Ajker Patrika

জনসাধারণের ওপর স্বাস্থ্য ব্যয়ের চাপ কমাতে ৩ প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৬ জুন ২০২২, ১৯: ৫৭
জনসাধারণের ওপর স্বাস্থ্য ব্যয়ের চাপ কমাতে ৩ প্রস্তাব

দুদিন পরই ঘোষণা হতে যাচ্ছে আগামী অর্থ বছরের বাজেট। বর্তমানে দেশের মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের মাত্র ২৩ শতাংশ বহন করছে সরকার। বাকি ৬৮ শতাংশই পড়ছে জনসাধারণের কাঁধে। মানুষের ওপর স্বাস্থ্য ব্যয়ের এই চাপ কমাতে তিন প্রস্তাব রেখেছেন বিশিষ্টজনেরা।

আজ সোমবার বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ, ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং উন্নয়ন সমন্বয়ের যৌথ আয়োজনে ‘স্বাস্থ্য বাজেট বিষয়ক জাতীয় সংলাপ’ শিরোনামে প্রাক-বাজেট আলোচনায় নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেন অংশগ্রহণকারীরা।

বক্তারা বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের অন্তত ৪৫ শতাংশ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায়, মোট বরাদ্দের ২৫ শতাংশ মেডিকেল ও সার্জিক্যাল সাপ্লাই উপখাতে বরাদ্দ দিতে হবে। এতে নাগরিকদের ওষুধ ও অন্যান্য পচনশীল চিকিৎসা সামগ্রী বাবদ ব্যয় কমবে। এ ছাড়া গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন হেলথ সাব-সেন্টার ও কমিউনিটি ক্লিনিকের সকল শূন্য পদে পদায়ন করতে হবে। এতে স্বাস্থ্য বাজেটে নগদ মজুরি ও বেতন উপখাতে অংশ দাঁড়াবে অন্তত ৪৩ শতাংশ।

ডেইলি স্টার ভবনে আয়োজিত এই সভায় সংসদ সদস্যদের মধ্যে হাবিবে মিল্লাত, রুমিন ফারহানা এবং শামীম হায়দার পাটোয়ারী উপস্থিত ছিলেন। বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ।

স্বাস্থ্য বাজেট বিষয়ে মূল নিবন্ধ তুলে ধরে উন্নয়ন সমন্বয়ে সভাপতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘সরকারের স্বাস্থ্য বাজেটে বর্তমানে ওষুধ ও পচনশীল চিকিৎসা সামগ্রী বাবদ যে বরাদ্দ আছে তা তিনগুণ করা গেলে এবং উপজেলা পর্যায় থেকে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত তিন ধরনের সরকারি সেবাকেন্দ্রে সকল শূন্যপদে দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া গেলে মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ে জনসাধারণের অংশ ৬৮ শতাংশ থেকে কমে ৫১ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব।’

তবে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি পুরো স্বাস্থ্য খাতেই সংস্কারে মনযোগ দিতে হবে বলে মনে করেন ড. আতিউর রহমান।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬ সালে করা হাউজহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সমীক্ষায় দেখা যায়, গড়ে দেশের অসুস্থ বা দুর্ঘটনায় আক্রান্ত নাগরিকদের মধ্যে ১২ শতাংশ কোনো আনুষ্ঠানিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেন না। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে এই অনুপাত ১৭ শতাংশ। আর মহানগরগুলোতে আরও বেশি ২৩ শতাংশ।

বাংলাদেশের জিডিপির মাত্র ২ দশমিক ৩ শতাংশ ব্যক্তির চিকিৎসা বাবদ ব্যয়ে যাচ্ছে। যা পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন। এ জন্য এই খাতে এবার মোট বাজেটের ৭ থেকে ৮ শতাংশ বরাদ্দের আহ্বান জানান বক্তারা।

এ সময় সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত স্বাস্থ্য খাতের জন্য মধ্যম থেকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করা এবং পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতে স্বাস্থ্য খাতের চাহিদাগুলো প্রতিফলিত করার ওপর জোর দেন।

প্রতিবেশী ভুটান যেভাবে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছে এবং ভারতে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য যে স্বাস্থ্য বিমার উদ্যোগগুলো নেওয়া হচ্ছে সেগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশেও সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার পথে এগোনো দরকার বলে করেন বিএনপির নারী এমপি রুমিন ফারহানা। আর গাইবান্ধা-১ আসনের এমপি শামীম হায়দার পাটোয়ারী তাঁর বক্তব্যে দেশের পুরো জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কেবল সরকারি সেবাকেন্দ্রের ওপর না চাপিয়ে সরকার ও ব্যক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অংশীদারত্বমূলক উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন।

অন্যান্য বক্তারা স্বাস্থ্য বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার দেওয়া, ব্যক্তি খাতে স্বাস্থ্য সেবাদানকারীদের মান-নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য বাজেটের জেন্ডার-সংবেদনশীলতা, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা খাতে যথাযথ মনযোগ দেওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলো তুলো ধরেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত