Ajker Patrika

গোল্ডেন রাইসে বীজের অধিকার হারাবে কৃষক, বাড়বে স্বাস্থ্যঝুঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
গোল্ডেন রাইসে বীজের অধিকার হারাবে কৃষক, বাড়বে স্বাস্থ্যঝুঁকি

কোনো রকম বৈজ্ঞানিক গবেষণা ছাড়া শুধুমাত্র অনুমানের ভিত্তিতে জেনেটিক্যালি মোডিফাইড (জিএম) ধান বা গোল্ডেন রাইসের অনুমোদনে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা করছে পরিবেশবাদী পাঁচটি সংগঠন। তাঁরা বলছে, এতে ধানের বীজের ওপর থেকে কৃষক অধিকার হারাবে। বীজের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে বহুজাতিক বীজ কোম্পানিগুলোর হাতে।

আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে ‘জিএম শস্য গোল্ডেন রাইস এবং বিটি বেগুন: বাংলাদেশে প্রবর্তনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রশ্নের নিরসন জরুরি’—শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ উদ্বেগের কথা জানানো হয়।

সংগঠনগুলো হচ্ছে—বেলা, উবিনীগ, জিএমও বিরোধী মোর্চা, নয়াকৃষি আন্দোলন ও নাগরিক উদ্যোগ।

সংবাদ সম্মেলনে উবিনীগের নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, সারা দেশে ব্রি ২৯ প্রজাতির ধান কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। এ প্রজাতির ধানের মধ্যে ভুট্টার জিন ঢুকিয়ে জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে গোল্ডেন রাইস উদ্ভাবন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে ধানের ভেতর ভিটামিন এ থাকবে বলে দাবি করা হয়। তবে এটি অনুমান নির্ভর। যার মেধাসত্ত্ব রয়েছে সিনজেনটা নামের একটি বহুজাতিক বীজ কোম্পানির কাছে। এ গোল্ডেন রাইস নিয়ে সারা বিশ্বে বিতর্ক রয়েছে। তাই ফিলিপাইনে এর অনুমোদন বাতিল হয়েছে। কিন্তু বিশ্বের কোথাও অনুমোদন না পেলেও বাংলাদেশে গোল্ডেন রাইসের অনুমোদনের জন্য বহুজাতিক কোম্পানিগুলো প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এমন অনুমোদনের ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকির পাশাপাশি ধানের আদি নিবাস বাংলাদেশে জনপ্রিয় একটি জাতের ধানের বীজের অধিকার হারাবে কৃষকেরা।

জেনেটিক্যালি মোডিফাইড বিটি বেগুনের বিষয়ে ফরিদা আখতার বলেন, এর আগে ২০১৩ সালে সাতটি শর্ত সাপেক্ষে বিটি বেগুনের অনুমোদন দেওয়া হলেও শর্তগুলো মানা হচ্ছে না। নানা পদক্ষেপ সত্ত্বেও কৃষকদের মধ্যে এমন বীজ জনপ্রিয়তা পায়নি। তাই কোনো অবস্থাতেই দেশে জেনেটিক্যালি মোডিফাইড পদ্ধতির প্রয়োজন নেই। কীটনাশক ও অতিরিক্ত সার ব্যবহারের কারণে প্রতি বছর দুই থেকে তিন লাখ ক্যানসার রোগী ধরা পড়ছে। জিএম পণ্য এমন স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বিশ্বের কোথাও অনুমোদন না পেলেও গোল্ডেন রাইস অনুমোদনের তোড়জোড় চলছে দেশে। বাংলাদেশ এখন পরীক্ষাগারে পরিণত হয়েছে। এটার কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা সামাল দেওয়ার সক্ষমতা কী সরকারের আছে? এখানে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক চাপের বিষয়টি জড়িত। তাছাড়া দেশে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বীজ বিস্তার ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. এমএ সোবহান বলেন, এর পেছনে বাণিজ্য রয়েছে। প্রকৃতির ওপর জোর করা হলে প্রকৃতি প্রতিশোধ নেয়। ভুট্টার জিন ধানে যুক্ত করা হচ্ছে গোল্ডেন রাইজ করা হয়েছে, অথচ ভুট্টা খেলেই হয়।

বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি বদরুল আলম বলেন, ‘বীজ ঐতিহ্যগতভাবে সংরক্ষণ করে কৃষকেরা। এখন সেই বীজ সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে বহুজাতিক কোম্পানি। দেশের ৭৮ ভাগ জমির উর্বরতা কমে গেছে। খাদ্য ও কৃষি ভিত্তিক সংগঠন বলছে, একর প্রতি যে পরিমাণ রাসায়নিক সার ব্যবহারের কথা, তার চেয়ে ২০ গুন বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। অধিক খাদ্য ফলানোর নামে আমরা কী করছি প্রকৃতির সঙ্গে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও আলোচনায় অংশ নেন জিএমও বিরোধী মোর্চার চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেয়েরা যেন আমার মরা মুখ না দেখে’, চিরকুট লিখে ঠিকাদারের ‘আত্মহত্যা’

ফরিদপুরে পালিয়ে যাওয়া আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার, থানার ওসিকে বদলি

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় ভারতের উদ্বেগ

কাতারের রাজপরিবারের দেওয়া বিলাসবহুল বিমান না নেওয়াটা বোকামি: ট্রাম্প

সৌদি আরবের সঙ্গে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করে নিজের রেকর্ড ভাঙল যুক্তরাষ্ট্র

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত