যাম্পাসে ভৌত অবকাঠামোসহ একটি হাসপাতাল চালু থাকতে হবে। ৫০ শিক্ষার্থীর আসনের মেডিকেল কলেজের জন্য হাসপাতাল হবে ২৫০ শয্যার। অর্থাৎ শিক্ষার্থীপ্রতি পাঁচটি শয্যা থাকতে হবে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের জন্য মোট শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তির হার হবে ৭০ শতাংশ। পরবর্তীকালে যা কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণ হাসপাতালে রূপান্তরিত হবে। আইনটি কার্যকরের আগে নীতিমালায়ও এমন ছিল।
সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠার তিন বছর পরও ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল ছিল না। পরে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম চালু হয়। গত বছরের শুরুতে সেখানে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ ওঠে। তখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ওই হাসপাতালের নিবন্ধন নেই। এতে তাৎক্ষণিক হাসপাতালের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় সরকার। গত বছরের শেষে নিবন্ধন পায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পদস্থ দুই কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই কলেজের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘বিভিন্ন মহলের চাপ’ ছিল। হাসপাতালের নিবন্ধন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এখতিয়ার হওয়ায় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর বিষয়টির তদারক করেনি।
একই ঠিকানায় দুই হাসপাতাল
মাদানী অ্যাভিনিউর ইউনাইটেড সিটিতে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ঠিকানায় ‘ইউনাইটেড হেলথকেয়ার সার্ভিসেস’ নামে আরও একটি হাসপাতাল পাওয়া গেছে। দুটি প্রতিষ্ঠান একই সেটআপে চলছে বলে জানা যায়।
হাসপাতাল, ক্লিনিক, ব্লাড ব্যাংকসহ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন-লাইসেন্স দানকারী ও নিয়ন্ত্রক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, ইউনাইটেড হেলথকেয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের (রেজিস্ট্রেশন কোড এইচএসএম ১৩৯৬৫) নিবন্ধন বেসরকারি হাসপাতাল হিসেবে। ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রেজিস্ট্রেশন কোড এইচএসএম ৮৯৯৩২) নিবন্ধনও হাসপাতাল হিসেবে।
ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ বলছে, কলেজ, কলেজের হাসপাতাল ও হেলথকেয়ার সার্ভিসের ভবন আলাদা। দুটি হাসপাতালের সব চিকিৎসা কার্যক্রমের সেটআপ (বিন্যাস) আলাদা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হেলথকেয়ার সার্ভিসেস ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রে সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। ভিন্ন ভিন্ন জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, অপারেশন থিয়েটারসহ সবই সরেজমিনে পাওয়া গেছে। এখন হেলথকেয়ার সার্ভিস নামের হাসপাতালের সেটআপ না থাকলে তা কোথাও সরিয়ে নিয়েছে বা অন্য কিছু করেছে। কলেজ হাসপাতালের জনবল, যন্ত্রপাতি বা অন্য কিছু দেখিয়ে অন্য একটি হাসপাতালের নিবন্ধন নেওয়া বা নবায়নের সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করব।’
সরেজমিনে যা পাওয়া গেছে
ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে সরেজমিনে দেখা যায়, আড়াই একর জমিতে নয়তলা ভবনে কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম চলছে। হাসপাতাল ভবনের সঙ্গে সংযুক্ত কলেজ ভবন। ভবনের নিচতলায় নির্মাণকাজ অসম্পূর্ণ। দ্বিতীয় তলা থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত কলেজ। অষ্টম ও নবম তলা নির্মাণাধীন।
হাসপাতাল ভবনেও নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। হাসপাতালের মূল ফটক থেকে প্রবেশ করলে বড় লবি। ডানে হাসপাতালের অভ্যর্থনা, অন্যদিকে ইউনাইটেড হেলথকেয়ার সার্ভিসের অভ্যর্থনা। নিচতলায় জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ১ থেকে ৪, ল্যাবরেটরি, স্যাম্পল কালেকশন, দ্বিতীয় তলায় বহির্বিভাগ, প্রশাসনিক ব্লক এবং কলেজের সঙ্গে সংযোগকারী পথ। তৃতীয় তলায় অপারেশন থিয়েটার, ক্রিটিক্যাল ইউনিট। সপ্তম তলায় নারী ও পুরুষ ওয়ার্ড, নাক, কান, গলা, চক্ষু, জেনারেল সার্জারি, অর্থোপেডিক ওয়ার্ড, আরেকদিকে কেবিন ব্লক।
হাসপাতালে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভর্তি রোগী দেখা যায়নি। কোনো কোনো ওয়ার্ডের কার্যক্রম শুরু হয়নি। চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ তলা এবং অষ্টম ও নবম তলা নির্মাণাধীন। হাসপাতালজুড়ে নির্মাণকাজের শব্দ। অবকাঠামো ছাড়া ইউনাইটেড হেলথকেয়ারে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চোখে পড়েনি।
জানতে চাইলে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওয়াকিল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানে কলেজ, হাসপাতাল এবং হেলথকেয়ার তিনটি ভবনে। করিডর দিয়ে সব সংযুক্ত। ১৫ ডিসেম্বর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল উদ্বোধন হয়েছে। এখানে ৩০০ শয্যা আছে। কাজ এখনো শেষ হয়নি। এর আগে শিক্ষার্থীদের গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে প্রশিক্ষণ দিতাম। এটা মন্ত্রণালয়কেও জানানো হয়েছে। এখন থেকে আমরা এখানেই হাসপাতালের কাজ চালাতে পারব। এখনো ৫ থেকে ১০ শতাংশ কাজ বাকি। রোগী বাড়ানোর জন্য আমরা চেষ্টা করছি। রোগী ভর্তি করে যদি দেখা যায়, ওপরে শব্দ হচ্ছে, তাতে রোগী এবং আমরা অপ্রস্তুত পরিস্থিতিতে পড়ব। এ জন্য আমরা বড় মার্কেটিং করিনি। এই হলো মূল বিষয়। আমরা আশাবাদী, এক মাসের মধ্যে পুরোপুরি চালু করতে পারব।’
ইউনাইটেড হেলথকেয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের সহযোগী পরিচালক ডা. আজমল কাদের চৌধুরী বলেন, ‘এখানে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। আমরা চিকিৎসা শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কলেজ হাসপাতালকে এগিয়ে নিচ্ছি। রোগী বাড়ালেই হবে না, সেবা নিশ্চিত করতে কাজ করছি। আমাদের পুরো নজর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে। হেলথকেয়ার সার্ভিসেস নামের হাসপাতালের সব সেটআপ রয়েছে। সেখানে আপগ্রেডেশনের কাজ করছি।’
চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর দায়িত্বশীল ভূমিকা না রাখায় মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনার শর্তগুলো প্রতিপালন হচ্ছে না। চিকিৎসা শিক্ষার মানের উন্নতি না হওয়ার বড় কারণ অনুমোদনের শর্তে ছাড় এবং তদারকির অভাব।
ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের (ডব্লিউএফএমই) সাবেক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শর্ত না মানলে মেডিকেল কলেজের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ভালো মানের চিকিৎসক তৈরি করতে না পারলে এগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি থাকার যৌক্তিকতা কী? সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ে ঘাটতি পূরণ না করতে পারলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আর দুটি হাসপাতালের শর্তই হলো স্বতন্ত্র সেটআপ থাকা।’ তিনি বলেন, যাকে-তাকে কলেজের অনুমোদন দেওয়ায় বাংলাদেশ থেকে ডিগ্রি নেওয়া চিকিৎসকেরা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিতে পিছিয়ে রয়েছেন। মেডিকেল কলেজের অনুমোদন ও নবায়নের জন্য স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) নিয়মিত পরিদর্শন করে। তাদের প্রতিবেদনের আলোকে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। ভালো চিকিৎসক তৈরির ক্ষেত্রে আপসের সুযোগ নেই।
ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন কমিটির সভাপতি ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. রুবীনা ইয়াসমীন। কলেজ অনুমোদনে হাসপাতালের বিষয়ে কেন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের লাইসেন্স না থাকায় একটি জটিলতা তৈরি হয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হাসপাতালটির কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা ডিসেম্বরে গিয়ে জানতে পারি, তারা লাইসেন্স পেয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালকে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহার করে বলে জানিয়েছে।’
প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর পরও বেসরকারি ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ত পূরণ করতে পারেনি। আইনে ৫০ আসনের বিপরীতে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল এবং শয্যার বিপরীতে ৭০ শতাংশ রোগী ভর্তি থাকার শর্ত থাকলেও এই মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল ২০০ শয্যার এবং রোগী ভর্তির হার ১ শতাংশের কম। এই হাসপাতালও হয়েছে ২০২২ সালে। তবে নিবন্ধন পেয়েছে গত বছরের ডিসেম্বরে। চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসপাতালে শয্যা ও শর্ত অনুযায়ী রোগী ভর্তি না থাকলে শিক্ষার্থীরা যথাযথ শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। এ কারণে দেশের বেশির ভাগ বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মানসম্মত চিকিৎসক তৈরিতে অবদান রাখতে পারছে না।
অবশ্য ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, গত ১৫ ডিসেম্বর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়েছে। শয্যা ৩০০টি। কাজ শেষ না হওয়ায় পুরোদমে রোগী ভর্তি শুরু হয়নি। এর আগে শিক্ষার্থীদের গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর জানায়, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজকে ২০১৯ সালের মে মাসে ৫০ আসনে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে রাজধানীর বাড্ডায় মাদানী অ্যাভিনিউর নিজস্ব ক্যাম্পাসে কলেজটির কার্যক্রম চলছে।
সরকার প্রায় আড়াই বছর আগে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন, ২০২২ কার্যকর করে। আইনটি কার্যকরের আগে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা, ২০১১ (সংশোধিত)’ অনুযায়ী পরিচালনার বাধ্যবাধকতা ছিল। অভিযোগ রয়েছে, নীতিমালা মেনে চলায়ও ঘাটতি ছিল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজের।
সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে কলেজটি পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সাত সদস্যের পরিদর্শন কমিটি। কমিটির প্রতিবেদনে পরিদর্শনকালে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘাটতি শনাক্ত হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আইনে ৫০ আসনের মেডিকেল কলেজের জন্য ২৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকার কথা থাকলেও পরিদর্শনে পাওয়া গেছে ২০০ শয্যা। রোগী ভর্তির হার (বেড অকুপেন্সি রেট) ১ শতাংশের কম। অর্থাৎ শয্যার ঘাটতি ৫০টি ও রোগীর ঘাটতি ৬৯ শতাংশ। বহির্বিভাগে রোগী পাওয়া গেছে একজন। ক্লিনিক্যাল স্কিল ল্যাবের ঘাটতি রয়েছে। এতে কলেজের তৃতীয় থেকে পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল প্রশিক্ষণ ব্যাহত হচ্ছে।
আইন অনুযায়ী, বেসরকারি মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর ন্যূনতম দুই বছর আগে প্রস্তাবিত ক্যাম্পাসে ভৌত অবকাঠামোসহ একটি হাসপাতাল চালু থাকতে হবে। ৫০ শিক্ষার্থীর আসনের মেডিকেল কলেজের জন্য হাসপাতাল হবে ২৫০ শয্যার। অর্থাৎ শিক্ষার্থীপ্রতি পাঁচটি শয্যা থাকতে হবে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের জন্য মোট শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তির হার হবে ৭০ শতাংশ। পরবর্তীকালে যা কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণ হাসপাতালে রূপান্তরিত হবে। আইনটি কার্যকরের আগে নীতিমালায়ও এমন ছিল।
সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠার তিন বছর পরও ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল ছিল না। পরে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম চালু হয়। গত বছরের শুরুতে সেখানে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ ওঠে। তখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ওই হাসপাতালের নিবন্ধন নেই। এতে তাৎক্ষণিক হাসপাতালের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় সরকার। গত বছরের শেষে নিবন্ধন পায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পদস্থ দুই কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই কলেজের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘বিভিন্ন মহলের চাপ’ ছিল। হাসপাতালের নিবন্ধন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এখতিয়ার হওয়ায় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর বিষয়টির তদারক করেনি।
একই ঠিকানায় দুই হাসপাতাল
মাদানী অ্যাভিনিউর ইউনাইটেড সিটিতে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ঠিকানায় ‘ইউনাইটেড হেলথকেয়ার সার্ভিসেস’ নামে আরও একটি হাসপাতাল পাওয়া গেছে। দুটি প্রতিষ্ঠান একই সেটআপে চলছে বলে জানা যায়।
হাসপাতাল, ক্লিনিক, ব্লাড ব্যাংকসহ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন-লাইসেন্স দানকারী ও নিয়ন্ত্রক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, ইউনাইটেড হেলথকেয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের (রেজিস্ট্রেশন কোড এইচএসএম ১৩৯৬৫) নিবন্ধন বেসরকারি হাসপাতাল হিসেবে। ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রেজিস্ট্রেশন কোড এইচএসএম ৮৯৯৩২) নিবন্ধনও হাসপাতাল হিসেবে।
ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ বলছে, কলেজ, কলেজের হাসপাতাল ও হেলথকেয়ার সার্ভিসের ভবন আলাদা। দুটি হাসপাতালের সব চিকিৎসা কার্যক্রমের সেটআপ (বিন্যাস) আলাদা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হেলথকেয়ার সার্ভিসেস ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রে সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। ভিন্ন ভিন্ন জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, অপারেশন থিয়েটারসহ সবই সরেজমিনে পাওয়া গেছে। এখন হেলথকেয়ার সার্ভিস নামের হাসপাতালের সেটআপ না থাকলে তা কোথাও সরিয়ে নিয়েছে বা অন্য কিছু করেছে। কলেজ হাসপাতালের জনবল, যন্ত্রপাতি বা অন্য কিছু দেখিয়ে অন্য একটি হাসপাতালের নিবন্ধন নেওয়া বা নবায়নের সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করব।’
সরেজমিনে যা পাওয়া গেছে
ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে সরেজমিনে দেখা যায়, আড়াই একর জমিতে নয়তলা ভবনে কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম চলছে। হাসপাতাল ভবনের সঙ্গে সংযুক্ত কলেজ ভবন। ভবনের নিচতলায় নির্মাণকাজ অসম্পূর্ণ। দ্বিতীয় তলা থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত কলেজ। অষ্টম ও নবম তলা নির্মাণাধীন।
হাসপাতাল ভবনেও নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। হাসপাতালের মূল ফটক থেকে প্রবেশ করলে বড় লবি। ডানে হাসপাতালের অভ্যর্থনা, অন্যদিকে ইউনাইটেড হেলথকেয়ার সার্ভিসের অভ্যর্থনা। নিচতলায় জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ১ থেকে ৪, ল্যাবরেটরি, স্যাম্পল কালেকশন, দ্বিতীয় তলায় বহির্বিভাগ, প্রশাসনিক ব্লক এবং কলেজের সঙ্গে সংযোগকারী পথ। তৃতীয় তলায় অপারেশন থিয়েটার, ক্রিটিক্যাল ইউনিট। সপ্তম তলায় নারী ও পুরুষ ওয়ার্ড, নাক, কান, গলা, চক্ষু, জেনারেল সার্জারি, অর্থোপেডিক ওয়ার্ড, আরেকদিকে কেবিন ব্লক।
হাসপাতালে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভর্তি রোগী দেখা যায়নি। কোনো কোনো ওয়ার্ডের কার্যক্রম শুরু হয়নি। চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ তলা এবং অষ্টম ও নবম তলা নির্মাণাধীন। হাসপাতালজুড়ে নির্মাণকাজের শব্দ। অবকাঠামো ছাড়া ইউনাইটেড হেলথকেয়ারে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চোখে পড়েনি।
জানতে চাইলে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওয়াকিল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানে কলেজ, হাসপাতাল এবং হেলথকেয়ার তিনটি ভবনে। করিডর দিয়ে সব সংযুক্ত। ১৫ ডিসেম্বর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল উদ্বোধন হয়েছে। এখানে ৩০০ শয্যা আছে। কাজ এখনো শেষ হয়নি। এর আগে শিক্ষার্থীদের গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে প্রশিক্ষণ দিতাম। এটা মন্ত্রণালয়কেও জানানো হয়েছে। এখন থেকে আমরা এখানেই হাসপাতালের কাজ চালাতে পারব। এখনো ৫ থেকে ১০ শতাংশ কাজ বাকি। রোগী বাড়ানোর জন্য আমরা চেষ্টা করছি। রোগী ভর্তি করে যদি দেখা যায়, ওপরে শব্দ হচ্ছে, তাতে রোগী এবং আমরা অপ্রস্তুত পরিস্থিতিতে পড়ব। এ জন্য আমরা বড় মার্কেটিং করিনি। এই হলো মূল বিষয়। আমরা আশাবাদী, এক মাসের মধ্যে পুরোপুরি চালু করতে পারব।’
ইউনাইটেড হেলথকেয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের সহযোগী পরিচালক ডা. আজমল কাদের চৌধুরী বলেন, ‘এখানে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। আমরা চিকিৎসা শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কলেজ হাসপাতালকে এগিয়ে নিচ্ছি। রোগী বাড়ালেই হবে না, সেবা নিশ্চিত করতে কাজ করছি। আমাদের পুরো নজর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে। হেলথকেয়ার সার্ভিসেস নামের হাসপাতালের সব সেটআপ রয়েছে। সেখানে আপগ্রেডেশনের কাজ করছি।’
চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর দায়িত্বশীল ভূমিকা না রাখায় মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনার শর্তগুলো প্রতিপালন হচ্ছে না। চিকিৎসা শিক্ষার মানের উন্নতি না হওয়ার বড় কারণ অনুমোদনের শর্তে ছাড় এবং তদারকির অভাব।
ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের (ডব্লিউএফএমই) সাবেক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শর্ত না মানলে মেডিকেল কলেজের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ভালো মানের চিকিৎসক তৈরি করতে না পারলে এগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি থাকার যৌক্তিকতা কী? সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ে ঘাটতি পূরণ না করতে পারলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আর দুটি হাসপাতালের শর্তই হলো স্বতন্ত্র সেটআপ থাকা।’ তিনি বলেন, যাকে-তাকে কলেজের অনুমোদন দেওয়ায় বাংলাদেশ থেকে ডিগ্রি নেওয়া চিকিৎসকেরা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিতে পিছিয়ে রয়েছেন। মেডিকেল কলেজের অনুমোদন ও নবায়নের জন্য স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) নিয়মিত পরিদর্শন করে। তাদের প্রতিবেদনের আলোকে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। ভালো চিকিৎসক তৈরির ক্ষেত্রে আপসের সুযোগ নেই।
ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন কমিটির সভাপতি ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. রুবীনা ইয়াসমীন। কলেজ অনুমোদনে হাসপাতালের বিষয়ে কেন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের লাইসেন্স না থাকায় একটি জটিলতা তৈরি হয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হাসপাতালটির কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা ডিসেম্বরে গিয়ে জানতে পারি, তারা লাইসেন্স পেয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালকে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহার করে বলে জানিয়েছে।’
রাজধানীর হাতিরঝিলের পুলিশ প্লাজার পার্কের পাশ থেকে এক কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ রোববার (৪ মে) সকাল ৮টার দিকে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে। পরে আইনিপ্রক্রিয়া শেষে দুপুরে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
৪১ মিনিট আগেঠাকুরগাঁওয়ের সেনুয়া ব্রিজ এলাকায় সুপ্রিয় জুট মিলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার বিকেলে অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটে। আগুনে প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
১ ঘণ্টা আগেগাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। রোববার (৪ মে) সন্ধ্যায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হামলায় হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়ির একটি কাচ ভেঙে যায়।
১ ঘণ্টা আগেসিলেট বিভাগে গত এপ্রিল মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বেড়েছে। এপ্রিল মাসে ২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০ জন নিহত হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে ৪২ জন। আজ রোববার নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) সিলেট বিভাগীয় কমিটি প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
২ ঘণ্টা আগে