Ajker Patrika

ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী নেই ১ শতাংশও

  • পাঁচ বছরেও হয়নি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল
  • ২৫০ শয্যার বদলে ২০০টি
  • শেখার ঘাটতি নিয়েই তৈরি হচ্ছে চিকিৎসক
মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
আপডেট : ০৪ মে ২০২৫, ১০: ৪১
ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী নেই ১ শতাংশও

প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর পরও বেসরকারি ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ত পূরণ করতে পারেনি। আইনে ৫০ আসনের বিপরীতে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল এবং শয্যার বিপরীতে ৭০ শতাংশ রোগী ভর্তি থাকার শর্ত থাকলেও এই মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল ২০০ শয্যার এবং রোগী ভর্তির হার ১ শতাংশের কম। এই হাসপাতালও হয়েছে ২০২২ সালে। তবে নিবন্ধন পেয়েছে গত বছরের ডিসেম্বরে। চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসপাতালে শয্যা ও শর্ত অনুযায়ী রোগী ভর্তি না থাকলে শিক্ষার্থীরা যথাযথ শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। এ কারণে দেশের বেশির ভাগ বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মানসম্মত চিকিৎসক তৈরিতে অবদান রাখতে পারছে না।

অবশ্য ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, গত ১৫ ডিসেম্বর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়েছে। শয্যা ৩০০টি। কাজ শেষ না হওয়ায় পুরোদমে রোগী ভর্তি শুরু হয়নি। এর আগে শিক্ষার্থীদের গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর জানায়, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজকে ২০১৯ সালের মে মাসে ৫০ আসনে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে রাজধানীর বাড্ডায় মাদানী অ্যাভিনিউর নিজস্ব ক্যাম্পাসে কলেজটির কার্যক্রম চলছে।

সরকার প্রায় আড়াই বছর আগে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন, ২০২২ কার্যকর করে। আইনটি কার্যকরের আগে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা, ২০১১ (সংশোধিত)’ অনুযায়ী পরিচালনার বাধ্যবাধকতা ছিল। অভিযোগ রয়েছে, নীতিমালা মেনে চলায়ও ঘাটতি ছিল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজের।

সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে কলেজটি পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সাত সদস্যের পরিদর্শন কমিটি। কমিটির প্রতিবেদনে পরিদর্শনকালে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘাটতি শনাক্ত হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আইনে ৫০ আসনের মেডিকেল কলেজের জন্য ২৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকার কথা থাকলেও পরিদর্শনে পাওয়া গেছে ২০০ শয্যা। রোগী ভর্তির হার (বেড অকুপেন্সি রেট) ১ শতাংশের কম। অর্থাৎ শয্যার ঘাটতি ৫০টি ও রোগীর ঘাটতি ৬৯ শতাংশ। বহির্বিভাগে রোগী পাওয়া গেছে একজন। ক্লিনিক্যাল স্কিল ল্যাবের ঘাটতি রয়েছে। এতে কলেজের তৃতীয় থেকে পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল প্রশিক্ষণ ব্যাহত হচ্ছে।

আইন অনুযায়ী, বেসরকারি মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর ন্যূনতম দুই বছর আগে প্রস্তাবিত ক্যাম্পাসে ভৌত অবকাঠামোসহ একটি হাসপাতাল চালু থাকতে হবে। ৫০ শিক্ষার্থীর আসনের মেডিকেল কলেজের জন্য হাসপাতাল হবে ২৫০ শয্যার। অর্থাৎ শিক্ষার্থীপ্রতি পাঁচটি শয্যা থাকতে হবে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের জন্য মোট শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তির হার হবে ৭০ শতাংশ। পরবর্তীকালে যা কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণ হাসপাতালে রূপান্তরিত হবে। আইনটি কার্যকরের আগে নীতিমালায়ও এমন ছিল।

সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠার তিন বছর পরও ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল ছিল না। পরে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম চালু হয়। গত বছরের শুরুতে সেখানে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ ওঠে। তখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ওই হাসপাতালের নিবন্ধন নেই। এতে তাৎক্ষণিক হাসপাতালের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় সরকার। গত বছরের শেষে নিবন্ধন পায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পদস্থ দুই কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই কলেজের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘বিভিন্ন মহলের চাপ’ ছিল। হাসপাতালের নিবন্ধন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এখতিয়ার হওয়ায় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর বিষয়টির তদারক করেনি।

একই ঠিকানায় দুই হাসপাতাল

মাদানী অ্যাভিনিউর ইউনাইটেড সিটিতে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ঠিকানায় ‘ইউনাইটেড হেলথকেয়ার সার্ভিসেস’ নামে আরও একটি হাসপাতাল পাওয়া গেছে। দুটি প্রতিষ্ঠান একই সেটআপে চলছে বলে জানা যায়।

হাসপাতাল, ক্লিনিক, ব্লাড ব্যাংকসহ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন-লাইসেন্স দানকারী ও নিয়ন্ত্রক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, ইউনাইটেড হেলথকেয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের (রেজিস্ট্রেশন কোড এইচএসএম ১৩৯৬৫) নিবন্ধন বেসরকারি হাসপাতাল হিসেবে। ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রেজিস্ট্রেশন কোড এইচএসএম ৮৯৯৩২) নিবন্ধনও হাসপাতাল হিসেবে।

ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ বলছে, কলেজ, কলেজের হাসপাতাল ও হেলথকেয়ার সার্ভিসের ভবন আলাদা। দুটি হাসপাতালের সব চিকিৎসা কার্যক্রমের সেটআপ (বিন্যাস) আলাদা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হেলথকেয়ার সার্ভিসেস ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রে সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। ভিন্ন ভিন্ন জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, অপারেশন থিয়েটারসহ সবই সরেজমিনে পাওয়া গেছে। এখন হেলথকেয়ার সার্ভিস নামের হাসপাতালের সেটআপ না থাকলে তা কোথাও সরিয়ে নিয়েছে বা অন্য কিছু করেছে। কলেজ হাসপাতালের জনবল, যন্ত্রপাতি বা অন্য কিছু দেখিয়ে অন্য একটি হাসপাতালের নিবন্ধন নেওয়া বা নবায়নের সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করব।’

সরেজমিনে যা পাওয়া গেছে

ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে সরেজমিনে দেখা যায়, আড়াই একর জমিতে নয়তলা ভবনে কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম চলছে। হাসপাতাল ভবনের সঙ্গে সংযুক্ত কলেজ ভবন। ভবনের নিচতলায় নির্মাণকাজ অসম্পূর্ণ। দ্বিতীয় তলা থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত কলেজ। অষ্টম ও নবম তলা নির্মাণাধীন।

হাসপাতাল ভবনেও নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। হাসপাতালের মূল ফটক থেকে প্রবেশ করলে বড় লবি। ডানে হাসপাতালের অভ্যর্থনা, অন্যদিকে ইউনাইটেড হেলথকেয়ার সার্ভিসের অভ্যর্থনা। নিচতলায় জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ১ থেকে ৪, ল্যাবরেটরি, স্যাম্পল কালেকশন, দ্বিতীয় তলায় বহির্বিভাগ, প্রশাসনিক ব্লক এবং কলেজের সঙ্গে সংযোগকারী পথ। তৃতীয় তলায় অপারেশন থিয়েটার, ক্রিটিক্যাল ইউনিট। সপ্তম তলায় নারী ও পুরুষ ওয়ার্ড, নাক, কান, গলা, চক্ষু, জেনারেল সার্জারি, অর্থোপেডিক ওয়ার্ড, আরেকদিকে কেবিন ব্লক।

হাসপাতালে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভর্তি রোগী দেখা যায়নি। কোনো কোনো ওয়ার্ডের কার্যক্রম শুরু হয়নি। চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ তলা এবং অষ্টম ও নবম তলা নির্মাণাধীন। হাসপাতালজুড়ে নির্মাণকাজের শব্দ। অবকাঠামো ছাড়া ইউনাইটেড হেলথকেয়ারে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চোখে পড়েনি।

জানতে চাইলে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওয়াকিল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানে কলেজ, হাসপাতাল এবং হেলথকেয়ার তিনটি ভবনে। করিডর দিয়ে সব সংযুক্ত। ১৫ ডিসেম্বর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল উদ্বোধন হয়েছে। এখানে ৩০০ শয্যা আছে। কাজ এখনো শেষ হয়নি। এর আগে শিক্ষার্থীদের গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে প্রশিক্ষণ দিতাম। এটা মন্ত্রণালয়কেও জানানো হয়েছে। এখন থেকে আমরা এখানেই হাসপাতালের কাজ চালাতে পারব। এখনো ৫ থেকে ১০ শতাংশ কাজ বাকি। রোগী বাড়ানোর জন্য আমরা চেষ্টা করছি। রোগী ভর্তি করে যদি দেখা যায়, ওপরে শব্দ হচ্ছে, তাতে রোগী এবং আমরা অপ্রস্তুত পরিস্থিতিতে পড়ব। এ জন্য আমরা বড় মার্কেটিং করিনি। এই হলো মূল বিষয়। আমরা আশাবাদী, এক মাসের মধ্যে পুরোপুরি চালু করতে পারব।’

ইউনাইটেড হেলথকেয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের সহযোগী পরিচালক ডা. আজমল কাদের চৌধুরী বলেন, ‘এখানে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। আমরা চিকিৎসা শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কলেজ হাসপাতালকে এগিয়ে নিচ্ছি। রোগী বাড়ালেই হবে না, সেবা নিশ্চিত করতে কাজ করছি। আমাদের পুরো নজর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে। হেলথকেয়ার সার্ভিসেস নামের হাসপাতালের সব সেটআপ রয়েছে। সেখানে আপগ্রেডেশনের কাজ করছি।’

চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর দায়িত্বশীল ভূমিকা না রাখায় মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনার শর্তগুলো প্রতিপালন হচ্ছে না। চিকিৎসা শিক্ষার মানের উন্নতি না হওয়ার বড় কারণ অনুমোদনের শর্তে ছাড় এবং তদারকির অভাব।

ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের (ডব্লিউএফএমই) সাবেক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শর্ত না মানলে মেডিকেল কলেজের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ভালো মানের চিকিৎসক তৈরি করতে না পারলে এগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি থাকার যৌক্তিকতা কী? সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ে ঘাটতি পূরণ না করতে পারলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আর দুটি হাসপাতালের শর্তই হলো স্বতন্ত্র সেটআপ থাকা।’ তিনি বলেন, যাকে-তাকে কলেজের অনুমোদন দেওয়ায় বাংলাদেশ থেকে ডিগ্রি নেওয়া চিকিৎসকেরা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিতে পিছিয়ে রয়েছেন। মেডিকেল কলেজের অনুমোদন ও নবায়নের জন্য স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) নিয়মিত পরিদর্শন করে। তাদের প্রতিবেদনের আলোকে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। ভালো চিকিৎসক তৈরির ক্ষেত্রে আপসের সুযোগ নেই।

ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন কমিটির সভাপতি ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. রুবীনা ইয়াসমীন। কলেজ অনুমোদনে হাসপাতালের বিষয়ে কেন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের লাইসেন্স না থাকায় একটি জটিলতা তৈরি হয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হাসপাতালটির কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা ডিসেম্বরে গিয়ে জানতে পারি, তারা লাইসেন্স পেয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালকে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহার করে বলে জানিয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দৌড়ে উঠতে গিয়ে পা পিছলে ট্রেনের নিচে, বেঁচে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি

রাজনৈতিক দলগুলোকে এক সপ্তাহের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত জানাতে বলল সরকার

আজকের রাশিফল: প্রেম এলে না করবেন না, বিনিয়োগটা মুলতবি রাখুন

সাবেক মুখ্য সচিব কামাল সিদ্দিকী মারা গেছেন

বাড়িতে আশ্রয় দেওয়ার দুদিন পরই নারীকেই পিটিয়ে হত্যা করেছে ভবঘুরে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাবাকে কুপিয়ে হত্যা, মাদকাসক্ত ছেলে আটক

পাবনা প্রতিনিধি
আটক করতে গেলে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালান অভিযুক্ত ব্যক্তি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আটক করতে গেলে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালান অভিযুক্ত ব্যক্তি। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাজারে দুধ বিক্রি করে সন্ধ্যার পর বাসায় ফেরেন বাবা নিজাম প্রামাণিক (৬০)। পরে খাওয়া-দাওয়া শেষে এশার নামাজ পড়তে জায়নামাজে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। এ সময় সুযোগ বুঝে হাঁসুয়া দিয়ে বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করেন ছেলে মোস্তফা প্রামাণিক। এমনই এক লোমহর্ষ ঘটনা ঘটেছে পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের পুরোনো ভাদুরডাঙ্গি গ্রামে।

গতকাল রোববার রাতে এ ঘটনা ঘটে। পরে মোস্তফাকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ সোমবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এদিকে তাঁকে আটক করতে গিয়ে আহত হয়েছেন সদর থানার তিন উপপরিদর্শক (এসআই)। ‎নিহত নিজাম প্রামাণিক পুরোনো ভাদুরডাঙ্গি গ্রামের মৃত ইন্তাজ প্রামাণিকের ছেলে। তিনি কৃষিকাজ করতেন। অভিযুক্ত ছেলে মোস্তফা ছিলেন মাদকাসক্ত।

‎পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, রাতের খাবার শেষে ঘরে এশার নামাজ পড়ার জন্য জায়নামাজে দাঁড়িয়েছিলেন বাবা নিজাম। এ সময় দরজা আটকে হাঁসুয়া দিয়ে বাবাকে কুপিয়ে হত্যার পর ঘর থেকে বের হন ছেলে মোস্তফা। এরপর নিজেই পাশের কক্ষ দরজা বন্ধ করে বসে থাকেন তিনি। বাড়ির লোকজন টের পেয়ে ঘরে গিয়ে নিজামের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর মোস্তফাকে ঘরের ভেতরে তালাবদ্ধ অবস্থায় রেখে পুলিশে খবর দেন স্বজন ও এলাকাবাসী। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। এরপর মোস্তফাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

আটকের সময় অভিযুক্তের ছুরিকাঘাতে সদর থানার এসআই আবু বকর সিদ্দিক, এসআই জিয়াউর রহমান ও এসআই আবু রায়হান আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। তাঁদের মধ্যে এসআই জিয়াউর রহমানকে সুজানগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

‎নিহতের আরেক ছেলে মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা খাওয়া-দাওয়া শেষে রুমে শুয়েছিলাম। এ সময় রুম আটকে নামাজরত অবস্থায় বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করে মোস্তফা। এর আগে সে আমাকেও মেহগনি ডাল দিয়ে মারাত্মক আহত করেছিল। আজকেও গামছার মধ্যে হাঁসুয়া নিয়ে আমাকে মারার জন্য মাঠের মধ্যে গিয়ে খোঁজাখুঁজি করেছে। সে মাদকের জন্য প্রায়ই বাবা ও আমাদের কাছে টাকা চাইত। না দিলেই বাড়িতে ভাঙচুর চালাত। তাঁর শাস্তি হওয়া উচিত।’

এ বিষয়ে ‎পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম বলেন, লাশ উদ্ধারের পর সোমবার পাবনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে মিজানুর রহমান বাদী হয়ে অভিযুক্ত মোস্তফাকে একমাত্র আসামি করে মামলা করেছেন। পরে সেই মামলায় আটক মোস্তফাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সোমবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দৌড়ে উঠতে গিয়ে পা পিছলে ট্রেনের নিচে, বেঁচে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি

রাজনৈতিক দলগুলোকে এক সপ্তাহের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত জানাতে বলল সরকার

আজকের রাশিফল: প্রেম এলে না করবেন না, বিনিয়োগটা মুলতবি রাখুন

সাবেক মুখ্য সচিব কামাল সিদ্দিকী মারা গেছেন

বাড়িতে আশ্রয় দেওয়ার দুদিন পরই নারীকেই পিটিয়ে হত্যা করেছে ভবঘুরে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গজারিয়ায় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ডাকাতি, ৩৫ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থ লুট

গজারিয়া (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি 
ঘটনাস্থল পরিদর্শন পুলিশের। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থল পরিদর্শন পুলিশের। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় জানালার গ্রিল কেটে ঢুকে পরিবারের সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ অর্থ, মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে ডাকাত দল। গতকাল রোববার দিবাগত রাতে উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের বালুয়াকান্দি দক্ষিণপাড়ায় (ব্যাপারী বাড়িতে) অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য মো. ফজলুল হকের বাড়িতে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগীরা জানান, জানালার গ্রিল কেটে একে একে ১৫ থেকে ২০ জন ডাকাত বিল্ডিংয়ে ঢোকে করে। ডাকাতদের হাতে রামদা, চায়নিজ কুড়াল, ছেনিসহ দেশীয় অস্ত্র ছিল। তাঁরা প্রতিটি ঘরে ঢুকে পরিবারের নারী, পুরুষ, শিশুদের অস্ত্রে মুখে জিম্মি করে ঘরে রাখা টাকা, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সবকিছু নিয়ে যায়।

বাড়ির মালিক ফজলুল হক বলেন, ‘ডাকাত দল ঘরে ঢুকে আমার নাতির গলায় রামদা ধরে। একে একে সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। আমার স্ত্রী ও তিন ছেলের বউয়ের ৩৫ ভরি স্বর্ণালংকার, ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৯টি বিদেশি মোবাইল ফোন, কসমেটিকসসহ ঘরের মূল্যবান সবকিছু নিয়ে যায়। এসবের বর্তমান বাজারমূল্য ৭৫ থেকে ৮০ লাখ টাকা।’

ফজলুল হকের বড় ছেলের বউ ফরিদা বলেন, বাচ্চাদের গলায় অস্ত্র ধরে রাখায় আলমারিতে রাখা স্বর্ণালংকার, টাকার পাশাপাশি, গায়ে থাকা গলার চেইন, কানের দুল, এমন কি নাকে থাকা ফুলও খুলে নিয়ে যায় ডাকাতের দল।  

ডাকাতির ঘটনায় গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। জিয়া নামের এক যুবক বলেন, গ্রামে ছিঁচকে চুরির ঘটনা ঘটলেও এমন ডাকাতি এ প্রথম।

গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে রাতেই আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও আশপাশে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দৌড়ে উঠতে গিয়ে পা পিছলে ট্রেনের নিচে, বেঁচে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি

রাজনৈতিক দলগুলোকে এক সপ্তাহের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত জানাতে বলল সরকার

আজকের রাশিফল: প্রেম এলে না করবেন না, বিনিয়োগটা মুলতবি রাখুন

সাবেক মুখ্য সচিব কামাল সিদ্দিকী মারা গেছেন

বাড়িতে আশ্রয় দেওয়ার দুদিন পরই নারীকেই পিটিয়ে হত্যা করেছে ভবঘুরে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টানা বৃষ্টিতে ময়মনসিংহে ফসলের ক্ষতির শঙ্কা

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কৃষকের সবজিখেত। ছবি: আজকের পত্রিকা
বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কৃষকের সবজিখেত। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহে অসময়ে বৃষ্টিতে আমন ধান, রবি ফসল ও শাকসবজির খেত নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। গত শুক্রবার থেকে টানা বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

বৃষ্টির কারণে অনেক কৃষকের জমির কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে ধান কাটতে পারছেন না। বৃষ্টিতে সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

ময়মনসিংহের বয়রা গ্রামের কৃষক শাম্মত আলী বলেন, ‘নভেম্বরের এ সময়ে এত বৃষ্টিপাত দেখিনি কখনো। বাড়ির সামনের ১৫ শতক জমিতে সবজির আবাদ করেছি। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ফসল ক্ষতির মুখে পড়েছে। গাছগুলো মরে যাচ্ছে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক মো. এনামুল হক বলেন, জেলার ১৩টি ‍উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে ২ লাখ ৬৮ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ করা হয়েছে। এ বছর ৪১ হাজার ৬৫০ হেক্টরে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে; কিন্তু বৃষ্টির কারণে সরিষা আবাদ করা যাচ্ছে না। ২১ হাজার ৬০০ হেক্টরে শাকসবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হেলেও ইতিমধ্যে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। বৃষ্টিতে ধান ও সবজির কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছেম তা নিরূপণ করে সহযোগিতা করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দৌড়ে উঠতে গিয়ে পা পিছলে ট্রেনের নিচে, বেঁচে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি

রাজনৈতিক দলগুলোকে এক সপ্তাহের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত জানাতে বলল সরকার

আজকের রাশিফল: প্রেম এলে না করবেন না, বিনিয়োগটা মুলতবি রাখুন

সাবেক মুখ্য সচিব কামাল সিদ্দিকী মারা গেছেন

বাড়িতে আশ্রয় দেওয়ার দুদিন পরই নারীকেই পিটিয়ে হত্যা করেছে ভবঘুরে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শিক্ষককে খাতা ছুড়ে মারার অভিযোগ

রাবি প্রতিনিধি  
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষককে খাতা ছুড়ে মারার ভিডিও ফুটেজ থেকে নেওয়া ছবি। ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষককে খাতা ছুড়ে মারার ভিডিও ফুটেজ থেকে নেওয়া ছবি। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক সাজু সরকারকে খাতা ছুড়ে মারার অভিযোগ উঠেছে একই বিভাগের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। আজ সোমবার ওই শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন। তবে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী দাবি করেছেন, ঘটনার সময় তাঁর মানসিক সমস্যা ছিল।

অভিযোগপত্রে অধ্যাপক সাজু সরকার উল্লেখ করেন, গত ১৫ মে বিভাগের ৫১৮ নম্বর কক্ষে ২০২১–২২ ও ২০২২–২৩ সেশনের (বিবিএ তৃতীয় ও দ্বিতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টার ২০২৪) শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরুর আগে রোল কল নেওয়ার সময় ঘটনাটি ঘটে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, রোল কলের একপর্যায়ে ২২১২৫৩৮১৩১ নম্বর রোলধারী শিক্ষার্থী তাসনিম জাহান মীমকে ডাকলে তিনি প্রথমে চুপ করে বসে থাকেন। পুনরায় ডাকলে তিনি হঠাৎ করে ব্যাগ ছুড়ে মারেন।

অধ্যাপক সাজু সরকার অভিযোগপত্রে বলেন, ‘ঘটনাস্থলে উপস্থিত মীমের বন্ধু আবিদ বিন আনাম বিষয়টিকে ‘‘জিনের আসরের সমস্যা’’ বলে দাবি করেন এবং ইউটিউব থেকে উচ্চশব্দে কিছু বাজাতে শুরু করেন। তবে ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমাকে অপমানিত করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়েছে।’

অভিযুক্ত শিক্ষার্থী তাসনিম জাহান মীম বলেন, ‘ঘটনার সময় আমার মানসিক সমস্যা ছিল। এটি দুই-তিন মাস আগের ঘটনা। মানসিক সমস্যার কারণে এমন আচরণ করেছিলাম, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল না। এখন এত দিন পর তিনি অভিযোগ করায় মনে হচ্ছে, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার মানহানি করতে চাইছেন।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা একটি অভিযোগপত্র পেয়েছি, যেখানে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থী তার বিভাগের শিক্ষকের সঙ্গে অসদাচরণ করেছে। তবে এক পক্ষের কথা শুনে সিদ্ধান্তে আসা যাবে না। আমরা শিক্ষার্থীর সঙ্গেও কথা বলব, এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দৌড়ে উঠতে গিয়ে পা পিছলে ট্রেনের নিচে, বেঁচে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি

রাজনৈতিক দলগুলোকে এক সপ্তাহের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত জানাতে বলল সরকার

আজকের রাশিফল: প্রেম এলে না করবেন না, বিনিয়োগটা মুলতবি রাখুন

সাবেক মুখ্য সচিব কামাল সিদ্দিকী মারা গেছেন

বাড়িতে আশ্রয় দেওয়ার দুদিন পরই নারীকেই পিটিয়ে হত্যা করেছে ভবঘুরে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত