Ajker Patrika

ধোপার গোয়েন্দা সেজে প্রতারণা, অবশেষে গ্রেপ্তার 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ধোপার গোয়েন্দা সেজে প্রতারণা, অবশেষে গ্রেপ্তার 

রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নাঈমুর রহমান (ছদ্মনাম)। নাঈমুরের মা পেশায় একজন চিকিৎসক। হঠাৎ একদিন নাঈমুরের মাকে গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয়ে এক ব্যক্তি ফোন করে জানায়, তাঁর ছেলে নাঈম মাদকসহ গ্রেপ্তার হয়েছে। তাঁর ব্যাগে মাদক পাওয়া গেছে। আপনারা আদালতে যোগাযোগ করেন। এরপর নাঈমের মা নিজের পরিচয় দিলে গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা তখন জানায় ৬০ হাজার টাকা দিলে তাঁর ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। যদিও পুরো বিষয়টি ছিল সাজানো। ছেলে গ্রেপ্তারের খবরে কোনো ধরনের যাচাই ছাড়াই টাকা দিয়ে দেন ওই চিকিৎসক। 

দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পরিচয় ব্যবহার করে এভাবেই সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল একটি চক্র। বাদ যায়নি সাংবাদিকেরাও। 

অভিনব প্রতারণার শিকার নাঈমুরের অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর বনানী থেকে চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ। চক্রের অন্যতম হোতা আলামিন ওরফে বিনিয়ামিন ও সাইফুল ইসলাম। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, এক রাউন্ড গুলি, সিসি ক্যামেরা মনিটর, ডিভিআর, ১০০ বোতল ফেনসিডিল ও নগদ ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। 

অভিনব প্রতারণার বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভুয়া ডিবির পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছ আসছে একটি চক্র। চক্রটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি ও মামলা হয়েছে। চক্রটির প্রতারণার টার্গেট ছিল সমাজের উচ্চবিত্ত বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর জানা গেছে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক এমনকি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের স্বজনরাও প্রতারণার শিকার হয়েছেন এ চক্রের হাতে। এভাবে চক্রটি প্রতারণার মাধ্যমে কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। 

ডিসি মশিউর রহমান আরও বলেন, চক্রের মূল হোতা বিনিয়ামিন। পেশায় ধোপা। বাংলায় কোনো শিক্ষা না থাকলেও হাফেজি মাদ্রাসায় ২৩ পাড়া পর্যন্ত পবিত্র কোরআন মুখস্থ করেছে। এরপর পড়াশোনা ছেড়ে গত চার বছর ধরে প্রতারণা করে আসছেন তিনি। প্রতারণা শুরুতে মোবাইল নম্বরের বিশেষ সিরিয়ালের নম্বরগুলোকে টার্গেট করত সে। এরপর নম্বরগুলো ব্যবহার করে বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহারকারির ব্যক্তিগত ও পারিবারিক তথ্য সংগ্রহ করে। এরপর বিনিয়ামিন নিজেকে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কর্মকর্তা পরিচয় ফোন দিয়ে টার্গেট ব্যক্তির সন্তান মাদক বা অসামাজিক কাজ করার কারণে গ্রেপ্তার হয়েছে জানিয়ে ফোন করে। সন্তানকে ছাড়াতে হলে এখনই বিকাশ কিংবা নগদে পাঠাতে হবে লাখ টাকা। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রেট এই জরিমানা করেছে। টাকা না দিলে এখনই তাকে আদালতে পাঠানোর হুমকি দেওয়া হতো।
 
এ ছাড়া ভুক্তভোগীদের মেয়ে সন্তানদের আপত্তিকর অবস্থায় ধরা হয়েছে জানিয়ে দ্রুত বিকাশ কিংবা নগদে টাকা না পাঠালে তাঁর মেয়েকে গণধর্ষণ করার হুমকি দেয়। এমন তথ্যে ভুক্তভোগী স্বজন দ্রুত টাকা পাঠিয়ে দেয়। টাকা পাঠানোর আগে বিশ্বাস করা জন্য ভুক্তভোগীরা মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে প্রতারকেরা মেয়ের মতন অভিনয় করে আম্মু আম্মু/আব্বু আব্বু বলে চিৎকার করে শব্দ শোনাতে থাকে। টাকা পাঠানোর পর প্রতারকেরা ভুক্তভোগীকে আবারও বলে সাংবাদিক ঘটনাটি ভিডিও করে ফেলেছে। এখন সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার জন্য আরও অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে। এছাড়াও অস্ত্র দেখিয়ে ডিবি পরিচয় দিয়ে মানুষকে জিম্মি করেও প্রতারণা করত বিনিয়ামিন। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীদের পাঠানো টাকা শরফুল ইসলাম বিভিন্ন দোকানের এজেন্টদের কাছ থেকে টাকা তুলে দিত। এ ছাড়া প্রতারণায় ব্যবহৃত সিম ও মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর সংগ্রহ করে দিত। শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের ছয় দিন প্রতারণা করত। তাদের প্রতিদিনের আয় ছিল এক থেকে দেড় লাখ টাকা। 

বিনিয়ামিন পেশায় ধোপা হলেও কয়েক বছরের মধ্যে কোটিপতি বনে গেছেন জানিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি আরও বলেন, বিনিয়ামিন গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশালের সতেরপাড়া গ্রামে। স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে হাফেজি পড়াশোনা শুরু করলেও শেষ করতে পারেনি। তার বাবা কাঁচামাল বিক্রেতা। ইলেকট্রনিক মিস্ত্রি। স্থানীয়ভাবে খুব সাধারণ একটি পরিবার। তবে কয়েক বছর ধরে ফুলে ফেঁপে উঠতে শুরু করে বিনিয়ামিনের পরিবার। গ্রামে পাঁচ তলা ফাউন্ডেশনের বাড়ির কাজ চলছে। ইতিমধ্যে দোতলার কাজ শেষ হয়েছে। বাড়ির আঙিনায় নিরাপত্তার জন্য লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। প্রতারণার মাধ্যমে আয় করা টাকা দিয়ে আলিশান বাড়ি ও গ্রামে ১০ একর জমি কিনেছে। বিনিয়ামিনের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া তিনটি মোবাইল সিমে কোটি টাকারও বেশি লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও ডিএমপির বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, প্রতারণা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৯টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। 

গ্রেপ্তার প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। বর্তমানে তারা গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে চার দিনের রিমান্ডে আছে বলে জানান গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে লতিফ সিদ্দিকী অবরুদ্ধ, নেওয়া হলো পুলিশি হেফাজতে

রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র পরিদর্শনের পর যা জানাল আইএইএর বিশেষজ্ঞ দল

আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী, ঢাবি শিক্ষক কার্জনসহ ১১ জন ডিবি হেফাজতে

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা

নির্বাচনের আগে কোনো বৈধ অস্ত্র ফেরত দেবে না সরকার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত