Ajker Patrika

ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার প্রলোভনে খেটে খাওয়া মানুষের অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার প্রলোভনে খেটে খাওয়া মানুষের অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ

হকার, রিকশা-ভ্যানচালক, এমনকি ভিক্ষুকসহ বিভিন্ন পেশার সাধারণ মানুষকে সঞ্চয়ের মাধ্যমে ফ্ল্যাট-জমির প্রলোভন দেখানো হতো। বলা হতো প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা জমিয়ে মালিক হওয়া যাবে জমি কিংবা ফ্ল্যাটের। এভাবে প্রায় তিন শতাধিক মানুষের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে ৫০ লাখের বেশি টাকা আত্মসাৎ করেছে ‘শিবপুর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি লিমিটেড’ নামের এক সংস্থার চেয়ারম্যান ফয়েজ উল্লাহ। ঋণ দেওয়ার কথা বললেও না দিয়ে প্রতারণা করায় ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সমিতির আড়ালে প্রতারক চক্রের তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ৪। 

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আজ মঙ্গলবার দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক। 

মোজাম্মেল হক জানান, এক সময় রাজমিস্ত্রীর কাজ করা ফয়েজ উল্লাহ নিজে কথিত ওই সমিতির সভাপতি, তাঁর স্ত্রী রোকেয়া বেগম সাধারণ সম্পাদকসহ ছেলে, মেয়ে, শ্যালক ও বন্ধুদের বিভিন্ন পদে বসিয়ে একটি পারিবারিক প্রতারণা সমিতি গড়ে তুলেছিলেন। ফয়েজের সঙ্গে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—আফরিন আক্তার (২৪) ও তাসলিমা বেগম (৩৩)। রাজধানীর মিরপুরের শাহ আলী থানার মুক্তবাংলা শপিং কমপ্লেক্সে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। 

মোজাম্মেল হক বলেন, ফয়েজ উল্লাহ ‘শিবপুর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠা করেন। পরে সমিতির নাম পরিবর্তন করে নাম রাখেন ‘শিবপুর ক্ষুদ্র ঋণদান কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’। এই প্রতিষ্ঠানের আড়ালেই চলত তাদের প্রতারণা। ফুটপাতের কাপড়, ফল বিক্রেতা, হকার, রিকশা-ভ্যানচালক, এমনকি ভিক্ষুকসহ শ্রমজীবীদের লক্ষ্যবস্তু করে পাঁচ মাসে কোম্পানির ৩০০ সদস্যের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ৫০ লাখেরও বেশি টাকা আত্মসাৎ করে তারা। 

প্রতারণার জন্য খোলা এই ভুয়া সমিতির সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ নিজেই এর সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক তাঁর স্ত্রী রোকেয়া বেগম। সমিতির সহসভাপতি ছিলেন তাঁর বন্ধু সিরাজুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক ফয়েজের শ্যালক আলাউদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ ছেলে আরিফ হোসেন এবং তাঁর আরেক বন্ধু মো. জামিল হোসেন ওয়াদুদ ছিলেন সদস্য। তাঁরা সবাই এখন পলাতক। 

র‍্যাব বলছে, পারিবারিকভাবে নিম্ন আয়ের ও শ্রমজীবী মানুষদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল প্রতারক এই চক্র। অভিযানে সিমিতিতে ভর্তি ফরম, ঋণগ্রহীতার ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র, ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের জীবন বৃত্তান্ত, সিল, বিভিন্ন নামে সঞ্চয় পাসবই, দৈনিক কিস্তি ও ঋণ বিতরণের বিভিন্ন রেজিস্ট্রার, ব্যাংক চেকসহ প্রতারণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী ও বিপুল পরিমাণ নথি জব্দ করা হয়। 

র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, ‘শিবপুর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি লিমিটেডের নাম পরিবর্তন করে ভুয়া সমিতির ২০ জন সদস্য অন্তর্ভুক্তির কথা উল্লেখ থাকলেও বর্তমানে এতে ৩০০ সদস্য রয়েছে। এ ছাড়া এই প্রতিষ্ঠানের কোনো রক্ষিত জামানতও নেই। গ্রাহকের টাকা রাখা হয়েছে ফয়েজের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে। চক্রটি প্রতারণার কৌশল হিসেবে প্রথমে সদস্য সংগ্রহ করত। চক্রের মাঠপর্যায়ের কর্মীরা মিরপুরের বিভিন্ন বস্তিতে প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক, সেলুনের কর্মচারী, মনোহারী ও ফুটপাতের দোকানদার, গৃহকর্মী ও নিম্ন আয়ের মানুষদের সহজে ঋণের লোভ দেখিয়ে সঞ্চয়ের নামে টাকা জমা নিত। এই সদস্যদের বিশ্বাস অর্জনে ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী মুদারাবা ডিপোজিট স্কিম, কোটিপতি বিশেষ সঞ্চয়, লাখপতি ডিপোজিট স্কিম, মিলিয়নিয়ার ডিপোজিট স্কিম, পেনশন ডিপোজিটের প্রলোভন দেখানো হতো। 

মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ফয়েজ উল্লাহ ভুক্তভোগীদের বিভিন্নভাবে অল্প সময়ে ঋণ দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে সমিতিতে এ সঞ্চয়ও বিনিয়োগে আগ্রহী করে তুলত। সদস্যদের বলা হতো—১০ থেকে ১৫ দিন ঠিকমতো নির্দিষ্ট হারে সঞ্চয় করলে তাদের ঋণ দেওয়া হবে, যাতে তাঁরা সুন্দরভাবে ব্যবসা করতে পারেন। কিন্তু ভুক্তভোগীদের দু-একজনকে ঋণ দিলেও কেউ সঞ্চয় থেকে ঋণ পেতেন না। ভয়ভীতি দেখিয়ে সদস্যদের বলা হতো সময়মতো সঞ্চয়-ডিপিএসের টাকা না পরিশোধ করলে ঋণ দেওয়া হবে না। অথবা মেয়াদ শেষে তারা মুনাফা কম পাবে এবং জরিমানাও করা হবে। 

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, প্রতারণার অভিনব কৌশল হিসেবে সদস্যদের দৈনিক মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে জমা করলে একসময় ঢাকা শহরে তাদের একটি করে ফ্ল্যাট বা জমি দেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রতারক চক্রটি সমিতির ভুয়া ও অনুমোদনবিহীন ‘মাইসার ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশন’ নামে আরেকটি সংগঠনকে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান বলে প্রচার করা হতো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত