Ajker Patrika

‘মাথার ওপর থেকে বড় একটা পাথর নাইমা গেল’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ১৫: ৩২
‘মাথার ওপর থেকে বড় একটা পাথর নাইমা গেল’

‘মাথার ওপর থেকে বড় একটা পাথর নাইমা গেল। তিনটা বছরের অপেক্ষা শেষ হইতেছে অবশেষে।’ -বলছিলেন কুষ্টিয়ার একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে যোগদানের অপেক্ষায় থাকা শিক্ষক রিফাত আরা। রিফাত আরা একা নন, দীর্ঘ অপেক্ষার পর দেশের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন ৩৬ হাজারেরও বেশি শিক্ষক। এর মধ্যে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয়ে দুই হাজার ৬৫ জন এবং এনটিআরসিএর মাধ্যমে সুপারিশপ্রাপ্ত ৩৪ হাজার ৭৩ জন।  

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আগামীকাল সোমবার এই শিক্ষকদের মধ্যে ভার্চুয়ালি নিয়োগপত্র তুলে দেবেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে এমনটাই জানানো হয়েছে। 

পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষ না হওয়ায় এনটিআরসিএর ৩৪ হাজার ৭৩ জন শিক্ষকের নিয়োগ আটকে ছিল ৷ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট থাকায় আগাম পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই এই শিক্ষক নিয়োগের নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। 

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান অবস্থায় ৩৪ হাজার ৭৩ জন প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য প্রাথমিক সুপারিশ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সুপারিশপত্র ডাউনলোড করবেন। সুপারিশপত্রে উল্লেখিত তারিখের মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে যোগদান করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। 

এনটিআরসিএ প্রাথমিকভাবে ৩৮ হাজার শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করেছিল। বাকি প্রার্থীদের মধ্যে চার হাজার ১৯৮ জনের পুলিশ ভেরিফিকেশনের ভি রোল ফরম না পাঠানো, নয়জনের প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ হওয়া, তিনজনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ১০ নম্বর শর্ত ভঙ্গ করে মহিলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শরীরচর্চা শিক্ষক পদে আবেদন করার কারণে নির্বাচিত হননি। এ সব কারণে মোট চার হাজার ২১০ জন প্রার্থীকে সুপারিশ করা হয়নি। যেসব প্রার্থীকে সুপারিশ করা হয়নি তাদের তালিকা এনটিআরসিএ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। 

বিভিন্ন ধাপ শেষে প্রায় তিন বছর পর চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়ায় হবু শিক্ষকদের মধ্যে বয়ে যাচ্ছে খুশির বন্যা। তবে অভিযোগও আছে কারও কারও ৷ নিয়ম অনুযায়ী এসব শিক্ষকের কোন অর্থ প্রদান ছাড়াই সরাসরি স্কুল কলেজে যোগ দেওয়ার কথা। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি ও প্রধান শিক্ষক 'মিষ্টি' খাওয়ার নাম করে টাকা চাচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন যোগদানের অপেক্ষায় থাকা শিক্ষকেরা। 

শিক্ষক পদে যোগদানের অপেক্ষায় থাকা শান্ত আহমেদ বলেন, মিষ্টি খাওয়ার নাম করে আমাদের অনেকের কাছেই ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে। আমরা এনটিআরসিএ চেয়ারম্যানকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় অথবা এনটিআরসিএ যদি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সতর্কতা জারি করে। তাহলে আর এই সমস্যাটা হবে না বলে আমাদের বিশ্বাস।

এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষক নিয়োগ ও নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ (এসটিআরসিএ) সচিব ওবায়দুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমাদের কাছে লিখিত কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে শুনেছি বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি টাকা দাবি করছে। আমাদের সুপারিশপত্রে লেখা আছে যদি কোনো কারণ ছাড়া কোনো শিক্ষককে যোগদান করতে না দেওয়া হয় তবে প্রধান শিক্ষক ও কমিটির বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাওয়া যাবে। ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখের পরে যদি শিক্ষকের যোগদান না করতে দেয় তবে আমাদেরকে লিখিতভাবে জানালে আমরা ব্যবস্থা নেব। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, লিখিত আকারে কিছু না পেলে তো আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না। লিখিত আকারে অভিযোগটা তো পেতে হবে৷

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত