Ajker Patrika

নির্বাচনী ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি দিলেন গাজীপুরের নৌকার মেয়র প্রার্থী আজমত

গাজীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ মে ২০২৩, ১৮: ২৪
নির্বাচনী ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি দিলেন গাজীপুরের নৌকার মেয়র প্রার্থী আজমত

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান সিটি করপোরেশনের অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি এই সিটিকে উন্নয়নের মডেল বানানোর কথাও বলেছেন। আধুনিক ও জনবান্ধব সিটি করপোরেশন গড়তে নগরীর উন্নয়নের নানা পরিকল্পনা তুলে ধরে ২৮ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন তিনি।

আজ রোববার বেলা পৌনে ১১টায় মহানগরের রাজবাড়ী সড়কের প্রকৌশলী ভবনে তিনি তাঁর নির্বাচনী ইশতেহার তুলে ধরেন। আশা প্রকাশ করে বলেন, তিনি নির্বাচিত হতে পারলে জীবনের নানা অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নগরবাসীকে দেওয়া ওয়াদা পালন করবেন।

আজমত উল্লা তাঁর ইশতেহারে উল্লেখ করেন, একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে রাস্তা, ড্রেন, কালভার্ট, ব্রিজসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি সেবামূলক খাতগুলোকে আরও শক্তিশালী করে সেবার মানকে সুনিশ্চিত করতে এক বছর, দুই বছর ও পাঁচ বছর মেয়াদবিশিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন তিনি।

প্রশাসনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, সিটি মাস্টারপ্ল্যান এবং জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত একটি সমৃদ্ধ সুষম নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দিয়েছেন এই ইশতেহারে।

এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে অভূতপূর্ব উন্নয়নযাত্রা শুরু করেছেন, তার সঙ্গে সংগতি রেখে আধুনিক মহানগর ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি কাজ করবেন। 

তা ছাড়া নগরের উন্নয়নে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে ‘পরামর্শক কমিটি/নগর উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি’ গঠন, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তাঁদের পরামর্শ ও সুপারিশের ভিত্তিতে সিটি করপোরেশনের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে অভিজ্ঞ নগরবিদ ও প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে বিশ্বমানের একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে জনগণের সেবা নিশ্চিত করা হবে। হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স, নাগরিক সনদসহ বিভিন্ন সনদের ফি, ইউটিলিটি বিল ইত্যাদি অনলাইনের মাধ্যমে পরিশোধের ব্যবস্থা, ওয়ার্ডগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা এবং ফ্রি ওয়াই-ফাই জোন করার উদ্যোগ গ্রহণের কথা উল্লেখ করেছেন ইশতেহারে। 

হোল্ডিং করের বিষয়ে তিনি উল্লেখ করেন, নাগরিকদের হোল্ডিং করের হার না বাড়িয়ে রিভিউ বোর্ডের মাধ্যমে সহনশীল পর্যায়ে চূড়ান্ত করা সরকার কর্তৃক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের যে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা যথাযথভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে প্রদান করা হবে। 

মহানগরবাসীর স্বাস্থ্যসেবার জন্য সব নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা, বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ, স্বল্পমূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সেবা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া, দুস্থ ও অসহায় মানুষের মৃত্যুর পর প্রয়োজন অনুযায়ী কাফনের কাপড়ের ব্যবস্থা করা এবং সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিসহ অন্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে শ্রমিক, বস্তিবাসী ও দরিদ্র মানুষের জন্য বিনা মূল্যে স্বাস্থ্য কার্ড প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে ইশতেহারে। 

নগরের পানি ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি সেবাদানকারী স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়তা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে সব নাগরিকের সুপেয় পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও বৃষ্টির পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার জন্য ‘জিআইএস’ পদ্ধতি অবলম্বন করে সার্ভের মাধ্যমে ড্রেন ও খালগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে উপযোগী করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রতিবন্ধী নাগরিক এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে। 

গুরুত্ব বিবেচনায় সড়ক উন্নয়ন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্টজনদের নামে রাস্তার নামকরণ ও নির্মাণকাজের গুণগতমান নিরীক্ষার জন্য শক্তিশালী মনিটরিং টিম গঠন করা হবে। 

নগরের যানজট নিরসন, পার্কিং, ফুটপাতসহ যোগাযোগব্যবস্থার আধুনিকীকরণ করা হবে। পথচারীবান্ধব ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের জন্য ফুটপাত নেটওয়ার্ক, যানজট নিরসনের জন্য বিআরটিএ, ট্রাফিক পুলিশ এবং পরিবহন মালিক, সমিতি, শ্রমিক সংগঠনসহ অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে বহুতল ও আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং কমপ্লেক্স নির্মাণ, নতুন ফুটওভার ব্রিজ, আধুনিক বাসস্ট্যান্ড ও বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ এবং রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে নাগরিকদের রেলে যাতায়াত সহজীকরণে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। 

অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে জয়দেবপুর রেলক্রসিংয়ের ওপর ফ্লাইওভার নির্মাণসহ সরকারের সহযোগিতায় সমগ্র গাজীপুরে সংযোগ সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণের কথা উল্লেখ আছে ইশতেহারে। 

শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রয়োজনে জিসিসির অধীনে কারিগরি ও অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। নগরীতে অবস্থিত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও এতিমখানাগুলোতে সাহায্য প্রদান করা হবে। এ ছাড়া অনাথ, গরিব, যোগ্যতাসম্পন্ন মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। সিটি করপোরেশনের নিজস্ব পাঠাগারের আধুনিকীকরণ, নতুন পাঠাগার প্রতিষ্ঠা এবং ব্যক্তি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত পাঠাগারগুলোকে সহায়তা প্রদান করা হবে। 

পোশাকশিল্পসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের অধিকার সংরক্ষণ ও নির্যাতন প্রতিরোধে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা হবে। শ্রমজীবী মায়ের শিশুদের পরিচর্যার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে ‘ডে-কেয়ার’ সেন্টার স্থাপন এবং বিকেল ৫টার পর তাঁরা যেন টিসিবির সরবরাহকৃত খাদ্যসামগ্রী পেতে পারেন—সেই উদ্যোগসহ সরকার ও মালিকপক্ষের সহযোগিতায় বেতন-ভাতাদি, নিরাপত্তা, বাসস্থান ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে সহায়তা প্রদান করা হবে। গাজীপুর মহানগরীর সব বস্তিবাসীর প্রাপ্ত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। শিল্পমালিক ও ব্যবসায়ী সমাজের ভোগান্তি কমাতে জিসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়ে হেল্পডেস্ক স্থাপন করা হবে। 

তরুণদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি ও উন্নত ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের লক্ষ্যে এবং বয়স্ক ও শিশুদের মিলনস্থল ও বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে প্রতিটি ওয়ার্ডে ‘ওয়ার্ড সেন্টার’ নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। সেগুলোতে কমিউনিটি সেন্টার, সেবাদান কেন্দ্র, আত্মরক্ষাসহ বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, শিল্পকলা শিক্ষাকেন্দ্র, পাঠাগার প্রতিষ্ঠাসহ বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী করা হবে। ডিজিটাল কমান্ড সেন্টার তৈরির মাধ্যমে নাগরিক সেবা ও নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং স্মার্ট নেইবারহুড কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পারস্পরিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিয়মিত পাড়া উৎসবসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে ইশতেহারে। 

বর্জ্য ব্যবস্থার আধুনিকীকরণে বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্র স্থাপন এবং বর্জ্যকে জ্বালানি শক্তিতে রূপান্তরিত করার উদ্যোগ, প্রতিটি ওয়ার্ডে বর্জ্য সংরক্ষণকেন্দ্র স্থাপন, নতুন অডিটরিয়াম এবং কালচারাল কমপ্লেক্স, মুক্তমঞ্চ নির্মাণসহ মিলনয়াতনগুলো সংস্কার, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে সহযোগিতার পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে শিল্পকলা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন। 

ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার জন্য উপযুক্ত মাঠ তৈরি করা, মেয়র গোল্ডকাপ ফুটবল ও ক্রিকেট প্রতিযোগিতার উদ্যোগ গ্রহণ এবং কারাতে, সাঁতারসহ বিভিন্ন খেলার উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ, গাজীপুরে অবস্থিত প্রেসক্লাবগুলোর উন্নয়ন ও সংবাদকর্মীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকেরা যেন কোনো হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে ইশতেহারে। 

মহানগরের বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সামাজিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান, প্রতিবন্ধী ও বিশেষ শিশুদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, হতদরিদ্র, ছিন্নমূল, ভবঘুরে ভিখারিদের পুনর্বাসন ও সুবিধা বাতা ও প্রতিবন্ধী যুবক/যুব মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের উদ্যোগ, সংস্কার ও উন্নয়ন করাসহ নতুন পার্ক নির্মাণ, শিশুদের জন্য বিশেষায়িত পার্ক নির্মাণ এবং নদীসংলগ্ন স্থানকে নান্দনিক, পায়ে হাঁটা ও বিনোদন উপযোগী করার পদক্ষেপ গ্রহণ। 

প্রতিটি ওয়ার্ডে ঈদগাহ ও কবরস্থান নির্মাণ, শ্মশানগুলোর উন্নয়ন ও নির্মাণ, নগরীর উপযুক্ত স্থানে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের জন্য সমাধিক্ষেত্র তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ, আলেম-মাশায়েখসহ সব ধর্মীয় নেতাকে সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, গির্জায় সহায়তা প্রদান করা হবে। 

নগরীর জলাশয় দখলমুক্তকরণ, নদী ও পরিবেশ রক্ষা, মশকনিধনে পরিবেশ অধিদপ্তর, সংশ্লিষ্ট শিল্প-কলকারখানা, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও স্থানীয় অধিবাসীদের সহযোগিতা নদী ও জলাশয়কে দখলমুক্ত, দূষণমুক্ত ও সংস্কারের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ এবং নগরীর উপযুক্ত স্থানে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ব্যবস্থার কথা আছে ইশতেহারে।

মহানগরের সব কাঁচাবাজার ও মার্কেটের আধুনিকায়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং হকারদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ফ্রাইডে মার্কেট স্থাপন করার উদ্যোগ, পরিবেশবান্ধব আধুনিক কসাইখানা নির্মাণ এবং নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হবে।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ববোধ, সম্প্রীতি রক্ষা ও সুসম্পর্ক বজায় রাখতে ব্যবস্থা গ্রহণ, গাজীপুরের ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য জাদুঘর ও আর্ট গ্যালারি স্থাপনের উদ্যোগ, মাদকসেবীদের সুচিকিৎসার ও সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে এনে কর্মসংস্থানের এবং মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলনকে আরও গতিশীল করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। আধুনিক বিপণিবিতান তৈরি এবং যুব নারী ও পুরুষ উদ্যোক্তা, দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান এবং প্রবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে গাজীপুরে বিনিয়োগে উৎসাহিত করাসহ নতুন আয়ের উৎস তৈরি করার কথা বলা হয়েছে ইশতেহারে। 

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণে সিটিজেন চার্টার বা নাগরিক সনদ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। সিটি করপোরেশনের প্রতিটি বিভাগকে দুর্নীতিমুক্ত রেখে জিসিসির সার্বিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে। ‘জনতার মুখোমুখি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মহানগর ও ওয়ার্ডভিত্তিক সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। 

ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লা মণ্ডল, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আলিম উদ্দিন বুদ্দিন, সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওয়াজ উদ্দিন মিয়াসহ মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ছাড়াও নগরীর সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর: ৭ বছরেও জোড়া লাগেনি সেতু

বিশ্বজিত রায়, সুনামগঞ্জ
সাত বছরেও জোড়া লাগেনি তাহিরপুরের শাহ আরেফিন-অদ্বৈত মৈত্রী সেতুর দুই পাড়। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা
সাত বছরেও জোড়া লাগেনি তাহিরপুরের শাহ আরেফিন-অদ্বৈত মৈত্রী সেতুর দুই পাড়। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় জাদুকাটা ও পাটলাই নদের ওপর ১২৯ কোটি টাকা প্রাক্কলনের দুটি সেতুর নির্মাণকাজ সাত বছরেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি দুই সেতুর বিল বাবদ ৮০ ভাগের বেশি টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে। আড়াই বছর মেয়াদ নির্ধারণ করা হলেও কয়েক দফায় সময় বাড়িয়ে ফেলে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জাদুকাটা নদীর ওপর আরেফিন-অদ্বৈত মৈত্রী সেতু এবং পাটলাই নদের ওপর ডাম্পেরবাজার-বালিয়াঘাট নতুন বাজার সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা হয়।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেতু নির্মাণকাজ ফেলে রাখায় তমা কনস্ট্রাকশনের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। যদিও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি বলছে, তারা মাস ছয়েকের মধ্যে সেতু দুটির কাজ শেষ করবে।

এমন অবস্থায় বহুল কাঙ্ক্ষিত সেতু দুটির কাজ কবে শেষ হবে এবং চালু হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে উপজেলার বাসিন্দারা।

জানা গেছে, কৃষি, মৎস্য, পর্যটন ও খনিজ সম্পদসমৃদ্ধ সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী উপজেলা তাহিরপুর। এ ছাড়া উপজেলাটির ডাম্পেরবাজার এলাকার তিনটি শুল্ক স্টেশন দিয়ে কয়লা ও চুনাপাথর আমদানি করা হয়। এসব কারণে জাদুকাটা ও পাটলাই নদের ওপর দীর্ঘ দিন ধরে সেতু নির্মাণের দাবি ওঠে।

সুনামগঞ্জ এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, শাহ আরেফিন-অদ্বৈত মৈত্রী সেতুর কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। জেলার দীর্ঘতম ৭৫০ মিটারের মৈত্রী সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৮৫ কোটি ৯৯ লাখ ৩০ হাজার ৬৭৮ টাকা। এর মধ্যে ৬৭ কোটি ৬১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা বিল উত্তোলন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

একই মাসে পাটলাই নদের ওপর ডাম্পেরবাজার-বালিয়াঘাট নতুন বাজার সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ৪৫০ মিটার সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৪৩ কোটি ৭৬ লাখ ৬৮ হাজার ৫৭৯ টাকা। সেতু দুটি বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ৩০ মাস। সেই হিসাবে ২০২১ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শেষ না করেই ৩৫ কোটি ৫৬ লাখ ৮৩ হাজার ৮৯৯ টাকা তুলে নিয়েছে তমা কনস্ট্রাকশন। মৈত্রী সেতুর ৭৮ ভাগ কাজের বিপরীতে বিল তুলে নিয়েছে ৭০ ভাগ। ডাম্পেরবাজার সেতুর ৮৫ ভাগ কাজে বিল দেওয়া হয়েছে ৮০ ভাগ।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, মৈত্রী সেতুটি মাঝখানের অংশের কাজ শেষ হয়নি। এ ছাড়া ডাম্পেরবাজার-বালিয়াঘাট নতুন বাজার সেতুর সংযোগ সড়কের কাজও বন্ধ রয়েছে। সেখানে চারাগাঁও-বড়ছড়া শ্রমিক সর্দার কল্যাণ সমিতির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন ও স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. বজলুল আমিনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, মূল সেতুর কাজ হলেও সংযোগ না হওয়ায় সেতুটি কাজে আসছে না।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তাহিরপুরের সীমান্ত এলাকা মেঘালয় খাসিয়া পাহাড়ের নিকটবর্তী টাঙ্গুয়ার হাওর, টেকেরঘাট শহীদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রি), শিমুলবাগান, বড়গোপ টিলা, বারেকটিলা, লাকমাছড়া, সীমান্ত হাট, জাদুকাটা, অদ্বৈত জন্মধাম, শাহ আরেফিন (রহ.) মাজারকেন্দ্রিক পর্যটন, কৃষিপণ্য বিপণন এবং বাগলি, বড়ছড়া, চারাগাঁও—তিন শুল্ক স্টেশনের যাতায়াত সুবিধার্থে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এ ছাড়া জেলা সদর থেকে বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর সীমান্ত

এলাকা হয়ে মধ্যনগর ও ধর্মপাশা উপজেলার ১০ লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত সহজ হবে।

তমা কনস্ট্রাকশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মিয়া মো. নাছির মোবাইল ফোনে বলেন, ‘ডাম্পেরবাজার সেতুর সামান্য কাজ বাকি আছে। মৈত্রী সেতুর কাজ আগামী মাস ছয়েকের মধ্যে শেষ করা হবে। বিগত বন্যায় মৈত্রী সেতুর একাধিক পিলার ভেঙে অনেক নির্মাণসামগ্রী তলিয়ে গেছে। আমাদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তারপরও আমরা কাজ দ্রুত করার চেষ্টা করছি।’

এলজিইডির সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মৈত্রী সেতুর কাজ দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় সম্প্রতি ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে ডাম্পেরবাজার সেতুর কাজও শেষ হচ্ছে না। এ জন্য আমরা অসমাপ্ত কাজের প্রাক্কলন তৈরি করে প্রকল্প অফিসে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক প্রাক্কলনটি ফেরত পাঠিয়েছেন। ফের তা সংশোধন করে পাঠানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী: টার্মিনাল নেই, নাকাল মানুষ

  • ৫৩ বছরেও নির্মাণ করা হয়নি নির্দিষ্ট বাস টার্মিনাল বা যাত্রীছাউনি।
  • যেখানে-সেখানে যাত্রী ও মালপত্র ওঠানো-নামানোয় বাড়ছে যানজট।
  • গত ১০ মাসে ২১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মেহেদী হাসান, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
বাস টার্মিনাল না থাকায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর শহরের উর্বশী সিনেমা হলের সামনে সড়কে যাত্রী ওঠানো-নামানোয় যানজট। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাস টার্মিনাল না থাকায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর শহরের উর্বশী সিনেমা হলের সামনে সড়কে যাত্রী ওঠানো-নামানোয় যানজট। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের জেলা দিনাজপুরের গুরুত্বপূর্ণ একটি উপজেলা শহর ফুলবাড়ী। দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর গড়ে ওঠা জনবহুল এই শহর দিয়ে প্রতিদিন ছুটে চলে শত শত বাস, ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহন। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও এখানকার মানুষ এখনো একটি নির্দিষ্ট বাস টার্মিনাল বা যাত্রীছাউনি থেকে বঞ্চিত। ফলে প্রতিদিনই শহরের রাস্তায় লেগে আছে যানজট ও জনদুর্ভোগ। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনা। গত ১০ মাসে ২১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত হয়েছে।

জানা গেছে, দিনাজপুর জেলা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল উপজেলা ফুলবাড়ী। জেলা সদর থেকে ফুলবাড়ী হয়ে ঢাকাগামী আঞ্চলিক মহাসড়কটি ফুলবাড়ী উপজেলা শহর দিয়ে গেছে।

উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ছুটে চলে শত শত যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহন। তবে ফুলবাড়ী হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটলেও আজও উপজেলার পৌর শহরে নির্মাণ হয়নি কোনো বাস টার্মিনাল। ফলে শহরের যত্রতত্র বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো এবং মালবাহী ট্রাকগুলো থেকে পণ্য আনলোড করা হয় সড়কের ওপরই। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে যানজট সৃষ্টি হয় প্রতিনিয়ত। এ ছাড়া ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় সড়ক পারাপারে পথচারীদের পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। বিশেষ করে ফুলবাড়ী নিমতলা মোড় ও নৈশকোচ কাউন্টারের সামনে এবং বটতলি মোড়ে সড়কের ওপর বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করায় পৌর শহর দিয়ে যাওয়া দিনাজপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের ফুলবাড়ী শহরের অংশে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে।

ফুলবাড়ী থানা সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ২১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ২৩ জন। আহত হয়েছে অন্তত অর্ধশত।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘যানজটের কারণে প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাতে হয়। শহরের যেখানে-সেখানে সড়কের ওপর গাড়ি থামায়। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়। কষ্টটা আমাদেরই পোহাতে হয়। একটা টার্মিনাল হলে এই ভোগান্তি অনেকটা কমে যেত।’

শিক্ষক মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, নির্দিষ্ট বাস টার্মিনাল না থাকায় পৌর শহরের ঢাকা মোড় (শাপলা চত্বর) থেকে উর্বশী সিনেমা হল পর্যন্ত দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলো জায়গা সংকটে ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় রয়েছে। ওইসব কাউন্টারে বাস সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করায়। ফলে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে এর ভয়াবহতা আরও বৃদ্ধি পায়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।

দিনাজপুর মটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন ফুলবাড়ী স্টান্ড শাখার সভাপতি মহসীন আলী সরকার বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব এক একর জায়গা রয়েছে। কিন্তু আর্থিক সংগতি না থাকার কারণে আমাদের পক্ষে বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ওই জায়গায় সরকার যদি বাস টার্মিনাল নির্মাণ করে দেয়, তবে যানজটসহ সড়ক দুর্ঘটনা ও শহরের যত্রতত্র দূরপাল্লার যানবাহন দাঁড়ানো বন্ধ হয়ে যাবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইসাহাক আলী বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করলাম। কিন্তু জটিলতা আছে অনেক। কারণ, দূরপাল্লার কোচগুলোর দাঁড়ানোর কোনো নির্ধারিত স্থান নেই। তারা পৌর শহরের ঢাকা মোড় এলাকায় যেতে চায় এবং কাউন্টার করে দিতে বলে। কিন্তু কাউন্টার করা ব্যয় সাপেক্ষ ব্যাপার। এটা কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে, যদি কখনো কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে এটা করা সম্ভব হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

একই আসনে মুখোমুখি বিএনপি ও জামায়াত দুই ভাই

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
আজিজুর রহমান ও মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক
আজিজুর রহমান ও মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-৪ আসনে (চিলমারী, রৌমারী ও চর রাজিবপুর) বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী থেকে আপন দুই ভাইকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁরা হলেন জামায়াতে ইসলামীর মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক এবং বিএনপির আজিজুর রহমান।

তাঁরা জেলার রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের বাসিন্দা। তাঁদের বাবার নাম মনছুর আহমেদ। তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন।

গত সোমবার বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় কুড়িগ্রাম-৪ আসনে জেলা বিএনপির অন্যতম সদস্য আজিজুর রহমানের নাম রয়েছে। এদিকে কয়েক মাস আগে জামায়াত থেকে ওই আসনে তাঁর ছোট ভাই মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাককে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

আপন দুই ভাই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হলেও দুজনই জয়ের ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে আশাবাদী। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হলেও এটি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে না বলে দাবি তাঁদের। এদিকে বিষয়টি এখন ভোটারদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অনলাইন ট্রেডিং সাইট

অনলাইনে বিনিয়োগ করে নিঃস্ব ৪ শতাধিক পরিবার

  • সবার বাড়ি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নেহালপুর ইউনিয়নে।
  • ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা বিনিয়োগের দাবি।
  • গত সোমবার সকালে সাইটটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
  • পুলিশি ঝামেলা এড়াতে অধিকাংশ ভুক্তভোগী মুখ খুলতে রাজি হননি।
মেহেরাব্বিন সানভী, চুয়াডাঙ্গা
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ক্লিনো ইমেক্স (Cleano IMEX) নামক একটি অনলাইন ট্রেডিং সাইটে বিনিয়োগ করে সব খুইয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নেহালপুর ইউনিয়নের চার শতাধিক পরিবার। দ্বিগুণ মুনাফার লোভে ধারদেনা, চড়া সুদে ঋণ নিয়ে এই প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগ করেছিল পরিবারগুলো। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ক্লিনো ইমেক্সে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছে তারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই প্রতারণার শুরু সদর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে। প্রায় চার মাস আগে মালয়েশিয়াপ্রবাসী আশিক (২২) নামের এক যুবক গ্রামের দুই তরুণ—নিরব হোসেন ও আকাশ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আশিক তাঁদের জানান, ‘ক্লিনো ইমেক্স’ সাইটে টাকা রাখলে প্রতিদিন শতকরার ভিত্তিতে লাভ পাওয়া যায়। ১০০ টাকায় দৈনিক ৪ টাকা লাভ। এমন লোভনীয় প্রস্তাবে প্রাথমিকভাবে নিরব ও আকাশ কাজ শুরু করেন এবং কিছু টাকা লাভও তোলেন। এরপর তাঁরা গ্রামের আরও পাঁচজনকে নিয়ে মোট সাতটি দল তৈরি করে এই ‘লাভজনক’ স্কিম দ্রুত ছড়িয়ে দিতে থাকেন।

এই চক্রের প্রলোভনে পড়ে সদর উপজেলার বোয়ালিয়া, শ্রীকোল, নেহালপুর, হিজলগাড়ি, বলদিয়া বড়শলুয়াসহ আশপাশের গ্রামের বহু মানুষ নিরব ও আকাশের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা জমা দিতে থাকেন। হোয়াটসঅ্যাপ-ভিত্তিক পৃথক গ্রুপ তৈরি করে এই দুই হোতা বিনিয়োগকারীদের নিয়ন্ত্রণ করতেন।

জানা যায়, শুধু নিরবের গ্রুপেই সদস্যসংখ্যা ছিল ২১৮ জন। নিজেদের বিনিয়োগ এবং অন্যদের কাছ থেকে পাওয়া কমিশন মিলিয়ে নিরব ও আকাশ প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত উত্তোলন করতেন, যা দেখে গ্রামের সহজ-সরল মানুষ আরও বেশি আকৃষ্ট হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোয়ালিয়া গ্রামের এক কৃষক জানান, প্রথমে বিশ্বাস না হলেও গ্রামের অনেকের লাভ দেখে তিনি হালের গরু বিক্রি করে এবং নিজের জমানো টাকাসহ মোট ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ওই সাইটে দিয়েছিলেন। এখন সাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সব হারিয়েছেন।

একই গ্রামের কালাম নামের একজন বলেন, ‘টাকা দ্বিগুণ হওয়ার আশায় উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম পাখি ভ্যানটি বিক্রি করে সেই টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। এখন আমি পথের ফকির।’ ইজিবাইক চালক মিজানুর ছোট ভাইয়ের কথায় ১৮ হাজার টাকা জমা করে এখন বাকরুদ্ধ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধু নেহালপুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামেরই দুই শতাধিক ব্যক্তি ‘ক্লিনো ইমেক্স’ সাইটে ৬ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছিলেন। এ ছাড়া শ্রীকোল, নেহালপুর, কুন্দিপুর, হিজলগাড়ি, বলদিয়া ও বড়শলুয়ার অন্তত দুই শ পরিবার বিভিন্ন পরিমাণে বিনিয়োগ করেন। গ্রামের সহজ-সরল মানুষজন—কেউ হালের গরু, গাভি, স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে, কেউ এনজিও বা দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে, আবার কেউ-বা জমি বন্ধক রেখে এই ফাঁদে পা দিয়েছিলেন।

গত সোমবার সকালে যখন সাইটটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, তখন গ্রামজুড়ে নেমে আসে হাহাকার। মান-সম্মানের ভয় এবং পুলিশি ঝামেলা এড়াতে অধিকাংশ ভুক্তভোগী প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি হননি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) জামাল আল নাসের বলেন, ‘নিশ্চয়তা না থাকা সত্ত্বেও অনেকে অসচেতনভাবে এই অনলাইন সাইটে টাকা বিনিয়োগ করছে। এ ক্ষেত্রে আমরা বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও থামানো যাচ্ছে না। নেহালপুর ইউনিয়নের ঘটনাটি শুনেছি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য থানা-পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো কেউ অভিযোগ করেননি। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত