Ajker Patrika

ভুয়া নোটিশে হয়রানি, দুদক মহাপরিচালকের পিএ গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৪ জুন ২০২৩, ১৫: ০৬
ভুয়া নোটিশে হয়রানি, দুদক মহাপরিচালকের পিএ গ্রেপ্তার

দুদকের কর্মকর্তা সেজে ভুয়া নোটিশ দিয়ে কোটি টাকার বিনিমিয়ে সমোঝোতা করার সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মহাপরিচালকের পিএ গৌতম ভট্টাচার্য। শুক্রবার মতিঝিলের একটি হোটেল থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবি বলছে, ভুয়া অভিযোগে এক ব্যবসায়ীকে দুদকের নামে চিঠি ইস্যু করে তাঁকে হয়রানি করা হচ্ছিল। এই চক্রে আছেন দুদকের মহাপরিচালকের পিএ, পুলিশ সদস্য (বরখাস্ত) এসকেন আলী খান, দুই দালাল হাবিবুর রহমান ও পরিতোষ মণ্ডল।

আজ শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ।

হারুন অর রশীদ জানান, ভুক্তভোগী আশিকুজ্জামান একজন সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী। বায়তুল মোকাররম মসজিদের কার্পেটের দোকানে আমদানি করা কার্পেট ও জায়নামাজ সরবরাহ করেন। ১৯ জুন তাঁর স্ত্রী সন্তান প্রসব করার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন। ২০ জুন সকালে আশিকুজ্জামানের উত্তরার বাসায় দুদকের মনোগ্রাম সংবলিত খাকি রঙের খামে একটি নোটিশ নিয়ে যান একজন অফিসার। তাঁর (আশিকুজ্জামান) বিরুদ্ধে কার্পেট ব্যবসার আড়ালে সোনা চোরাচালান ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ তোলা হয়।

স্ত্রী হাসপাতালে এবং দুদকের এই অভিযোগ শুনে ঘাবড়ে যান আশিকুজ্জামান। তখন দুদকের কথিত অফিসার আশিকুজ্জামানকে একটু সহানুভূতি দেখানোর ভান করে তাঁকে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিয়ে আত্মগোপনে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

হারুন বলেন, ‘চক্রের সদস্যরা ব্যবসায়ী আশিকুজ্জামানকে ডিবি, সিআইডি, বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক এবং এনএসআইয়ের ভয় দেখিয়ে বলেন, আপনার দুর্নীতিসংক্রান্ত বিষয়ে সংস্থাগুলো হন্যে হয়ে খুঁজছে। দুদক এরই মধ্যে দুর্নীতিসংক্রান্ত একটি অভিযোগ আমলে নিয়েছে। এ সময় নোটিশ বহনকারী ব্যক্তি হোয়াটসঅ্যাপে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আশিকুজ্জামানকে কথা বলিয়ে দেন।’

হোয়াটসঅ্যাপে দুদকের ওই কর্মকর্তা মোবাইল ফোনে কথা বলা সমীচীন নয় জানিয়ে বিস্তারিত জানার জন্য দুদক অফিসে সশরীরে হাজির হতে বলেন।

দুদকের নোটিশে যা ছিল 
দুদকের নোটিশে বিভিন্ন অভিযোগ উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে বলা হয়, তিনি শূন্য থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তাঁকে দুদকের জিম্মায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব প্রমাণ পাওয়া যাবে। এমতাবস্থায় প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। কারণ দর্শানোসহ ব্যক্তিগত শুনানির জন্য ১০ জুলাই নির্ধারণ করা হয়।

ডিবিপ্রধান বলেন, ঘাবড়ে যাওয়া আশিকুজ্জামানকে দফায় দফায় ফোন দেওয়া হয় হোয়াটসঅ্যাপে। ভয় দেখানো হয় সম্পত্তি ক্রোক করা, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ব্যবস্থা করা, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে খবর প্রস্তুতি করাসহ সিআইডি, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনএসআই, ডিবি পুলিশ এবং দুদকের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করিয়ে কঠোর শাস্তির।

একটা পর্যায়ে আশিকুজ্জামানকে মতিঝিলের হিরাঝিল হোটেলের দ্বিতীয় তলায় এসে সমঝোতার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। সমঝোতা অনুসারে প্রথমে ২ কোটি টাকা দিতে বলা হলেও পরে দিতে বলা হয় ১ কোটি টাকা। বিনিময়ে সমস্ত অভিযোগ থেকে অব্যাহতির নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। ১ কোটি টাকার মধ্যে ২৩ জুন জুমার আগে ২০ লাখ টাকা দিতে বলা হয়। বাকি টাকা আগামী রোববার ব্যাংক আওয়ারে পরিশোধের সমঝোতা হয়।

ডিবির অভিযান
হারুন অর রশীদ বলেন, ভিকটিম বিষয়টি গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগকে অবহিত করলে গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ দুদকের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং দুদকের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম হোটেল হিরাঝিলের আশপাশে অবস্থান নেন।

সমঝোতা অনুসারে ভিকটিম আশিকুজ্জামান চারটি মিষ্টির প্যাকেটে তাঁর স্বাক্ষরিত দেড় লক্ষ টাকা ভরে হোটেলে যান। তাঁর কাছ থেকে মিষ্টির প্যাকেটে সংরক্ষিত টাকা গ্রহণ করার সময় ডিবি পুলিশ তাঁদের হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে। ডিবি লালবাগ বিভাগের এডিসি রাকিবের নেতৃত্বে দুদকের মহাপরিচালকের এপিএস গৌতম ভট্টাচার্য, হাবিবুর রহমান, পরিতোষ মণ্ডল ও বরখাস্ত পুলিশ সদস্য এসকেন আলী খানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তাঁদের কাছ থেকে মিষ্টির চারটি প্যাকেট, নগদ দেড় লক্ষ টাকা, চারটি মোবাইল ফোন, দুদকের মনোগ্রাম সংবলিত খাকি রঙের একটি খাম ও দুদকের একটি নোটিশ উদ্ধার করা হয়।

ডিবি বলছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে গৌতম ভট্টাচার্য দুদকের ডিজির (মানিলন্ডারিং) পিএ হিসেবে কর্মরত। তাঁর বাড়ি মৌলভীবাজারে। এসকেন আলী খান চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য। তাঁর বাড়ি গোপালগঞ্জে। অপর দুজন পেশাগতভাবে দালাল ও প্রতারক।

দুদক কর্মকর্তা গৌতম ভট্টাচার্য দীর্ঘদিন ধরে দুদকের বিভিন্ন মহাপরিচালকের পিএ হিসেবে কাজ করেছেন। কখনো দুদকের ডিজি (তদন্ত), ডিজি (অ্যাডমিন), ডিজি (প্রসিকিউশন), ডিজি (মানি লন্ডারিং) এর অফিসের পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট (পিএ) হিসেবে কাজ করেছেন।

গৌতম ভট্টাচার্য দুদকে কাজের কারণে দুর্নীতিসংক্রান্তে নোটিশ কীভাবে পাঠাতে হয়, কীভাবে তাঁদের কাছ থেকে আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক ব্যাখ্যা নেওয়া হয় এবং কীভাবে অভিযোগ গঠন করা হয়—এসব বিষয় জানতেন। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তাঁর দুষ্কর্মের সহযোগীদের দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ী, শিল্পপতি এবং চাকরিজীবীদের টার্গেট করে তাঁদের ব্যক্তিগত নানা তথ্য সংগ্রহ করে দুদকের চিঠির খাম ও প্যাড/ফরম্যাট ব্যবহার করে অভিযোগের নোটিশ পাঠাতেন।

পরে কখনো মোবাইল ফোনের হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলে, কখনো শিল্পকলা একাডেমির ভেতরে বসে, কখনো আশপাশের বিভিন্ন হোটেলে টার্গেটের টাকায় যেতে যেতে তাদের অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দিতে সমঝোতার নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।

এদের সঙ্গে দুদক কার্যালয়ের দায়িত্বশীল আরও কেউ জড়িত আছেন কি না, খতিয়ে দেখার জন্য আসামিদের জিজ্ঞাসা করা হবে বলে জানিয়েছে ডিবি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারা বড় হলে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে লজ্জিত হবে: সেনাপ্রধান

‘আমি যে মাপের লোক, আমারে সে মাপের অস্ত্র দিয়া ফাঁসাইতি’

আবাসন কোম্পানির অনিয়ম অনুসন্ধানে গড়িমসি, দুদকের উপপরিচালক বরখাস্ত

অবশেষে ইকবালের পরিবারমুক্ত হলো প্রিমিয়ার ব্যাংক

বিপুল বকেয়া সত্ত্বেও ব্যবসা হারানোর ভয়ে বাংলাদেশ-নেপালে সম্প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় চ্যানেলগুলো

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত