Ajker Patrika

চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিল স্বামী-স্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিল স্বামী-স্ত্রী

সুজন বর্মণ, ফেসবুকে একটি সিকিউরিটি কোম্পানির সহকারী সুপারভাইজার পদে চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে বাগেরহাট থেকে এসেছিলেন ঢাকায়। কিন্তু ঢাকায় আসার পর সুজনকে বলা হয়, তাঁর মতো আরও তরুণদের আনতে। কিন্তু এক মাসে কাউকেই না আনতে পারায় কোনো টাকাই পাননি তিনি। ফলে এই এক মাস কষ্টে দিন কেটেছে তাঁর। 

সম্প্রতি আকর্ষণীয় বেতনে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর উত্তরখানের আঁটিপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। 

র‍্যাব জানিয়েছে, চক্রটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আকর্ষণীয় বেতনের চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। এই চক্রের মূল হোতা জুয়েল-মায়া দম্পতি। চাকরি নিতে আসা প্রত্যেকের কাছ থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা আদায় করত এরা। এ পর্যন্ত সাত থেকে আটশো জনের সঙ্গে প্রতারণার করেছে। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হল, কথিত সিনথিয়া সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সামসুন্নাহার ওরফে মায়া (৩৩) ও তাঁর স্বামী মো. জুয়েল ভূঁইয়া, কামরুজ্জামান ওরফে ডেনিস (২৪), ফারহানা ইয়াছমিন ওরফে সুবর্ণা আক্তার (২৩), মেহেদী হাসান (২১), আল মামুন ওরফে মাসুদ (২১) ও তাজবির হাসান ওরফে লোহান (১৯)। 

এ সময় পাঁচটি ভুয়া নিয়োগপত্র, ৮০টি জীবন বৃত্তান্ত ফরম, ভিজিটিং কার্ড, টাকা আদায়ের রসিদ, ১০১টি ভর্তির ফরম ও অঙ্গীকারনামা, সিল, ১৫টি আইডি কার্ড, তিনটি রেজিস্ট্রার খাতা,৮টি মোবাইল ফোন ও নগদ ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। 

সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন। 

র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এসএসসি পাশে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেকার তরুণদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল তাঁরা। তাঁরা সাবেক সেনা কর্মকর্তার বডিগার্ড, বাসা বাড়ির নিরাপত্তা রক্ষী, সুপারভাইজারসহ বিভিন্ন পদে চাকরি বিজ্ঞাপন দিত। তাঁদের বিজ্ঞাপন দেখে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে জীবনবৃত্তান্ত জমা নেওয়া হত। কয়েক দিন পর যোগাযোগ করে বলা হত চাকরি হয়েছে। তবে ট্রেনিংসহ বিভিন্ন খাতের নামে ১২ হাজার ৫০০ টাকা জমা নেওয়া হত। এরপর চাকরি না দিয়ে তাঁদের বলা হত আরও চাকরি প্রার্থী সংগ্রহে। চাকরি প্রার্থী সংগ্রহ করতে পারলে পার্সেন্টেজ হিসেবে ১১০০ টাকা দেওয়া হবে। মাসে অন্তত ১৪ জনকে সংগ্রহের টার্গেট দেওয়া হত।’ 

র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা অর্থ পাচারের কোনো তথ্য পাইনি। তবে এ অর্থ দিয়ে তাঁরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন ও তাঁদের কোম্পানির প্রচারণার জন্য এ টাকা দিয়ে ফেসবুক বুস্টিং করত।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ১৭ জন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছি তাঁরাই এই মামলার বাদী হবেন। এ ছাড়া তাঁদের আগের কোনো প্রতারণার তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে কোম্পানির এমডি অর্থাৎ মায়া আগে অন্য আরেকটি ভুয়া সিকিউরিটি কোম্পানিতে কাজ করত এবং সেখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে নতুনভাবে প্রতারণা শুরু করেন। তাঁরা আট মাস ধরে এই কাজ করে আসছিল।’ 

আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, এর আগেও আমরা এইরকম প্রতারণার জন্য গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু দেখা গেছে তারা জামিন বের হয়ে একই ধরনের কোম্পানি খোলে বসে অন্য নাম দিয়ে কিংবা অন্য ঠিকানা দিয়ে। গণ্যমাধ্যমের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের মানুষকে বলতে চাই, কোনো ভুয়া বিজ্ঞান দেখে প্রতারিত হবেন না। চাকরি নেওয়ার আগে যাচাই করে নেবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত