Ajker Patrika

চিকিৎসা কেন্দ্র পরিণত হয়েছে অসুস্থ হওয়ার কেন্দ্রে 

প্রতিনিধি, দৌলতপুর (মানিকগঞ্জ)
আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২২, ১৬: ৫৮
চিকিৎসা কেন্দ্র পরিণত হয়েছে অসুস্থ হওয়ার কেন্দ্রে 

হাসপাতালের চারপাশ ঘিরে গরু, ছাগল আর ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। হাসপাতালটিতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মী নেই একজনও। উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষের সেবা দেওয়ার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ দুই জন চিকিৎসক হাসপাতাল চালাচ্ছেন। এমন অবস্থায় যারা সেবা নিতে এসে হতে হয় নাজেহাল আর ভর্তি হওয়া রোগীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে। মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে এমনই দুর্দশাপূর্ণ অবস্থা। 

দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে সরেজমিনে দেখা যায়, ৫০ শয্যার এই হাসপাতালটিতে সেবা দিচ্ছেন দুজন চিকিৎসক। হাসপাতালের যত ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে পাশের মাঠে। সেগুলো জমে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এতে করে দূষিত হয়ে পরছে হাসপাতালসহ ও আশপাশের পরিবেশ। হাসপাতালের সামনে সব সময় ভাড়ায় চালিত গাড়ি দিয়ে ভর্তি থাকে। হাসপাতালের ভেতর ঢুকলেও চোখে পড়ে নোংরা, আবর্জনা। টয়লেটগুলো, এমনকি রোগীদের শয্যাও পরিস্কার করা হয় না দিনের পর দিন। এক্স-রে মেশিন দীর্ঘদিন ধরেই নষ্ট যার কারনে পরীক্ষা নিরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। 

ছয় দিন যাবৎ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন আরশেদ আলী। সুস্থ হতে এসে সামগ্রিক পরিবেশ তাঁকে সুস্থ হতে দিচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, হাসপাতালে দুর্গন্ধে থাকা যায় না। টয়লেট নোংরা, বেড নোংরা, ৬ দিন ধরে একই বিছানায় আছি একবারও এই বিছানার চাদর পাল্টানো হয়নি। 

ভর্তি থাকা আরেক রোগী কাশেম বলেন, 'আমি তিন দিন ধইরা হাসপাতালে ভর্তি আছি। এ পর্যন্ত একবার ডাক্তার পাইছি, টয়লেটে যাওয়া যায় না গন্ধ, ফ‍্যানগুলো নষ্ট হইয়া আছে, গরমে থাকা যাইতাছে না। সুস্থ হইতাছি নাকি অসুস্থ হইতাছি বুঝতেছিনা।' 

দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিক মিলিয়ে মোট চিকিৎসকের পদ রয়েছে ১৯টি। নিয়োগকৃত ডাক্তার আছেন ৭ জন। এর মধ্যে ৪ জন ডেপুটেশনে। বাকি পদগুলো শূণ্য। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ চিকিৎসা দেন শুধু দুজন চিকিৎসক। একমাত্র পরিচ্ছন্নতা কর্মী অবসরে যাওয়ার পর আর কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন দীর্ঘদিন ধরেই নষ্ট। 

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মুহাম্মদ বাহাউদ্দীন বলেন, 'পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে হাসপাতালের এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি কোনো পরিচ্ছন্নতা কর্মী নেই। আমি ব্যক্তিগত ভাবে পরিচ্ছন্নতা কর্মী রেখেছি তাদের দিয়ে যতটুকু সম্ভব হাসপাতাল পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করছি। হাসপাতালের মাঠে যে গরু দেখছেন এগুলো স্থানীয় প্রভাশালীদের গরু। হাসপাতালের পকেট গেট দিয়ে এগুলো নিয়ে আসে। অনেক নিষেধ করা পরও তারা অবাধে গরু, ছাগল, ঘোড়া দিয়ে মাঠ নোংরা করে ফেলছে। ওরা আমাদের কথা শোনেন না। অনেকবার উপজেলা প্রশাসনের সভায় ওই গেট বন্ধ রাখার কথা বলেছি কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। 

তিনি আরও বলেন, 'এই হাসপাতালে মূলত চিকিৎসক সংকট টা মূল। ১৯ জন ডাক্তার এখানে নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও মাত্র দুজন দিয়ে চালাতে হচ্ছে। পর্যাপ্ত লোকবল না পেলে এত সমস্যা সমাধান করা আমার জন্য কঠিন।' 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত