Ajker Patrika

ভরা মৌসুমে ক্রেতাশূন্য পোশাকের মার্কেট

অরূপ রায়, সাভার (ঢাকা)
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ২০: ৪৭
ভরা মৌসুমে ক্রেতাশূন্য পোশাকের মার্কেট

রাজধানীর অদূরে সাভারের সব চেয়ে বড় বিপণিবিতান সিটিসেন্টার। এই বিপণিবিতানে পোশাক ও প্রসাধনীসহ প্রায় সব রকমের দ্রব্য থাকলেও ক্রেতাদের ভিড় নেই। ক্রেতার অভাবে ব্যবসার ভরা মৌসুমে অনেক দোকানিকে অলস সময় কাটাতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে কর্মচারীদের বেতন ও ঈদ বোনাস দেওয়াই কষ্টকর হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। 

ব্যবসায়ীরা জানান, সিটিসেন্টার বেশ চালু মার্কেট। মূলত মধ্যবিত্ত ক্রেতারাই এই মার্কেটে কেনাকাটা করে থাকেন। তার পরেও আগের বছরগুলোতে পাঁচ রোজার পর থেকেই পুরোদমে বিক্রি শুরু হয়ে যেতো। কিন্তু এবারের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। গতবারের তুলনায় বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। 

সিটিসেন্টারের নিচ তলার থ্রিপিস হাউসের ব্যবস্থাপক সোহাগ মিলন বলেন, ‘গতবারের চেয়ে এবার ভারতের থ্রিপিসের দাম বেড়েছে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা। আর দেশীয় থ্রিপিসের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। এ কারণে দু-চারজন ক্রেতা এলেও অধিকাংশ ক্রেতাই দরদাম করে চলে যান।’ 

একই মার্কেটের ‘রেডরোজ কসমেটিকসের’ ব্যবস্থাপক শাহাদত হোসেন বলেন, ‘গত রোজার ঈদে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা বিক্রি হতো। এবার ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার উপড়ে বিক্রি উঠছে না।’ 

ক্রেতা না থাকায় অলস সময় পার করছেন এক প্রসাধনীর দোকানদারতৈরি পোশাকের দোকান মঞ্জু স্টোরে বাচ্চাদের ফ্রক দেখছিলেন গৃহবধূ রেহেনা বেগম। বেশ কিছুক্ষণ যাচাইবাছাই করে ফ্রক না কিনেই দোকান থেকে বেড় হয়ে পড়েন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই দোকানে বাইরের পোশাক পাওয়া যায়। কয়েক বছর ধরে বাচ্চাদের জন্য এখান থেকেই কেনাকাটা করে থাকি। কিন্তু এবার বাজেটের তুলনায় পোশাকের দাম বেশি হওয়ায় কিনতে পারিনি।’ 

পাশেই হবি প্লাজা। আজ শনিবার ওই মার্কেটের ‘ড্রেসআপ’ নামের একটি পোশাকের দোকানে গেলে মালিক হৃদয় হোসেন বলেন, ‘এবার বেচাবিক্রি খুবই খারাপ। আজ বেলা ১২টা পর্যন্ত কোনো বিক্রি হয়নি। গতকাল (শুক্রবার) ৮ হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়েছিল। অথচ গতবার ১০ রোজার পর থেকেই প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি।’ 

সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকার আরও একটি বড় বিপণিবিতান রাজ্জাক প্লাজার ইমিটেশনের গয়নার দোকান কংকা জুয়েলার্সের মালিক অসিম চক্রবর্তী বলেন, ‘আমার ১৮ বছরের ব্যবসায়িক জীবনে এবারের মতো খারাপ বেচাকেনা আর দেখিনি।’ 

ক্রেতার অপেক্ষা সময় কাটাচ্ছেন ফুটপাতের এক দোকানদারএকই মার্কেটের পর্দার দোকান জেএইচ পর্দা গ্যালারি ব্যবস্থাপক ননি গোপাল গোস্বামী বলেন, ‘অন্যান্য বছরের রমজান মাসের তুলনায় এবারের বিক্রি খুবই খারাপ। মার্কেটে কাস্টমারই নেই।’ 

রমজান এলেই ধারদেনা করে লুঙ্গি ও গামছা মজুত করেন পৌর এলাকার আড়াপাড়া মহল্লার ব্যবসায়ী দ্বিলীপ চক্রবর্তী। পুরো রমজান জুড়ে ওয়াবদা রোডের ফুটপাতে বসে তা বিক্রি করে লাভের পাশাপাশি দেনা পরিশোধ করেন। কিন্তু এবার লাভতো দূরের কথা চালান বেড় করাই সম্ভব হবে না বলে জানান তিনি। 

ক্রেতাবিহীন দোকানে বসে ফেসবুক ঘেঁটে অলস সময় পার করছিলেন ওয়াবদা রোডের ইনান কসমেটিকসের মালিক এনামুল হক। তিনি বলেন, ‘দিনে ২ হাজার থেকে ৩ হাজারের বেশি বিক্রি হয় না, যা গত বারের রমজানের তুলনায় কয়েক গুণ কম। এই অবস্থা চলতে থাকলে নিজেদের ঈদের কেনাকাটাও সম্ভব হবে না।’ 

সিটিসেন্টার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ওবায়দুর রহমান অভি বলেন, ‘সব রকম দ্রব্যের দাম বেড়ে গেছে। সেই তুলনায় মানুষের আয় বাড়েনি। এ কারণে ক্রেতা কমে গেছে। ক্রেতা কমে যাওয়ায় বিক্রিও কমে গেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত