Ajker Patrika

শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যা

মাদকসেবীদের হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র খুন, ক্যাম্পাস উত্তাল

  • স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, ভিসি-প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি ছাত্রদলের।
  • সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাইকের ধাক্কাকে কেন্দ্র করে খুন।
  • গ্রেপ্তার ৩ জন কারাগারে। একজনের বাড়িতে আগুন।
  • আজ অর্ধদিবস ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৪ মে ২০২৫, ২৩: ২৩
ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার প্রতিবাদে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছুরিকাঘাতে খুন হন সাম্য।	ছবি: আজকের পত্রিকা
ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার প্রতিবাদে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছুরিকাঘাতে খুন হন সাম্য। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস-সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছুরিকাঘাতে শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫) খুনের ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীরা গতকাল বুধবার দিনভর ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ, মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছে ছাত্রদল। নিহত সাম্য ছাত্রদল নেতা ছিলেন।

সাম্য খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। তাঁদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ বলছে, তিনজনই মাদকসেবী। মঙ্গলবার রাতে তাঁরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়েছিলেন মাদক সেবন করতে। এ সময় মোটরসাইকেল ধাক্কা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে তাঁরা সাম্যকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন। উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের ২২২ নম্বর কক্ষে। তিনি এই হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায়।

গ্রেপ্তারের পর তিনজন কারাগারে

সাম্য হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে রাজধানীর রাজাবাজার ও গ্রিন রোড এলাকা থেকে। তাঁরা হলেন মো. তামিম হাওলাদার (৩০), সম্রাট মল্লিক (২৮) ও মো. পলাশ সরদার (৩০)।

তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনই ‘বহিরাগত’। তাঁরা ১৫-২০ দিন আগে মাদারীপুর থেকে ঢাকায় আসেন। ফার্মগেট এলাকায় ফুটপাতে গেঞ্জির ব্যবসা শুরু করেন। থাকেন রাজধানীর রাজাবাজার এলাকায়। ঘটনার দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাদক সেবনের জন্য গিয়েছিলেন।

শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, সাম্যর ভাই শরীফুল ইসলাম বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। ওই মামলায় ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে গ্রেপ্তার দুজন ঘটনাস্থলে ছিলেন বলে তথ্য দিয়েছেন সাম্যর বন্ধু। ওই বন্ধুই তাঁদের শনাক্ত করেছেন।

গতকাল বিকেলে গ্রেপ্তার তিনজনকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তৌফিক হাসান। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জামশেদ আলম তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক তৌফিক হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, গ্রেপ্তার তিনজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তাঁরা প্রায় ২০ দিন আগে মাদারীপুর থেকে ঢাকায় আসেন। রাজাবাজার এলাকায় থাকেন। ঘটনার দিন তাঁরা মাদক সেবনের জন্য সেখানে গিয়েছিলেন।

ঘটনার বর্ণনা

সাম্যর বন্ধুরা জানান, মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে মোটরসাইকেল চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন সাম্য। এ সময় অন্য একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে তাঁর মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগলে উভয়ের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে সাম্যকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ডান পায়ের ঊরুতে আঘাত করে পালিয়ে যায় ওই মোটরসাইকেলের আরোহী। পরে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মুক্তমঞ্চ ও রমনা কালীমন্দিরের মাঝখানের খোলা জায়গায় ক্রাইম সিন চিহ্নিত করে রেখেছে সিআইডি। সেখানে কয়েকটি ইট ও ঘাসের মধ্যে রক্ত লেগে রয়েছে।

কালীমন্দিরের ফটকের পাশে থাকা একাধিক দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল রাত সাড়ে ১১টায় কয়েকজন মারামারি করে। কিন্তু কী নিয়ে, কেন মারামারি করেছে, তা তাঁরা জানেন না। পরে শোনেন, একজন মারা গেছেন।

এক দোকানি বলেন, মাঝেমধ্যে মাদক সেবন নিয়ে এমন মারামারি লাগে। গতকাল কী জন্য মারামারি লেগেছে, তা জানেন না।

উপাচার্য, প্রক্টর ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি ছাত্রদলের

সাম্য খুন হওয়ার প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে জড়ো হন তাঁর বন্ধু, সহপাঠী ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। পরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যান তাঁরা। রাত ২টার দিকে মিছিল ভিসি চত্বরে এসে জড়ো হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’; ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব দে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিলে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান শিক্ষার্থীদের সামনে আসেন। তখন অনেকে তাঁর বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং উপাচার্যের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উপাচার্য ও প্রক্টর মিছিল নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। নিহত শিক্ষার্থীকে দেখতে ভেতরে ঢুকতে চাইলে শিক্ষার্থীদের বাধায় ঢুকতে পারেননি। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে স্থান ত্যাগ করেন উপাচার্য ও প্রক্টর।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় সাম্য হত্যার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরের সামনে গিয়ে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। সমাবেশে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান, প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি তোলেন তাঁরা। আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেন তাঁরা।

সমাবেশে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘আমরা দেখছি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাদের টার্গেট করে হত্যা করা হচ্ছে; অথচ সরকার তা নিয়ে নিশ্চুপ।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ‘অতিদ্রুত আমরা এই ভিসি ও প্রক্টরকে সরানোর অনুরোধ করছি সরকারের কাছে। না হলে আমরা এই সরকারকে সরাতে বাধ্য হব।’

আজ অর্ধদিবস ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গতকাল মানববন্ধন করেন শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এ সময় সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি জানান তাঁরা। সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠন। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রদল।

গতকাল বেলা দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে বৈঠক করেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রতিনিধিরা।

বৈঠক শেষে বিকেলে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান সাম্যকে হত্যার ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার শোক পালন ও অর্ধদিবস ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেন।

উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেটটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে রমনা পার্কের মতো একটি স্মার্ট পার্ক হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’ এ ছাড়া নিয়মিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অভিযানের জন্য একটা টিমও গঠন করা হবে বলে জানান উপাচার্য।

সাম্যর মৃত্যু নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘সাম্যর মৃত্যু আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে কী ধরনের অপরাধ চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা অব্যাহত থাকবে। শিক্ষার্থীদের দাবি সরকার গুরুত্বসহকারে দেখছে।’ বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।

কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা

গতকাল সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গ থেকে সাম্যর মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেখান থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে তাঁর বিভাগে। সেখানে তাঁর প্রথম জানাজা হয়। পরে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সাম্যর দ্বিতীয় জানাজা হয়। এতে অংশ নেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মী, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে জানাজা শেষে বেলা আড়াইটার দিকে পরিবারের লোকজন, তাঁর বিভাগের শিক্ষক ও সহপাঠীরা মরদেহ নিয়ে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে রওনা দেন।

গ্রামের বাড়িতে মাতম

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সাম্যর গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে চলছে মাতম। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে দলীয় নেতা-কর্মী ও এলাকাবাসী তাঁর বাড়িতে জড়ো হন। স্যাম্যর লাশ গতকাল রাত ৭টার দিকে বাড়িতে পৌঁছায়। রাত ১১টার দিকে জানাজা শেষে লাশ দাফনের কথা ছিল।

সাম্য বেলকুচির সরাতৈল গ্রামের ফরহাদ সরদারের ছেলে। তাঁর মা কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট।

সাম্যর বড় চাচা কাউসার আলম বলেন, ‘কী অপরাধ ছিল আমার ভাতিজার যে তাকে হত্যা করা হলো। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। যারা এই হত্যার সাথে জড়িত, তাদের দ্রুত ফাঁসিতে ঝোলানো হোক।’

সাম্য হত্যার প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্রদলের উদ্যোগে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ভাসানী মিলনায়তন চত্বরে এসে শেষ হয়।

তদন্তে ৭ সদস্যের কমিটি

সাম্য হত্যার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খানকে আহ্বায়ক করে গতকাল সাত সদস্যের কমিটি করা হয়। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইকরামুল হক, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তৈয়েবুর রহমান, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম এবং ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার। কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সহকারী প্রক্টর শারমীন কবির। পাশাপাশি ডেপুটি রেজিস্ট্রার (তদন্ত) সাচিবিক দায়িত্বে থাকবেন।

মাদারীপুরে আসামির বাড়িতে আগুন

মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, সাম্য হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের ব্রাহ্মন্দী এলাকার তামিম হাওলাদারের গ্রামের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। গতকাল রাতে এ ঘটনা ঘটে। কে বা কারা দিয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আটক তামিম হাওলাদার ওই এলাকার এরশাদ হাওলাদারের ছেলে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রেপ্তার তিনজনই এলাকায় বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিলেন। সরকারের পতনের আগপর্যন্ত তামিম ও পলাশ গ্রামে অবস্থান করতেন এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে চলাফেরা করতেন। সম্রাট মল্লিক মাদকাসক্ত বলে এলাকাবাসীর ভাষ্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গোপালগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
দুর্ঘটনাকবলিত মোটরসাইকেল। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুর্ঘটনাকবলিত মোটরসাইকেল। ছবি: আজকের পত্রিকা

গোপালগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল রোববার রাত পৌনে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন-মোটরসাইকেল চালক সদর উপজেলার ডালনিয়া গ্রামের ত্রিনাথ বিশ্বাসের ছেলে বিজয় বিশ্বাস (২২) এবং আরোহী একই গ্রামের সতীশ ভট্টাচার্যের ছেলে সরোজ ভট্টাচার্য (৫০)।

গোপালগঞ্জ বৌলতলী পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আফজাল হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট আঞ্চলিক মহাসড়কে রাত পৌনে ১০টার দিকে তারা মোটরসাইকেলে করে গ্রামের বাড়ির দিকে যাবার সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

তিনি আরো জানান, চালক ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকা গ্যাস ভর্তি একটি ট্রাকের পেছনে সজোরে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই বিজয় বিশ্বাস নিহত হয়। আরোহী সরোজ ভট্টাচার্যকে একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মুগদা-মান্ডা সড়ক: উচ্ছেদের পর ফের দখল

  • ৫০ ফুট চওড়া করা মুগদা-মান্ডা সড়ক দখলের ফলে আবার সরু।
  • রাস্তাটির উভয় পাশ দখল করে অর্ধডজন দোকান বসেছে।
  • সংস্কারকাজে ধীরগতির কারণে সড়ক দখল হয়েছে: এলাকাবাসী।
সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকা 
উচ্ছেদের পর মুগদা-মান্ডা সড়কটি ফের দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে অস্থায়ী স্থাপনা। এতে সড়কটি আগের মতোই সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি মুগদা এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
উচ্ছেদের পর মুগদা-মান্ডা সড়কটি ফের দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে অস্থায়ী স্থাপনা। এতে সড়কটি আগের মতোই সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি মুগদা এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

চওড়া সড়কের মাঝ পর্যন্ত একটি রেস্তোরাঁ। মোতালেব রেস্টুরেন্ট নামের ওই রেস্তোরাঁর পাশেই বাকরখানির দোকানটি যেন সড়কের গলা চেপে ধরেছে। উচ্ছেদ অভিযানের পর ৫০ ফুট চওড়া হওয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মুগদা-মান্ডা সড়কটি দখলের ফলে আবার সরু হয়ে গেছে। এই সড়কের উভয় পাশে অর্ধডজন দোকান বসেছে। এগুলো যান চলাচলেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনে কেউ অভিযোগ না দেওয়ায় সড়কটি নতুন করে দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় সড়কটির সংস্কারকাজ এগিয়ে নিতে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কর্মকর্তারা।

ডিএসসিসির ৬, ৭১ ও ৭২ ওয়ার্ডের ওপর দিয়ে গেছে মুগদা-মান্ডা সড়ক। সরু এই সড়কে প্রতিনিয়ত যানজট হতো। জনভোগান্তি কমাতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) রাজধানীর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় এই সড়ককে ৫০ ফুটে প্রশস্ত করা হয়। এরপর সড়কটির উন্নয়ন ও সংস্কারের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০২৪ সালে মুগদা বিশ্বরোড থেকে মান্ডা হায়দার আলী উচ্চবিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ডিএসসিসি-রাজউক। এরপর সড়কের সংস্কারকাজ করার কথা ছিল। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর সংস্কারকাজ থামকে যায়। এই সুযোগে সড়কটির অর্ধেকের বেশি আবার দখল হয়ে গেছে। ৫০ ফুট চওড়া সড়কটি এখন অর্ধেকে ঠেকেছে।

মুগদা এলাকার ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক নুরুল হক বলেন, ‘দেট্টা (দেড়) বছর ধইরা রাস্তাডা জ্বালাইতাছে। যখন মনে চায় কাম (কাজ) করে, যখন মনে চায় কাম বন্ধ রাখে। সবই এরার মনমর্জি। মর্জি হইলে করে, না হইলে করে না। কোনো নিয়মকানুন নাই।’

মুগদা বিশ্বরোড ধরে মান্ডার দিকে এগোলে দেখা যায়, মুগদা বড় মসজিদের কাছে দুই পাশ থেকেই সড়কটি দখল হয়ে গেছে। উত্তরপাশে হাজী এন্টারপ্রাইজ নামের একটি মুদি ও তেলের দোকান সড়কের ওপর ছাউনি দিয়ে বারান্দা তৈরি করেছে। মসজিদ লাগোয়া দোকানগুলো এর আগে উচ্ছেদ করা হলেও পুনরায় নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে ওই জায়গায় সড়কের অর্ধেক অংশ দখল হয়ে গেছে।

সড়কের ওপর ছাউনি দিয়ে

দখল করার বিষয়ে জানতে চাইলে হাজী এন্টারপ্রাইজের মো. নাজমুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা তো বাড়ির মালিকের জায়গা, সিটি করপোরেশন থেকে তিনি কোনো টাকা পান নাই। তাই তিনি তাঁর জায়গা নিয়ে নিয়েছেন।’

মুগদা ওয়াপদা গলির বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন বলেন, ঢাকার অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা মুগদা ও মান্ডা। কয়েক লাখ লোক এখানে বসবাস করে। গত সরকার এই সড়কের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সড়কটি ৫০ ফুট করে দেয়। কিন্তু এখন কেউ দেখে না। সড়কটি ঠিক করতে করতেই অর্ধেক রাস্তা আবার দখল হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা হাছিবা খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সড়কটি দখলের কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। যদি কোথাও সরকারি সড়ক বা সম্পত্তি দখলের অভিযোগ আসে, আমরা তা উদ্ধারের জন্য যা যা করা দরকার, তার সবই করব।’

সড়কটির সংস্কারকাজের ধীরগতির জন্য দেশের অস্থিতিশীল অবস্থাকে দায়ী করেছেন ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আগে যাঁরা কাজ করেছিলেন (সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস) তাঁদের পক্ষে যা করা সম্ভব, বর্তমান প্রশাসনের পক্ষে সেটি করা একটু কঠিন। বর্তমান প্রশাসনের সেই সক্ষমতা নেই। সরকার পতনের পর আগের ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। আমরা নানাভাবে কাজটা করার চেষ্টা করছি।’

সড়কের কোনো অংশ দখল হলে তা উদ্ধার করা হবে জানিয়ে নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করব। আমি খোঁজ নিয়ে যা যা করা যায়, তা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুনামগঞ্জে দুস্থদের কর্মসূচি: টাকায় ভিডব্লিউবির নাম বিক্রি

  • উপকারভোগীর নাম অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।
  • বিভিন্ন ইউনিয়নে উপকারভোগীর জমা করা টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
  • একটি ইউনিয়নের অধিকাংশ কার্ড বিতরণে আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ।
বিশ্বজিত রায়, সুনামগঞ্জ
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সুনামগঞ্জে দুস্থ নারীদের জন্য পরিচালিত ভিডব্লিউবি কর্মসূচির উপকারভোগীদের তালিকা তৈরিতে অনিয়ম এবং জমা করা টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, চলতি মেয়াদে উপকারভোগীর নাম অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। এ ছাড়া গত মেয়াদে বিভিন্ন ইউনিয়নে উপকারভোগীর জমা করা টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

মহিলা অধিদপ্তর পরিচালিত ভিডব্লিউবির উদ্দেশ্য হলো, গ্রামীণ দরিদ্র নারীদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, পুষ্টি ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তবে এই জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দরিদ্রের বদলে সচ্ছলদের নাম যুক্ত করা হয়েছে তালিকায়। সংশ্লিষ্ট দপ্তর, চেয়ারম্যান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার যোগসাজশে ইউনিয়ন পরিষদের কিছু লোক জড়িত—বলছেন খোদ কর্মকর্তা, ইউপি সদস্যসহ অনেকেই। তথ্যানুসন্ধানেও এর সত্যতা পাওয়া গেছে।

ভিডব্লিউবি কার্ড বিতরণে অনৈতিক অর্থ লেনেদেন-সংক্রান্ত একটি অডিও রেকর্ড এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। তাতে বলতে শোনা যায়, ‘হ্যালো, আফাই ভাই। হেরা চারজনে দেড় হাজার কইরা দিছে না?’ অপর প্রান্ত থেকে আফাই মিয়া—‘হ্যাঁ, হ্যাঁ।’ ‘আমার টেকাডা (দেড় হাজার টাকা) দেওয়ন (দেওয়া) লাগে। নাইলে আমার নামডা বাদ যাইব। আমি গরীব মানুষ।’ পাল্টা ধমকের সুরে আফাই মিয়া বলেন, ‘আপনারা তো পণ্ডিত মানুষ। পণ্ডিতি কইরা মেম্বারের কাছে গেছিলেন... তর্ক ধইরেন না। এত দিন ফোন দিলেন না। আজকে ফোন দিছেন কিসের জন্য।’

‘ফোন দিছি টেকা দেওয়ার লাগি। আপনার বিকাশ নাম্বারটা দেইন (দেন)?’ আফাই মিয়া—‘তুলেন... পার্সোনাল।’

টাকা পাঠানোর পর—‘হ্যালো, টেকা পাঠাইছি। লাস্টে তেত্রিশ। দেখইন গেছেনি।’ আফাই মিয়া—‘আচ্ছা, ওকে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামালগঞ্জের বেহেলী ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্য জানিয়েছেন, তাঁর ইউনিয়নে অধিকাংশ নামই টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাদের নিজস্ব লোক দিয়ে নামগুলো বিক্রি করেছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘গণশুনানির দিন কেউ আসেনি, তাই আমার ওয়ার্ডের সব নাম বাদ পড়েছে। যোগাযোগ করলে বলা হয়, সব নাম চূড়ান্ত হয়ে গেছে। আবার যে পাঁচজন টাকা দিয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে গণশুনানির দিন তাদের আনা হয়েছে। তাদের কাছে আফাই মিয়ার তরফ থেকে প্রথমে ৩ হাজার দাবি করা হলেও পরে দেড় হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে।’

আফাই মিয়াকে টাকা প্রদানকারী আশরাফুল (ছদ্মনাম) বলেন, ‘টাকা দিলেও আমার বউয়ের (স্ত্রী) নাম বাতিল কইরা দিছে। ইউনিয়ন অফিসে গেলে তারা কইছে পরবর্তীতে নাম দিয়া দিব। আমরার গ্রামের জাকির হোসেন, আবুল হোসেন, বুলবুল, আমিরুল, আল-আমিন এই পাঁচজনে টেকা (টাকা) দিছে। হেরার নাম হইছে; কিন্তু আমার নাম নাই।’

তবে বেহেলী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সুজন দাস ও উদ্যোক্তা আফাই মিয়া এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘গণশুনানির মাধ্যমে সবকিছু যাচাই-বাছাই হয়েছে। আমরা এর সঙ্গে জড়িত নই।’

সুনামগঞ্জ মহিলা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২৫-২৬ মেয়াদে জেলার ২৩ হাজার ৬১৫ জন উপকারভোগী ভিডব্লিউবি কর্মসূচির আওতায় খাদ্যসহায়তা পাচ্ছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২ হাজার ১৩৩, বিশ্বম্ভরপুরে ২ হাজার ২৬৩, ছাতকে ২ হাজার ১৪৫, দিরাইয়ে ২ হাজার ৭৮, ধর্মপাশায় ২ হাজার ১৬৮, দোয়ারাবাজারে ২ হাজার ২০৭, জগন্নাথপুরে ২ হাজার ৭৩, জামালগঞ্জে ২ হাজার ২১৩, শাল্লায় ২ হাজার ১৬২, শান্তিগঞ্জে ১ হাজার ৯৮৩ ও তাহিরপুরে ২ হাজার ১৯০ জন।

জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহজাহান সিরাজ বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি ভিডব্লিউবির উপকারভোগী নির্বাচনে মতামত নেওয়া হয়নি। গণশুনানির নিয়ম রক্ষার কার্যক্রম দেখা ছাড়া কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না আমাদের। বঞ্চিত ব্যক্তিরা এ সম্পর্কে আমাদের কাছে জানতে চায়। কিন্তু আমরা কোনো সদুত্তর দিতে পারি না। এর মাধ্যমে আমাদেরকে ছোট করা হয়েছে।’

গত মেয়াদে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে জানিয়ে শাল্লা উপজেলার বাহাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সহদেব চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমাদের ভিডব্লিউবির তালিকা প্রস্তুতের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এক ইউপি সদস্য আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে তিনি এখন পরিষদে নেই।’

এদিকে তাহিরপুরের উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন মোবাইল ফোনে বলেন, গত মেয়াদে ৪০০ উপকারভোগী প্রতি মাসে সঞ্চয় বাবদ প্রায় ১৯ লাখ টাকা জমা দিয়েছিলেন, সেটা ফেরত দেওয়া হয়নি। চেয়ারম্যান সাহেব গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় সময় চেয়েছেন। তবে নতুন মেয়াদে কারও কাছ থেকে কোনো ধরনের টাকা নেওয়া হয়নি।

সুনামগঞ্জ মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ জে এম রেজাউল আলম অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, জগন্নাথপুর—এই চার উপজেলার খবর আমি জানি না। এই উপজেলাগুলোতে অনেক টাকা আত্মসাতের মৌখিক অভিযোগ আছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখেও কোনো ফল পাওয়া যায় না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সঞ্চয়ের টাকা উপকারভোগীর

নিজ নিজ অ্যাকাউন্টে রাখার কথা। কিন্তু এগুলো কিছু কিছু ইউনিয়নে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এতে চেয়ারম্যানরা জড়িত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজশাহী-৪ আসন: জিয়াবিরোধীরা কোণঠাসা

  • বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর উত্তপ্ত বাগমারা।
  • প্রতিপক্ষের জমি দখল, ককটেল হামলা, ঘেরে বিষ প্রয়োগের ঘটনা ঘটেছে।
  • তদন্ত করতে বলছেন অভিযুক্ত জিয়াউর রহমান।
 রিমন রহমান, রাজশাহী
ডি এম জিয়াউর রহমান জিয়া। ছবি: সংগৃহীত
ডি এম জিয়াউর রহমান জিয়া। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা। ৩ নভেম্বর দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে এ উপজেলায় রাজনৈতিক সহিংসতা শুরু হয়েছে। সর্বশেষ গত শনিবার দিবাগত রাতেও ককটেল হামলা এবং তিনটি পুকুরে বিষপ্রয়োগের ঘটনা ঘটেছে। রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডি এম জিয়াউর রহমান জিয়া।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জিয়ার কর্মীরা এসব ঘটাচ্ছেন। বেশি প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন এ আসনের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব অধ্যাপক কামাল হোসেনের অনুসারীরা। সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর ওই রাতেই বাইগাছা গ্রামের এমরান আলী নামের এক ব্যক্তির সাড়ে ৬ শতক জায়গা দখলে নিতে প্রাচীর ভেঙে গাছ কেটে ফেলা হয়। এমরানের অভিযোগ, বিএনপির প্রার্থী ডি এম জিয়ার লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এ নিয়ে সেদিনই থানায় তিনি একটি মামলা করেছেন।

শনিবার দিবাগত রাতে দুবিলা মধ্য দৌলতপুর বিলে অধ্যাপক কামাল হোসেনের চাচা ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ আব্দুস সোবহানের ইজারা নেওয়া তিনটি পুকুরে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছে। এতে ৬০ বিঘার পুকুর তিনটিতে প্রায় ২ কোটি টাকার মাছ মারা গেছে।

গোবিন্দপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের ইজারা নেওয়া দিঘিতে সম্প্রতি বিষ দিয়ে মেরে ফেলা হয় মাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা
গোবিন্দপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের ইজারা নেওয়া দিঘিতে সম্প্রতি বিষ দিয়ে মেরে ফেলা হয় মাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জেলা যুবদলের সদস্যসচিব রেজাউল করিম টুটুলও। শনিবার রাতে টুটুল ও তাঁর শ্বশুর আবদুস সামাদের বাড়িতে ককটেল হামলা করা হয়। টুটুলের বাড়িতে ফেলে রাখা ককটেলগুলো বিস্ফোরিত হয়নি। তবে তাঁর শ্বশুর অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক আব্দুস সামাদের বাড়িতে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে। পুলিশ আলামত উদ্ধার করেছে। টুটুলের বাড়ি বাগমারার বুজরুককৌড় গ্রামে। আর তাঁর শ্বশুরবাড়ি শান্তিপাড়া গ্রামে।

ভুক্তভোগী আব্দুস সোবহান বলেন, ‘এই পুকুরগুলো আগে চাষ করতেন ডি এম জিয়াউর রহমান। তিনি জমির মালিকদের ঠিকমতো টাকা দিতেন না। পরে জমির মালিক আমাকে পুকুরগুলো দেন। আমি নিয়মিত টাকা দিয়ে মাছ চাষ করছি। এখানে শতাধিক পুকুর। বেছে বেছে আমার পুকুরগুলোতে বিষ দেওয়া হয়েছে। এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।’

যুবদল নেতা টুটুল বলেন, ‘মনোনয়ন ঘোষণার পর আমরা সবাই নিজেদের মতো কাজ করেছি। দ্বন্দ্ব-বিভেদ হয়নি। সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর এখন এসব ঘটনা ঘটছে। আমার শ্বশুর কোনো রাজনীতি করেন না। তিনি অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তাঁর বাড়িতে ককটেল হামলা করা হয়েছে। আমার বাড়িতেও ককটেল ছোড়া হয়েছে। সেটা বিস্ফোরিত হয়নি। সেগুলো আমরা দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দিয়ে উদ্ধার করিয়েছি।’

সরেজমিনে বাগমারা: বাইগাছা গ্রামের এমরান আলী রাজনীতি করেন না। তাঁর জমির প্রাচীর ভেঙে গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে। গত শুক্রবার সকালে বাইগাছা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পাকা রাস্তার পাশেই ওই জমিটি। ইটের প্রাচীর ভাঙা। আম, মেহগনি, নারিকেল ও কলাগাছগুলো কাটা।

এমরানের স্ত্রী কাজলী আক্তার বলেন, ‘বাইর হোলিই মাইরবে বলে হুমকি দিছে। আমরা তাদের শক্তির সাথে পারিচ্চি না। কেস করার কারণে হাত-পা কাইটি দিবে বলে হুমকি দিছে।’

৩ নভেম্বর দিবাগত রাতে বোয়ালিয়া বিলে গোবিন্দপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের ইজারা নেওয়া ৫৫ বিঘা দিঘিতে বিষপ্রয়োগ করা হয়। আর বিলশনি গ্রামে পল্লি চিকিৎসক বীরেন্দ্রনাথ প্রামাণিকের বাড়িতে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। দুজনেই স্থানীয় বিএনপির নেতা এবং কামাল হোসেনের পক্ষের লোক। শুক্রবার সকালে দিঘির পাড়ে পাওয়া যায় চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানকে। দিঘির পাড়ে দেখা যায়, বড় বড় অনেক মাছ পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পানিতেও কিছু মাছ ভাসছে।

হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি কামালের মঞ্চে ছিলাম, কিন্তু সব সময় বলেছি যে যিনি ধানের শীষ পাবেন, তাঁর পক্ষেই আমরা কাজ করব। কিন্তু ৩ তারিখে জিয়া মনোনয়ন পাওয়ার পর তাঁর কর্মীরা আমাকে হুমকি দেয়। রাতেই দিঘিতে বিষ দিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকার মাছ মেরে ফেলে।’

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাইগাছা গ্রামের এমরান আলীর সাড়ে ৬ শতক জায়গা দখলে নিতে প্রাচীর ভেঙে কেটে ফেলা হয় গাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাইগাছা গ্রামের এমরান আলীর সাড়ে ৬ শতক জায়গা দখলে নিতে প্রাচীর ভেঙে কেটে ফেলা হয় গাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এমরানের প্রাচীর ভাঙা ও গাছ কাটার ঘটনাটা প্রকাশ্যে ঘটেছিল। তাই মামলা নেওয়া হয়েছে। রোববার সকালে আব্দুস সামাদের বাড়ির সামনে ককটেল বিস্ফোরণের আলামত পাওয়া গেছে। সেগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। টুটুলের বাড়ির সামনেও অবিস্ফোরিত দুটি ককটেল পাওয়া গেছে। এসব ঘটনার তদন্ত চলছে।’

ওসি আরও বলেন, হাবিবুর রহমান ও আব্দুস সোবহানের পুকুরগুলোতেও বিষপ্রয়োগের ঘটনা ঘটে রাতে। প্রত্যক্ষদর্শী নেই। তাই সরাসরি মামলা নেওয়া যায়নি। পুলিশ গিয়ে সরেজমিনে দেখে এসেছে। অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত চলছে।

জানতে চাইলে ডি এম জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, ‘বাগমারায় ধানের শীষের জোয়ার চলছে। কে বলছে আমার লোক এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে? বাগমারার প্রতিটি লোকই তো আমার লোক। আসলে কারা ঘটাচ্ছে, সে বিষয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। প্রশাসন তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত