Ajker Patrika

রাজধানীতে সৌন্দর্যবর্ধনের শর্তে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বিলবোর্ড

সৌগত বসু, ঢাকা
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৪, ১০: ৩৮
রাজধানীতে সৌন্দর্যবর্ধনের শর্তে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বিলবোর্ড

রাতে রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ধরে আসাদ গেটের দিকে এগোতেই হঠাৎ চোখে পড়ে আলোর ঝলকানি। স্বাভাবিক আলো থেকে কড়া এই আলো চোখে পড়তেই ব্রেক কষলেন চালক। পেছনে অন্য গাড়ির ধাক্কা খাওয়ার উপক্রম।

ট্রাফিক সিগন্যালে নয়, মাঝপথে সড়কের পাশে বড় ওই ডিজিটাল বিলবোর্ড। শুধু আসাদ গেটে নয়, রাজধানীর প্রধান সড়কের একটা বড় অংশে রয়েছে এমন অ্যানালগ (অ্যানাফ্লেক্স রোমান ব্যানার) ও ডিজিটাল (এলইডি) বিলবোর্ড।

গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়কের বিভাজক থেকে শুরু করে পাশে এবং মোড়গুলোতে বড় ডিজিটাল ও অ্যানালগ বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। এর বাইরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকেও ট্রাফিক বক্সেও বিলবোর্ড দেখা যায়। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর, রামপুরা, মালিবাগ, নয়াবাজার, পান্থপথ, কাঁটাবন মোড়, বিজয় সরণি মোড়, আসাদ গেট, মৌচাক মোড়, বনানী, তেজগাঁও, গুলশান এলাকা ছোট-বড় এলইডি বিলবোর্ডে ভরা।

রাজধানীর ব্যস্ততম সড়ক কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পাশে সাকুরা বারের ওপরে রয়েছে বড় দুটি বিলবোর্ড। একটি আয়তাকার এবং অন্যটি লম্বাকৃতির। এই দুটি বিলবোর্ড ‘মডার্ন বিজ্ঞাপনী’ সংস্থার। এই সংস্থার কর্মী মো. রাজু জানান, আয়তাকার আকৃতির বিলবোর্ডটির দৈর্ঘ্য ৩০ ফুট ও উচ্চতা ১৫ ফুট। আর এটির ভাড়া এক বছরের জন্য আট লাখ টাকা। অন্যদিকে লম্বাকৃতির বিলবোর্ডের দৈর্ঘ্য ৮০ ফুট, উচ্চতা ৭ ফুট। এটির ভাড়া এক বছরে ছয় লাখ টাকা।রাজু দাবি করেন, তাঁদের বিলবোর্ড সিটি করপোরেশন অনুমোদিত। হাতিরঝিল এলাকায় অবস্থিত পুলিশ প্লাজার সীমানা ঘেঁষে রাস্তার সঙ্গেই ১০টির বেশি ছোট বিলবোর্ড ভাড়া দেওয়ার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক বক্সেও বিলবোর্ড রয়েছে।

অথচ ৯ বছর আগে বিলবোর্ড, ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো অবৈধ ঘোষণা করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ডিএসসিসির আওতাভুক্ত সব বিলবোর্ড, ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করা হয়। তখন ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ বলেছিল, নীতিমালা তৈরি করে এ খাতে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও সেই নীতিমালা হয়নি।

অন্যদিকে ২০১৬ সালের শুরুতে সৌন্দর্যবর্ধনের বিনিময়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে এমন ৪৫টি স্থান ও সড়ক নির্ধারণ করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সেখানে চারটি বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানকে সার্ক ফোয়ারা, বিজয় সরণি থেকে খেজুরবাগান, মহাখালী উড়ালসড়ক, বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ থেকে গুলশান-২ নম্বর পর্যন্ত সড়কের সৌন্দর্যবর্ধন করে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বিলবোর্ডে ভরে গেলেও দুই সিটি করপোরেশনের কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

 বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামছুল হক বলেন, ‘এসব বিলবোর্ড রাস্তার নিরাপত্তার জন্য হুমকি। ডিজিটাল বিলবোর্ড চালককে ঝুঁকির মুখে ফেলে, আবার অ্যানালগ বিলবোর্ড চলাচলকারীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। বিলবোর্ড লাগানোর ক্ষেত্রে যেসব বিজ্ঞান কাজ করে, তা পরখ না করেই এগুলো লাগানো হচ্ছে।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক বলেন, সিটি করপোরেশন-নির্ধারিত দুই ধরনের বিলবোর্ড রয়েছে। একটি অ্যানাফেক্স রোমান ব্যানার, অন্যটি এলইডি ব্যানার। অ্যানালগ নামে কোনো ব্যানার নেই।

উত্তর সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা এখন বড় বিলবোর্ডের অনুমোদন দিচ্ছি না। তবে ছোট ছোট এলইডি বিজ্ঞাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়।’

বিলবোর্ডগুলো নিয়মনীতি মেনে স্থাপন করা হয়েছে কি না, তা দেখবেন বলে তিনি জানান। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত