Ajker Patrika

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দিচ্ছে এনাম মেডিকেল

অরূপ রায়, সাভার
আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০২৪, ১৪: ৫৬
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দিচ্ছে এনাম মেডিকেল

গত ৫ আগস্ট বিকেলে ঢাকার আশুলিয়ার বাইপাইল পুলিশ বক্সের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল স্থানীয় হাজী সৈয়দ খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ইমরান হোসাইন (১০)। তখন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলছিল। আন্দোলনকারীদের হটাতে পুলিশ গুলি ছোড়ে। একটি গুলি এসে লাগে ইমরানের মাথায়। মুহূর্তে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অচেতন হয়ে যায়। আশপাশের লোকজন উদ্ধার করে তাকে ভর্তি করান সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেই দিন থেকে ওই হাসপাতালে বিনা মূল্যে চিকিৎসা চলছে তার। 

হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, ৫ আগস্ট ইমরানকে নিউরো আইসিও বিভাগে ভর্তি করা হয়। তখন সে অবচেতন ছিল। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার মাথায় অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করা হয়। এর পর থেকে নিউরো আইসিও বিভাগেই ভর্তি ছিল সে। চিকিৎসায় তার অবস্থার উন্নতি হলে গত সোমবার (১২ আগস্ট) তাকে নিউরো মেডিসিন ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তার চিকিৎসায় খরচ হয়েছে ২ লাখ ৯১ হাজার ১১২ টাকা, এর পুরোটাই হাসপাতাল থেকে বহন করা হয়েছে। 

ইমরানের বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সবজি বিক্রি কইরা চাইর সদস্যের পরিবার নিয়া কোনো রকমে বাঁইচা আছি। হাসপাতাল থিকা চিকিৎসা না করলে আমার পক্ষে ২-৩ লাখ টাকা খরচ কইরা ছেলেরে বাঁচাইবার পারতাম না। আমার ছেলে এখন কথা বলবার পারে, সব বুঝে।’ 

শুধু ইমরান নয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আহত হয়ে যারা এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাঁদেরও কারও কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়নি। হাসপাতালের পক্ষ থেকে সবাইকে ওষুধ ও পথ্যসহ সব ধরনের চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়েছে। 

এনাম মেডিকেলের ডিউটি ম্যানেজার ইউসুফ আলী বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৫ জুলাই থেকে গত ৬ আগস্টের মধ্যে যাঁরা আহত হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ১৯১ জনকে আমাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। যাদের প্রায় সবাই গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছিলেন। এর মধ্যে শিক্ষার্থী ছিলেন ১৪০ জন। এদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমাদের হাসপাতালে মারা গেছেন ৩৪ জন। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছেন ১২৭ জন। এখনো ভর্তি রয়েছেন ৩০ জন।’ 

ইউসুফ আলী বলেন, ‘১৯১ জন রোগীর ওষুধ খরচ, খাওয়া ও পরীক্ষা–নিরীক্ষাসহ মোট খরচ হয়েছে ১ কোটি ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ১১৯ টাকা। এর মধ্যে মেডিকেল বিল বাবদ খরচ হয়েছে ২৩ লাখ ৭১ হাজার ৯৯৯ টাকা, প্যাথলজির বিল বাবদ খরচ হয়েছে ১৪ লাখ ৩৪ হাজার ৫২০ টাকা এবং হাসপাতাল বিল বাবদ খরচ হয়েছে ৭৭ লাখ ৪২ হাজার ৬০০ টাকা। পুরো টাকাই হাসপাতালের পক্ষ থেকে বহন করা হয়েছে।’ 

সাভারের সিঞ্জুরিয়া দারুল ইসলাম ফাজিল মাদ্রাসার আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রিফাত হোসেন (১৯) ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার মিছিলে গিয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। ওই দিনই তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এখনো তিনি ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ পর্যন্ত তাঁর চিকিৎসায় ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫০১ টাকা, যা তাঁর স্বজনদের কাছ থেকে নেওয়া হয়নি।’ 

এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো আইসিও বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট আরিফ হাসান তানভীর বলেন, ‘রিফাতের মাথার পেছন দিক থেকে গুলি ঢুকে মাথার মাঝ বরাবর মস্তিষ্কের মধ্যে আটকে রয়েছে। গুলিটি বের করা বেশ ঝুঁকির কাজ। অস্ত্রোপচারের সময় টেবিলেই তার মৃত্যু হতে পারে। তাই গুলি বের করার চেষ্টা না করে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসায় তাঁর জ্ঞান ফিরলেও তিনি আবোল-তাবোল কথা বলছেন।’ 
 
রিফাতের বাবা লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমি পোশাক কারখানায় চাকরি করি। যে বেতন পাই তা সংসারের পেছনেই খরচ হয়ে যায়। সঞ্চয় করা সম্ভব হয় না। হাসপাতাল থেকে আমার ছেলেকে চিকিৎসা করা না হলে আমার পক্ষে এত টাকা খরচ করে তাঁর চিকিৎসা করা সম্ভব হতো না।’ 

একই রকম মন্তব্য করেন নিউরো আইসিও বিভাগে চিকিৎসাধীন রাজীবের (৩২) ভগ্নিপতি এমদাদুল হক। রাজীবকে গত ৫ আগস্ট থেকে এনামে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাঁর মাথায় গুলি ঢুকে বের হয়ে যায়। গত ১১ দিনেও তাঁর জ্ঞান ফেরেনি। এই ১১ দিনের চিকিৎসায় তাঁর পেছনে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার ৮৭১ টাকা। 

এমদাদুল হক বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে বিনা মূল্যে আমার শ্যালকের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমার ধারণা, তাঁকে বাঁচাতে দেশের বাইরে নিয়ে আরও উন্নত চিকিৎসা করানো দরকার। কিন্তু আমার শ্বশুরের টাকা না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। বিনা মূল্যে বর্তমানে যে চিকিৎসা সে পাচ্ছে, আমাদের পক্ষে তাও সম্ভব হতো না।’ 

এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ারুল কাদের নাজিম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ডা. এনামুর রহমানের নির্দেশে আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নিই। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা তাঁদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বিছানা ও পথ্যসহ সব ধরনের চিকিৎসা ফ্রি করে দিই। আমরা এ পর্যন্ত ১৯১ জনকে ভর্তি করে চিকিৎসা দিয়েছি। এ ছাড়া জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে আরও তিন শতাধিক রোগীকে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শিক্ষার্থীদের ‘কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে’ সপরিবারে পালিয়েছেন বিএসবির বাশার

এনসিপি নেতা সারওয়ার তুষারের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়নি: শহিদুল আলম

পাকিস্তানে হামলায় ‘লোইটারিং মিউনিশনস’ ব্যবহারের দাবি ভারতের, এটি কীভাবে কাজ করে

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ: পাকিস্তানে নিহত বেড়ে ২৬, আহত ৪৬

সীমান্তে সাদা পতাকা উড়িয়ে আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত: পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত