Ajker Patrika

পরিকল্পিতভাবে দুই সন্তানকে হত্যা করেছেন, আদালতে বললেন লিমা বেগম

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২২, ২২: ০৪
পরিকল্পিতভাবে দুই সন্তানকে হত্যা করেছেন, আদালতে বললেন লিমা বেগম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায় আলোচিত দুই শিশুর মৃত্যু নাপা সিরাপ খেয়ে হয়নি। শিশু দুটির মা লিমা বেগম মিষ্টির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তাদের হত্যা করেন। পরে দাবি করেন নাপা সিরাপ খেয়ে তাঁর সন্তানদের মৃত্যু হয়েছে। 

এ ঘটনায় একটি মামলা করেছেন শিশু দুটির বাবা ইটভাটা শ্রমিক ইসমাইল হোসেন। মামলায় শিশুদের মা লিমা বেগম ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিক মিল সর্দার সফিউল্লাহকে আসামি করা হয়েছে। লিমা বেগমকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। এর আগে রাতে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রথমে থানা-পুলিশের কাছে প্রাথমিকভাবে ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দেন। 

পরবর্তীতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক বেগম আরেফিন আহম্মেদ হ্যাপির আদালতে লিমাকে আনা হয়। পরে আদালতে ১৬৪ ধারায় লিমার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। 

লিমার জবানবন্দির বরাত দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন আজকের পত্রিকাকে জানান, লিমা বেগম পরিকল্পিতভাবে তাঁর দুই সন্তানকে হত্যা করেছেন। শিশুদের বাবা ইসমাইল হোসেন জানতে পারেন চাতাল সর্দার সফিউল্লাহর সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে। সফিউল্লাহর দেওয়া একটি সিম লিমা ব্যবহার করেন। 

মোহাম্মদ শাহীন বলেন, ‘লিমা বেগম একটি চাতাল কলের শ্রমিকের কাজ করেন। সেখানে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে চাতালের সর্দার সফিউল্লাহর সঙ্গে। সফিউল্লাহ তাঁকে বিয়ে করার আশ্বাস দেন। কিন্তু শর্ত দেন দুই সন্তানকে সরিয়ে ফেলতে হবে। পরে লিমা পরিকল্পনা করে গত ১০ মার্চ দুই শিশুকে মিষ্টির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে দেন। এতে তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় ফার্মেসি থেকে নাপা সিরাপ এনে খাওয়ান। পরে নাটক সাজান শিশু দুটি নাপা সিরাপ খেয়ে মারা গেছে।’ 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল। ঘটনাটি দেশব্যাপী আলোচিত হয়। কললিস্টের সূত্র ধরে আমরা কাজ করি। এই ঘটনায় গতকাল বুধবার রাতে তাঁর স্বামী ইসমাঈল হোসেন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। রাতেই শিশুদের মা লিমা বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়।’ 

মারা যাওয়া দুই শিশু হলো আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে ইয়াছিন খান (৭) ও মোরসালিন খান (৫)। 

অভিযোগ ওঠে, ‘নাপা সিরাপ খেয়ে’ ১০ মার্চ দিবাগত রাতে শিশু দুটি মারা যায়। ওই সময় শিশুদের মা লিমা বেগম দাবি করেন, ‘দুদিন ধরে মোরসালিন খানের জ্বর হয়। এর আগে থেকে ইয়াসিন খানেরও জ্বর ছিল। ঘটনার দিন বিকেলে দুই শিশুর দাদি পাশের বাজারের মাঈন উদ্দিনের ফার্মেসি থেকে নাপা সিরাপ নিয়ে আসেন। দুই শিশুকে সিরাপ খাওয়ানোর পর তারা বমি করতে শুরু করে।’ 

এরপর অবস্থার অবনতি হলে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের জেলা সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিলে পথে রাত ৯টার দিকে ইয়াসিনের মৃত্যু হয়। পরে রাত ১০টার দিকে মোরসালিনও মারা যায়। 

এ ঘটনায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। 

সেই সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘নাপা সিরাপ’ বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দেয় জেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের যে ফার্মেসি থেকে নাপা সিরাপ কেনা হয়েছিল, সেখান থেকে জব্দ করা বাকি সিরাপ। তবে পরবর্তীতে ওই ব্যাচের কয়েকটি ওষুধ পরীক্ষার পর সেগুলোর মান সঠিক পাওয়া গেছে বলে জানায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত