Ajker Patrika

লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনে বেশি দামে বিক্রি, গ্রেপ্তার ৬ 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনে বেশি দামে বিক্রি, গ্রেপ্তার ৬ 

রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে অন্য সব যাত্রীদের মতোই লাইনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন গন্তব্যের টিকিট কিনে পরে তা ট্রেন ছাড়ার আগে বেশি দামে বিক্রি করে আসছিল একটি চক্র। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে টিকিট কালোবাজারি চক্রের মূল হোতাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। 

গ্রেপ্তাররা হলেন—চক্রের মূল হোতা মো. আব্দুল হাকিম ও তাঁর সহযোগী মো. জয়নাল আবেদীন (৫৯), মো. শামীম ওরফে সম্রাট (২৭), মো. আব্দুল জলিল (১৯), মো. খোকন মিয়া (৫৫) ও মো. উজ্জল ভূইয়া (৩৩)। 

গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে ২১টি কালোবাজারি টিকিট, পাঁচটি মোবাইল, তিনটি সিম, দুটি মানিব্যাগ, একটি আইডি কার্ড ও টিকিট বিক্রির নগদ ৯ হাজার ৮১৮ টাকা জব্দ করা হয়েছে। 

আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর মতিঝিলের টিকাটুলিতে র‍্যাব-৩ এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানান। 

আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকিট কালোবাজারি চক্রের অন্যতম মূল হোতা আব্দুল হাকিম। তিনি সহযোগীদের নিয়ে রেলস্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করেন। এছাড়াও অনলাইনেও টিকিট সংগ্রহ করেন তাঁরা। এরপর ট্রেন ছাড়ার ৩-৪ ঘণ্টা আগে টিকিটগুলো বেশি দামে বিক্রি করেন। ট্রেন ছাড়ার সময় যত এগিয়ে আসে তাঁদের টিকিটের দাম তত বাড়তে থাকে। সময়-সুযোগ বুঝে তাঁরা টিকিটের দাম বাড়াতে থাকে। ঈদের সময়ে এই চক্রের সদস্যরা ৫০০ টাকার টিকিট ২ হাজার টাকাতেও বিক্রি করেছে। 

‘এই চক্রটি মূলত তূর্ণা নিশিথা, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, তিস্তা এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতি, চট্টলা এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ও পারাবত এক্সপ্রেস এই সকল ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে থাকে। চক্রটির আরও সদস্য ইউনিট রয়েছে। প্রতিটি ইউনিটে ৫-৭ জন করে সক্রিয় সদস্য রয়েছে—যারা তাঁদের টার্গেটকৃত ট্রেনগুলোর টিকিট কালোবাজারি করে সাধারণ যাত্রীদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করে।’ 

গ্রেপ্তাররা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, এই চক্রের মূল হোতা আব্দুল হাকিম নিজ জেলা কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পরিচয় ব্যবহার করে এবং রেলস্টেশনে কর্মরত অসাধু একটি চক্রের যোগসাজশে ২০১৮ সাল থেকে টিকিট কালোবাজারির ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর অধীনস্থ ৪-৫ জন কর্মীকে দিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করে চড়া দামে বিক্রি করেন। বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালালেও হাকিম কখনো আটক কিংবা গ্রেপ্তার হননি। কারণ তিনি অত্যন্ত সুকৌশলে তাঁর কর্মীদের দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে টিকিট চোরাকারবারের ব্যবসাটি চালিয়ে আসছিলেন। 

আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, ‘এই সংঘবদ্ধ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে চক্রের মূল হোতা হাকিমের নেতৃত্বে কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় বিভিন্ন ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির মাধ্যমে সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়। তাঁরা কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বিভিন্ন জেলার রেলস্টেশনগুলোতেও তাঁদের এজেন্টদের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারির কার্যক্রম চালান। 

‘রেলস্টেশনে যে পরিমাণ টিকিট বরাদ্দ থাকে তার মধ্যে ৫০ শতাংশ বিক্রি হয় অনলাইনে। যার ফলে কাউন্টারে এসে অনেকে টিকিট না পেয়ে ফিরে যান। আর এই সুযোগটিই গ্রহণ করে টিকিট কালোবাজারি চক্রের সদস্যরা। কমলাপুর রেলস্টেশনে এই কালোবাজারি চক্রটির মূল হোতা আব্দুল হাকিম এবং অন্যান্য সদস্যরা মিলে রেলস্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়ে এক একটি এনআইডি দিয়ে একাধিক টিকিট সংগ্রহ করে। এমনকি অনেক সময় তারা রিকশাওয়ালা, কুলি, দিনমজুর এদের অল্প টাকার বিনিময়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে তাদের মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করে।’ 

র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তার চক্রের সদস্য খোকন মিয়ার নামে টিকিট কালোবাজারির দায়ে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মোট পাঁচটি মামলা রয়েছে। র‍্যাব-৩ গত ২০ অক্টোবর তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ৩২ দিন জেল খেটে জামিনে মুক্তি পান তিনি। এরপর তিনি আবারও টিকিট কালোবাজারির কাজে লিপ্ত হন। 

গ্রেপ্তার শামীমের নামে মাদক মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে এবং তিনি বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে জেল খাটেন। এ চক্রটির সদস্যরা বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটে জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও এই টিকিট কালোবাজারির ব্যবসার সঙ্গেই যুক্ত হন। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাইকোর্টের বিচারপতি হলেন সারজিস আলমের শ্বশুর

গুলি–ককটেল ছুড়তে ছুড়তে গজারিয়ার দুর্গম চরের পুলিশ ফাঁড়িতে ডাকাত দলের হামলা

ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে অষ্টগ্রামে বিক্ষোভ

কুমিল্লায় দুই ট্যাংকে পানি, তদন্ত শেষ হয়নি ১ মাসে

মব সৃষ্টিকারীরা হত্যার হুমকি দিচ্ছে, আমার জীবন বড় শঙ্কায়: ফজলুর রহমান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত