Ajker Patrika

নদীগর্ভে সড়ক, দুর্ভোগে দেড় লাখ মানুষ

প্রতিনিধি, শরীয়তপুর সদর (শরীয়তপুর)
আপডেট : ০৮ জুলাই ২০২১, ১২: ৫২
নদীগর্ভে সড়ক, দুর্ভোগে দেড় লাখ মানুষ

কীর্তিনাশা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে শরীয়তপুর-চন্দ্রপুর সড়কের ৩০০ মিটার অংশ। গত মঙ্গলবার দুপুরে পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হাজরাশার গ্রামের সড়কটির বেশ কিছু অংশ নদীতে বিলীন হওয়ায় সড়কের দুই প্রান্ত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এই রাস্তা ব্যবহার করা অন্তত দেড় লাখ মানুষ। 

জানা যায়, জেলা শহরের সঙ্গে ৬টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এই সড়কের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। সড়কটি রক্ষা বা সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পৌরসভা একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়ে দায় সারায় ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা। 

গতকাল বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, টানা বৃষ্টি আর কীর্তিনাশা নদীর পানির স্রোতে শরীয়তপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হাজরাশার গ্রামের অন্তত ৩০০ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ওই এলাকায় থাকা সড়কটির মাঝামাঝি অংশের ৫০ মিটার পরিমাণ নদীতে বিলীন হওয়ায় সড়কটি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে সড়কের ভাঙা অংশে বাঁশের বেড়া দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয়রা।

শরীয়তপুর পৌরসভা সূত্র ও স্থানীয়রা জানান, ১৯৮৪ সালে জেলা শহরের সঙ্গে ৬ ইউনিয়নের যোগাযোগ সহজ করতে শরীয়তপুর-চন্দ্রপুর সড়ক নির্মাণ করে এলজিইডি। ১৯৯৮ সালে সড়কটি পাকা করা হয়। ২০১৫ সাল থেকে কীর্তিনাশার ভাঙনের কবলে পড়ে সড়কটি। এরপর কয়েক দফা জিও ব্যাগ ডাম্পিং ও স্থানীয়দের উদ্যোগে বাঁধ দিয়েও সড়কটি রক্ষা করা যায়নি। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে শরীয়তপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চরপাতানিধি ও হাজরাশার এলাকার সড়কটির অন্তত ৬০০ মিটার অংশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ৩০০ মিটার অংশ কীর্তিনাশা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ফলে পাঁচ বছর যাবৎ সড়কটিতে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

সড়কের এই অংশটুকু হেঁটে পারাপার হয়ে শহরে যাতায়াত করতেন স্থানীয়রা। মঙ্গলবার দুপুরে আকস্মিকভাবে সড়কের ভাঙা অংশের অন্তত ৫০ মিটার নদীতে বিলীন হওয়ায় সড়কটি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে জেলা শহরের সঙ্গে চন্দ্রপুর, মাহামুদপুর, বিনোদপুর, চিকন্দি, শৌলপাড়া, তুলাসার ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এই সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। যাতায়াতের জন্য স্থানীয়দের অতিরিক্ত ৭ কিলোমিটার ঘুরে রাজগঞ্জ-স্বর্ণঘোষ-শরীয়তপুর সড়ক ব্যবহার করতে হচ্ছে। ফলে দ্বিগুণেরও বেশি সময় ও অর্থ খরচ করে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাঁদের। 

নদী ভাঙনের ফলে এলাকাবাসীর চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছেআড়িগাঁও বাজারের ব্যবসায়ী মো. নুর হোসেন জানান, গতকালের ভাঙনে সড়কটি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় হাঁটা পথও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ৫০ টাকার জায়গায় এখন ১৫০ টাকা খরচ করে দোকানে মালামাল নিতে হচ্ছে।

চর স্বর্ণঘোষ গ্রামের আকবর আলী বলেন, সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় অসুস্থ রোগী নিয়ে। দিনের বেলায় কেউ অসুস্থ হলে কষ্ট করে হলেও হাসপাতালে যাওয়া যায়। কিন্তু রাতের বেলা এই এলাকার কেউ অসুস্থ হলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া একেবারেই অসম্ভব হয়ে যায়। অনেক সময় অতিরিক্ত রাস্তা ঘুরে হাসপাতালে যাওয়ার ফলে ভ্যান বা রিকশাতেই রোগী মারা যায়।

তুলাসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম জানান, একাধিকবার পৌরসভা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সমাধান পাননি। স্থানীয়দের সহায়তায় একাধিকবার সড়ক রক্ষায় বালুর বস্তা ফেলে চেষ্টা করা হয়েছে। দ্রুত বাঁধ নির্মাণ করে সড়কটি সংস্কারের জোর দাবি জানান তিনি।

শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র পারভেজ রহমান জন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত অংশের নদীর তীর রক্ষাবাঁধ নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। যেহেতু এলাকাটি ভাঙনপ্রবণ, তাই বাঁধ নির্মাণ না করায় সড়কটি সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গেই পৌরসভা নতুন করে সড়কটি নির্মাণ করে দেবে। এ জন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।’ 

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব আজকের পত্রিকাকে জানান, কীর্তিনাশা নদীর উভয় পাড়কে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য একটি প্রকল্প পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে নদীর উভয় পাড় বাঁধের আওতায় চলে আসবে। চলতি বর্ষায় ভাঙন দেখা দেওয়ায় জরুরি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙনের হাত থেকে সড়কটি রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোরপূর্বক অপুর স্বীকারোক্তি নিয়েছেন বিএনপির ইশরাক, এনসিপির ব্যবস্থা করা সংবাদ সম্মেলনে দাবি স্ত্রীর

‘মিরপুরের উইকেটের পাশে পুঁইশাক বের হচ্ছে, এত বছর হয়নি কেন’

ভোররাতে হাঁসের মাংস খেতে ৩০০ ফুটে যান আসিফ মাহমুদ, না পেয়ে যান ওয়েস্টিনে

উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ভুলভাবে কথা বলেছেন: প্রেস সচিব

নীলা মার্কেটের হাঁসের মাংস নাকি ওয়েস্টিনের—কোনটি সেরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত