Ajker Patrika

অমনোযোগের কারণে শেষ সময়ে হারল বাংলাদেশ 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৪, ১৮: ০০
অমনোযোগের কারণে শেষ সময়ে হারল বাংলাদেশ 

শেষদিকে বাংলাদেশের রক্ষণে হামলে পড়ল ফিলিস্তিন। তাদের আবার এক ফুটবলার কম। প্রতিপক্ষের এক ফুটবলার কম হওয়ায় ঢিলে হয়ে গেল বাংলাদেশের রক্ষণ। আর তাতেই ঘটল সর্বনাশ। 

২০২৬ বিশ্বকাপ ও ২০২৭ এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে পাঁচ দিন আগে ফিলিস্তিনের কাছে কুয়েতে বিধ্বস্ত হয়েছিল বাংলাদেশ। ফিরতি লেগে সেই শোক কাটিয়ে ওঠার একটাই অনুপ্রেরণা ছিল লাল-সবুজদের—খেলাটা কিংস অ্যারেনায়, আর সেখানে কখনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ হারেনি বাংলাদেশ। ৯০ মিনিট পর্যন্ত ঠেকিয়ে আরেক ম্যাচ পর্যন্ত যখন কিংস অ্যারেনায় নিজেদের অপরাজিত রাখার পথে বাংলাদেশ, তখনই গোল খেয়ে ফিলিস্তিনের সঙ্গে আবারও হার। এবার ব্যবধানটা ১-০ গোলে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পরপর দুই ম্যাচে ফিলিস্তিনের কাছে হারল বাংলাদেশ। ২১ মার্চ হারের ব্যবধান ছিল ৫-০ গোলে, আজ হারের ব্যবধান ১-০। 

কুয়েতে যে একাদশ নিয়ে বিধ্বস্ত হয়েছিল বাংলাদেশ, সেই একাদশ থেকে আজকে পরিবর্তন হয়েছে দুটি। মিডফিল্ডে মো. সোহেল রানার পরিবর্তে একাদশে অভিজ্ঞ সোহেল রানা, যিনি আগের ম্যাচে কার্ডের কারণে দলে ছিলেন না। একাদশ থেকে বাদ পড়েন ইসা ফয়সাল, তার জায়গায় দলে সেন্টার ব্যাক শাকিল হোসেন। আর ফিলিস্তিন একাদশে পরিবর্তন ছিল তিনটি। 

কিংস অ্যারেনায় শুরুটা হলো যুদ্ধংদেহী। কুয়েতে ৫ গোলে হারার ক্ষোভ থেকে একটু বেশিই তেতে ছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। ১০ মিনিটের মধ্যে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখলেন বিশ্বনাথ ঘোষ। ফিলিস্তিনি ডিফেন্ডার মোহামেদ রশিদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়ালেন রাকিব হোসেন। 

শক্তিতে বহু গুণ এগিয়ে থাকা ফিলিস্তিনিই যথারীতি আক্রমণে এগিয়ে। ১২ মিনিটে মোহামেদ রশিদের ফ্রি-কিক কোনোরকমে ঠেকালেন বাংলাদেশ গোলরক্ষক মিতুল মারমা। 

বাংলাদেশের প্রথম সুযোগটা উড়িয়ে দিল ২২ মিনিটে। নিজেদের অর্ধ থেকে তপু বর্মণের উড়িয়ে দেওয়া বল ফয়সাল আহমেদ ফাহিম নিয়ন্ত্রণে নিলেন, বল নিয়ে বক্স অব্দি। রাকিব হোসেন এগোচ্ছেন দেখে ফাহিম এমন পাস বাড়ালেন যে বল টাচ লাইনের বাইরে! 

জামাল ভূঁইয়াও একবার পরীক্ষা নিলেন ফিলিস্তিনের রক্ষণের। ৩২ মিনিটে ২৫ গজ দূর থেকে নিলেন বেশ ভালো এক ফ্রি-কিক। শট ভালো হলেও অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট। 

৩৮ মিনিটে দারুণ এক সেভে বাংলাদেশের জাল বাঁচিয়েছেন গোলরক্ষক মিতুল মারমা। মুসাব বাত্তাতের ফ্রি-কিক থেকে পোস্টে হেড রেখেছিলেন আগের ম্যাচের জোড়া গোলদাতা শিহাব কুম্বোর। মিতুল বলের লাইনেই ছিলেন, ঠেকিয়ে দেন শট। 

 ফিলিস্তিনের বিপক্ষে বল দখলের লড়াইয়ে বাংলাদেশ। ছবি: বাফুফে  প্রথমার্ধে ম্যাচের সেরা সুযোগটা নষ্ট করেছেন ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। ৪৪ মিনিটে মিতুলের বাড়ানো বলে রাকিবের হেড থেকে জামাল বল পান মাঝমাঠে। ক্ষিপ্রগতিতে বল বাড়ান বক্সের মুখে থাকা ফাহিমের পায়ে। ফাহিমের সামনে ছিলেন কেবল ফিলিস্তিন গোলরক্ষক রামি হামাদা। কিন্তু ফাহিম সেই শট মেরে বসেন গোলরক্ষকের গায়ে! গোল পেলে প্রথমার্ধে স্বস্তি নিয়ে বিরতিতে যেতে পারত বাংলাদেশ। 

বিরতির পরপরই মিতুল মারমার ভুলে গোল প্রায় হজম করে বসেছিল বাংলাদেশ। ৪৮ মিনিটে শাকিল হোসেনের ব্যাক পাসে বল বিপদমুক্ত করতে গিয়ে উল্টো ওদেহ দাবাঘের পায়ে তুল দেন মিতুল। বাংলাদেশের পোস্ট প্রায় অরক্ষিত। দাবাঘ আগের ম্যাচে হ্যাটট্রিক পেয়েছিলেন, আজকের ম্যাচেও ঠান্ডা মাথায় শট জালে সহজ এক সুযোগ নষ্ট করে বসলেন। এ যাত্রায় রক্ষা বাংলাদেশের। 

৫৮ মিনিটে মিতুল আরেক দফা বাঁচান বাংলাদেশকে। মাহমুদ ধাধার শট দাবাঘের হেড ফিস্ট করে ফিরিয়ে দেন তিনি। ৬৫ মিনিটে আলাদিন হাসানের আরেকটি দূরপাল্লার শটও ঠেকান মিতুল। ৭৪ মিনিটে কর্নারের বিনিময়ে ফিলিস্তিনের ওদেহ খারুবের শট ফেরান বিশ্বনাথ ঘোষ। 

ফিলিস্তিনকে একের পর এক গোলবঞ্চিত মিতুল শেষ দিকে এসে পড়েন চোটে। ম্যাচ শেষ হওয়ার যখন বাকি ৬ মিনিট, মিতুলকে মাঠ ছাড়তে হয় স্ট্রেচারে। অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে নেওয়া হয়েছে হাসপাতালে। বদলি গোলরক্ষক হিসেবে মাঠে নামেন মেহেদী হাসান শ্রাবণ। 

যোগ করা সময়ে ইসা ফয়সালের পাসে ফিলিস্তিন গোলরক্ষককে একা পেয়ে যান রাকিব। কিন্তু রাকিব শট নেওয়ার আগেই গোলরক্ষক ফেরান সেই শট। রাকিব পড়ে যান মাটিতে। রাকিবকে জোর করে মাঠ থেকে সরাতে গিয়ে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ফিলিস্তিনের আমেদ মাহাজনেহ। 

ফিলিস্তিনের এক ফুটবলার কমতেই মনোযোগ হারায় বাংলাদেশ। ১০ জন দলের নিয়েই শেষ সময়ে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন ফিলিস্তিনি ডিফেন্ডার মাইকেল তেরমানি। ৯৪ মিনিটে মুসাব বাত্তাতের শট থেকে মাহমুদ ধাধার হেডে একদম ফাঁকায় বল পান তেরমানি। তাঁকে ঠেকানোর কেউ ছিল না। এগিয়ে এসেছিলেন বদলি গোলরক্ষক শ্রাবণ। কিন্তু বাংলাদেশের হার এড়াতে পারেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘন কুয়াশায় মেঘনায় মধ্যরাতে দুই লঞ্চের সংঘর্ষে নিহত ২

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ঘন কুয়াশায় জাকির সম্রাট-৩ ও অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ছবি: সংগৃহীত
ঘন কুয়াশায় জাকির সম্রাট-৩ ও অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ছবি: সংগৃহীত

ঘন কুয়াশার কবলে পড়ে চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে যাত্রীবাহী দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই জন যাত্রী নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে হাইমচর উপজেলা ও হরিণা এলাকার মাঝামাঝি স্থানে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চাঁদপুরের ট্রাফিক পরিদর্শক বাবু লাল বৌদ্ধ গণমাধ্যমকে জানান, সংঘর্ষের ফলে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হন এবং পরবর্তীতে আরও একজন যাত্রীর মৃত্যু হয়। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম-পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।

নৌ-পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, ভোলার ঘোষেরহাট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা অভিমুখী ‘এমভি জাকির সম্রাট-৩’ লঞ্চটি রাত ২টার দিকে হাইমচর এলাকা অতিক্রম করার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা ঢাকা-বরিশাল রুটের ‘এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯’ লঞ্চের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনার সময় নদীতে প্রচণ্ড ঘন কুয়াশা থাকায় দৃশ্যমানতা অত্যন্ত কম ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

লঞ্চ দুটির মধ্যে সংঘর্ষে জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যাত্রীরা। পরবর্তীতে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ‘এমভি কর্ণফুলী-৯’ নামক আরেকটি লঞ্চের মাধ্যমে জাকির সম্রাট-৩-এর যাত্রীদের গন্তব্যস্থল ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। তবে পথিমধ্যে গুরুতর আহত আরও এক যাত্রীর মৃত্যু ঘটে।

নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু হয়েছে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় লঞ্চ চলাচলের ক্ষেত্রে চালকদের আরও সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার পর নদীতে নৌ-পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত লঞ্চ দুটি উদ্ধার বা সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কৃষকেরা ধানের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখেন যে কারণে

নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলা রক্ষায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন কৃষক। ছবি: আজকের পত্রিকা
তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলা রক্ষায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন কৃষক। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের জনপদ নওগাঁর নিয়ামতপুরে কয়েক দিন ধরে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। তাপমাত্রা ক্রমেই কমে যাওয়ার সঙ্গে হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় রাতে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। কুয়াশার কারণে অনেক দিন দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলছে না। এতে জনজীবনের পাশাপাশি কৃষিকাজেও প্রভাব পড়ছে।

কৃষিপ্রধান এই অঞ্চলে তীব্র শীত উপেক্ষা করেই বোরো আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকেরা। সামনে উপজেলাজুড়ে বোরো ধান রোপণের মৌসুম শুরু হবে। তার আগে বীজতলা তৈরি ও পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা। তবে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলা রক্ষায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন তাঁরা।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, ঠান্ডা ও কুয়াশার প্রভাবে বোরো বীজতলা হলদে ও লাল হয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখলে বীজতলার ক্ষতির আশঙ্কা অনেকটা কমে।

সরেজমিনে উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের কয়েকটি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ বীজতলাই পলিথিনে ঢাকা। ভাবিচা গ্রামের কৃষক বিমল প্রামাণিক জানান, তিনি তিন বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করবেন। সে জন্য আগেই বীজতলা তৈরি করেছেন। শীত ও কুয়াশা থেকে রক্ষার জন্য বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।

একই গ্রামের কৃষক উজ্জ্বল সরকার জানান, বীজ ফেলার আট দিন পর বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন। ২২ দিন পর পলিথিন তুলে ফেলবেন। এতে বীজতলায় রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম হয় এবং রোপণের জন্য ভালো চারা পাওয়া যায়। পাশাপাশি পলিথিন ব্যবহার করায় কীটনাশক দিতে হয় না। ফলে বাড়তি খরচও কমে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলায় ‘কোল্ড ইনজুরি’ দেখা দেয়। এতে বীজ ঠিকমতো বেড়ে উঠতে পারে না, অনেক সময় হলদে ও লাল হয়ে পচে যায়। পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখলে ভেতরের তাপমাত্রা কিছুটা উষ্ণ থাকে এবং চারাগাছ নষ্ট হয় না। এতে কৃষকেরা উপকৃত হন। বীজতলা রক্ষায় পলিথিন ব্যবহারের জন্য কৃষকদের আহ্বান জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

উলিপুরে হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর চাপ

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি 
শিশুসন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিশুসন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুড়িগ্রামের উলিপুরে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার প্রভাবে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হচ্ছেন। কয়েক দিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলায় ও কনকনে ঠান্ডায় এসব রোগের প্রকোপ আরও বেড়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালে গত সাত দিনে ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত অর্ধশতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেশি। অধিকাংশ রোগী সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। কিছুটা সুস্থ হলেই তাঁরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। রোগীর চাপ সামলাতে গিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্তমানে মাত্র পাঁচজন চিকিৎসক দিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা চালানো হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে কথা হয় চিকিৎসা নিতে আসা বজরা ইউনিয়নের আমিনপাড়া এলাকার ইউনুস আলীর (৭০) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সাত দিন ধরে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছি। তীব্র শীতের কারণেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।’

এইচএসসি পরীক্ষার্থী আঞ্জু আরা বেগম বলেন, ‘ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কয়েক দিন ধরে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছি।’ ধামশ্রেণী ইউনিয়নের খলিলুর রহমান (৬৯) জানান, তিন দিন ধরে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

শিশুসন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিশুসন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

গুনাইগাছ ইউনিয়ন থেকে ভর্তি হওয়া ১৭ মাস বয়সী শিশু তাসিনের মা নুরে জান্নাত বলেন, তিন দিন ধরে তাঁর সন্তানের বমি ও ডায়রিয়া হচ্ছে। কনকনে ঠান্ডার কারণে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া সাত মাস বয়সী শিশু সাব্বিরকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার মা সুমাইয়া বেগম বলেন, ঠান্ডার কারণে ছয় দিন ধরে শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মেহেরুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিনে শীতজনিত ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগীই বেশি। শীতের তীব্রতা বাড়লে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে পঞ্চগড়ে জনজীবন বিপর্যস্ত

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০২
পঞ্চগড় পাসপোর্ট অফিস এলাকা থেকে তোলা । ছবি: আজকের পত্রিকা
পঞ্চগড় পাসপোর্ট অফিস এলাকা থেকে তোলা । ছবি: আজকের পত্রিকা

বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝড়ছে পঞ্চগড়ে। উত্তরাঞ্চলের এই জেলায় ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকে পঞ্চগড়ের সড়ক। কুয়াশার কারণে দৃশ্যময়তা কমে যাওয়ায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। এর প্রভাব পড়েছে জেলার হাসপাতালগুলোতেও। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ। ঘন কুয়াশার কারণে ভোর থেকেই যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুরে সূর্যের দেখা মিললেও শীতের তীব্রতা কমেনি। ওই দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিন ও রাত—দুই সময়েই শীত অনুভূত হচ্ছে প্রায় সমানভাবে।

ঘন কুয়াশার কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন যানবাহনের চালকেরা। মোটরসাইকেলচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এত কুয়াশায় রাস্তায় কিছুই দেখা যায় না। খুব সাবধানে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসতে হয়েছে। শীত এলেই আমাদের এই সমস্যা হয়; ঘন কুয়াশায় সামনে কিছু বোঝা যায় না।’

আরেক মোটরসাইকেলচালক আব্দুল মালেক জানান, কুয়াশা এত বেশি যে হেডলাইট জ্বালিয়েও রাস্তা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। সামান্য অসতর্ক হলেই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।

টানা কুয়াশা ও কনকনে শীতে খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। সকালে অনেকেই কাজে যেতে পারছেন না। শীত নিবারণের জন্য বিভিন্ন স্থানে মানুষকে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা গেছে। অটোরিকশাচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শীতের কারণে লোকজন বাইরে বের হয় না। যাত্রী নাই, ভাড়াও নাই। খুব কষ্টে আছি, কিন্তু বের না হয়েও পারি না; সংসার চালাতে হবে।’

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, ১১ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তেঁতুলিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। আজ সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

জেলা প্রশাসক কাজী সাইমুজ্জামান জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায় ১৫ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরও শীতবস্ত্রের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। এসব শীতবস্ত্র প্রতিটি উপজেলায় সমানভাবে ভাগ করে শীতার্ত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত