Ajker Patrika

আখাউড়া ইমিগ্রেশন ওসির ঘুষ-বাণিজ্য নিয়ে সংবাদ করায় দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ‘মামলা’

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি  
আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২৫, ১৬: ৪৯
সাংবাদিক মো. ফজলে রাব্বি ও সাদ্দাম হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
সাংবাদিক মো. ফজলে রাব্বি ও সাদ্দাম হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুলিশের অফিসার ইনচার্জের (ওসি) ঘুষ-বাণিজ্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক যুগান্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টাফ রিপোর্টার ও আখাউড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. ফজলে রাব্বি এবং আরটিভি ও আজকের পত্রিকার আখাউড়া উপজেলা প্রতিনিধি ও আখাউড়া রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বিকেলে চাঁদাবাজি ও মানহানির অভিযোগে আখাউড়া থানায় মামলাটি করেন ইমিগ্রেশন পুলিশের ওসি মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তার।

এর আগে গত ৪ আগস্ট আরটিভি অনলাইন এবং ৭ আগস্ট দৈনিক আজকের পত্রিকা ও দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে ওসির নেতৃত্বে ঘুষ-বাণিজ্য ও অনিয়মের বিস্তারিত তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহিম ও কনস্টেবল দেলোয়ার হোসেনের ঘুষ গ্রহণ, যাত্রী হয়রানি এবং অবৈধ পারাপারের নানা অভিযোগ তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মেডিকেল ভিসায় ভারতে যাওয়া যাত্রীদের কাছ থেকে ৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হচ্ছে। টাকা না দিলে নানা অজুহাতে সীমান্ত পারাপার বন্ধ করে দেওয়া হয়। গোপন সূত্র ও যাত্রীদের অভিযোগে উঠে আসে, প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা ঘুষ আদায় করছে একটি প্রভাবশালী চক্র। একাধিক ঘটনায় যাত্রীদের অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান, পাসপোর্টে ভুয়া সিল মারা এবং চোরাচালানি চক্রকে সুবিধা দেওয়ার অভিযোগও আনা হয়। এসব কর্মকাণ্ডে ওসি আব্দুস সাত্তার, এসআই আব্দুর রহিম ও কনস্টেবল দেলোয়ার হোসেনের যোগসাজশের প্রমাণ পাওয়া যায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

যুগান্তরের সাংবাদিক মো. ফজলে রাব্বি বলেন, ‘আমরা পেশাগত দায়িত্ব থেকে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সংবাদ প্রকাশ করেছি। এ মামলা হয়রানিমূলক এবং সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা। অবিলম্বে এই হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’

আরটিভি ও আজকের পত্রিকার সাংবাদিক সাদ্দাম হোসেন বলেন, সাংবাদিকের কাজ সত্য প্রকাশ করা, ভয় বা চাপের কাছে নতি স্বীকার করা নয়। মিথ্যা মামলা দিয়ে সাংবাদিকের কণ্ঠরোধ করা যাবে না। ইমিগ্রেশন ওসির বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত হলে দুর্নীতির চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠবে। অথচ আখাউড়া থানার ওসি ছমিউদ্দিন তদন্ত ছাড়াই মামলাটি করে প্রমাণ করেছেন তিনি নিরপেক্ষ নন, এটি সাংবাদিকতার ওপর সরাসরি আঘাত।

আখাউড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন লিটন বলেন, ‘সত্য সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’

আখাউড়া রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি রুবেল আহমেদ বলেন, ‘এটি সরাসরি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আঘাত। আমি বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, সাংবাদিকেরা যাতে নির্ভয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।’

আখাউড়া সাংবাদিক কল্যাণ সোসাইটির সভাপতি নাসির উদ্দিন বলেন, ‘অনিয়ম-দুর্নীতি প্রকাশ করলেই যদি মামলা হয়, তাহলে সত্য প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। আমরা সাংবাদিকদের পাশে আছি এবং অবিলম্বে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় সাংবাদিকেরা বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।’

আখাউড়া থানার ওসি মো. ছমিউদ্দিন জনান, মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। চাঁদাবাজির পাশাপাশি অভিযুক্ত দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে মানহানির অভিযোগ আনা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

জি এম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা ও মামলা প্রত্যাহার

ভারতকে পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

প্লট–ফ্ল্যাট বরাদ্দে সচিব, এমপি, মন্ত্রী, বিচারপতিসহ যাঁদের কোটা বাতিল

জুলাই সনদের বৈধতা নিয়ে আদালতেও প্রশ্ন তোলা যাবে না

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত