Ajker Patrika

উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়ার কথা শুনে কলেজছাত্রীকে হত্যা করেন সাইদুল: র‍্যাব 

প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১১ মে ২০২৩, ২০: ০০
উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়ার কথা শুনে কলেজছাত্রীকে হত্যা করেন সাইদুল: র‍্যাব 

গাজীপুর মহানগরীর দক্ষিণ সালনা এলাকায় বাসায় ঢুকে কুপিয়ে কলেজছাত্রী রাবেয়া আক্তারকে হত্যার ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি সাইদুল ইসলামকে গতকাল বুধবার গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে করেছেন র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাইদুল র‍্যাবকে জানিয়েছেন, ২০২০ সালে করোনাকালীন ভিকটিমের পরিবারের সবাইকে আরবি পড়ানোর জন্য গৃহশিক্ষক হিসেবে নিহত ছাত্রীর বাবা তাঁকে নিয়োগ দেন। আরবি পড়ানোর সুবাদে তিনি প্রতিনিয়ত ভিকটিমের বাসায় যাওয়া-আসা করতেন। একপর্যায়ে পরিবারের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক তৈরি হয়। বিভিন্ন সময় সাইদুল ভিকটিমের প্রতি কুনজরসহ একপর্যায়ে ভিকটিমকে বিয়ের প্রস্তাব দেন।

র‍্যাব জানায়, পাঁচ-ছয় মাস আরবি শেখানোর পর পড়ানো বন্ধ করে দেন। পরে সাইদুল প্রতারণামূলকভাবে ২০২০ সালের ডিসেম্বর ভিকটিমকে মৌখিকভাবে বিবাহ করে। পরবর্তীকালে সাইদুল বিবাহের বিষয়টিকে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ভিকটিম ও তাঁর পরিবারকে চাপ দিতে থাকেন। ভিকটিমের পরিবার অসৎ উদ্দেশ্যের বিষয়টি জানতে পেরে সাইদুলের সঙ্গে ভিকটিমের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পরে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ভিকটিম গাজীপুর সদর থানায় বিভিন্ন সময়ে তাঁকে উত্ত্যক্ত করার বিষয়ে একটি অভিযোগ করেন। যার কারণে সাইদুল কিছুদিন ভিকটিমকে উত্ত্যক্ত করা থেকে বিরত থাকেন।

র‍্যাব আরও জানায়, কিন্তু দুই মাস ধরে ভিকটিমের কলেজে ও বাসার বাইরে যাওয়া-আসার পথে পুনরায় তাঁকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন এবং প্রস্তাবে রাজি না হলে ভিকটিমকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। একপর্যায়ে সাইদুল জানতে পারে যে ভিকটিমের পরিবার ভিকটিমকে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাহরে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিষয়টি সাইদুল কোনোভাবেই মেনে নিতে না পেরে ভিকটিম ও তাঁর পরিবারের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

যেভাবে হত্যা
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ভিকটিমকে হত্যার পূর্বপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ৭ মে বিকেলে স্থানীয় বাজারে কামারের দোকানে ৬৫০ টাকা দিয়ে গরু জবাই করার একটি ছুরি তৈরি করতে দেন। পরদিন ৮ মে সন্ধ্যায় ছুরি সংগ্রহ করে ভিকটিমের বাসায় গিয়ে তাঁর রুমে ঢুকে ছুরি দিয়ে মাথায়, গলায়, হাতে ও পায়ে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন। এ সময় ভিকটিমের চিৎকারে তাঁর মা ও দুই বোন তাঁর ঘরে গিয়ে তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে সাইদুল ছুরি দিয়ে তাঁদেরও এলোপাতাড়ি কুপিয় জখম করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।

আল মঈন বলেন, তাঁদের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এসে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিমকে মৃত ঘোষণা করেন এবং ভিকটিমের মা ও ছোট দুই বোনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ডাক্তার তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরবর্তী সময় হাসপাতালে নেওয়ার পথে শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে তাঁদের উত্তরার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে ভিকটিমের মা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।

খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, সাইদুল চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসা থেকে দাওরা হাদিস পাস করেন। তিনি গাজীপুরের একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করার পাশাপাশি স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করতেন এবং এলাকার বিভিন্ন বাসায় গিয়ে প্রাইভেট পড়াতেন। দুই মাস আগে দুটি চাকরিই ছেড়ে দেন। ঘটনার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য তিনি নিজের চেহারা পরিবর্তন করে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে তাঁর এক বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে যান। আত্মগোপনে থাকার সময়ে গত রাতে র‍্যাব তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

ভিকটিমের পরিবারের বরাতে র‍্যাব জানা যায়, ভিকটিম ২০২০ সালে জয়দেবপুরের একটি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করে। পরে গাজীপুরের চৌরাস্তার একটি কলেজে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত ছিলেন। পড়ালেখার পাশাপাশি স্থানীয় একটি বিউটি প্রোডাক্টস অনলাইন শপে চাকরি করতেন। এ ছাড়া ভিকটিম উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য কিছুদিন আগে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং ভিসাসহ আনুষঙ্গিক নথিপত্র প্রস্তুত করছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’, চিরকুটে লেখা

বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত আমদানির ঘোষণা দিতেই ভারতে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম

এপিএসের বেতন ১ বছরে বেড়েছে ১৮ বছরের সমান

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

পাবনায় প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে এএসআই উধাও, থানায় শ্বশুরের জিডি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত