Ajker Patrika

‘আমার স্বামী মরে গেলে মৃত্যুর তারিখটা বলুন, একটু মিলাদ পড়াব’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৬ মে ২০২২, ২০: ৩৯
‘আমার স্বামী মরে গেলে মৃত্যুর তারিখটা বলুন, একটু মিলাদ পড়াব’

‘কেউ আমাকে বলে দিন, আমি সধবা নাকি বিধবা। আমার মেয়েটাকে আমি কোনো উত্তর দিতে পারি না। আমার স্বামী যদি মরে গিয়ে থাকে, তার মৃত্যু তারিখটা বলুন। আমি একটু মিলাদ পড়াব।’ আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সেমিনারে ২০১৯ সালে নিখোঁজ হওয়া ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী নাসরিন জাহান এসব কথা বলেন।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জোরপূর্বক নিখোঁজ বা গুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে এক সেমিনারের আয়োজন করে নাগরিক ঐক্য। এতে গুমের শিকার পরিবারগুলোর সদস্যরা এসে নিজেদের আপনজনদের ফিরে পাওয়ার আকুতি জানান। তাঁদেরই একজন নাসরিন জাহান।

স্বামী ইসমাইল হোসেনকে খুঁজতে কী না করেছেন জানিয়ে নাসরিন জাহান বলেন, ‘দেশের এমন কোনো প্রশাসন নাই, যেখানে আমি যাই নাই। ডিসির কাছে গেছি, তিনি বলেছেন, এটা র‍্যাব করেছে, তাদের কাছে যান। থানার ওসির তো দেখাই পাই নাই। দারোগা আমার কথা শুনে দুফোটা চোখের পানি ফেলেছেন।’

নাসরিন জানান, তাঁর স্বামী যখন গুম হন, তখন তাঁর মেয়ের বয়স মাত্র দেড় বছর। এর পর গত তিন বছর স্বামীর সন্ধানে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। পুলিশ সদর দপ্তর, ডিবি কার্যালয়—সব জায়গায় গেছেন। কোনো কোনো অফিসে সারাদিন বসে থাকার পরও কেউ তাঁর সঙ্গে দেখা করেননি। কেউ আবার তাঁর আবেদন পড়ার পর তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। স্বামীর খোঁজ পেতে আকুল হয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েটাকে আমি কোনো উত্তর দিতে পারি না। আমার স্বামী যদি মরে গিয়ে থাকে, তার মৃত্যু তারিখটা বলুন। আমি একটু মিলাদ পড়াব।’

কুষ্টিয়া থেকে আসা সাহিদা বেগম হারিয়েছেন তাঁর ছেলেকে। সেমিনারে তিনি বলেন, ‘ছেলেটা গুম হওয়ার পর আমার মাথার ওপর থেকে ছাদ সরে গেছে। আমার সবকিছু থেকেও আজ কিছু নেই।’

জাতীয় প্রেস ক্লাবে আজ বৃহস্পতিবার নাগরিক ঐক্য আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা। সাহিদা বেগমের সন্তান কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সহসভাপতি শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজ ২০১৫ সালের ২০ আগস্ট নিখোঁজ হন। এর পর সাত বছরেও সন্তানের সন্ধান পাননি সাহিদা বেগম। আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত এ সেমিনারে ছেলের সন্ধান পেতে আকুতি জানান তিনি।

সেমিনারে গুম নিয়ে বক্তারা বলেন, যারা গুম হচ্ছেন, তাঁরা বিরোধী মতাদর্শের মানুষ। যখন বাংলাদেশে নির্বাচন ঘোষণা হয় বা আন্দোলন দানা বাঁধে, তখনই এই গুমের ঘটনা ঘটে।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সাবেক নির্বাহী কমিটির মহাসচিব নূর খান লিটন বলেন, গুমের ঘটনা ধামাচাপা দিতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের চরিত্রহননের চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রতিটি গুমের ঘটনা ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নারায়নগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে তারেক সাঈদ জানিয়েছিলেন, এই অপারেশনের আগে আইন-শৃংখলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন মহলের একটা মিটিংয়ে হত্যার শিকার দুজনের নাম বলা হয়েছিল। তিনি ঊর্ধ্বতন মহল থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।’

সভায় গনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন, ‘গুম প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের সবাইকে রাস্তায় নামতে হবে। এ জন্য ভয় দূর করাটাই হলো বড় কাজ। ভয় কাটানোর জন্য মানুষের মধ্যে কাজ করতে হবে। এ জন্য আমাদেরও যদি গুম হয়ে যেতে হয়, হব।’

সভায় গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরে পেতে সরকারের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ের আহ্বান জানান নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ‘আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই সরকার যতদিন থাকবে গুম বন্ধ হবে না।’ সরকারকে পদ্মাসেতু উদ্বোধনের আগে গুম হওয়া মানুষদের সন্ধান দেওয়ার দাবি জানিয়ে মান্না বলেন, ‘কিছু বললেই আপনারা বলেন উন্নয়ন তো হচ্ছে। পদ্মা সেতুর কথা বলেন। পদ্মা সেতু উদ্বোধনও হবে ২৫ জুন। কিন্তু তার আগে গুম হওয়া মানুষদের তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত