Ajker Patrika

উন্নয়নের পেটে যাচ্ছে পুকুর

আসাদুজ্জামান রিপন, নরসিংদী
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২১, ১১: ৩৮
উন্নয়নের পেটে যাচ্ছে পুকুর

নরসিংদীর শিল্পাঞ্চল মাধবদীতে একের পর এক ভরাট হচ্ছে পুকুর। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এভাবে পুকুর ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবন, কারখানা, মার্কেটসহ অন্যান্য স্থাপনা। এতে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। অবাধে পুকুর ভরাট বন্ধ না হলে খুব দ্রুতই মাধবদী শহর ও আশপাশের এলাকা পুকুরশূন্য হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

পরিবেশ অধিদপ্তর নরসিংদীর উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, পুকুর, ডোবা ও জলাশয় ভরাট করা, শ্রেণি পরিবর্তন করা পরিবেশ আইনের লঙ্ঘন। ভরাটের অভিযোগ পেলে সরেজমিন পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের তথ্যমতে, শিল্প শহর মাধবদী ও আশপাশের এলাকায় পুকুর, ডোবা ও জলাশয়ের সংখ্যা ছিল অর্ধশতাধিক। এক যুগের ব্যবধানে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ভরাট করা হয়েছে অর্ধশত পুকুর ও ডোবা। বিভিন্ন ব্যক্তি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমিতি এসব পুকুর ভরাট করে নির্মাণ করেছে বহুতল ভবন, শিল্পকারখানা, মার্কেট, দোকানসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে মাধবদীর নতুন থানা ভবনসংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহ্যবাহী তারাপুকুর। বিশাল আকৃতির এই পুকুরটির অর্ধেকই ভরাট করে শিল্পকারখানা করেছে জজ ভূঞা গ্রুপ নামের একটি শিল্প গ্রুপ। নওপাড়াসহ আশপাশের এলাকায় আরও বেশ কয়েকটি পুকুর ভরাট করেছেন জজ ভূঞা গ্রুপ, হেরিটেজ রিসোর্টসহ অন্য শিল্পমালিকেরা।

এ ছাড়া সোনার বাংলা সমবায় কটন মিল মাধবদী বাজারের তিনটি পুকুর ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করেছে। বিরামপুর এলাকায় মুন্সী দিঘি নামে পরিচিত একটি বিশাল পুকুর ভরাট করেছে লুমিনা গ্লোবাল লিমিটেড। ভরাট হয়েছে চৈতাব এলাকার একটি বড় পুকুর। একইভাবে পৌর শহরের আশপাশের এলাকায়ও শিল্পোন্নয়নের বলি হচ্ছে পুকুর, জলাশয় ও ডোবা।

মাধবদী পৌর এলাকার বাসিন্দা লক্ষ্মণ দাস বলেন, শহরের একমাত্র ধোপাবাড়ির পুকুরটি ভরাট বাকি আছে। এই পুকুরে শহরের মানুষ গোসল, প্রাত্যহিক কাজ ও হিন্দুধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হতো। কিন্তু তদারকি না থাকায় এই পুকুরটির পানি মারাত্মক দূষিত হয়ে পড়েছে।  

একই এলাকার শিবু দাস ও উমর ফারুক বলেন, জমির মূল্য বেশি হওয়ায় যে যেভাবে পারছে পুকুর ভরাট করেছে। বেশির ভাগ ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর কিনে নিয়ে ব্যবসায়ীরা শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। কেউ সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেননি।

স্থানীয় কবি ও লেখক এমদাদুল ইসলাম খোকন আজকর পত্রিকাকে বলেন, ‘তদারকি না থাকায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মাধবদী শহর ও আশপাশের এলাকায় অর্ধশতাধিক পুকুর, ডোবা ভরাট হয়ে গেছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত এসব পুকুর ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে শিল্পকারখানা, মার্কেট, বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা। উন্নয়নের নামে এসব পুকুর ভরাট হলেও প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ নেই।’

মাধবদী পৌর শহরের ব্যবসায়ী আবদুল লতিফ মিয়া বলেন, পর্যায়ক্রমে শহরের প্রায় সব পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। এতে জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হওয়াসহ শহরের পরিবেশের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে।

নরসিংদী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উপসহকারী পরিচালক নূরুল ইসলাম বলেন, ভরাট হয়ে যাওয়ায় কমছে পুকুর, ডোবা ও জলাশয়। এতে অগ্নিকাণ্ডের সময় পানির উৎস না পেলে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। শিল্প এলাকায় পানির উৎসব থাকা খুবই জরুরি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত