Ajker Patrika

বোমার ডিজিটাল তথ্যভান্ডার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০: ২৭
বোমার ডিজিটাল তথ্যভান্ডার

হোলি আর্টিজানে হামলায় অস্ত্রের পাশাপাশি বোমাও ব্যবহার করে-ছিলেন জঙ্গিরা। সেই বোমার অবিকল প্রতিরূপের ওপর স্ক্যানার মেশিন বসালেই ভয়াবহ সেই ঘটনার আদ্যোপান্ত স্ক্রিনে ভেসে উঠবে। কোন জঙ্গি সংগঠন হামলা করেছে, কে কে অংশ নিয়েছেন, কতজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, কী ধরনের অস্ত্র ও বোমা ব্যবহার করা হয়েছে—সবই।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সদস্যরা এমন একটি ডিজিটাল সংগ্রহশালা তৈরি করেছেন, যার নাম বোমার ডিজিটাল তথ্যভান্ডার। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এফবিআই)-এর সদস্যরা সেটা পরিদর্শনও করেছেন।

সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, দক্ষিণ এশিয়ায়ও এটা সবচেয়ে বড় বোমা ডেটাসেন্টার।

bomb1বুধবার ডেটাসেন্টারটি ঘুরে দেখা গেল, এতে মোট ছয়টি সেকশন রয়েছে। এর একটি হলো বোমা সংগ্রহশালা। প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে মিল রেখে একটি করে বোমার প্রতিরূপ বানানো হয়েছে। সেই প্রতিরূপের ওপর স্ক্যানার ধরলেই পাশে রাখা বড় মনিটরে বিস্ফোরণের পূর্বে ও পরে ঘটনাস্থল থেকে আলামতের নমুনা, প্রকৃতি, প্রতিরূপ, বিশ্লেষণ, নিষ্ক্রিয়করণের কৌশল ও জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা সংক্রান্ত ছবি ভেসে উঠছে। দেয়ালে কাঠের র‍্যাকে বোম ও আইইডির জন্য ৬১টি অবিকল প্রতিরূপ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে সাজানো আছে হোলি আর্টিজান, সীতাকুণ্ড, তাজিয়া মিছিল, নারায়ণগঞ্জ পুলিশ বক্স, মৌলভীবাজার জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার করা বোমার নমুনা।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্র বলছে, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ৭৬ ধরনের বোমা শনাক্ত করা গেছে। ২০০০ সালের পর থেকে গত ২০ বছরে বিভিন্ন হামলায় ৬১ ধরনের বোমা ব্যবহার করা হয়েছে। বোমাগুলোর মধ্যে এক্সপ্রেস সফটওয়্যার, গ্যাস ক্যান ইআইডি, ককটেল, হ্যান্ড গ্রেনেড, মাইন লাইক গ্রেনেডও রয়েছে।

দেশের জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে তিনটি সংগঠন হামলার ক্ষেত্রে বোমা বা গ্রেনেড ব্যবহার করে। হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী (হুজি), জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) আর নব্য জেএমবি। তবে বিভিন্ন সময় আনসার আল ইসলাম বোমা হামলার পরিকল্পনা করলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

policeকাউন্টার টেররিজমের বোমা নিষ্ক্রিয় ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার রহমত উল্লাহ চৌধুরী আজকের পত্রিকা বলেন, রাস্তায় পড়ে থাকা বোমাসদৃশ বস্তুটি আসলেই বোমা কি না, তা নিশ্চিত করা যাবে এখন থেকে। এ জন্য বোমাসদৃশ বস্তুটির ছবি তুলে যে কেউ বোমা ডেটাসেন্টারে পাঠাতে পারবেন। সেই ছবি বিশ্লেষণ করে মুহূর্তেই বিস্তারিত তথ্য জানানো যাবে। পাশাপাশি বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যদের পৌঁছানোর আগপর্যন্ত কী করতে হবে, সেটাও বলে দেওয়া হবে।

সিটিটিসি বোম নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের এই কর্মকর্তা বলেন, ২০০৬ সালে বোম ডিসপোজাল ইউনিট প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে প্রায় দুই হাজার বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতিদিন সারা দেশ থেকে বোমাসংক্রান্ত ১০ থেকে ১২টি ফোনকল আসে।

বোমা নিষ্ক্রিয় ইউনিটের ৩৮ জন সদস্য আছেন। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বোমা সম্পর্কীয় বিষয় নিয়ে কর্মঘণ্টা ভাগ করে ২৪ ঘণ্টা সাত দিনই কাজ করবে। এই পুরো প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করবে বিশেষ একটি সফটওয়্যার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এবার এনসিপি কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। আজ সোমবার রাত ১০টা ৪৫ মিনিটের দিকে এই বিস্ফোরণ হয়। ঘটনাস্থলে আরও একটি ককটেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। রাত প্রায় ১১টা ১০ মিনিটের দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

তবে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ বা কার্যালয়-সংশ্লিষ্ট কেউ বিস্ফোরণের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেননি।

রাজধানীতে গত কয়েক ঘণ্টায় একাধিক স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রাতে মিরপুরের শাহ আলী মার্কেটের সামনে পরপর তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। একই সময় ধানমন্ডি ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ জানায়, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরের পাশের শাহ আলী মার্কেটের সামনে এসব বিস্ফোরণ ঘটে। একই সময় খিলগাঁও ফ্লাইওভারের ওপরেও একটি ককটেল বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়।

দিনজুড়ে রাজধানীর আরও কয়েকটি এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অন্তত চারটি স্থানে সাতটি বিস্ফোরণের ঘটনা নিশ্চিত করেছে পুলিশ। এগুলোর মধ্যে মিরপুরে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের প্রতিষ্ঠান প্রবর্তনার সামনে এবং ভেতরে দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ হয়। ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারের সামনে দুটি এবং ধানমন্ডি ৯/এ এলাকার ইবনে সিনা হাসপাতালের সামনে আরও দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।

এ ছাড়া গতকাল ভোর হতেই রাজধানীতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে শাহজাদপুরে ভিক্টর পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। সকাল সোয়া ৬টার দিকে মেরুল বাড্ডায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কাছে আকাশ পরিবহনের আরেকটি বাসেও আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।

রাজধানীতে ধারাবাহিক ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের এসব ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নগরজুড়ে টহল জোরদার করেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। জনগণের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ট্রাককে ওভারটেক করতে গিয়ে দুর্ঘটনা, মোটরসাইকেল আরোহী পুলিশ সদস্য নিহত

বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নওগাঁর বদলগাছীতে ট্রাককে ওভারটেক করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী পুলিশ সদস্য রায়হান (৩২) নিহত হয়েছেন। সোমবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার কেশাইল গ্রামের শ্যালুকুড়ি ব্রিজের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনিছুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক একটি ঘটনা। এক সুখী পরিবারের হাসি মুহূর্তেই নিভে গেল।

থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কাশিমালা গ্রামের রেজাউল ইসলামের ছেলে রায়হান ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে থানায় কর্মরত ছিলেন। কিছুদিনের ছুটি কাটাতে তিনি স্ত্রী মিম্মা ও চার বছরের শিশুপুত্র আব্দুর রহমানকে নিয়ে নিজ গ্রামে এসেছিলেন। আজ দুপুরে মোটরসাইকেলযোগে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে আক্কেলপুর যাচ্ছিলেন। পথে কেশাইল শ্যালুকুড়ি ব্রিজের কাছাকাছি পৌঁছালে এক ট্রাককে ওভারটেক করতে গিয়ে সামনে থাকা একটি ভ্যানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

এতে রায়হান ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন। মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারান। স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত তাদের উদ্ধার করে আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রায়হান মারা যান।

দুর্ঘটনায় রায়হানের স্ত্রী মিম্মা ও চার বছরের শিশুসন্তান আব্দুর রহমানও গুরুতর আহত হয়। তাদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নবগঠিত আসন বাতিল, গাজীপুরবাসী হতাশ

গাজীপুর প্রতিনিধি
নবগঠিত আসন বাতিল, গাজীপুরবাসী হতাশ

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের আসন পাঁচটি থেকে বাড়িয়ে ছয়টি নির্ধারণ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল, তা অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন উচ্চ আদালত। ফলে পাঁচটি সংসদীয় আসনই থাকবে গাজীপুরে। এ ঘটনায় বৃহত্তর টঙ্গীসহ ওই এলাকায় রাজনৈতিক হতাশা দেখা দিয়েছে।

হতাশা প্রকাশ করে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা, প্রবীণ রাজনীতিক ও সাবেক এমপি হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, গাজীপুর-৬ আসনটি নাগরিক ও ভোটারদের জন্য নতুন সম্ভাবনার সূচনা করতে পারত। কিন্তু আজকের রায়ে সেই সম্ভাবনা ব্যর্থ হলো।

হাসান সরকারের চাচাতো ভাই মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সালাহউদ্দিন সরকার বলেন, ‘আমরা আপিল করব এবং গাজীপুর-৬ আসন পুনর্বহাল করব। সবাইকে ধৈর্য ধরতে অনুরোধ করছি। জয় আমাদেরই হবে, ইনশা আল্লাহ।’

জামায়াতে ইসলামীর গাজীপুর-৬ আসনের মনোনীত প্রার্থী ড. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘গাজীপুর-৬ আসনটি গাজীপুরবাসীর আশা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ছিল। টঙ্গী, গাছা ও হায়দারাবাদের মানুষ এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না। আমি আশা করি, নির্বাচন কমিশন আপিলসহ আইনি পদক্ষেপ নেবে। আমরা সবাই মিলেই গাজীপুর-৬ আসনের জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করব, ইনশা আল্লাহ।’

গাজীপুর মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘গাজীপুর একটি জনবহুল শিল্পাঞ্চল। এখানে ছয়টি আসন থাকা গণতান্ত্রিক ভারসাম্যের জন্য জরুরি ছিল। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত ছিল জনগণভিত্তিক ও যৌক্তিক। আমরা চাই, জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিষয়টি সমাধান করা হোক।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মাজহারুল আলম বলেন,‘গাজীপুরে পাঁচটি আসন বহাল থাকলে এটি দেশের অন্যতম বড় বৈষম্যের উদাহরণ হবে। বাসন মেট্রো থানা ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক ও মানবিক বিবেচনায় গাজীপুর সদর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কালিয়াকৈরের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না। আশা করি, সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবেন।’

গাজীপুর নাগরিক ফোরামের সভাপতি মো. হেদায়েত উল্লাহ বলেন, গাজীপুরের জনসংখ্যা ও প্রশাসনিক বাস্তবতা বিবেচনায় ছয়টি আসনই যৌক্তিক ছিল। নতুন আসন বাতিল হলে নাগরিক অংশগ্রহণ ও উন্নয়ন পরিকল্পনা ব্যাহত হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘গাজীপুর-২-এ আগেভাগে প্রার্থী ঘোষণা এবং গাজীপুর-৬ বাতিলে আমরা দুদিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। টঙ্গী, গাছা ও পুবাইল এলাকার মানুষ এখন না প্রার্থী পাচ্ছে, না এমপি পাচ্ছে—এটা চরম হতাশার।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজধানীর সাত এলাকায় ১২ ককটেল বিস্ফোরণ, তিন গাড়িতে আগুন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৭
ধানমন্ডি লাইব্রেরীর সামনে বাসে আগুন। ছবি: সংগৃহীত
ধানমন্ডি লাইব্রেরীর সামনে বাসে আগুন। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীতে সারা দিন ধরে একের পর এক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আজ সোমবার ভোর থেকে রাত পর্যন্ত সাত এলাকায় ১২টি ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। যদিও এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ হতাহত হয়নি।

আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরের পাশে শাহ আলী মার্কেটের সামনে পরপর তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। একই সময়ে খিলগাঁও ফ্লাইওভারের ওপরও একটি ককটেল বিস্ফোরণের খবর দিয়েছে পুলিশ।

মিরপুর মডেল থানার কর্মকর্তারা জানান, ফুটওভার ব্রিজের ওপর থেকে কেউ ককটেল নিক্ষেপ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

এর এক ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে শান্ত-মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার শিহাব সরকার বলেন, খবর পেয়ে মোহাম্মদপুর স্টেশন থেকে একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

ধানমন্ডি বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান জানান, আগুন লাগার সময় বাসে কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিলেন, তবে তাঁরা সবাই নিরাপদে নেমে আসতে সক্ষম হন। কেউ হতাহত হননি।

এর আগে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর চারটি স্থানে সাতটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে মিরপুরের গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে একটি, মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডে ‘প্রবর্তনা’র সামনে ও ভেতরে দুটি, ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারের সামনে দুটি এবং ধানমন্ডি ৯/এ এলাকার ইবনে সিনা হাসপাতালের সামনে আরও দুটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়।

মিরপুরে গ্রামীণ ব্যাংক ভবনের অভ্যর্থনা কেন্দ্রের সামনে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। প্রথমটি গতকাল রোববার দিবাগত রাত ২টা ২৬ মিনিটে এবং অপরটি ভোররাত ৩টা ৫৫ মিনিটে বিস্ফোরিত হয়। দুটি ককটেল অভ্যর্থনা কেন্দ্রের সামনে বিস্ফোরিত হয়। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ভবনেরও কোনো ক্ষতি হয়।

আজ সরেজমিনে দেখা যায়, ককটেল বিস্ফোরণের পর গ্রামীণ ব্যাংক ভবনের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ভবনের সামনের ফুটপাতে ও প্রধান ফটকের সামনে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই দেখা যায় তিনজন নিরাপত্তাকর্মী ও একজন কর্মকর্তা বসে আছেন। সামনেই অভ্যর্থনাকক্ষ। কাচের দরজার অভ্যর্থনাকক্ষের প্রবেশের মুখে লালচে ককটেল বিস্ফোরণের দাগ ও বিস্ফোরিত অংশ পড়ে ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেসব নিয়ে গেছে।

ঘটনার বিষয়ে গ্রামীণ ভবনের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা আল হেলাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, রাত ২টা ২৬ মিনিটে প্রথম বিস্ফোরণ হয়। এরপর ভোররাত ৩টা ৫৫ মিনিটে দ্বিতীয় ককটেল হামলার ঘটনা হয়।

গ্রামীণফোন ভবনের অভ্যর্থনার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। ছবি: সংগৃহীত
গ্রামীণফোন ভবনের অভ্যর্থনার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। ছবি: সংগৃহীত

সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, হামলাকারীরা দুটি মোটরসাইকেলে করে মিরপুর ১০ নম্বরের দিক থেকে আসে, এরপর ভবনের সামনে মোটরবাইক থামিয়ে পেছনে বসা হেলমেট পরা ব্যক্তি সীমানাপ্রাচীরের ভেতরে ককটেল ছুড়ে মেরে মিরপুর-১ নম্বরের দিকে পালিয়ে যান। এরপর আরও একটি মোটরসাইকেলে করে প্রায় এক ঘণ্টা পর আরও দুজন একই কায়দায় এসে ককটেল ছুড়ে চলে যান। তবে তাঁদের মুখ দেখা যায়নি। ঘটনার পর আলামত ও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়েছে পুলিশ।

মিরপুর মডেল থানার ফটক থেকে আনুমানিক এক শ গজ দূরে গ্রামীণ ভবনের ফটক। থানা ফটকে ও গ্রামীণ ব্যাংক ভবনের সামনে সব সময় পুলিশের পাহারা থাকে। এর মধ্যেই এই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিরাপদে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

একটি হামলার দেড় ঘণ্টা পর আরেকটি হামলার ঘটনা ঘটলেও পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীরা কাউকে আটকাতে পারেনি। এ বিষয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার সারোয়ার হোসেন বলেন, মোটরবাইকে করে এসে হামলা চালিয়ে তারা দ্রুত চলে যায়। তখন গভীর রাত ছিল, কত মোটরবাইক যায়, কোনগুলোকে আটকাবে।

ঘটনাস্থলে দেখা গেছে, বিস্ফোরিত ককটেলের ভেতরের পেরেক, কাচের টুকরা, জর্দার কৌটা ও স্কচটেপ পড়ে রয়েছে।

পুলিশের মিরপুর বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. মিজানুর রহমান জানান, মোটরসাইকেলে এসে দুজন ব্যক্তি এই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে গেছেন। তাঁদের মাথায় হেলমেট ছিল। চেহারা বোঝা যায়নি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দুজনকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

গ্রামীণ ব্যাংক ভবনে হামলার পর সকাল ৭টার দিকে মোহাম্মদপুরের সৈয়দ স্যার সড়কের ৬/৮ ভবনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহারের খাদ্যপণ্যের প্রতিষ্ঠান প্রবর্তনা ও বীজবিস্তার ফাউন্ডেশনের সামনের সড়কে ও সীমানার ভেতরে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়।

দুজন হেলমেট পরে মোটরসাইকেলে এসে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান বলে জানিয়েছেন প্রবর্তনার নিরাপত্তাকর্মী মো. মোস্তফা।

নিরাপত্তাকর্মী মোস্তফা বলেন, ভোর সাড়ে ৬টার দিকে বান্দরবান থেকে তাঁদের দুটি বস্তায় জিনিসপত্র আসে। সেগুলো তিনি ভেতরে ঢোকানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় একটি মোটরবাইকে দুজন এসে ভবনের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়ান। পরে তাঁরা পশ্চিম দিকে চলে যান। কিছুক্ষণ পর আবার ঘুরে আসেন। একজন বাইক থেকে নামেন, প্রথমে একটি ককটেল মারেন, সেটি সীমানাপ্রাচীর থেকে উড়ে একটি পিকআপ ভ্যানের ওপর পড়ে। এরপর আরও একটি নিক্ষেপ করলে সেটি ফুটপাতে বিস্ফোরিত হয়। এ সময় ওই ভবনে থাকা চারজন পুলিশ সদস্য বাইরে বের হন। তাঁরা বের হওয়ার আগেই বাইক নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। তাদের মোটরবাইকের নম্বরপ্লেট কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। সিসি ক্যামেরা থাকলেও তাদের হেলমেটের কারণে চেহারা দেখা যায়নি।

প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, এর আগেও একবার পেট্রলবোমা হামলা হয়েছিল। তখন আগুন ধরে যায় ভবনের উত্তর পাশে। এরপর ভবনের নিরাপত্তা জোরদার করতে সব সময় পুলিশ রাখা হয়। এর মধ্যেই এই হামলার ঘটনা ঘটেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান বলেন, প্রবর্তনার সামনের সড়ক ও ভবনের ভেতরে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে কেউ আহত হয়নি।

এ ছাড়া ভোরে শাহজাদপুরে ভিক্টর পরিবহনের একটি বাস এবং সকাল সোয়া ৬টার দিকে মেরুল বাড্ডায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কাছে আকাশ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত