Ajker Patrika

ছাত্রজীবন থেকেই বেপরোয়া ছিলেন শ্রীপুরের সেই জাহিদ

রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর) 
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২৩: ৪১
ছাত্রজীবন থেকেই বেপরোয়া ছিলেন শ্রীপুরের সেই জাহিদ

গাজীপুরের শ্রীপুরের বিএনপির পদযাত্রা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে ধরা সেই জাহিদ ছাত্র অবস্থা থেকে বেপরোয়া ছিলেন। আজ রোববার সরেজমিনে কথা হলে এসব তথ্য জানান স্থানীয়রা। এর আগে রোববার ভোররাতে শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের গারারণ গ্রামের হাতেম আলীর বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

স্থানীয়রা জানান, জাহিদ গফরগাঁও উপজেলার নিগুয়ারী ইউনিয়নের সাধুয়া আবু সাঈদিয়া দাখিল মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। বরমীর বরামা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেন। এরপর শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। বরমী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং শ্রীপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেন জাহিদ। বাবা সাইদুর রহমান মীর আনসার সদস্য হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বাবার চাকরি শেষে বরমী বাজারে খোলাবাজারে জামাকাপড় বিক্রি করতেন। বাবাকে সপ্তাহে হাটবারে সহযোগিতা করতেন। জাহিদের ছোট ভাই উচ্চশিক্ষা শেষে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করছেন। জাহিদের বাবা ছয় মাস আগে মারা যান। বাবা মারা যাওয়ার সময় জাহিদ জেলহাজতে ছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাধুয়া গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, নিগুয়ারী ইউনিয়ন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা নূরুল হক খান ও তাঁর প্রতিবেশী চাচা এনামুল হক মীরের সঙ্গে বিএনপির রাজনীতি সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। গফরগাঁও অঞ্চলের বিএনপির রাজনৈতিক নেতারা ছোট্ট জাহিদকে বিএনপির একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে জানতেন। 

গফরগাঁও উপজেলা বিএনপির সদস্য ও জাহিদের প্রতিবেশী চাচা এনামুল হক মীর বলেন, ‘গ্রেপ্তার করলেই কি ভাতিজাকে অস্বীকার করা যাবে। জাহিদ ছোটবেলা থেকে বিএনপিকে সমর্থন করত। আমাদের সঙ্গে সব মিটিং-মিছিলে সে যোগ দিয়েছে। বরমী গিয়েও বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাজনীতির মাঠে ছিল। জাহিদের পরিবারের বেশির ভাগ মানুষ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।’ 

জাহিদের বাড়ির পার্শ্ববর্তী অললী গ্রামের সোহাগ মিয়া বলেন, ‘জাহিদ ছাত্র অবস্থায় বেপরোয়া ছিল। মারামারি করতে পছন্দ করত। আমি আর জাহিদ একই মাদ্রাসার ছাত্র ছিলাম। সে বড়দের সঙ্গে অনেক বেশি উচ্ছৃঙ্খল আচার-আচরণ করত।’ 

বরমীর বাসিন্দা ফয়সাল খান বলেন, ‘তাকে আমরা উত্তোইরা জাহিদ নামে চিনতাম। এলাকার খারাপ ছেলেদের সঙ্গে তার ওঠাবসা। বরমীতে এর আগে অস্ত্র দেখানো বা তার কাছে অস্ত্র আছে—এ বিষয়ে আমি বলতে পারব না।’ 

সাধুয়া গ্রামের সুজন মিয়া বলেন, ‘তার আচার-আচরণ একেবারে ভালো ছিল না। প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি করত। এমন কোনো মানুষ ছিল না যে তাকে ভয় পেত না। সাধুয়া মার্কেটে সকাল ১০টার দিকে প্রকাশ্যে লোকজন নিয়ে এসে বোমা ফাটিয়েছে জাহিদ। ঘটনার কয়েক দিন পর এলাকার লোকজন তাকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।’ 

এদিকে পুলিশ জানায়, ২০১৪ সালে গফরগাঁও উপজেলার নিগুয়ারী ইউনিয়নের সাধুয়া মার্কেট নামক একটি বাজারে প্রকাশ্যে সকাল ১০টার দিকে বোমা ফুটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। এ ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ জাহিদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে পাগলা থানার একটি মামলা দায়ের করে। এই মামলায় কারাভোগ করেন জাহিদ। ২০১২ সালে নিগুয়ারী ইউনিয়নের কদমতলী এলাকায় একটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় পাগলা থানা-পুলিশ হাতেনাতে ধরে জেলহাজতে পাঠায়। 

২০১৩ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলায় আবারও পুলিশ জাহিদকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। ২৫ জুলাই ২০১৪ সালে শ্রীপুর থানায় জাহিদের বিরুদ্ধে একটি ডাকাতি মামলা হয়। ২০২২ সালের ২২ এপ্রিল শ্রীপুর থানায় অস্ত্রধারী জাহিদের বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজির মামলা রুজু হয়। এ ছাড়া অস্ত্রধারী জাহিদের বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, বিস্ফোরকসহ একাধিক মামলা রয়েছে গফরগাঁও পাগলা ও শ্রীপুর থানায়। 

রোববার ভোরে শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের গারারণ গ্রাম থেকে জাহিদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশজানতে চাইলে জাহিদের চাচাতো ভাই মঈনুল মীর বলেন, ‘সাধুয়া মার্কেট বাজারে বোমা ফাটানোর ঘটনাটি সম্পূর্ণ সাজানো ছিল। বরমী ইউনিয়নের বরকুল গ্রামের একটি ছেলে জাহিদকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে সাধুয়া মার্কেটে বোমা ফাটিয়ে জনতার হাতে আটক হয় ওই ছেলেটি। এরপর আটককৃত ছেলেটি আমার চাচাতো ভাই জাহিদের সম্পৃক্ততার কথা জানায়। এরপর জাহিদ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। জেলখানা থেকে ছাড়া পেয়ে একটু বেপরোয়া হয়ে ওঠে জাহিদ।’ 

জাহিদের বিষয়ে বরমী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আফাজ উদ্দিন প্রধান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি ১৫ বছর যাবৎ ইউনিয়ন বিএনপির দায়িত্বে রয়েছি। অস্ত্রধারী জাহিদ নামে আমার কোনো কর্মী-সমর্থক নেই। আমাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে আহত করেছে।’ 

নিগুয়ারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুবেল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জাহিদ নামের এই ছেলেটি এলাকায় এলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত থাকত। হঠাৎ করেই দলবদ্ধ হয়ে জাহিদ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রোগ্রামে হামলা করত। সে এমন কোনো অপকর্ম নেই যে এলাকায় করেনি। মাদক, চাঁদাবাজি, ডাকাতিসহ সব অপরাধের সঙ্গে জড়িত সে। সকালে জেলে রাতে বাড়ি, জেলখানা যেন তার শ্বশুরবাড়ির মতো।’ 

বরমী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ হারুন অর রশিদ খন্দকার বলেন, ‘গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন কার্যালয়ের সামনে অস্ত্র উঁচু করে ভয়ভীতি দেখায় জাহিদ। এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমরা গণ-আন্দোলন গড়ে তুলব।’ 

পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তার (জাহিদ) বিরুদ্ধে পাগলা থানায় একটি ডাকাতি ও একটি বিস্ফোরক মামলা রয়েছে। তাকে এর আগে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। এ ছাড়া গফরগাঁও থানায় কী ধরনের মামলা রয়েছে, সে বিষয়ে আমি বলতে পারব না।’ 

শ্রীপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অস্ত্রধারী জাহিদের বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, বিস্ফোরকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’ 

উল্লেখ্য, গতকাল সকালে বিএনপির পদযাত্রা চলাকালে মিছিলের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচু করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন অস্ত্রধারী জাহিদ। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দাম্পত্য কলহের গুঞ্জন, মুখ খুললেন জাহিদ হাসান

‘আমি যে মাপের লোক, আমারে সে মাপের অস্ত্র দিয়া ফাঁসাইতি’

অবশেষে ইকবালের পরিবারমুক্ত হলো প্রিমিয়ার ব্যাংক

‘হেল্প, হেল্প’ বলে চিৎকার—শিক্ষক এগিয়ে যেতেই গলায় ছুরি চালাল কিশোরী

‘আপত্তিকর’ ভিডিও: বিএফআইইউ প্রধান শাহীনুলকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠালেন গভর্নর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত