Ajker Patrika

হত্যা ও ডাকাতিসহ ১২ মামলার আসামি গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
হত্যা ও ডাকাতিসহ ১২ মামলার আসামি গ্রেপ্তার

হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা এবং কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় ডাকাতি, মারামারি ও হত্যা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ও ভাড়াটে খুনি আক্কাস মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। এক ডজন মামলার আসামি আক্কাস গ্রেপ্তার এড়াতে ইট ভাটার শ্রমিক পরিচয়ে আত্মগোপনে ছিলেন। অবশেষে র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে দুর্ধর্ষ ডাকাত আক্কাসের দীর্ঘ ছয় বছর ধরে আত্মগোপনের জীবন শেষ হলো।

আজ বৃহস্পতিবার ভোরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় দীর্ঘ এক অভিযানে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলার কামারগাঁও এলাকায়। দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। 

আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা এবং কিশোরগঞ্জ জেলার ত্রাস পেশাদার খুনি ও ডাকাত আক্কাস মিয়াকে (৪২) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, ডাকাতি, নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধে মামলা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই ডাকাত সর্দার পলাতক ছিলেন।

গ্রেপ্তার আক্কাস মিয়াকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক জানান, খুন এবং ডাকাতি করা তাঁর পেশা। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে নেত্রকোনা জেলার খালীয়াজুড়িঁ উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়ন আদমপুর গ্রামের বাসিন্দা মনোরঞ্জন সরকারের বাড়ির দেয়াল ভেঙে প্রবেশ করে পুরুষ সদস্যদের হাত-পা বেঁধে স্বর্ণা অলংকার, নগদ টাকা ডাকাতি করে। এ সময় মনোরঞ্জন সরকারের ছেলে বাঁধা দিলে তাঁকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। খুনসহ ডাকাতির ঘটনার মামলায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এই মামলার প্রধান আসামি ছিল আক্কাস। আক্কাসের বাহিনী হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা এবং কিশোরগঞ্জ এলাকায় অর্ধ-শতাধিক বাড়িতে ডাকাতি করে। বহু ডাকাতির ঘটনায় কেউ চিহ্নিত হয়নি। এছাড়া অধিকাংশ ভুক্তভোগী কোনো ধরনের অভিযোগ দেননি। গ্রেপ্তার আক্কাসের বিরুদ্ধে ডাকাতি, চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধে সাতটি মামলা রয়েছে।

এ ছাড়া ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে আক্কাস নিজ উপজেলায় বাহিনীসহ ভাড়ায় মারামারি করতে যায়। মারামারিতে দুই গ্রুপের তিনজন মারা যায়। আক্কাস নিহতদের মরদেহ ধান খেতে মাটি চাপা দিয়ে রাখে। ২০১৪ সালেও সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায়ও মারামারি করতে যায়। সেখানে ১০ জন আহত হয়।

ভাড়াতে খুনি আক্কাসের বিষয়ে আরিফ মহিউদ্দিন আরও জানান, খুন ও ডাকাতি ছাড়াও এলাকায় ভূমি দখল, জলমহল দখল, ভাড়ায় মারামারি ও লুটপাট করত। তাঁর একটি ডাকাত দল রয়েছে যা আক্কাস বাহিনী হিসেবে পরিচিত। এই দলের সদস্যর সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ জন। ডাকাত দলের সদস্যদের নিয়ে তিনি হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ এবং নেত্রকোনা এলাকায় ডাকাতি করতেন। ডাকাতির কাজে বাধা দিলে হত্যা করত। ২০০৬ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত খুন, ডাকাতি, খুনসহ ডাকাতি, চুরি, মারামারি, লুটপাট, দাঙ্গা-হামলাসহ ১২টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে শাল্লা থানায় একটি সাজা ওয়ারেন্টসহ মোট ছয়টি ওয়ারেন্ট রয়েছে। হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ এবং নেত্রকোনা এলাকায় আক্কাস বাহিনী ছিল একটি আতঙ্কের নাম। ২০১৬ সালে সুনামগঞ্জ থেকে পালিয়ে রাজধানীতে এসে ছদ্মনামে বসবাস করতে শুরু করেন তিনি। রাজধানীতে আসার পর একাধিকবার তিনি তাঁর বাসস্থান ও পেশা পরিবর্তন করলেও কখনোই তিনি তাঁর প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করেননি। জীবিকার তাগিদে তিনি প্রথমে রিকশাচালক, বাসের হেলপার, কিছুদিন সিএনজি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। রাজধানীর বাড্ডা, কেরানীগঞ্জ, মিরপুর এলাকায় বহুবার বাসস্থান পরিবর্তন করে। এক এলাকায় বেশি দিন থাকত না।

একপর্যায়ে তিনি রাজধানীতে একটি ডাকাত চক্র গড়ে তোলেন। প্রথমে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় যানবাহনে ডাকাতির চেষ্টা করে। তারপর তিনি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসায় ডাকাতি শুরু করেন। এই সকল ডাকাতির ঘটনায় আক্কাস ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকলেও তাঁর দলের সদস্যরা গ্রেপ্তার হয়। পরে ডাকাতি ছেড়ে মাছের ব্যবসা শুরু করে। ২০১৯ সালে খুনসহ ডাকাতি মামলায় তাঁর যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার পর কেরানীগঞ্জ এলাকায় ইট ভাটায় স্ত্রীসহ শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। প্রয়োজন ছাড়া আক্কাস কখনো ঘর থেকে বের হতেন না। ট্রিপল মার্ডার ও যাবজ্জীবন সাজায় গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে তিনি সদা আতঙ্কগ্রস্ত থাকতেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তারের হাত থেকে বাঁচতে বালিশের ধারালো ছুরি রাখত। দীর্ঘ ছয় বছরের ফেরারি থাকার পরে অবশেষে র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হলেন এক সময়ে সাধারণ মানুষের আতঙ্কের কারণ এই আক্কাস মিয়া। 

এক প্রশ্নের জবাবে র‍্যাব-৩ অধিনায়ক জানান, আক্কাস মিয়া তাঁর ডাকাতি জীবনে কতগুলো হত্যা ও লুটপাট করেছে এর সঠিক তথ্য কেউ জানে না। তাঁর বিষয়ে এখন পর্যন্ত ১২টি মামলা ও ৬টি ওয়ারেন্ট পাওয়া গেছে। আরও মামলার তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। ঢাকায় তার গঠন করা ডাকাত দলের সদস্যরা আর তাঁর সঙ্গে নেই। তবে তাঁদের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁদেরও গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইরানের ‘দানবীয় ক্ষেপণাস্ত্রের’ সামনে উন্মুক্ত ইসরায়েলের ‘অ্যাকিলিস হিল’

ভারতীয় বিমানবন্দরে ১১ দিন ধরে পড়ে আছে ব্রিটিশ এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, ঘনাচ্ছে রহস্য

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফল আজ, যেভাবে দেখবেন

মামদানি শতভাগ কমিউনিস্ট উন্মাদ, দেখতেও খারাপ: ট্রাম্প

সারজিস আলমের পোস্ট: সেই সাবরেজিস্ট্রারের অফিসে দুদকের অভিযান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত