Ajker Patrika

নির্ভয়ে ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে নির্বাচনব্যবস্থা হতে হবে স্বাধীন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
‘গণতন্ত্রের পূর্ণাঙ্গ যাত্রা: জরুরি সংস্কার, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সুশাসন’ শীর্ষক বৈঠকি আলোচনা সভা। ছবি: সংগৃহীত
‘গণতন্ত্রের পূর্ণাঙ্গ যাত্রা: জরুরি সংস্কার, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সুশাসন’ শীর্ষক বৈঠকি আলোচনা সভা। ছবি: সংগৃহীত

সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছের হোসেন বলেছেন, এমন একটি স্বাধীন নির্বাচনব্যবস্থা হতে হবে, যেখানে স্বাধীনভাবে ও নির্ভয়ে জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। ‘গণতন্ত্রের পূর্ণাঙ্গ যাত্রা: জরুরি সংস্কার, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সুশাসন’ শীর্ষক বৈঠকি আলোচনা সভায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এই মন্তব্য করেন।

আজ বুধবার (৪ জুন) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা ফোরাম ইনিশিয়েটিভ ও ইউনিভার্সাল নিউজ এজেন্সির যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটি বেলা ৩টায় শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টায় শেষ হয়।

সাবেক প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘দেশে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থাকবে, ভিন্নমত থাকবে, সে জন্য কোনো তীক্ষ্ণতা থাকা উচিত নয়। রাষ্ট্রে একজন কৃষক, শ্রমিক—সবার জন্য সমান সুযোগ থাকতে হবে। সকল জায়গায় সবার জন্য নিরাপত্তা ও সম্মানের পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে হবে। গণতন্ত্র শাসনব্যবস্থায় ন্যায়ের মানসিকতা থাকা প্রয়োজন। গণতন্ত্রের সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন।’

আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হবে জোর দিয়ে মন্তব্য করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী।

ড. মাহাবুব হাসানের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক আশরাফুল হুদা, সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আব্দুল্লাহ, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মারুফ হোসেন, মানবাধিকারকর্মী সাইয়েদ আবদুল্লাহ প্রমুখ।

বক্তব্যে বক্তারা বলেন, নির্বাচন ও সংস্কার তো আলাদা বিষয় নয়। যাঁরা মনে করেন, নির্বাচন দরকার নেই, সংস্কার জরুরি, তাঁরা স্থানীয় নির্বাচনের কথা বলেন। আগামী জুনে জাতীয় নির্বাচনের কথা বলেন কেউ কেউ। গত ৯ মাসে সংস্কার করতে না পেরে সামনে ছয় মাসে কী এমন সংস্কার করবেন যে তাঁরা নির্বাচন জুন মাসে চান। শেখ হাসিনা স্বৈরাচার ছিল; কারণ, তাদের নির্বাচনের রাতের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার। এ জন্যই তাদের কোনো নির্বাচন প্রয়োজন ছিল না।

বক্তারা বলেন, সংস্কার ও নির্বাচন কোনো বিপরীতমুখী নয়। সংস্কার একটি বৃহৎ পরিকল্পনা ও চলমান। জরুরি সংস্কার ১০ মাসই যথেষ্ট ছিল। সংস্কারের বাস্তবে রূপ দিতে গেলে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে। আমাদের সবচেয়ে বড় সংস্কার হলো ফ্যাসিস্টের রাষ্ট্রকাঠামো পরিবর্তন করা, তার জন্য জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা দরকার।

বক্তারা আরও বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে তো সংঘাত ছিল না, আমরা এখন সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছি। সার্বভৌমত্ব সামনে রেখে হাসিনা ও এরশাদবিরোধী আন্দোলন বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল একসঙ্গে করেছি। আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল—স্বৈরাচারের পতন। ৫ আগস্টের পরে এমন কী ঘটল যে আমাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হলো।’

চলতি বাজেট নিয়ে বক্তারা বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়নি। শিক্ষা, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা খাতে জনগণের আকাঙ্ক্ষার কোনো পরিবর্তনই আসেনি এই বাজেটে। বাজেট ফ্যাসিবাদের নামান্তর, ভিন্ন কিছু নয়।

করিডর নিয়ে বক্তারা বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে মানবিক করিডর নিয়ে জনগণ বা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলোচনাই করেনি এই সরকার। ফ্যাসিস্ট হাসিনা যেমন ভারতের সঙ্গে সব চুক্তি জনগণের থেকে আড়াল করেছে, এই সরকারও তাই করেছে।’

মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘দেশে যে আইনকানুন আছে, তা সংস্কারের প্রয়োজন নেই। এখন যেটা করতে হবে, কঠোর আইনের প্রয়োগ ও গণতান্ত্রিক সংস্কারে মনোনিবেশ। আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ সৃষ্টি না করে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ এ সময় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশ পরিবর্তনের আহ্বান জানানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত