Ajker Patrika

বালিয়াকান্দিতে যত্রতত্র চলছে অনুমোদনহীন ট্রাক্টর-ডাম্প ট্রাক, দুর্ঘটনার শঙ্কা

বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
বালিয়াকান্দিতে যত্রতত্র চলছে অনুমোদনহীন ট্রাক্টর-ডাম্প ট্রাক, দুর্ঘটনার শঙ্কা

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে যত্রতত্র চলছে অনুমোদনহীন ইটভাটার মাটি টানা ট্রাক্টর-ডাম্প ট্রাক। অদক্ষ চালক দ্বারা পরিচালিত এসব ট্রাক্টরে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এসব ট্রাক্টর ও চালকদের বৈধ কাগজপত্র না থাকলেও প্রতিনিয়ত চলাচল করছে। এমনকি মাটিবাহী ট্রাক্টরের কারণে সড়কে খানাখন্দও তৈরি হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ যত্রতত্র এসব ট্রাক্টর চলাচল করলেও নির্বাক প্রশাসন। 

গতকাল সোমবার দুপুরেও উপজেলার বহরপুর মহাশ্মশান সংলগ্ন এলাকায় মাটিবাহী ডাম্প ট্রাকের ধাক্কায় নিহত হয় এক কিশোর। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বালিয়াকান্দির ৭টি ইউনিয়নে প্রায় ১২টি ইটভাটা রয়েছে। ইটভাটার মালিকানায় এবং ভাড়ার চলিত ট্রাক্টর ও ডাম্প ট্রাক দিয়ে মাটি আনা-নেওয়া করা হয়। কৃষি কাজের জন্য ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আনা ট্রাক্টর স্থানীয়ভাবে বডি তৈরি করে অবৈধ ট্রাকে রূপান্তর করা হয়। এসব গাড়ি চালনার জন্য নসিমন, করিমন ও ভ্যানচালকদের বেছে নেওয়া হয়। যারা গাড়ি চালানো সম্পর্কে বিধিবিধান জানেন না। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ না করায় শিশু কিংবা কিশোরেরাও এসব গাড়ি চালানোর সুযোগ পাচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। অধিকাংশ দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে গাড়ি মালিকেরা স্থানীয়ভাবে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে দফারফা করেন। ফলে বিচারের মুখোমুখি হতে হয় না তাদের। 

স্থানীয় বাসিন্দা মজনু মিয়া বলেন, ‘রাস্তা দিয়ে হাঁটতেও এখন ভয় হয়। ট্রাক্টর, ডাম্প ট্রাকসহ অন্যান্য গাড়িগুলোর এত গতিতে চলে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’ 

বিষয়গুলো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি প্রশাসনকে। মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করে এসব যানবাহনের চালক ও যারা মাটি কেটে বিক্রি করে তাদের জরিমানা করেই ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই জরিমানার পরিমাণ একেবারেই কম বলে মনে করছেন সুশীল সমাজ। 

এদিকে ট্রাক্টরে মাটি টানায় শুকনো মৌসুমে ধুলো ও বর্ষায় কাদা হয়ে যায় সড়কে। ভারী এসব যানবাহনের কারণে সড়কে তৈরি হচ্ছে খানাখন্দ। 

ব্যবসায়ী আক্কাস আলম বলেন, রাস্তায় পাশে দোকান দিয়েছি বেচাকেনা ভালো হবে বলে, কিন্তু এই সব মাটি টানা গাড়ির কারণে দোকানের মালপত্র সব ধুলোয় একাকার হয়ে যায়। এগুলো প্রতি বেলায় পরিষ্কার করতে হয়। 

মোটরসাইকেল চালক বিপ্লব বিশ্বাস বলেন, ‘প্রতি দিন বাড়ি থেকে বাজার পর্যন্ত বেশ কয়েক বার যেতে হয়। কিন্তু রাস্তা দিয়ে চলা এ সব অবৈধ যানবাহনের কারণে ভয় থাকি। ওদের যে বেপরোয়া গতি তা খুবই ভয়ংকর।’ 

ট্রাক্টর চালক সবুজ শেখের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘এই গাড়ির কাগজ হয় না। এভাবেই চালাতে হয়। আর আমরা শ্রমিক, এই কাজ না করলে পেটে ভাত জুটবে না।’ 

সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাসিবুল হাসান বলেন, ‘আমরা অবৈধ গাড়ি আটক করে তাদের সতর্ক করি। যেন রাস্তায় আইন মেনে তারা গাড়ি চালায়। ওভারস্প্রিডিং (অতিরিক্ত গতি) না করে।’ 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা ট্রাফিক বিভাগ এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করে। তবে আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করেন।’ 

অভিযান পরিচালনা করলেও কৃষিযন্ত্র রাস্তায় কীভাবে চলে এবং সেই যানবাহন ম্যাজিস্ট্রেট ধরলেও ছাড়া কীভাবে পায় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা দেখব, যেন কোনো অবৈধ যানবাহন ছাড়া না পায়।’ 

রাজবাড়ী জেলার পুলিশ সুপার জিএম আবুল কালাম আজাদ পিপিএম বলেন, ‘আমাদের কিছুটা জনবল সংকটের কারণে নিয়মিত এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। তবে দ্রুতই এসব অবৈধ গাড়ির বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।’ 

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাৎক্ষণিক কিছু বলতে রাজি হননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত