Ajker Patrika

বিদেশে পাঠানোর কথা বলে ধর্ষণ-প্রতারণা, গ্রেপ্তার ৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
বিদেশে পাঠানোর কথা বলে ধর্ষণ-প্রতারণা, গ্রেপ্তার ৪

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে মো. সাইফুল ইসলাম শান্ত নামে একজনকে বিয়ে করেছিলেন মৌলভীবাজারের এক নারী। বিয়ের পর ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন সাইফুল। মেয়ের সুখের কথা ভেবে ধার করে সেই টাকা জোগাড় করেছিলেন পিতা। কিন্তু টাকা নিয়ে উধাও সাইফুল। পাওনাদারেরা টাকার জন্য চাপ দিলে গ্রাম্য দালাল তোফায়েলের শরণাপন্ন হন তাঁরা। পরে তোফায়েল তাঁকে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরব প্রেরণের প্রলোভন দেখালে বিপদে পরে সেই নারীও রাজি হয়। কিন্তু সৌদি আরব যেতে আরবি ভাষার ট্রেনিং করতে হবে বলে সেই নারীকে ঢাকায় আনে তোফায়েল। রামপুরায় তাঁদের আরেক সহযোগী কামরুলের বাসায় আটকে রেখে ধর্ষণ করে তোফায়েল।

কামরুলের নেতৃত্বে মানবপাচার ও প্রতারক চক্রটি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছে র‍্যাব। বেকার যুবক-যুবতীদের ইউরোপ এবং অসহায় নিম্নবিত্তদের মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে ভুয়া ভিসা ও টিকিটের নামে এসব অর্থ আদায় করতেন তাঁরা। বিদেশ গমনে ইচ্ছুকেরা উক্ত ভুয়া ভিসা ও টিকিট বিমানবন্দরে প্রদর্শন করার পর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাঁদের ভিসা ও টিকিট জাল হওয়ায় বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়। পরে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাঁদের আর পাওয়া যেত না বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা। তবে প্রতারক চক্রের মূল হোতা কামরুল আহম্মেদ সহ (৪২) আরও ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন—মো. খালেদ মাসুদ হেলাল (৩৬), তোফায়েল আহম্মেদ (৩৮) ও মো. জামাল (৪২)। 

শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব ৩ অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, গত বুধবার (১৩ এপ্রিল) চক্রের মূল হোতা কামরুলের বাসা থেকে ভুক্তভোগী ওই নারীকে উদ্ধার করে র‍্যাব। উদ্ধারের পর ভিকটিম বাদী হয়ে রামপুরা থানায় নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রামপুরা ও হাতিরঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ২৭টি পাসপোর্ট,১টি মনিটর, ০১টি সিপিইউ, ১ টি মাউস, ১ টি কিবোর্ড, ১ টি ইউপিএর, ১০০ টি ভিসার কপি, ১২৫ টি টিকিট, ৪ টি মোবাইল ফোন, ২ টি ফরম বই (কোভিড-১৯ নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা) এবং ১টি প্রিন্টার উদ্ধার করা হয়। 

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তাঁদের জনশক্তি রপ্তানির কোনো লাইসেন্স নেই। কিন্তু তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রপ্তানির নামে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে লোক প্রেরণ করছে। এ ছাড়া, চক্রটি মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে প্রেরণের প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশ গমনে ইচ্ছুকেরা বেকার যুবক যুবতীদের কাছ থেকে ৫ / ৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ভুয়া ভিসা এবং টিকিট ভুক্তভোগীদের হাতে ধরিয়ে দিত। এভাবে, গত ২ বছরে আসামিরা আটবার বাসার ঠিকানা পরিবর্তন করেছে। এভাবে তারা প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। 

চক্রের মূল হোতা কামরুল প্রসঙ্গে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কামরুল নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। তাঁর কোনো নির্দিষ্ট পেশা নেই। প্রতারণা এবং মানবপাচারই তাঁর পেশা। ২০১৯ সালে সে ভ্রমণ ভিসায় দুবাই যায়। তারপর সেখানে মানবপাচারের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে দুবাইয়ের রেসিডেন্স ভিসা লাভ করে। ২০২১ সালে সে বাংলাদেশে ফিরে এসে পুনরায় প্রতারণা এবং মানবপাচারকে তাঁর পেশা হিসেবে বেছে নেয়। সে বিভিন্ন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসায় বিভিন্ন দেশে লোক প্রেরণ করত। এ ছাড়া, ভুয়া ভিসা এবং ভুয়া টিকিট সরবরাহ করে প্রায় পাঁচ শতাধিক লোকের কাছ থেকে ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। কামরুলের নামে চট্টগ্রাম আদালতে একটি চেক জালিয়াতির মামলা এবং মৌলভীবাজার আদালতে ডাচ বাংলা ব্যাংকে ১৮ লাখ টাকার একটি মামলা রয়েছে।’ তাঁর বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩৮ লাখ টাকার ওপরে রয়েছে বলে জানিয়েছে র‍্যাব। 

কামরুলের অন্যতম সহযোগী জামাল ‘মাহবুব ইন্টারন্যাশনাল’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার। মাহবুব ইন্টারন্যাশনাল মানবপাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেইনিং (বিএমইটি) তাদের লাইসেন্স ব্লক করে দিয়েছে। এক মাস আগে মাহবুব ইন্টারন্যাশনালের এমডি মানবপাচারের দায়ে র‍্যাব-৩ এর হাতে আটক হয়। জামাল পাঁচ বছর ধরে কামরুলের সঙ্গে প্রতারণা ও মানবপাচারের কাজ করে আসছে। জামালের নামেও একটি মাদক মামলা রয়েছে। 

খালেদ ২০০১ সাল থেকে দীর্ঘ ১৫ বছর সৌদি আরবে ছিল। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ফেরত এসে সে মৌলভীবাজারে রেস্টুরেন্টের ব্যবসা শুরু করে। কিন্তু ব্যবসায় সফল হতে না পেরে কামরুলের সঙ্গে প্রতারণা ও মানবপাচারের কাজে যোগ দেয়। তোফায়েল মৌলভীবাজারে সিএনজি পার্টস ও ডেকোরেটরের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। অতি লাভের আশায় সে কামরুলের সঙ্গে প্রতারণা ও মানবপাচারের কাজে যোগ দেয়। তোফায়েলের নামে একটি চুরির মামলা রয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে র‍্যাব। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চাকরির নামে মিরপুর-শেওড়াপাড়ায় বাসায় ডেকে নারীর সঙ্গে ভিডিও ধারণের পর টাকা হাতিয়ে নিত ‘হানি ট্র্যাপ’ চক্র

দনবাস চান পুতিন—ন্যাটো তো নয়ই, পশ্চিমা সেনাও থাকবে না ইউক্রেনে

দুস্থদের ৩৪ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা মোহনগঞ্জ সমাজসেবা কর্মকর্তা

তথ্য যাচাইয়ের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করবেন—ইউটিউব চ্যানেলে সিইসির বার্তা

ফরিদপুরে চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে সেবা বন্ধের ঘোষণা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত