Ajker Patrika

সিঙ্গাইরে গ্রামীণ সড়কের সর্বনাশ করছে ইটভাটার ট্রাক ও ট্রলি

প্রতিনিধি
সিঙ্গাইরে গ্রামীণ সড়কের সর্বনাশ করছে ইটভাটার ট্রাক ও ট্রলি

সিঙ্গাইর (মানিকগঞ্জ): মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের গুরুত্বপূর্ণ পাকা ও কাঁচা সড়কগুলো ইটভাটার ট্রাক ও ট্রলির কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সড়কে এসব বেপরোয়া গতির ট্রাক ও ট্রলির কারণে পিচঢালাই সড়কের ইট, পাথর, খোয়া উঠে সৃষ্টি হচ্ছে বড় বড় গর্ত।

এতে সড়কগুলো যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বাড়ছে জনদুর্ভোগ। সড়কগুলো অতি দ্রুত অকেজো হয়ে পড়ায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্তৃপক্ষ সড়ক সংস্কারে গলদঘর্ম হচ্ছে।

সংস্কারের কিছুদিনের মধ্যেই তা আবার ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এত ঘন ঘন দরপত্র আহ্বান করতে হিমশিম খাচ্ছে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ; আর ভোগান্তিতে পড়ছে স্থানীয় জনগণ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সিঙ্গাইর উপজেলায় অনুমোদিত ও অননুমোদিত ইটভাটা রয়েছে শতাধিক। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে ট্রাক ও ট্রলির সাহায্যে তা নেওয়া হচ্ছে এসব ইটভাটায়।

এসব ভারী ট্রাক ও ট্রলির বেপরোয়া চলাচলে গুরুত্বপূর্ণ কাঁচা, পাকা ও আধপাকা সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত হয়ে গেছে। পিচঢালা সড়কের প্রায় অংশেই নেই ইট, পাথর, পিচ ও খোয়া। অনেক জায়গায় ট্রলির ওভারলোডের কারণে সড়ক দেবে গেছে। বৃষ্টি হলেই পানি জমে যাচ্ছে। এতে যাত্রীবাহী যানবাহন ও পায়ে হাঁটা সাধারণ মানুষের চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে।

উপজেলার পারিল গ্রামের বাসিন্দা মো. ঈদ্রিস জানান, ধলধারা ইউনিয়নেই অর্ধশতাধিক ইটভাটা রয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন ফসলি জমির মাটি বহন করে লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ট্রলি ও ট্রাক। এসব বাহনের কারণে পাকা সড়কগুলোতে বড় বড় গর্ত হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলেই এসব গর্ত পানিতে ভরে যায়। এই সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে যাত্রীবাহী যানবাহন প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। সড়কের পাশের বাড়িগুলোর লোকজন মাটিবাহী ট্রাক-ট্রলির বিকট শব্দ ও ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ। ইটভাটা, ইটভাটার মাটির ট্রলি ও ট্রাকের কারণে এই এলাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এ ছাড়া ট্রাক ও ট্রলির বহন করা মাটি সড়কে পড়ে ধুলাবালির সৃষ্টি করছে, যা একটু বৃষ্টি হলেই পিচঢালা সড়ককে পিচ্ছিল করে তোলে। এতে যেকোনো যানবাহন চলতে গিয়ে খাদে পড়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে চাপড়াইল গ্রামের বাসিন্দা ও পেশায় প্রকৌশলী আবু সাইম বলেন, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইটভাটাগুলো সারা উপজেলাকে গ্রাস করেছে। ইটভাটার ইট বহনকারী ট্রাক ও মাটি বহনকারী ট্রলির বেপরোয়া চলাচলের কারণে মেরামতের ছয় মাসেই পাকা সড়কগুলো আবার নষ্ট হয়ে যায়। এসব বেপরোয়া ট্রাকের চাপায় গত ১৫ ও ১৭ মে তিনজন নিহত হয়েছেন। প্রতিনিয়তই এমন দুর্ঘটনা ঘটছে। লাইসেন্সবিহীন এসব ট্রাক ও ট্রলির বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

ইটভাটার ট্রাক ও ট্রলির বেপরোয়া চলাচলের কারণে বেশি ক্ষতি হচ্ছে গ্রামের কাঁচা সড়কগুলোর। ওভারলোডের কারণে এসব মাটি বোঝাই যানবাহনের চাপে সড়কের মধ্যে লম্বা ড্রেনেজ তৈরি হয়েছে। বৃষ্টি হলেই এসব সড়কে পানি জমে তা কোনো কোনো জায়গায় ২ ফুট পর্যন্ত গভীর হয়ে যায়। তখন এই সড়কগুলো দিয়ে যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে চলাচলেরও উপায় থাকে না। আর রাত–দিন মাটিবোঝাই ট্রাক, ট্রলি চলাচলের কারণে হওয়া শব্দ ও বায়ু দূষণ তো রয়েছেই।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী রুবাইয়েত রোমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, গ্রামীণ সড়কগুলোতে অধিক লোড নিয়ে বেপরোয়া গতিতে ইট ভাটার ট্রাক ও ট্রলি চলাচল করায় অধিকাংশ সড়ক ভেঙে ও দেবে গেছে। এতে সড়কগুলো দ্রুত যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সার্বিক বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুনা লায়লা বলেন, ইটভাটায় অবৈধ উপায়ে মাটি কেটে বিক্রি করায় মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। মাটি বহনকারী এসব ট্রলির বিরুদ্ধেও খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব ট্রাক ও ট্রলি যাতে গ্রামীণ সড়কগুলোতে অধিক লোড নিয়ে চলাচল করতে না পারে, সেদিকেও আমাদের নজরদারি রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত