Ajker Patrika

চিত্র প্রদর্শনীতে গুমের শিকার পরিবারের হাহাকারের গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৪, ২১: ০৬
চিত্র প্রদর্শনীতে গুমের শিকার পরিবারের হাহাকারের গল্প

রুমের এক কোণে একটি কাঠের চেয়ার। চেয়ারটি খালি। এই চেয়ারে যিনি বসতেন তিনি হারিয়ে গেছেন। রাজনৈতিক পরিভাষায় যা ‘গুম’ বলে পরিচিত। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পতনের পরে এই গুম নামক কর্মকাণ্ডের সত্যতা মেলে। মানুষকে উঠিয়ে নিয়ে রাখা হতো আয়নাঘরে। সেই আয়নাঘর থেকে কেউ ফিরেছে, কেউ আর ফেরেনি। এই মানুষগুলোর স্বজনদের হাহাকার ফুটে উঠেছে তাঁদের দৈনন্দিন জীবন যাপনে। তাই ক্যামেরায় ধারণ করেছেন মোশফিকুর রাহমান জোহান। তাঁর ক্যামেরার লেন্স বলল, ১৫-১৬ বছর ধরে গুম হয়ে যাওয়া মানুষের পরিবারগুলোর গল্প। 

আজ শুক্রবার ‘গুম জান ও জবান’ নামের এই প্রদর্শনী শুরু হয়েছে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে। সেখানে বিভিন্ন পরিবারের নানা গল্প ফুটে ওঠে আলোকচিত্রীর ছবিতে। একটি ছবিতে দেখা যায়, সিসিটিভি ফুটেজে মানুষ উঠিয়ে নেওয়ার দৃশ্য সাদা প্রাইভেটে। আরেক ছবিতে মেলে ভারাক্রান্ত চেহারায় অসুস্থ মায়ের অপেক্ষা ছেলের ছবি হাতে। কোনো ছবিতে দেখা যায় মা-ছেলে অপলক তাকিয়ে আছে জানালার দিকে। হয়তো অপেক্ষায় প্রিয় মানুষটি ফেরার। 

এমন নানা গল্পের সমাহার আলোকচিত্রগুলোতে। আছে তাঁদের প্রতিবাদের চিত্র, গণমাধ্যমে তাঁদের নিয়ে খবর ইত্যাদি। দুই-তিন বছর ধরে এই ছবিগুলো তুলেছেন আলোকচিত্রী মুশফিকুর রহমান জোহান। 

প্রদর্শনীর কিউরেটর সরকার প্রতীক বলেন, ‘আমরা আশা করিনি যে এই গল্পগুলো কোনো দিন আমরা জনগণের সামনে বলতে পারব। কিন্তু এই নতুন বাস্তবতার, নতুন বাংলাদেশে এই কাজগুলো প্রদর্শন করার সুযোগ হলো। আমরা আশা করি, আমাদের এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে আরও অনেকে তাঁদের গল্প বলতে অনুপ্রাণিত হবেন।’ 

আজ গুম হয়ে যাওয়া মানুষের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। সেখানে বন পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘একটা সভ্য দেশে গুম নিয়ে কথা বলতে হয়। একটা স্বাধীন দেশে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছে স্বাধীনতার জন্য। সে দেশে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে গুম নিয়ে কথা বলতে হয়। আর যেন গুম নিয়ে কথা বলতে না হয়, এ কারণে গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে বাংলাদেশ অনুস্বাক্ষর করেছে। গুমের কোনো ন্যায্যতা–অন্যায্যতা নেই। প্রথম থেকেই এটা অন্যায্য বিষয়। প্রতিটা গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে আমাদের সদিচ্ছার কোনো অভাব থাকবে না। অন্তত যারা গুমের বিষয়ে জড়িত ছিল, তাদের যেন বিচারের মুখোমুখি করা যায়—এটুকু আশা করা তো একটা সভ্য দেশে বেশি আশা করা না। আর যেন কোনো সরকার তার ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে আয়নাঘর সৃষ্টি করতে না পারে, সেটা করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করব।’ 

গুম হওয়া মানুষগুলোর স্বজনদের হাহাকার ফুটে উঠেছে ক্যামেরার লেন্সে। ছবি: আজকের পত্রিকা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, আমরা ছাত্রদের আন্দোলনের মাধ্যমে একটা পরিবর্তন দেখছি কিন্তু মায়ের ডাকের শিশুদের কান্না, শিশুদের বক্তব্য, পরিবারের লোকদের বক্তব্য ফুটিয়ে তুলেছিল যে কী পরিমাণ নিষ্ঠুর ছিল, কী পরিমাণ মানুষকে কষ্ট দিয়েছে তারা, এটা মায়ের ডাকের অনুষ্ঠান থেকে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম। আজকে আমাদের কাজ আনন্দ করা না, যাদের হারিয়েছি তাঁদের ফিরিয়ে আনা।’ 

আরও বক্তব্য দেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রমুখ। 

প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে মায়ের ডাক। প্রদর্শনী চলবে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দেখা যাবে। সঞ্চালনায় ছিলেন মায়ের ডাকের সদস্য সানজিদা ইসলাম তুলি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত