Ajker Patrika

চীনের টিকা নিতে সরকারের মধ্যেই বিভক্তি

কূটনৈতিক প্রতিবেদক
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২১, ১৬: ৪৬
চীনের টিকা নিতে সরকারের মধ্যেই বিভক্তি

ঢাকা: ভারত থেকে আমদানি অনিশ্চিত হওয়ার পরে বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা শুরু করেছে বাংলাদেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকার এখনও কোন হদিস নেই। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে টিকা পেতে চীন ও রাশিয়ার ওপর ভরসা করলেও তাদের মান নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বাংলাদেশের। চীন টিকা দিতে রাজি হলেও সরকারের মধ্যেই তৈরি হয়েছে বিভক্তি।   

সংকটে পড়া বাংলাদেশকে করোনার টিকা সরবরাহ করার আগ্রহ দেখিয়েছে চীন। তবে তার ওপর শর্ত জুড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। সরবরাহের আগে এসব শর্ত পূরণ করেই টিকা দিতে হবে চীনকে। আগামী মঙ্গলবার বাংলাদেশ সফরে আসছেন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।  আসন্ন সফরে দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, টিকা কূটনীতি, প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল (আইপিএস) ও বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত হয়ে যায়। 

চীনকে দেয়া বাংলাদেশের শর্তের প্রথমেই রয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন ইস্যু। আর যদি সেটি না থাকে তবে চীনকে প্রমাণ করতে হবে তার দেশে ১০ কোটি মানুষ এ টিকা নিয়ে সুস্থ রয়েছে। কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। প্রথম পর্যায়, দ্বিতীয় পর্যায় ও তৃতীয় পর্যায়ে কোন দেশে কত মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। তাদের বর্তমান অবস্থা কি? এ সব কিছুই জানতে চায় বাংলাদেশ।  

বাংলাদেশকে ৫ লাখ টিকা উপহার দিতেও সরকারের অনুমতি চেয়েছে চীন। গত ২০ এপ্রিল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালিককে চিঠি দেন ঢাকাস্থ চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। চিঠিতে উপহার হিসেবে টিকা গ্রহণে বাংলাদেশের সম্মতি চাওয়া হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে রাষ্ট্রদূতের ফোনালাপের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে যে, টিকা উপহার হিসেবে গ্রহণ করতে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগবে। অনুমতি পেতে চিঠির সঙ্গে দুটি আবেদনপত্র সংযুক্ত করা হল। দ্রুত সময়ের মধ্যে আবেদন দুটি সই করে দূতাবাসকে জানাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিতে অনুরোধ করছি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এমনিতে টিকা পাওয়া নিয়ে পুরো বিশ্বে এক প্রকার প্রতিযোগিতা চলছে। আর আমাদের চীন টিকা দিতে চাইছে, আমরা নিচ্ছি না। এটা একটি বিরল পরিস্থিতি। আমরা দিনের পর দিন তাদের ঘুরাচ্ছি’।  

চীনের ৫ লাখ টিকা গ্রহণ না করে সময়ক্ষেপণ এবং বাংলাদেশের শর্ত জুড়ে দেয়া নিয়ে নিজের বিরক্তির কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে কিছু পণ্ডিত রয়েছেন, পশ্চিমা দেশগুলো থেকে ডিগ্রি নেয়া। তারা মনে করেন যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাবলুএইচও) সুপারিশ না করে, তবে সেটা গ্রহণ করা উচিত নয়।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশের শর্ত পূরণের আগ্রহ নেই চীনের। কারণ এ মুহূর্তে সংকটের ফলে বেশি আগ্রহ থাকার কথা বাংলাদেশেরই। তাই আগ বাড়িয়ে চীন এসব শর্ত পূরণ করতে যাবে না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘এখানে টিকা আসুক আর না আসুক সম্পূর্ণ দোষ গিয়ে পড়বে আওয়ামী লীগ আর প্রধানমন্ত্রীর উপর। যে মানুষটি আটকিয়ে দিয়েছে তিনি তার চেয়ারে ঠিকই বহাল রয়েছেন।’

তাহলে চীনা টিকা কি আমরা আমদানি করবো? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চীন টিকা সংক্রমণ অনুযায়ী কার্যকারিতা ও সক্ষমতা যাচাই না করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছে না সরকার। যেহেতু এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য টিকা অতি জরুরি তাই দ্রুত সেই যাচাই করে সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে।

এদিকে, করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহে রাখার জন্য দক্ষিণ এশিয়ায় একটি স্টোরেজ ফ্যাসিলিটি গঠন করতে চায় চীন। যার প্রস্তাবিত নাম ‘ইমার্জেন্সি ভ্যাক্সিন স্টোরেজ ফ্যাসিলিটি ফর কোভিড-১৯ ফর সাউথ এশিয়া’। সেখানে ভারতকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানকে রেখেছে চীন। এর মূল উদ্দেশ্য, যেন জরুরী প্রয়োজনে দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলো ভ্যাকসিন পায়। বাংলাদেশের করোনার টিকার অভাব হলে এখান থেকেও পাওয়া যাবে। তবে শুধু জরুরি উদ্দেশে এটি ব্যবহার করা হবে। ভারত বিহীন এই প্রক্রিয়ায় থাকতেও আপত্তি নেই বাংলাদেশের।

 

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত